জীবন বুনে স্বপ্ন বানাই মানবজমিনে অনেক চাষ চাই
আপনি নবীন লেখক। কলম ধরেছেন একটা ভালো গল্প লেখার জন্য। কিন্তু কলমের ডগা দিয়ে কিছুই বের হচ্ছে না। আটকে গেছেন। আটকে গেছে আপনার লেখা।
এই অভিজ্ঞতা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য আপনার সৃজনশীলতার দিকে চোখ ফেরান। অফুরান সৃজনশীলতা নিয়ে আপনি জন্ম নিয়েছেন। সেই সৃজনশীলতার খনিতে এবার খনন করুন।
কিভাবে ?
আপনাকে একটা অনুশীলনী করতে হবে। নিশ্চিত থাকেন, তাতে করে আপনি সৃজনশীলতাকে ব্যবহার করতে পারবেন।
আপনার ভেতরে থাকা সুপ্ত আগ্নেয়গিরির মতো টগবগ করতে থাকার সৃজনশীলতা বেরিয়ে আসবে আপনার লেখায়।
এবার সহজভাবে বোঝা যাক। ভালো লেখার সবচেয়ে বড় গুণ হল সেটার দৃশ্যমানতা। যেই লেখা পড়লে পাঠক দৃশ্য দেখতে পায়, সেটা ভালো লেখা। সুতরাং একজন লেখককে লেখনীর মাধ্যমে দৃশ্য তৈরি করে যেতে হয়।
তার বর্ণনার মাধ্যমে তুলে আনতে হয় একটা নিখুঁত দৃশ্য। কিন্তু সেই দৃশ্য লেখনীর মাধ্যমে তুলে ধরার পূর্ব শর্ত হল, নিজের মানস-চোখে সেই দৃশ্যটি দেখতে পারা।
সমস্যা হল, অনেক নবীন লেখক এই দৃশ্য মানস-চোখে দেখতে পান না। যারা তাদের মানস-চোখ ব্যবহার করতে পারেন না, তাদের জন্য একটা অনুশীলনী। এই অনুশীলনী আপনার কল্পনা শক্তি বাড়াবে।
আপনার স্মৃতি শক্তি বাড়াবে।
দৃশ্য দেখার অনুশীলনী :
০১) মেরুদন্ড সোজা করে বসুন অথবা শুয়ে পড়–ন। বসে বা শুয়ে যে ভঙ্গি আপনার আরাম লাগে সেই ভঙ্গিতে যান। কিন্তু শর্ত হল, মেরুদন্ড সোজা রাখতে হবে। চোখ বন্ধ করে দিন।
শরীর শিথিল করে দিন।
০২) এবার নাক দিয়ে গভীর শ্বাস গ্রহণ করুন। ধীরে ধীরে শ্বাস গ্রহণ করুন। ধীরে ধীরে মুখ দিয়ে শ্বাস ত্যাগ করুন। পুরো প্রক্রিয়াটির মধ্যে কোন তাড়াহুড়ো করবেন না।
ধীরে শ্বাস নিন এবং ত্যাগ করুন।
০৩) শ্বাস গ্রহণ এবং ত্যাগের সময় আপনি কোন শিথিলায়ন মিউজিক ব্যাবহার করতে পারেন। ধ্যান বা যোগ ব্যায়ামের সময়ে যে ধরনের শিথিলায়ন মিউজিক ব্যাবহার করা হয়, সেটা শুনতে পারেন।
০৪) ঘরে সুগন্ধি এয়ার ফ্রেশনার স্প্রে করে দিতে পারেন। নিজের গায়ে সুগন্ধি মাখাতে পারেন।
০৫) চোখ বন্ধ করে গভীর শ্বাস প্রক্রিয়া চালিয়ে যেতে থাকুন। এক সময় খেয়াল করবেন, আপনার শরীর সম্পূর্ণ শিথিল হয়ে গেছে।
এবার মূল কাজ । মানে এবার আপনি মানস-চোখে দৃশ্য দেখবেন।
০৬) নিজেকে একজন শিশু হিসেবে কল্পনা করুন।
অথবা নিজের শৈশবে ফিরে যান।
০৭) নিজেকে কোন প্রাকৃতিক পরিবেশে দেখুন। যেমন : প্রান্তর, মরুভূমি, পাহাড়, বন বা সমুদ্রের তীর। একেক দিন একেক পরিবেশে যেতে পারেন।
০৮) সচেতন এবং ইচ্ছাকৃতভাবে আপনার পঞ্চ ইন্দ্রিয় ব্যবহার করুন।
যেমন :
সমুদ্র সৈকতের ক্ষেত্রে -
সামুদ্রিক বাতাসের গন্ধ নিন। ( নাক)
পাখির গান শুনুন, পাতা ঝরার শব্দ শুনুন, সামুদ্রিক ঢেউয়ের শব্দ শুনুন । (কান)
সাগরের গভীর নীল সৌন্দর্য দেখুন। ( চোখ)
সাগরের লোনা জলের স্বাদ নিন। (জিহ্বা)
বাতাসের / পানির তাপমাত্রা (গরম/ঠান্ডা) অনুভব করুন ।
(ত্বক)
০৮) এবার কিছু প্রশ্নের উত্তর দিন।
ক) আপনি কী পরিধান করে আছেন ?
