তখন ফুলির (ছদ্মনাম) বয়স ১৬। ইচ্ছের ডানা মেলে ওড়ার ওই বয়সেই সমাজের এক শ্রেণীর মানুষরূপী কীটের বর্বরতার শিকার হন তিনি!
অবিশ্বাস্য হলেও পৃথিবীর বর্তমান সভ্যতা এতোই উঁচু (!) স্তুরে পৌঁছেছে যে, টানা ৪০ দিন ৪২ জন পাষণ্ড বর্বর পাশবিকতা চালায় ফুলির উপর!
কেরালায় (ভারতের দক্ষিণের রাজ্য) ঐ ঘটনাটি ‘সুর্য্যনেলি ধর্ষণ’ মামলা হিসেবে পরিচিত।
গ্রামে বাবা-মার সঙ্গে থাকতেন ফুলি। কিন্তু সামাজিক জীবের পাশবিকতার শিকার হয়ে উল্টো অভিজাত শ্রেণীর প্রতিবেশিদের বিদ্রুপ আর অত্যাচারের মুখে এলাকাই ছাড়তে হয় তাদের!
সমাজের এমন ভয়ানক রোগ আর ঔষধের শিকার ফুলির জীবন নিয়ে ভারতের একটি সংবাদ মাধ্যম এমনই প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
সমাজের প্রতি ক্ষোভ ঝেড়ে ফুলির বাবা বলেন, “সে সময় কেউ সান্ত্বনা দেওয়া তো দূরে থাক, আমাদের গ্রহণই করেনি! যখন কেউ আমাদের দেখতো, অবহেলা করে চলতো! আমরা গৃহবন্দী হয়ে পড়েছিলাম তখন!”
ফুলির বাবার বক্তব্যের উদ্বৃতি দিয়ে সংবাদ মাধ্যমটি উল্লেখ করে, ফুলি তখন কিশোরী, বাসের এক হেলপার তাকে অপহরণ করে নিয়ে যায়, তারপর ধর্ষণ করে! ঐ হায়েনার পর অন্য পশুরাও ফুলির উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে!
সংবাদ মাধ্যম জানায়, ঐসব হায়েনাদের মধ্যে কেরালার বর্তমান সময়ের অনেক জনপ্রতিনিধি ও প্রভাবশালী ব্যক্তিও রয়েছেন।
ফুলির বাবা বলেন, “সর্বস্ব কেড়ে আমার মেয়েকে রাস্তায় ছুঁড়ে ফেলা হয়, বাড়ি ফেরার মতো কোনো পথ ছিল না ওর! মেয়ের আঘাত এতোই ভয়ানক ছিল যে, না সে বসতে পারছিল, না দাঁড়াতে পারছিল!
সংবাদ মাধ্যম আরও জানায়, ১৯৯৯ সালে কেরালার বিশেষ আদালতে এ ঘটনায় প্রথম নারী নির্যাতন মামলা দায়ের করা হয়।
ঐ সময় ৩৫ জন অভিযুক্তকে দোষী সাব্যস্ত করে আদালত। কিন্তু ৩ বছর পর কেরালার সর্বোচ্চ আদালত আশ্চর্যজনকভাবে ঠিক তার উল্টো রায় দেয়। মাত্র একজনকে দোষী সাব্যস্ত করে।
যদিও ঐ রায়টি অনেক বিতর্কের মুখে পড়েছিল।
সংবাদ প্রতিষ্ঠানটি তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করে, ২০০৫ সালে ফুলির পরিবার ও রাজ্যের তদন্ত কর্মকর্তা দেশটির সর্বোচ্চ আদালতে কেরালা হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন।
কিন্তু সেই আপিলের শুনানি আজও শুরু হয়নি!
পিতামাতার পেনশনে চলা পরিবারের এক মাত্র অবলম্বন ফুলিকে সরকারের একটি বিভাগে পিওনের চাকরি দেওয়া হয়েছিল।
কিন্তু গত ফেব্রুয়ারিতে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ এনে তাকে বরখাস্ত ও গ্রেফতার করা হয়!
ফুলির সহকর্মী ও নিকটাত্মীয়রা জানান, প্রভাবশালী ও জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধে আইনি লড়াই অব্যাহত রাখার জন্যই ফুলিকে হয়রানি করা হচ্ছে।
তবু, ফুলির পরিবার আশা করছে, একদিন ঠিকই ন্যায়বিচার পাবে সমাজের অবিচারের শিকার সংগ্রামী ফুলিরা! ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।