আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মন খারাপের বারান্দা, জ্যোৎস্না অভিমান

আমার লেখা জুড়ে আমার ভালবাসা ছাড়া আর কিছু নেই।

এই বারান্দাটা শিমুর অনেক প্রিয়। কষ্টের সঙ্গী, সুখের সঙ্গী,খিল খিল হাসির সঙ্গী, চুপিচুপি কান্নার সঙ্গী। মন খারাপের সঙ্গী, মন ভালোর সঙ্গী। আজ মনটা খারাপ।

একটু বেশিই খারাপ। সাব্বিরের সাথে খুব ঝগড়া হল। এমন ঝগড়া আগে খুব কমই হয়েছে। খুব একা লাগছে। এই একাকীত্ব কাউকে বুঝানো যায় না।

একাই অনুভব করতে হয়। এতো ভালবাসা, তারপরও সাব্বির এভাবে অবিশ্বাস করতে পারল? একটা কাজে দুপুরের দিকে, বাহিরে বের হল শিমু। রাস্তায় মিনারের সাথে দেখা। মিনারের সাথে স্কুলে একসাথে পড়েছে। ভালো বন্ধু ছিল।

তবে কলেজে উঠার পর আর দেখা নেই, সাক্ষাৎ নেই। প্রায় আড়াই বছর দেখা। শিমুকে দেখে কথা বলতে আসল। নানা কথায়, কারও সাথে প্রেম হয়েছে কিনা জানতে চাইল। শিমু সাব্বিরের কথা বলল।

মিনারও ওর ভালবাসার মানুষের কথা বলল। কথা বলা শেষে, বিদায় নিয়ে চলে গেল। এইটুকুই। পাশে ঝুলানো ব্যাগে হাত দিয়ে, মোবাইল বের করে শিমু। মোবাইলের দিকে তাকিয়ে চোখ বড় বড় হয়ে যায়।

সাব্বির ৩১ বার কল করেছে। সাব্বিরকে কল ব্যাক করতে যাবে, তখনি আবার কল করল। কল ধরে সাব্বির রাগে কাঁপা গলায় বলল, কি ব্যাপার? কতবার কল দিছি?
- সরি।
- সরি তো উত্তর হল না। কতবার কল দিছি?
- ৩১ বার, ৩২ বারের বেলায় আমি ধরলাম।


- ভালো না, খুব? তা কি করতেছিলেন এতক্ষণ?
- তুমি আমাকে আপনি করে বলতেছ কেন?
- তো কি করে বলব? এতবার আমাকে কল করতেন, তারপর বুঝতাম আপনার কেমন লাগত। আচ্ছা আমি যদি এমন করতাম। আপনি আমাকে এতবার কল দিলেন, আমি ধরলাম না। আপনার কেমন লাগত?
- খারাপ লাগত। তোমার উপর অনেক রাগ করতাম।


- তাহলে আমার কি এখন, আপনার সাথে ভালো ব্যবহার করা উচিৎ?
- না। সরি বলছি আমি সাব্বির। আর শোন তো একটু।
- বলেন। কি বলবেন।


- রাস্তা দিয়ে আসার সময়, আমার স্কুল ফ্রেন্ড মিনারের সাথে দেখা হল। আমাকে ডাক দিল। ওর সাথে কথা বলছিলাম একটু। মোবাইল সাইলেন্ট করে ব্যাগে ছিল। টের পাই নি।


- বাহ, খুবই ভালো। স্কুল ফ্রেন্ডের সাথে গল্প করতেছিলেন। আড্ডা দিচ্ছিলেন। আমাকে এদিকে এভাবে রেখে। বাহ।


- এসব কি কথা? ওর সাথে তোমাকে নিয়েই কথা হইছে।
- থাক, আমি তো জানতে চাচ্ছিনা, আপনি তার সাথে কি বলছেন।
- প্লিজ সাব্বির। এমন করছ কেন তুমি?
- কেমন করব? আমি একটা মেয়ের সাথে ঘুরে বেরাতাম, তোমাকে এভাবে রেখে। তাহলে বুঝতা।

