দয়া করে আমাকে বাঁচান, আমার বাচ্চাকে বাঁচতে দিন, আমরা বাঁচতে চাই- এমন আকুতি নব্বই দশকের আলোচিত চিত্রনায়িকা বনশ্রীর।
এক সময়ে অঢেল ধন সম্পদের অধিকারী এবং চাহিদাসম্পন্ন এই নায়িকা এখন নিঃস্ব। পথে পথে বই বিক্রি আর ভিক্ষাবৃত্তি করে বেঁচে থাকার শেষ চেষ্টা করছেন তিনি।
শ্বাসকষ্ট, লিভারের জটিলতা নিয়ে মৃত্যুর সঙ্গেও লড়ছেন বনশ্রী। নিজের এ দুরবস্থার জন্য দায়ী করেন চলচ্চিত্র প্রযোজক ফারুক ঠাকুর, স্বামী এবং বোনকে।
চলচ্চিত্রের মানুষের কাছে কাজ ও শিল্পী সমিতির কাছে সাহায্য চেয়ে ব্যর্থ হয়েছেন তিনি। কেউ তার দুঃখের কথা শোনা তো দূরে থাক ফিরেও তাকাচ্ছেনা। হাউমাউ করে কেঁদে বনশ্রী বলেন, লোকমুখে শুনেছি এ সময়ের শ্রেষ্ঠ নায়ক এমএ জলিল অনন্ত মানুষের দুঃখ-কষ্ট সহ্য করতে পারেন না। ত্রাণকর্তার মতো দুস্থ মানুষের পাশে এসে দাঁড়ান তিনি। এ কথা জানার পর সাভারে তার কারখানার সামনে ছুটে যাই।
গাড়িতে চড়ে গেট দিয়ে বের হচ্ছিলেন তিনি। আমি গাড়ির সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। গাড়ি থামিয়ে নেমে এলেন তিনি। আমার পরিচয় ও দুঃখ-কষ্টের কথা জেনে চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি অনন্ত সাহেব। শূন্য হাতে তার দরজায় গিয়েছিলাম।
অর্থ আর নানা সাহায্যে আমার দু'হাতই শুধু ভরে দেননি তিনি, আমার মনে দেবতার আসন গড়ে নিয়েছেন। তার দেওয়া অর্থে আমার বাচ্চার মুখে আহার তুলে দিতে পারছি। দুঃসহ জীবনের বর্ণনায় বনশ্রী বলেন, মাদারীপুরের শিবচরে তার বাড়ি। জন্মের পরই মা মারা যান। সৎ মায়ের অত্যাচারে বেড়ে উঠেন।
বাবা ঠিকাদারী ব্যবসায়ী ঢাকার মোহাম্মদপুরে থাকতেন। বনশ্রী বলেন, সুন্দরী হওয়ায় স্থানীয় মানুষের উপদ্রব সহ্য করতে হতো। তাই বাবা ঢাকায় নিয়ে এলেন। তখন ক্লাস সেভেনে পড়ি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে হিন্দু ছাত্র শ্যামল কুমার আমাকে দেখে বিয়ে করার জন্য মরিয়া হয়ে উঠে।
আমি রাজি না হওয়ায় শরীরে আগুন দিয়ে আত্দহত্যার চেষ্টা করে। বাবার চাপে তাকে বিয়ে করতে হয়। মুসলমান হওয়ার পর তার নাম রাখা হয় মাসুদ চৌধুরী। বিয়ের পরও আমার মন জয় করতে না পেরে কৌশলে মাসুদ আমাকে চলচ্চিত্রে নিয়ে আসে। এরই মধ্যে এক কন্যা সন্তানের জন্ম হয়।
সন্তানের জন্মের কিছুদিন পর আমাকে ছেড়ে মাসুদ এক শিক্ষিকাকে বিয়ে করে। এ ঘটনায় আমি মানসিকভাবে ভেঙে পড়ি। চলচ্চিত্র প্রযোজক ফারুক ঠাকুর আমাকে নায়িকা করে নব্বই দশকের প্রথম দিকে 'সোহরাব রুস্তম' চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করেন। এটি ব্যবসা সফল হলে রাতারাতি তারকা খ্যাতি পেয়ে যাই। কিন্তু ফারুক ঠাকুরের লোলুপ দৃষ্টিতে পড়ি।
তিনি আমাকে অন্য কারও ছবিতে অভিনয় করতে দেননি। মোহাম্মদপুরে বিলাসবহুল একটি ফ্ল্যাট কিনে দেন। সেই সঙ্গে দামি গাড়ি, গয়না, শাড়ি সবই। কিন্তু আমাকে বিয়ে নয়, রক্ষিতা হিসেবেই রাখা ছিল তার ইচ্ছা। এরপর ফারুক ঠাকুরের 'নেশা', 'ভূমিকম্প, 'প্রেম বিসর্জন', 'নিষ্ঠুর দুনিয়া', 'ভাগ্যের পরিহাস'সহ প্রায় ১০টি ছবিতে অভিনয় করি।
এর মধ্যে 'নিষ্ঠুর দুনিয়া' প্রযোজনা করি নিজেই। ঠিক ওই সময়ে ফারুক ঠাকুর একটি হত্যা মামলায় জড়িয়ে আত্দগোপনে চলে যায়। তখন আমার চারদিকে শুধুই অন্ধকার। ফারুকের প্রযোজনা সংস্থার নায়িকা হওয়ায় অন্য কেউ আমাকে চলচ্চিত্রে নেননি। একে একে বাড়ি-গাড়ি সবই চলে যায়।
শেষ সম্বল অল্প টাকা দিয়ে ধানমন্ডিতে একটি বিউটি পার্লার করি। সে ব্যবসাও বেশি দিন টেকেনি। এরই মধ্যে আমার মেয়ে বড় হয়ে অন্ধকার জগতের খপ্পরে পড়ে হারিয়ে যায়। সে বেঁচে আছে কি না জানি না। প্রায় চার বছর আগে মঈনুল ইসলাম মাহীন নামে এক ছেলেকে বিয়ে করি।
সন্তান জন্ম নেওয়ার চার মাসের মধ্যে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মাহীন মারা যায়। আবারও আমি পথে এসে দাঁড়াই। এখন আমার ঠিকানা মোহাম্মদপুরের শেখেরটেকের জীর্ণ বস্তিতে। ইতোমধ্যে অভিনেতা সুব্রতও আমার পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। সবার কাছে দু'হাত বাড়িয়ে বলছি এক টাকা, দুই টাকা যা পারেন আমাকে সাহায্য করেন।
আমাকে বাঁচান, আমার সন্তানকে বাঁচতে দিন। জনতা ব্যাংক লিঃ মোহাম্মদপুর কর্পোরেট শাখায় আমার একটি অ্যাকাউন্ট আছে। যার নম্বর : ০০২১৮৭৪০৯। এতে সাহায্য পাঠান। আমার মোবাইল নম্বর : ০১৭৭৬৯৩৪৯৯৭।
আবারও বলছি, সন্তানকে নিয়ে বাঁচতে চাই।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।