আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিএনপি-জামায়াত সম্পর্ক: দৃশ্যত ছাড়াছাড়ি, কার্যত পুনর্বিবাহ না অবৈধ লিভ টুগেদার?

আল্লাহ মহান, যাহা বলিব সত্য বলিব।
বিএনপি-জামায়াতের সাম্প্রতিক ‘দূরত্ব’ রাজনৈতিক কৌশল মাত্র। তিন উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে দল দুটি এ কৌশল অবলম্বন করেছে। উদ্দেশ্য তিনটি হচ্ছে— এক. আওয়ামী লীগকে নতুন নির্বাচন নিয়ে সংলাপে বসতে বাধ্য করা, দুই. আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে খুশি করা এবং তিন. জামায়াতবিরোধী হিসেবে পরিচিত রাজনৈতিক দলগুলোকে বিএনপির নেতৃত্বাধীন মোর্চায় নিয়ে আসা। জামায়াতের মজলিশে শূরার এক সদস্য দাবি করেছেন, বিএনপি-জামায়াতের মধ্যে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক; এ সম্পর্ক এখন আগের চেয়েও বেশি নিবিড়।

একতরফা দশম জাতীয় নির্বাচনের পর দল দুটির মধ্যে পুনর্বিবাহ হয়েছে।
কৌশলের অংশ হিসেবে ১৮-দলীয় জোটভুক্ত ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোকে আপাতত ‘একলা চলো’ নীতি অবলম্বনের পরামর্শ দিয়েছে বিএনপি। একই সঙ্গে বিএনপির কর্মসূচিতে দলটির নেতা-কর্মীর পরিচয়ে তাদের যোগ দিতেও উত্সাহিত করা হচ্ছে। গত সোমবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গণসমাবেশেই এর প্রতিফলন ঘটেছে। ছাত্রদল-যুবদলের পরিচয়ে ওইদিন জামায়াত-শিবির-হেফাজতের কয়েক হাজার নেতা-কর্মী উদ্যানে জড়ো হয়েছিলেন।


তবে পরিকল্পনা অনুযায়ী কার্যসিদ্ধি না হলে ফের প্রকাশ্যে ১৮-দলীয় জোটের ব্যানারে জামায়াতকে পাশে রেখেই কঠোর কর্মসূচি দেবে বিএনপি। এ জন্য জামায়াত আপাতত এককভাবে দলীয় কর্মসূচি পালন করবে। গতকাল জামায়াতসহ কয়েকটি ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলের দায়িত্বশীল সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
সূত্রমতে, বিএনপির জামায়াতকে এড়িয়ে চলার যে-খবর কিছু-কিছু গণমাধ্যমে আসছে, তা সম্পূর্ণ পরিকল্পিত। এ পরিকল্পনার প্রথম উদ্দেশ্য, দ্রুততম সময়ের মধ্যে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে সংলাপ অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগকে চাপ দেওয়া।

ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের দাবি অনুযায়ী জামায়াতসঙ্গ ছেড়ে এলে বিএনপির সঙ্গে সংলাপে বসতে রাজি সরকার। এ শর্ত স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একাধিকবার বিভিন্ন জনসমাবেশে দিয়েছেন। এ পরিপ্রেক্ষিতেই গত সোমবারের গণসমাবেশে জামায়াতকে প্রকাশ্য অংশ নিতে নিষেধ করে বিএনপি। জামায়াতও এতে সায় দেয়। কৌশলের বিষয়টি অস্বীকার করে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর বলেন, সোমবারের সমাবেশ ছিল বিএনপির।

কাউকে সমাবেশে আসতে দাওয়াত করা হয়নি।
এদিকে নির্বাচনোত্তরকালে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্ব সম্প্রদায় সহিংস কর্মকাণ্ডের নিন্দা জানিয়ে জামায়াত-হেফাজতসঙ্গ ত্যাগের আহ্বান জানায় বিএনপিকে। কাজেই বিদেশিদের অনুকম্পা আদায়ে জামায়াতকে ছাড়াই দৃশ্যত পথ চলতে চাইছে বিএনপি।
এছাড়া জামায়াতবিরোধী হিসেবে পরিচিত বিকল্পধারা, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দলকে নিজেদের মোর্চায় অন্তর্ভুক্ত করতেও জামায়াত-সঙ্গত্যাগের ভান করা জরুরি হয়ে পড়েছে বিএনপির জন্য।
১৮-দলীয় জোটের অন্যতম শরিক খেলাফত মজলিসের শীর্ষস্থানীয় এক নেতাও স্বীকার করেন, বিএনপি-জামায়াতের দূরত্ব স্রেফ দৃশ্যত।

তিনি বলেন, এ দূরত্ব কৌশলের অংশ। নির্বাচন আয়োজনে সরকারকে বাধ্য করতেই এ পথ অবলম্বন করা হয়েছে— এতে সন্দেহ নেই। তবে সরকারের শর্তে জামায়াতসহ ইসলামি দলগুলোর সঙ্গে দৃশ্যত সম্পর্কহীনতা বিএনপির নৈতিক পরাজয় বলেও মনে করেন তিনি।
বিশ্বস্ত একটি সূত্রের দাবি, সম্প্রতি বিএনপির হাইকমান্ডের সঙ্গে বিশেষ বৈঠক করেই এ পরিকল্পনাকে স্বাগত জানিয়েছে জামায়াত। তবে পরিকল্পনার বিস্তারিত জানাতে অপরাগতা প্রকাশ করেছে সূত্রটি।

দলটির মজলিসে শূরার দায়িত্বশীল এক সদস্য গতকাল এ প্রতিবেদককে বলেন, বিএনপি-জামায়াতের সম্পর্ক কিছুটা স্বামী-স্ত্রীর মতো। বর্তমানে যে দূরত্ব দেখা যাচ্ছে, এটি একটি সাময়িক সেপারেশন মাত্র। বরং একতরফা দশম জাতীয় নির্বাচনের পর দল দুটির মধ্যে পুনর্বিবাহ হয়েছে।
জামায়াতের রুকন ও রাজশাহী নগরের রাজনৈতিক শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবু মুহাম্মদ সেলিম অবশ্য রাজনৈতিক কৌশলের কথা অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের কোনও দূরত্ব সৃষ্টি হয়নি।

আমরা দুই দল অভিন্ন লক্ষ্যে কাজ করছি। সময় হলেই জোটবদ্ধ আন্দোলন শুরু হবে। সুত্র
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।