তোমার তো খারাপ লাগে নি। ভালই ছেলে বন্ধু পেয়ে গল্প করেছ। আর এইদিকে টানা কল করে যাচ্ছি। ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করে যাচ্ছি। কোন খেয়াল নেই।


- ঘণ্টার পর ঘণ্টা মানে? ৩১ বার কল টানা দিতে, বেশি হলে ২০ মিনিট লাগার কথা। এর চেয়ে বেশি আমি ওর সাথে কথা বলিনি।
- হ্যাঁ। তোমার কাছে, ৩১ বার কল কিছুই লাগবে না। কষ্ট তো আমার হইছে তাই না? তুমি তো ঐ ছেলের সাথে সময় কাটাইছ।


- ছিঃ, সাব্বির। এসব কথা বলতে তোমার মুখে বাঁধছে না? অন্য ছেলেদের মত আচরণ করবে না।
- না, বাঁধছে না। আমি অন্য ছেলেদের মতই। আমার গার্লফ্রেন্ড অন্য একটা ছেলের সাথে সময় কাটাবে, এটা আমার সহ্য হবে না।

বুঝতে পারছেন আপনি?
- আবার আপনি করে বলতেছ? আর একটা সোজা বিষয়কে তুমি এভাবে পেচাচ্ছ কেন? আচ্ছা ভুল হইছে, মাফ করে দাও। আর এমন হবে না। এখন ভালবাসি বল।
- হ্যাঁ খুবই সোজা বিষয় তাই না? ভালো তো। যান যান।

আপনার ঐ ফ্রেন্ডের সাথেই কথা বলেন, প্রেম করেন, ভালবাসি বলেন। আমাকে তো আপনার দরকার নেই।
- উল্টাপাল্টা কথা বলবে না একদম।
- উল্টাপাল্টা না। সত্যিই বলছি।

আপনার কাছে,আমার থেকে সে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তাকে নিয়েই থাকেন। ভালবাসা কেন, চাইলে আরও কিছু করতে পারেন।
- ধ্যাৎ।


শিমুর এসব নোংরা কথা সহ্য হচ্ছিল না।

কেটে দিল কল। সাব্বির আর কল করল না। একটা ছোট বিষয়কে কতদূর পর্যন্ত নিয়ে গেল সাব্বির। সারাটা দিন এসব ভাবতে ভাবতেই গেল। পারল কি করে, এসব বলতে? সাব্বির এতো ভালবাসে, এতো বিশ্বাস করে।

আর এগুলো বলল আজ। ছিঃ। শিমুও রাগ করে কল করেনি আর সাব্বিরকে। প্রেমিক প্রেমিকারা অনেক স্বার্থপর হয়। নিজের মানুষটাকে শুধু নিজের করেই পেতে চায়।

ছেলের পাশে অন্য মেয়ে, বা মেয়ের পাশে অন্য ছেলে, কখনই সহ্য হয় না। করা যায় না সহ্য। জানে, তাদের সাথে কিছুই হচ্ছে না। তবুও মেনে নেয়া যায় না। সাব্বিরের বেলায়ও তাই হল।

শিমু হলে একই কাজ করত। তাই বলে অবিশ্বাস করবে? এতগুলো খারাপ কথা বলবে? রাগ হতেই পারে। রাগ শুধু সাব্বিরের একার না। শিমুরও আছে। জেদ শুধু সাব্বিরের একার না।

শিমুও জেদ ধরে বসে আছে। আবার ভিতরে ভিতরে কষ্ট পেয়ে যাচ্ছে। সাব্বিরও খুব কষ্ট পাচ্ছে, শিমু জানে। শিমু মন খারাপ করে এই বারান্দায় বসে আছে। গ্রিলে হাত দিয়ে।

