আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আইন পড়া একটা আলাদা জীবন

আপনার ছোটবেলার গল্প শুনতে চাই।

আমার জন্ম ডোমারের চিকনমাটি গ্রামে। বর্তমানে নীলফামারী জেলার অন্তর্গত ডোমার একটি উপজেলা। ব্রিটিশ আমলে ডোমার ছিল অবিভক্ত বাংলার একটি ছোট্ট গ্রাম। আমার নানা ফরিদউদ্দিন সরকার একজন সম্পন্ন গৃহস্থ ছিলেন।

নাতিকে খুব ভালোবাসতেন। তাকে নামাজ শিখিয়েছিলেন। তাকে গরুর গাড়িতে করে বিয়ে-শাদিতে নিয়ে যেতেন। তখনকার দিনে বিয়েতে কাসার থালা-বাসন কাঁচা টাকা উপহার দেওয়া হতো। এটা বহুযুগ পর্যন্ত চালু ছিল।

এমনকি ১৯৫৬ সালে আমি যখন বিয়ে করি, তখন যেসব উপহার এসেছিল তা সবই ছিল কাসার থালা-বাসন। তো আমার নানা বিয়ের আসরে গিয়ে পকেট থেকে একটা পাঁচ টাকার কয়েন বের করে উপহার দিয়েছিলেন। আমার নানা স্নেহপ্রবণ মানুষ ছিলেন। তার ছয়টি ছেলে ছিল। পাঁচজন মারা গেছেন, একজন বেঁচে আছেন।

আমার আব্বার বাড়ি ছিল কুচবিহার। স্কুলে ছুটি হলে মামার বাড়িতে যেতাম। নানা আমাদের খুব আদর করতেন। তখন ম্যালেরিয়া, কালাজ্বর, পেটে অসুখ, নিউমোনিয়ার প্রকট ছিল। সন্ধ্যা হলে সব অন্ধকার হয়ে যেত।

বিদ্যুৎ বাতি ছিল না। একটা বাজার ছিল বাড়ির কাছে। সেখানেই জনসাধারণের মিলনমেলা বসত। স্থানীয় হাইস্কুল ছিল, যেখানে মেয়েরাও পড়ত। উঁচু ক্লাসের একটি সুন্দরি মেয়ে আমার বড় মামার স্ত্রী হয়েছিলেন।

মামার হাত ধরে আমি ওই স্কুলে ক্লাস নাইনের শ্রেণীকক্ষে গিয়ে বসতাম। মামির বিয়ে খেতে গিয়েছিলাম সেটাও স্মৃতিতে উজ্জ্বল। বিয়েতে অর্ধেক পথ পেরিয়ে আমার পুলিশ অফিসার মামা অনুভব করলেন, তার মাথায় টুপি নেই। তিনি আমার টুপি তার মাথায় ধারণ করে বিয়ে করেছিলেন। সন্ধ্যাবেলায় বিয়ে বাড়িতে পেঁৗছে দলিজ ঘরে বসার ব্যবস্থা হলো।

তারপর অনেক রাত পর্যন্ত অপেক্ষা, বিয়ে আর হয় না। কারণ দেনমোহরের টাকা নিয়ে গোলমাল লেগেছে। আমার নানা বলছেন, 'দুই হাজার টাকা দেনমোহার স্থির হয়েছে, আমি সেটাই দেব। ' আর মামির বাবা বলছেন, 'আমরা দুই হাজার বলেছি ঠিকই, কিন্তু আমাদের পরিবারের রীতি হচ্ছে বেজোড় সংখ্যার টাকা দেওয়া। ' পরে দুই হাজার আট আনায় বিয়ে হয়।

মামার বিয়েতে দুই মাসব্যাপী অনুষ্ঠান হয়েছিল। এটাই ছিল তখনকার গ্রাম।

আপনার আব্বা পল্লী গানের সম্রাট আব্বাসউদ্দীন। তার সঙ্গে তো আপনার অনেক স্মৃতি।

আব্বার জন্মস্থান ছিল কুচবিহার।

এটা ছিল ভারতের করগমিত্র রাজ্যে। বছরে এক লাখ টাকা ব্রিটিশ সরকারকে দিতে হতো। বিনিময়ে কুচবিহারের মহারাজা অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে স্বাধীন ছিলেন। তিনি বিধানসভা করেছিলেন। সেখানে ইলেকশন হতো।

