আয়ের নিরিখে বিশ্বের ৭০০ কোটি মানুষকে সম্প্রতি সমান দু’ভাগে ভাগ করা যহয়েছে এক সমীক্ষায়। তাতে দেখা গেছে, তাদের মধ্যে নিচের ৩৫০ কোটি জনের হাতে মোট যে পরিমাণ টাকা-পয়সা-সম্পদ রয়েছে, তার সমপরিমাণ অর্থ ভোগ করছেন বিশ্বের প্রথম ৮৫ জন ধনকুবের। তার মানে দাঁড়াচ্ছে, ধনকুবেরের তালিকায় প্রথম পঁচাশির হাতেই অর্ধেক পৃথিবী!
দাভোসে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের সম্মেলন শুরুর ঠিক মুখেই, গতকাল সোমবার আর্থিক বৈষম্যের এই ভয়াবহ ছবি তুলে ধরেছে আন্তর্জাতিক উন্নয়নমূলক গোষ্ঠী অক্সফ্যামের একটি প্রতিবেদন। যা সম্মেলনের মঞ্চে আলোচনার অন্যতম বিষয় হয়ে উঠবে বলেই মনে করছেন সবাই।
কারণ তাৎপর্যপূর্ণভাবে এ দিন বৈষম্য নিয়ে সতর্ক বার্তা দিয়েছে ফোরামও।
জানিয়েছে, পৃথিবী জুড়ে বাড়তে থাকা বৈষম্যই এ বছরের সবচেয়ে বড় ঝুঁকি এবং চ্যালেঞ্জও। এমনকি এই অসাম্য আগামী দিনে বিশ্বজুড়ে বিদ্রোহের আগুন জ্বালাতে পারে, তৈরি করতে পারে গভীর বিক্ষোভ। ভেঙে পড়তে পারে গোটা দুনিয়ার অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক পরিকাঠামোই। সম্প্রতি কিছুটা যার সাক্ষী থেকেছে থাইল্যান্ড, ব্রাজিল বা খোদ আমেরিকার রাস্তা।
অক্সফ্যামের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উন্নত ও উন্নয়নশীল, সব দেশেই দ্রুত বাড়ছে আর্থিক বৈষম্য।
যে ৩০টি দেশের তথ্য তারা সংগ্রহ করেছে, এর ২৯টিতেই ১৯৭০ সালের শেষ থেকে ধনীদের করের হার কমেছে। অর্থাৎ, তারা রোজগার বেশি করছেন, অথচ কর দিচ্ছেন কম।
সম্পদ বাড়াতে ধনকুবেররা রাজনৈতিক ক্ষমতার সাহায্যও নিয়েছেন বলে দাবি অক্সফ্যামের। তাদের মতে, যার অন্যতম প্রমাণ ভারত।
ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত দশকে ভারতে কোটিপতির সংখ্যা বেড়েছে ১০ গুণ।
এর জন্য অনুন্নত কর কাঠামো এবং সরকারের থেকে ধনীদের অন্যায় সুবিধা পাওয়াকেই দায়ী করেছে তারা।
পরিস্থিতি পাল্টাতে বিভিন্ন দেশের সরকারের অবিলম্বে পদক্ষেপ করা উচিত বলে জানিয়েছে অক্সফ্যাম। সে ক্ষেত্রে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামে যোগ দিতে আসা নেতা-শিল্পপতিদের ওই মঞ্চেই এই বৈষম্য থেকে বেরোনোর পথ খুঁজতে আর্জি জানানো হয়েছে।
এ দিনই আবার বিশ্বজুড়ে ঘনিয়ে আসা এক ঝড়ের পূর্বাভাস দিয়েছেন ফোরামের প্রধান অর্থনীতিবিদ জেনিফার ব্ল্যাঙ্কেও। তার দাবি, যেভাবে ধনী ও দরিদ্রের দূরত্ব বেড়ে চলেছে, তাতে আগামী দিনে এক মারাত্মক সামাজিক অশান্তির মুখে পড়তে পারে বিশ্ব।
কারণ তরুণ প্রজন্মের এক বড় অংশের কাছে না-থাকবে চাকরি, না-থাকবে চাকরি পাওয়ার দক্ষতা। ফলে এই মুহূর্তে বিভিন্ন দেশের অর্থনীতি চাঙ্গা হতে শুরু করলেও এক বড় অংশের মধ্যে অনিশ্চয়তা তৈরি করবে আগামী দশক। যা আরও জোরালো করবে বিশ্ব অর্থনীতির কাছে ‘সুদিন’ না-ফেরার আশঙ্কাকেই।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।