বাহিরে অনেক সুন্দর জ্যোৎস্না। শিমু জানে, সাব্বিরও ঠিক মন খারাপ করে, একা একা চাঁদের আলোয় হাঁটছে। একটু পর পর মোবাইলটা বের করে,শিমুর নাম্বার তুলছে। কিন্তু কল করছে না। শিমু জানে, হাতে একটা সিগারেট আছে এখন সাব্বিরের।

শিমুর সাথে রাগ হলেই, সিগারেট কিনে সাব্বির। কিন্তু সাহস করে খায় না। কি বোকা ছেলে, কাকে ভয় দেখাবার জন্য যে সিগারেট কিনে। সিগারেটের সাথে ম্যাচ কিনতে হয় তাও জানে না। ম্যাচ কিনবে না সাব্বির।

শিমুর সাথে মিটমাট হয়ে গেলেই, সিগারেট ফেলে দিবে। একা একা কষ্ট পাবে। বুকের ভিতর,ব্যথা জমিয়ে রাখবে। শিমু যেমন রাখছে। একসময় সহ্য করতে না পেরে, কল করবে।

যার কষ্টের সীমা আগে পেরিয়ে যাবে, সেই কল করবে। শিমু গ্রিলের ফাঁক দিয়ে, হাত বের করল বাহিরে। জ্যোৎস্না ধরতে চাচ্ছে, ছুঁয়ে দিতে ইচ্ছা করছে। শিমুর খুব ইচ্ছা করছে, জ্যোৎস্না গায়ে মাখাতে। চাঁদের আলোর নিচে হাঁটতে।

সাব্বিরকে ভেবে জ্যোৎস্নায় একা একা কাঁদতে। অভিমান শেষে, হাতে লুকিয়ে রাখা, একটা সিগারেট জ্যোৎস্নায় ফেলে দিতে। সাব্বিরকে জ্যোৎস্নার আলোয় একটু জড়িয়ে ধরতে। কিন্তু শিমু যে মেয়ে। এই রাতে জ্যোৎস্নায় হেঁটে, সাব্বিরের জন্য কাঁদতে পারবে না।

বুকের ভিতরের কষ্টগুলো, এই বারান্দায় বন্দী করে রাখছে। গ্রিল ভেদ করে, কোনদিন তা জ্যোৎস্নার আলোতে পৌঁছায় না। তবুও জানে, কিছু অনুভব আকাশে বাতাসে ভেসে, সাব্বিরের কাছে চলে যাচ্ছে। সেই অনুভবে শিমুর জন্য, সাব্বিরের বুকে কষ্ট হচ্ছে। একাকীত্ব আসছে।

চিনচিনে একটা ব্যথা হচ্ছে। সব অভিমান ভুলে, সাব্বির খানিক পরেই কল করবে। বাচ্চা ছেলের মত, কেঁদে কেঁদে সরি বলবে। শিমুও কাঁদবে। দুজনের চোখের জলে, কষ্ট গুলো ধুয়ে যাবে।

এই কষ্ট ধুয়ে যেতে, জ্যোৎস্নার আলো লাগে না, রাতের আঁধার লাগে না, হিম শীতল বাতাস লাগে না। শুধু একটু অনুভব লাগে। ইগো থাকলে ভালবাসা ধুমরে পরবেই। বিলীন হয়ে যাবেই। একজনকে ঠিকই ইগো ভুলে, ভালবাসতে হয়।

এক বুকের টানে, ভালবাসা ঠিকই অন্য বুকে আশ্রয় নেয়। ভালবাসা বোঝাপড়ার ব্যাপার। চাঁদের আলোয়, যেমন সব অস্পষ্ট, তবুও স্নিগ্ধ। তেমনি ভালবাসায় ব্যাপারগুলো অনেক অস্পষ্ট, তবুও মধুর। বুঝে নিতে হয় শুধু।

অনুভব করতে হয়।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।