আইনসভা থেকে যে আইন পাস হতো সে অনুযায়ী দেশ পরিচালনা করতেন। একজন হিন্দু মহারাজা হিসেবে তিনি মুসলমানদের সঙ্গে সুষম ব্যবহার করেতন। হিন্দু-মুসলমান সম্পর্ক এত চমৎকার ছিল যা আজকের দিনেও কল্পনা করা যায় না। আমার যখন জন্ম হয়, তখন আমার আব্বা কলকাতায় চাকরি করতেন। তিনি চিঠি লিখে আমার মাকে আশ্বস্ত করতেন, উৎসাহ দিতেন-আমাকে কীভাবে রোজ গায়ে তেল মাখাতে হবে, পরিচর্যা করতে হবে ইত্যাদি।

আমার মাকে তিনি উপদেশ দিতেন কিন্তু ডোমারে আসতেন না। কারণ তার রুজি রোজগার ছিল না বললেই চলে। আব্বার সঙ্গে কবি কাজী নজরুল ইসলামের গভীর সখ্যতা ও বন্ধুত্ব ছিল। তিনি আমাকে না দেখেই কাজী নজরুল ইসলামের কাছে বলেছিলেন-'কাজীদা, আল্লাহর অসীম অনুকম্পায় আমার এক খোকা এসেছে ঘরে, আপনি যদি খোকার নামকরণ করেন। ' মহা উল্লসিত হয়ে দুদণ্ড চোখ বুজে বলে উঠলেন, 'খোকার নাম রইল মোস্তাফা কামাল।

কামালের মতোই যেন একদিন দেশ স্বাধীন করতে পারে- দেশের অনাচার-অবিচারকে দলিত-মথিত করে ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা করতে পারে- আর ডাক নাম রইল দোদুল। ' এই দোদুলটা একটু বেশি লম্বা বলে এটা 'দুলু' হয়ে গিয়েছিল। কাজী নজরুল ইসলামকে পরে কলকাতায় আমি দেখেছি। তিনি আমাদের বাড়িতে এসেছিলেন। আমাকে কোলে নিয়েছেন, আদর করেছেন।

অনেক দোয়া করেছিলেন।

আপনার ছেলেবেলা কেটেছে অত্যন্ত শিল্প-সংস্কৃতির আবহের মধ্যে। আপনাদের বাসায় কাজী নজরুল, জসীমউদ্দীন থেকে শুরু করে অনেকেই আসতেন।

আমাদের কলকাতা শহরের ভাড়া বাড়িতে কাজী নজরুল ইসলাম আসতেন। শুধু নজরুল ইসলাম নন, বাংলাদেশের সুপ্রসিদ্ধ ব্যক্তিরা হিন্দু-মুসলমান নির্বিশেষে শুধু আব্বাসউদ্দীনের জন্য তাদের গতায়াত একেবারে অবারিত ছিল।

সেখানে আমরা অনেক বড় বড় মানুষকে দেখেছি। তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়, মনোজ বসু, শৈলজারঞ্জন মজুমদার, কবি গোলাম মোস্তফাসহ অনেকেই আমাদের বাড়ি অলঙ্কৃত করেছিলেন। আমি তখন শিশু।

তাদের কোনো স্মৃতি মনে পড়ে?

যতটুকু মনে পড়ে, একটি ছোট খাতায় তাদের সই নিয়ে রেখেছিলাম। খাতাটা কোথায় হারিয়ে গেছে আর পেলাম না।

আমাকে সবাই আশীর্বাদ করতেন, দোয়া করতেন। সবার স্নেহে আমি বড় হয়েছি। কাজী আবদুল ওয়াদুদ, কবি আবদুল কাদির, বেনজীর আহমেদ, কবি হাতেম আলী নওরোজী, ড. আনিসুজ্জামানের আব্বা এটিএম মোয়াজ্জম আসতেন। মোয়াজ্জম চাচা আব্বার চিকিৎসা করেছিলেন। হবীবুল্লাহ বাহার তার সন্তান ইকবাল বাহার, সেলিনা বাহারকে নিয়ে আসতেন, আব্বার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতেন।

সঙ্গে আমারও পরিচয় হয়ে যেত।

ঢাকায় এলেন কত সালে?

