আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিগ থ্রী বিষয়ে বিছিন্ন বিশ্লেষণ

১।
অনেক দিন আগে এক বন্ধুর কাছে শুনেছিলাম ভারতের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি আর ক্রিকেট মূল নিয়ন্ত্রক হচ্ছে আন্ডারওয়ার্ল্ডের মাফিয়ারা। তাদের মর্জিমাফিক তুমুল জনপ্রিয় আর অর্থের অবারিত এই দুই সাম্রাজ্যের গতিপ্রকৃতি নিয়ন্ত্রিত হয়।
২।
টি টুয়েন্টি ক্রিকেট রমরমা প্রসারের আগে মূলত ভারতীয় বোর্ডের অনাগ্রহের কারনেই এই ফরম্যাটের ক্রিকেট বিশ্বব্যাপী তেমন প্রচলিত হয়নি।

বিসিসিআইয়ের আশঙ্কা ছিল টি টুয়েন্টি ব্যাপকভাবে প্রচলিত হলে স্পন্সররা ৫০ ওভারের ম্যাচ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে পারে। পরবর্তীতে টিভি সত্ত্ব নিয়ে দ্বন্দ্বের জের ধরে আইসিএল নামক “বিদ্রোহী” টি টুয়েন্টি টুর্নামেন্ট নতুন ব্যাবসার আইডিয়া এনে দেয় বিসিসিআইয়ের কর্তাদের। আইসিএলকে কোণঠাসা করে বিশ্ব ক্রিকেটের ভিত নড়িয়ে দেয় ক্রিকেট- বলিউড –রাজনীতি আর চিয়ার গার্লদের এক অভাবনীয় খিচুড়ি যার পোশাকি নাম ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লীগ বা সংক্ষেপে আইপিএল। কয়েক বছর জাতীয় দলে খেলে যা আয় করা সম্ভব তার চেয়ে অনেক অনেক বেশী টাকা পাওয়া যাবে আইপিএল নামক পরশ পাথরের এক মৌসুমের চুক্তিতে। এর ফলে শেন বন্ড, ক্রিস গেইল, লাসিথ মালিঙ্গার মত খেলোয়াড়রা জাতীয় দলকে পাশ কাটিয়ে আইপিএলকেই অগ্রাধিকার দিলে নিউজিল্যান্ড, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, শ্রীলঙ্কার মত ক্রিকেট বোর্ড গুলো পড়ল এক মহা বিপাকে।

মজার (আসলে বিরক্তির) ব্যাপার হচ্ছে আইপিএলের মত ভারতীয় বোর্ডের আবদারের প্রেক্ষিতে ফিউচার ট্যুর প্রোগ্রামে আইপিএলের জন্যও ফাঁকা সময় (উইন্ডো) রাখে আইসিসি।
টাকার গন্ধে সুনীল গাভাস্কার, রবি শাস্ত্রীর মত ক্রিকেট আইকনরাও টি টুয়েন্টির প্রশংসায় একেবারে পঞ্চমুখ। অবশ্য গাভাস্কার-শাস্ত্রীরা ভারতীয় বোর্ডের সাথে একটি বিশেষ চুক্তিতে যুক্ত যে তারা কক্ষনো বোর্ডের নীতিগত সিধান্ত আর পরিকল্পনার বিরুদ্ধে কিছু বলবে না।

৩।

বিশ্ব ক্রিকেটে ভারতীয় দল ভালো করা শুরু করেছে দশ বছরেরও কম সময়।

এমনকি ১৯৮৩ সালে অপ্রতাশিতভাবে বিশকাপ চ্যাম্পিয়ান হবার পরও ভারত ছিল মাঝারি মানের একটি দল যারা মুলত দেশের মাটিতে ভাল খেলার যোগ্যতা রাখে। প্রসঙ্গত উল্লেখ করা যেতে পারে যে ১৯৯৩ সালে শ্রীলঙ্কার সাথে একটি টেস্ট সিরিজ জয় করার পর দীর্ঘ সাত বছর ভারতকে অপেক্ষা করতে হয়েছে বিদেশের মাটিতে একটা টেস্ট সিরিজ জয় করবার জন্য।
অবশেষে সেই জয় আসে টেস্টের নবীনতম সদস্য বাংলাদেশের বিরুদ্ধে, ২০০০ সালের নভেম্বরে। ২০০৩ সালের জুলায়ে প্রকাশিত রাঙ্কিংয়ে ভারতের আবস্থান ছিল ৮ নম্বরে। ২০০৭ সালের বিশ্বকাপে তারা বারমুডা ছাড়া কোন দলের সাথে জিততে পারেনি।

