বিরোধী জোটবিহীন নির্বাচনের পর বাংলাদেশ কোন পথে যাচ্ছে- তার বিশ্লেষণে শনিবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের আলোচনা অনুষ্ঠানে বক্তব্যে তিনি এই মত প্রতাশ করেন।
নিজের দায়িত্ব পালনের সময়ে ইসিতে ব্যাপক সংস্কারের উদ্যোগের কথা তুলে ধরে শামসুল হুদা বলেন, “দশম সংসদ নির্বাচনে ব্যালট পেপারে স্ট্যাম্পিং হয়েছে, সেই সঙ্গে সহকারি প্রিজাইডিং কর্মকর্তার ওপরে হামলা হয়েছে।
“ভালো নির্বাচনের পথে এটা ব্যত্যয়। ভোটগ্রহণ কর্মকর্তার ওপর হামলা মানে রাষ্ট্রের ওপর হামলা। এটা খারাপ নজির হয়ে থাকল।
”
যে ধরনের সরকার থাকুক না কেন, স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদী কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে বলে মনে করেন সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার।
তবে ইসি শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে কমিশনারদের সংখ্যা বৃদ্ধি সমস্যা আরো বাড়িয়ে তোলে বলে তার অভিমত।
সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য আইসি সংস্কারের পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলোর সহযোগিতাও বড় কাম্য বলে মত দেন শামসুল হুদা।
“নির্বাচন কমিশন এককভাবে কিছু করতে পারে। তার সঙ্গে ১৫টি সংস্থা সহযোগিতা করে।
এক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলকে সহযোগিতা করতে হবে। ”
ভোটের পরে ফল মেনে নেয়ার সংস্কৃতি গড়ে তোলার আহ্বানও জানান তিনি।
সভায় তার আগে বক্তব্য সবার অংশগ্রহণে নির্বাচন অনুষ্ঠানে একটি পদ্ধতি বের করতে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানান শিক্ষক-কলামনিস্ট সলিমুল্লাহ খান।
তিনি বলেন, “নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এবার সহিংসতা হয়েছে। এক্ষেত্রে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার মাত্রা বাড়িয়েছে।
এখন ভোটের আগে শুধু নির্বাচন নিয়ে একটি পদ্ধতি চালু করা যায় কি না, ভাবতে হবে। ”
এই সভায় আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য তোফায়েল আহমেদ, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সিপিবি সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিমও রয়েছেন।
সিপিবি সভাপতি জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধের বিষয়ে আওয়ামী লীগকে অবস্থান স্পষ্ট করতে বলেন।
“বিএনপি তো পরিষ্কার করেছে, জামায়াত তাদের সঙ্গে থাকবে। আওয়ামী লীগ যদি অগ্রসর না হয়, তাহলে আরো বিপদ বাড়বে।
আওয়ামী লীগ কেন জামায়াতকে নিষিদ্ধ করে না?”
জামায়াত নিষিদ্ধের বিষয়ে সিপিবি সভাপতির দাবির বিষয়ে সলিমুল্লাহ খান বলেন, সন্ত্রাসবাদীর সঙ্গে জোট করলে তাদেরও সন্ত্রাসবাদী হিসেবে চিহ্নিত করতে হবে।
“জামায়াত সন্ত্রাসবাদী দল হিসেবে নিষিদ্ধ হলে, এমন নিষিদ্ধ দলের সঙ্গে যারা জোট করবে তারাও একইভাবে চিহ্নিত হবে। এসব বিষয়ে কনসেনসাসে করতে হবে। ”
ঘটনাবহুল দশম সংসদ নির্বাচনের পর একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আলোচনা করে ঐক্যমত্যের প্রয়োজন রয়েছে, বলেন তিনি।
এর আগে বক্তব্যে দশম সংসদ নির্বাচন রাজনৈতিকভাবে সিদ্ধ হয়নি দাবি করে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, এই অবস্থা চললে জনগণের ভোটাধিকার ফিরে আসবে না।
বিরোধী জোটবিহীন নির্বাচনের দিকে ইঙ্গিত করে আমীর খসরু বলেন, “এ নির্বাচন সাংবিধানিকভাবে সিদ্ধ, কিন্তু রাজনীতিকভাবে সিদ্ধ হয়নি। কোনোভাবেই তা জনপ্রতিনিধিত্বশীল নির্বাচন নয়।
“সবার অংশগ্রহণে ভোট নিশ্চিত করতে না পারলে নির্বাচনে ভোটাধিকার থাকবে না। ”
নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি জানান ভোট বর্জন করে আসা বিএনপির এই নেতা।
সভায় বিএনপি নেতার আগে বক্তব্যে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য তোফায়েল আহমেদ বলেন, একাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে বিএনপির সঙ্গে আলোচনার সুযোগ রয়েছে।
তিনি বলেন, “একটি নির্বাচন হয় ৫ বছরের জন্য। সরকার ৫ বছর থাকার চেষ্টা করে।
“আমরা কখনো বলিনি, সংলাপের প্রয়োজন নেই। অবশ্যই একাদশ সংসদ নির্বাচন হবে, এ জন্য আলোচনা হবেই। ”
দশম সংসদ নির্বাচনে সব দলকে আনতে আওয়ামী লীগের চেষ্টা ছিল জানিয়ে তোফায়েল বলেন, “দুর্ভাগ্য সেটা হয়নি, তবে আমরা চেষ্টার ত্রুটি করিনি।
”
বিএনপির নির্বাচনে অংশ না নেয়ায় সমালোচনা করে তিনি বলেন, “বিএনপি এবার অংশ নিল না, আগামীবার আওয়ামী লীগ যদি অংশ না নেয় , তখন কী হবে? এটা কি চলতে থাকবে?
“বিএনপি একটি প্রস্তাব মেনে নিয়ে আরেকটি প্রস্তাব দেয়নি। এতগুলো দায়িত্ব তো আওয়ামী লীগ নিতে পারে না। কাল যদি সংলাপ হয়-তখনো প্রথম আসবে- ‘সংসদ ভাঙতে হবে...শেখ হাসিনাকে মানি না...আরো কত কী’ এটা বাস্তবসম্মত নয়। ”
নতুন সরকারের বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল বলেন, রাজনৈতিক বিভেদ ভুলে দেশের অগ্রগতি নিয়ে কাজ করবেন তারা।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম কার্যালয়ে এই অনুষ্ঠানে দেশের শীর্ষ পর্যায়ের রাজনীতিক, কূটনীতিক, ব্যবসায়ী, নারীনেত্রীরা এক হয়েছেন।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম, শিক্ষক-কলামনিস্ট সলিমুল্লাহ খান, সাবেক কূটনীতিক নাসিম ফেরদৌস এই আলোচনায় রয়েছেন।
নারীনেত্রী মহিলা পরিষদের সভানেত্রী আয়েশা খানম, নিজেরা করি’র প্রধান খুশী কবীরও রয়েছেন এই আলোচনায়।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের এই আলোচনায় সাংবাদিক আমানুল্লাহ কবীর, একাত্তর টেলিভিশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোজাম্মেল বাবুও অংশ নিচ্ছেন।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে এই অনুষ্ঠান দেখা যাচ্ছে। সরাসরি সম্প্রচার করছে একাত্তর টেলিভিশনও।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।