১৯৩৪ থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত আমি কুচবিহারের জেন্স কিন্স স্কুলে পড়াশোনা করি। এরপর বালিগঞ্জ হাইস্কুলেও আমি পড়াশোনা করেছি। এক সময় এর প্রধানশিক্ষক ছিলেন কবি গোলাম মোস্তফা। আমরা স্থায়ীভাবে বসবাস করার জন্য ১৯৪৬ সালে কলকাতায় গিয়েছিলাম, কিন্তু সেখানে থাকতে পারলাম না।

১৯৪৭ সালের জুন মাসের দিকে আমরা বুঝতে পারলাম বাংলা ভাগ হয়ে যাবে। আমাদের কুচবিহারও চলে যাবে। আমরা অজানা জায়গায় চলে যাব ঢাকায়। জুন মাসে আব্বা আমাদের কলকাতা থেকে পুনরায় কুচবিহার পাঠিয়ে দিলেন, আমি আবারও জেন্স কিন্স স্কুলে ভর্তি হলাম। অক্টোবর মাসে আব্বা শিল্পী বেদারউদ্দীন আহমেদকে কুচবিহার পাঠিয়ে আমাদের ঢাকায় নিয়ে এলেন।

ঢাকায় আসার পর আব্বা আমাকে ঢাকা কলেজিয়েট স্কুলে ভর্তি করলেন। সেখানে ভর্তির তিন মাস পর আমার ম্যাট্রিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৪৮ সালে ম্যাট্রিক পরীক্ষায় সারা পূর্ব-পাকিস্তানে আমি সপ্তম স্থান অধিকার করলাম। পরবর্তীতে আমি সব পরীক্ষায় ভালো ফল করেছি।

আপনার ছোট ভাই মোস্তফা জামান আব্বাসী ও বোন ফেরদৌসী রহমান গান শিখলেন, আপনি শিখলেন না কেন?

আমার ছোটবেলায় কোনো বর্ণ পরিচয় হয়নি, অর্থাৎ অ আ ক খ-এর বই নিয়ে বর্ণমালা শিখিনি।

আমি বাংলা শিখেছি খোদার দান হিসেবে। আমি জানি না এভাবে পৃথিবীর আর কারও বর্ণ পরিচয় হয়েছে কিনা। আব্বার অসংখ্য রেকর্ড ছিল বাসায়। ওই রেকর্ডের লেভেলগুলো দেখে দেখে আমি বলতাম, এটা 'ঈদ মোবারক হো', এটা 'ও মন রমজানের রোজার শেষে' ইত্যাদি। ওই রেকর্ডের লেভেল দেখে দেখে আমি বাংলা শিখে ফেলি।

তবে স্কুলে ইংরেজি শিখেছি। আব্বা আমাকে অনেক বড় বড় সভায় নিয়ে যেতেন, সেখানে তিনি গান গাইতেন। আমার যখন বয়ঃসন্ধি হলো তখন দেখলাম আমার গলায় দু-তিনটি আওয়াজ। সংগীতের প্রতি আমার এত প্রীতি, এত ভালোবাসা কিন্তু পড়াশোনায় মন দিয়ে পরে দুঃখের সঙ্গে সিদ্ধান্ত নিলাম গানের চৌহদ্ধি হয়তো পেরোনো সম্ভব হবে না। গানের ব্যাকরণ, কে শুদ্ধ সুরে গাইল, কার সুর বিচ্যুত হলো এটা আমার কানে ভীষণ বাজে।

আমি গায়ক না কিন্তু গানের একজন বড় ক্রিটিক। এবং আমার কানে উতরাইনি এ রকম শিল্পীকে সার্টিফিকেট দিতে আমি রাজি নই। গান গেয়ে আমাকে সন্তুষ্ট করা কঠিন ব্যাপার। এ জন্য আমাকে কেউ গান শোনাতে আসে না। দাবি করতে পারি, আমি শুদ্ধ গানের একজন সমজদার।

আপনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেরা ছাত্রদের একজন। শিক্ষকতায় প্রবেশ না করে আইন পেশায় ঢুকলেন কেন?