সাম্প্রতিক সময়ে রাঙ্কিংয়ে উন্নতি হলেও বিদেশের মাঠে ভারতের পারফম্যান্সে খুব বেশী উন্নতি হয়নি। তারপরও ভারত ক্রিকেটার মহীরুহ হয়ে উঠেছে কেবলমাত্র তাদের লোকসংখ্যার জন্য, ক্রিকেট বিক্রি করে পাওয়া টাকার জন্য। যে দেশে ১০০ কোটি মানুষ যে ক্রিকেটের প্রতি গভীর ভাবে আকৃষ্ট; সেখানে ক্রিকেটকে বিক্রি করার জন্য ক্রেতার অভাব হবার কথা না।
৪।
শচীন টেন্ডুলকারের অবসরের পর স্পনশরশিপ থেকে ভারতীয় দলের আয় যথেষ্ট পরিমাণ বেশী হয়নি এই উছিলায় এক নাক্কারজনক ঘটনার জন্ম দিল বিসিসিআই।


ভারত তাদের “ন্যায্য” পাওনা আদায়ের দাবীতে নিলজ্জ এক প্রস্তাব এনেছে, সঙ্গী হিশাবে আছে বর্ণবাদী আর নাক উঁচু দুই দেশ অস্ট্রেলিয়া আর ইংল্যান্ড। ভারতের দাবী সমুহের সারসংক্ষেপ নিম্নরূপ
১) আইসিসি-র আয় থেকে ভারতকে আরও বেশি ভাগ দিতে হবে।
২) আইসিসি প্রেসিডেন্ট পদের পাশাপাশি চেয়ারম্যানের (ভারতীয়) পদ তৈরি করতে হবে।
৩) তিন বছর অন্তর ভারতে কোনও আইসিসি টুর্নামেন্ট দিতে হবে।
৪) ভারত-অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ডকে অনেক বেশি ক্ষমতা দিতে হবে বাকিদের তুলনায়।


(সুত্রঃ দৈনিক আনন্দাবাজার)
৫।
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের এক সাম্প্রতিক সভায় ২০-৩ ভোটে ভারতের বিরুদ্ধে কোন অবস্থান না নেবার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়েছে। আইসিসি সভায় ভারতের মূল প্রস্তাব পাশ না হলেও টু টীয়ার সিস্টেমের ফলে বাংলাদেশ আর বড় কোন দলের সাথে টেস্ট খেলার সুযোগ নাও পেতে পারে। কিন্তু বিসিবির সভাপতির ভাষায় “টাকা এখনকার চাইতে বেশী পাওয়া যাবে। “
ভারত গত ১৪ বছরে বাংলাদেশকে তাদের দেশে খেলতে আমন্ত্রন জানায়নি।

এটা নিয়ে বাংলাদেশ সমর্থকদের মধ্যে ক্ষোভ থাকলেও বিসিবি ভারতকে অতিথি হিসেবেই বেশী পছন্দ করে কারণ ভারতে গিয়ে খেলার চেয়ে ওরা বাংলাদেশে আসলেই আর্থিকভাবে লাভবান হওয়া যাবে।
বিসিবির আগের সভাপতি আইসিসি সভাপতি হবার জন্য পাকিস্তানের ভোটের আশায় জোর করে জাতীয় দলকে পাকিস্তান সফরে রাজি করাতে চেয়েছিলেন। এই সভাপতির চান আগে ভারতের সুনজর, আরও টাকা পাবার নিশ্চয়তা তারপর সময় সুযোগ পেলে কিছুটা ক্রিকেট হতেও পারে।

৬।

আমরা চাই বাংলাদেশ টেস্ট ক্রিকেট খেলা অব্যাহত রাখুক, সাম্প্রতিক কালে আমরা সব ধরণের ক্রিকেতেই ভালো খেলার প্রমাণ রাখছি।

পঞ্চাশের দশকে টেস্ট খেলা শুরু করা ভারত কয়েক মাসের জন্য টেস্টে এক নম্বর হয়েছিল প্রায় ষাট বছর পর। বহু বছর রাজত্ব করা ওয়েস্ট ইন্ডিজ বা গত দুই দশকের অস্ট্রেলিয়া কক্ষনো এই ধরণের উদ্ভট প্রস্তাব করেনি। অহংকারী ভারতের হাতে ক্রিকেটের পতন না দেখতে হলে এই হঠকারী প্রস্তাব বাতিল করাই একমাত্র উপায়।
-পিয়াল
আমার আগের লেখা : বিড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধবেন কে?

সোর্স: http://www.sachalayatan.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।