খ) আপনার চুলগুলো কেমন দেখাচ্ছে ?
গ) আপনার মুখের অভিব্যক্তি কেমন ?
ঘ) আপনি কি একা নাকি বন্ধুদের সহ আছেন ?
ঙ) আপনি কয়েক মুহূর্ত সেই এলাকায় অবস্থান করে ভাবুন, আপনার শৈশবে ফিরে যাওয়াটাকে কেমন লাগছে ? কেমন বোধ করছেন ? আপনি কি সুখী ? দুঃখী ? একাকী ? উচ্ছল ? মুক্ত ?
আপনার ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় কি আপনাকে কিছু বলছে ? কোন ইশারা কি পাচ্ছেন ? মনে হচ্ছে কি প্রকৃতি আপনার সঙ্গে কথা বলছে ?
০৯) এবার ধীরে ধীরে ১ থেকে ১০ পর্যন্ত গুনুন। মনে মনে বলুন, আমি ১০ বলার সঙ্গে চোখ খুলব এবং সম্পূর্ণ জেগে উঠব। ১০ গুনে চোখ খুলুন এবং সম্পূর্ণ জেগে উঠুন।
এবার লেখার পালা।
আপনি এতক্ষণ যে দৃশ্য দেখেছেন, সেটা এবার লিখে ফেলবেন।
১০) কাগজ কলম নিন। ইচ্ছে করলে কম্পিউটারেও লিখতে পারেন। এতক্ষণ মানস চোখে যে দৃশ্য দেখলেন, এবার সেই দৃশ্য বিস্তারিত লিখে ফেলুন। প্রথম পুরুষে ও বর্তমান কালে লিখবেন।
যা দেখেছেন, অনুভব করেছেন - সব লিখবেন।
১১) প্রথম ২০ মিনিট লেখা থামাবেন না। লিখে যেতে থাকুন। কী লিখছেন পড়বেন না। কেমন লেখা হচ্ছে সেটা নিয়ে ভাববেন না।
বানান বা ব্যাকরণ নিয়ে মাথা ঘামাবেন না। গড় গড় করে লিখে যান মনের খুশিতে। এটাকে বলা হয় মুক্ত লেখা বা ফ্রি রাইটিং।
১২) আপনি যদি লিখতে গিয়ে আটকে যান, তবে এই আটকে যাওয়ার ফলে আপনার মধ্যে যে অনুভূতি তৈরি হয়েছে, সেটা লিখে ফেলুন। লিখে ফেলুন কেন আপনি লিখতে পারছেন না, লিখতে না পারার ফলে আপনার কেমন লাগছে।
যাই ঘটুক না কেন ২০ মিনিটের আগে লেখা থামাবেন না। ইচ্ছে করলে মোবাইল ফোনে বা ঘড়িতে একটা ২০ মিনিটের টাইমার সেট করে নিতে পারেন।
শেষ কথা :
এই অনুশীলনীটাকে Ôদিবা স্বপ্ন’ দেখা বলতে পারেন। এই Ôদিবা স্বপ্ন’ দেখা এবং সেটাকে লিখে ফেলার চর্চার মধ্য দিয়ে আপনার লেখার ক্ষমতা বাড়বে। আপনি যে কোন দৃশ্য বর্ণনা করায় পারদর্শী হয়ে উঠবেন।
আপনার লেখা হবে দৃশ্যময় এবং আকর্ষণীয়।
হে নবীন লেখক, তাহলে আজ থেকে সৃজনশীলতার এ চর্চা শুরু হোক। প্রতিদিন কমপক্ষে একবার করে যান এ চর্চা। সৃজনশীলতার এ জগতে আপনাকে স্বাগতম।
শাহজাহান শামীম
(চিত্রনাট্যকার ও পরিচালক)
০১৯১২৫৭৭১৮৭ বা ০১৬৮২৩০৩৩১৯
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।