আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বড় উদ্বৃত্ত, তবু অস্বস্তি

চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) উদ্বৃত্তের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৩৮ কোটি ৪০ লাখ ডলার, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় তিনগুণেরও বেশি।

গত অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বর সময়ে উদ্বৃত্ত ছিল ৪৩ কোটি ৩০ লাখ ডলার।

অর্থনীতির গবেষক জায়েদ বখত বলছেন, রপ্তানি আয়ের ইতিবাচক ধারার পাশাপাশি আমদানি ব্যয় কমে আসার কারণেই লেনদেন ভারসাম্যে এই উদ্বৃত্ত।

বাংলাদেশ ব্যাংক সোমবার লেনদেন ভারসাম্যের এই তথ্য প্রকাশের পর জায়েদ বখত বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “স্বাভাবিকভাবে কোনো দেশের লেনদেন ভারসাম্যে বড় উদ্বৃত্ত থাকলে আমরা সে দেশের অর্থনীতির স্বাস্থ্য ভাল বলে মনে করি। কিন্তু আমাদের দেশের বর্তমান বাস্তবতায় সেটা বলা যাচ্ছে না।

তার যুক্তি, জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে বেশ কিছু দিন ধরে দেশে যে অস্থিরতা চলছে, তাতে ব্যবসা-বাণিজ্যের অনেক ক্ষতি হয়েছে। বিনিয়োগও স্থবির হয়ে আছে। ফলে আমদানি ব্যয় কমে এসেছে, উদ্বৃত্তি বাড়ছে।

“পরিস্থিতির আদৌ উন্নতি হবে কিনা- তাও নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। শিল্পোদ্যোক্তাদের মধ্যে আস্থার অভাব কাজ করছে।

এ সব কারণে তারা আমদানি কমিয়ে দিয়েছে। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে বিনিয়োগে। ”

বিনিয়োগ না বাড়লে চলতি ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ৭ দশমিক ২ শতাংশ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি (জিডিপি প্রবৃদ্ধি) অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে না বলেই মনে করছেন বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) এই গবেষক।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য পর‌্যালোচনায় দেখা যায়, গত অর্থবছরের ধারাবাহিকতায় লেনদেন ভারসাম্যে উদ্বৃত্ত নিয়েই ২০১৩-১৪ অর্থবছর শুরু করে বাংলাদেশ।

অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই-অগাস্ট) উদ্বৃত্তের পরিমাণ ছিল ৬৭ কোটি ৪০ লাখ ডলার।

জুলাই-অক্টোবর সময়ে ছিল ৯৩ কোটি ৩০ লাখ ডলার। আর নভেম্বর শেষে তা বেড়ে ১৩৮ কোটি ৪০ লাখ ডলারে দাঁড়ায়।

নিয়মিত আমদানি-রপ্তানিসহ অন্যান্য আয়-ব্যয় চলতি হিসাবের অন্তর্ভুক্ত। এই হিসাব উদ্বৃত্ত থাকার অর্থ হলো, নিয়মিত লেনদেনে দেশকে কোনো ঋণ করতে হচ্ছে না। আর ঘাটতি থাকলে সরকারকে ঋণ নিয়ে তা পূরণ করতে হয়।

২০১২-১৩ অর্থবছরে লেনদেন ভারসম্যে মোট উদ্বৃত্তের পরিমাণ ছিল ২৫২ কোটি ৫০ লাখ (২ দশমিক ৫২ বিলিয়ন) ডলার। তার আগে ২০১১-১২ অর্থবছরে ৪৪ কোটি ৭০ লাখ ডলারের ঘাটতি ছিল।

জায়েদ বখত বলেন, নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও রপ্তানি আয়ের প্রবৃদ্ধি বেশ ভাল। ছয় মাসের হিসাবে (ডিসেম্বর পর্যন্ত) ১৬ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি হয়েছে। রেমিটেন্স প্রবাহ সামান্য কমেছে।

আমদানি কিছুটা বাড়লেও কাঙ্ক্ষিত জিডিপি প্রবৃদ্ধির জন্য তা যথেষ্ট নয়।

“সে কারণেই বলছি, লেনদেন ভারসাম্যে বড় উদ্বৃত্ত আমাদের অর্থনীতির জন্য স্বস্তি বয়ে আনছে না। যদি স্বাভাবিক আমদানির পরও এই উদ্বৃত্ত থাকতো, তাহলে ভালো হতো। ”

বাণিজ্য ঘাটতিও কমেছে

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৩-১৪ অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বর সময়ের বাণিজ্য ঘাটতি গত বছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় ৩৫ শতাংশ কমেছে।

চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে পণ্য বাণিজ্যে সামগ্রিক ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ২২৪ কোটি ৬০ লাখ ডলার।

গত বছরের একই সময়ে এই ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৩৪৯ কোটি ৪০ লাখ ডলার।

২০১২-১৩ অর্থবছরে পুরো সময়ে বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৭০১ কোটি ডলার। ২০১১-১২ অর্থবছরে ছিল ৯৩২ কোটি ডলার।

তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বর সময়ে বিভিন্ন পণ্য আমদানি খাতে (এফওবিভিত্তিক, ইপিজেডসহ) মোট এক হাজার ৪০৬  কোটি ১০ লাখ ডলার ব্যয় করেছে বাংলাদেশ। আর পণ্য রপ্তানি থেকে (এফওবিভিত্তিক, ইপিজেডসহ) আয় হয়েছে এক হাজার ১৮১ কোটি ৫০ লাখ ডলার।

এই হিসাবে সামগ্রিক ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ২২৪ কোটি ৬০ লাখ ডলার।

তবে সেবা খাতের বাণিজ্য ঘাটতি সামান্য বেড়েছে। গত অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বর সময়ে এ খাতের ঘাটতি ছিল ১৩৫ কোটি ৫০ লাখ ডলার। চলতি অর্থবছরের একই সময়ে তা বেড়ে ১৩৮ কোটি ১০ লাখ ডলারে দাঁড়িয়েছে।

মূলত বিমা, ভ্রমণ ইত্যাদি খাতের আয়-ব্যয় হিসাব করে সেবা খাতের বাণিজ্য ঘাটতি পরিমাপ করা হয়।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১২-১৩ অর্থবছরে জুলাই-নভেম্বর সময়ে দেশে ৬৬ কোটি ৪০ লাখ ডলারের প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) এসেছিল। চলতি বছরের একই সময়ে এসেছে ৬৭ কোটি ৩০ লাখ ডলার।

এই সময়ে পুঁজিবাজারে (পোর্টফোলিও বিনিয়োগ) ২৫ কোটি ডলারের বিনিয়োগ এসেছে। গত বছরের জুলাই-নভেম্বর সময়ে এসেছিল ১১ কোটি ৬০ লাখ ডলার।




সোর্স: http://bangla.bdnews24.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।