পড়াশোনায় আমার যে রেকর্ডগুলো আছে, এগুলো এখনো অনতিক্রম হয়ে আছে। কেউ এগুলো অতিক্রম করতে পারেননি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পলিটিক্যাল সায়েন্সে বিএ অনার্স এবং এমএতে আমি যে রেজাল্ট করেছিলাম তার ওপর আমি সেন্ট্রাল গভর্মেন্টের মেরিট স্কলারশিপ পেয়েছিলাম। ওই স্কলারশিপের আওতায় আমি লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিঙ্ অ্যান্ড পলিটিক্যাল সায়েন্স থেকে এমএসসি [ই-কন] করেছি।

তারপর লিঙ্কন-ইন-এ আমি ব্যারিস্টারি পড়ি, আব্বার এবং অনেকের সাহায্যে। আমার ছাত্র বয়সে যে লেখাপড়া করতে পেরেছি সেটা আব্বা, মা এবং আমার পুরো পরিবারের অবদান। তবে আমি একদম শিক্ষকতায় থাকতে চায়নি তা নয়। আমি চেয়েছিলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে খণ্ডকালীন শিক্ষকতা ও পাশাপাশি হাইকোর্টে আইন প্র্যাকটিস করতে। তবে আমি ১৯৬১-১৯৬৮ সাল পর্যন্ত আট বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে খণ্ডকালীন অধ্যাপনা করেছি।

তার রেজাল্ট আমি পেয়েছি। শিক্ষকতা জীবনে যাদের পাঠদান করেছি তার মধ্যে অন্তত একশ জন জেলা জজ আমার ছাত্র, পনের জন হাইকোর্টের জজ আমার ছাত্র ছিলেন, ছয়জন প্রধান বিচারপতি আমার ছাত্র। এমনকি বর্তমান প্রধান বিচারপতি মোহাম্মদ মোজাম্মেল হোসেন আমার ছাত্র। এর মধ্যে অনেকে অবসরেও গিয়েছেন। তাদের নিয়ে আমি গর্বিত।

আইন বিষয়ে পড়তে কে উৎসাহিত করেছিলেন?

আমার দাদা জাফর আলী, তিনি তুফানগঞ্জ মহকুমার কোর্টের একজন উকিল ছিলেন। তার ইচ্ছা ছিল আমার আব্বা আব্বাসউদ্দীনকে ব্যারিস্টারি পড়াবেন। আব্বা তো হতে পারলেন না গানের লাইনে চলে গেলেন। তিনি খুব ছোটবেলা থেকে আমার কানে মন্ত্র পড়ার মতো বারবার বলতেন তোকে ব্যারিস্টার হতে হবে। ব্যারিস্টার কী? ব্যারিস্টার হলে কী করতে হয় সে ধারণাও আমার ছিল না।

পরে অনার্সে এসে বুঝতে পারি, আইন পড়া একটা আলাদা জীবন। আমি যে ব্যারিস্টার হব, আমার আব্বার ইচ্ছাকে পূর্ণ করব- এই সংকল্প নিয়ে আইন বিষয়ে পড়াশোনা করি। তিনি জীবিত থাকতে আমাকে ব্যারিস্টার দেখে গেছেন।

আপনি বিচারপতি জীবনকে কীভাবে উপভোগ করেছেন?

আব্বা সব সময় বলতেন, 'বাবা তুমি চাকরি কর না। চাকরি মানে চাকর।

' তিনি খুব অল্প বেতনে কৃষি বিভাগে কেরানির চাকরি করতেন। দার্জিলিং বেড়ানো তার শখ ছিল। ছুটি পেলে তিনি দার্জিলিং যেতেন। তো এক ছুটিতে তিনি দার্জিলিং বেড়াতে গেলেন। সেখান থেকে ফেরার আব্বাকে খুব গঞ্জনা শুনতে হয়।

তার বস তাকে বলেছিলেন, 'পঁচাত্তর টাকার কেরানি, তার আবার দার্জিলিং যাওয়ার শখ। ' তখন আব্বা তাকে বলেছিলেন, 'আপনাকে দার্জিলিং থেকে খুব সুন্দর একটা চিঠি লিখেছিলাম। ওই চিঠিটা আপনি রেখে দেবেন। একদিন আপনার ছেলেমেয়েরা গর্ব করে বলবে, আব্বাসউদ্দীন আমার পিতাকে চিঠি লিখেছিলেন। ' আব্বা ওইদিনই চাকরি ছেড়ে দেন।

আমার পড়াশোনা শেষে আমি বহুবার চাকরির অফার পেয়েছি, তখন বারবার আব্বার কথা কথা মনে পড়ত। বঙ্গবন্ধু আমাকে ১৯৪৫ সাল থেকে চিনতেন। তিনি আব্বাকে খুব মান্য করতেন। আব্বাকে তার হোস্টেলে নিয়ে যেতেন গান গাওয়ার জন্য। তিনি আমাকে ভীষণ আদর করতেন।

আমি যখন বিলেতে পড়তাম তখন বঙ্গবন্ধু কি যেন কাজে বিলেতে গিয়েছিলেন। আমি তাকে রান্না করে খাওয়াছিলাম। বঙ্গবন্ধু ১৯৭২ সালে তৎকালীন অ্যাটর্নি জেনারেল ফকির শাহাবুদ্দিন সাহেবকে আমার কাছে পাঠালেন। বঙ্গবন্ধু তাকে বলেছেন-'কামালকে জিজ্ঞেস কর, সে জজ হতে রাজি কিনা। আমি তাকে আজকেই জজ করে নেব।

' তখন জজদের মাইনে ছিল এক হাজার টাকা। আমি তখন অনেক বেশি আয় করি। কেবল টাকার মুখ দেখেছি। আমি শাহাবুদ্দিন ভাইকে খুব বিনয়ের সঙ্গে বললাম, শাহাবুদ্দিন ভাই, আমাকে কি চিরদিন গরিব থাকতে হবে। ১৯৭৫ সালের পর পটপরিবর্তনের পর আবার আমাকে ডাক পড়ে, আমি যায়নি।

তারপর বিচারপতি কামালউদ্দিন আহমদ যখন প্রধান বিচারপতি হলেন তিনি আমাকে নেওয়ার জন্য বেশ আটঘাট বেঁধে লেগে গেলেন। আমাকে খুব আদর করতেন। তিনি আমাদের বালিগঞ্জ স্কুলের ছাত্র। তিনি আমার এমন অবস্থা করলেন, যে আমার মক্কেল আসা বন্ধ হয়ে গেল। আমার মক্কেলদের তিনি বলতেন, 'তার কাছে কেস নিয়ে কী হবে।

দুই দিন পর মোস্তাফা কামাল বিচারপতি হয়ে যাচ্ছেন। ' শেষ পর্যন্ত আমি আত্দসমর্পণ করতে বাধ্য হলাম। আমি বিচারপতি থাকাকালে মনপ্রাণ দিয়ে দায়িত্ব পালন করেছি। বিচারপতি থাকাকালেও আমার পরিবারকে আমি যথেষ্ট সময় দেওয়ার চেষ্টা করেছি। আমার স্ত্রী হোসনে কামাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগে দীর্ঘদিন শিক্ষকতা করেছেন।

বড় মেয়ে ড. নাশিদ কামালও শিক্ষকতায় যুক্ত আছেন। অন্যরা নিজ নিজ সংসার করছেন।

আপনার অবসর সময় কীভাবে কাটে?

অবসরে আমি নিয়মিত গান শুনি। বড় বড় ওস্তাদদের গান শুনি, পুরনো দিনের গান শুনি। এখানকার ওস্তাদদের গান শুনি।

গান শুনে শুনে আমার একটা পাকা কান তৈরি হয়েছে। কোনো আজেবাজে গান আমাকে শোনাতে পারবেন না। এক সময় প্রচুর বই পড়তাম, কিন্তু গত দুই-তিন বছর বই পড়া কমে গেছে। আমার চোখের অসুখ করেছে। ভালো দেখতে পারি না।

মস্তিষ্ক ঘূর্ণন একটা হয়েছে, এর ফলে টেলিভিশন দেখা, কথা বলা, কথা শোনা সব আমার জন্য অত্যন্ত বেদনাদায়ক। ঠিক নরমাল আমার জীবন এগোতে পারছি না।

 

 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।