জোর হোক শুধু গলার আওয়াজ, গায়ের জোরটা তোলাই থাকুক
৪. শোনার /বোঝার এবং রস নেবার প্রস্ততি
শাস্ত্রীয় সঙ্গীত শুনে মজা পাবার জন্য যে খুব পণ্ডিত হতেই হবে, এমনটি না। যেকোনো বয়সী, যেকোনো ভাষাভাষী, যেকোনো মানের শিক্ষিত শ্রোতা – শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের মজা নিতে পারবে। মনোযোগ দিয়ে, সময় নিয়ে শুনতে থাকাটাই প্রধান শর্ত।
তবে অন্য যেকোনো শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের মতোই ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের বেশি মজা নেবার জন্য, ক্রমশ জানাশোনাটা বাড়ানো দরকার। এর শাস্ত্র, ইতিহাস, বিবর্তন, লোকজন, এলাকা-ঘরানা বৈচিত্র্য, ইত্যাদি বিষয়ে, যত বেশি জানা যাবে, তত বেশি-বেশি মজা নেয়া সম্ভব হবে।
এক জীবনে এই জানার শেষ হবে না। তাই শাস্ত্রীয় সঙ্গীত কখনও পুরানো হবে না।
শাস্ত্রীয় সঙ্গীত বোঝা মানে সঙ্গীতের ভাবটা অনুভব করা। একটি রাগের অবয়বকে অন্তর দিয়ে দেখতে পারা। সেটা ভাব কখন, কিভাবে এবং কতখানি ফুটে উঠছে, সেটাকে ধরতে পারা।
যিনি কারিগরি ও ভাবরসের বিষয়গুলো যতটা ভাল জানবেন, তার কাছে রূপটা তত স্পষ্ট হবে।
সঙ্গীত শোনা শুরু করার জন্য, প্রথমে দরকার একটা ভাল অডিও লাইব্রেরী। সেখানে একটি রাগের - পরিচিত সব জনরার, বিখ্যাত প্রতিটি ঘরানার, প্রচলিত সব তালের, অন্তত ২৫ টি গান/বাজনা থাকা দরকার। সেরকম একটি লাইব্রেরী গুছিয়ে উঠতে অনেক সময় লাগে। ওরকম একটি লাইব্রেরীর আকার-প্রকার এত বড় হয়, সেটার ব্যবস্থাপনাও ভীষণ কঠিন।
সেটা মাথায় রেখে, আমরা প্রতিটি রাগের শ্রোতা সহায়িকা নোটের সাথে, ওই রাগের একটি DVDযুক্ত করে দেব। ডিভিডিতে সব ধরনের ট্রাকের একটি করে স্যাম্পল দেয়ার চেষ্টা করা হবে।
শ্রোতা হিসেবে, যেকোনো রাগের বিশুদ্ধ রূপ বোঝার চেষ্টা করার আগে, ওই রাগের হালকা গানগুলো (উপশাস্ত্রীয় ও সাধারণ গান/বাজনা) শোনা দরকার। এগুলো সচরাচর শোনার অভ্যাস থাকার কারণে, আলাদা করে শেখার পরিশ্রম করতে হয় না। আবার এতে কান তৈরি হতে সুবিধা হয়।
প্রথমে যেকোনো একটি রাগ বেছে নিন। এরপর ওই রাগের ডিভিডিতে দেয়া – প্লেব্যাক, আধুনিক, গজল, রবীন্দ্র-নজরুল, টপ্পা, কীর্তনগুলো পছন্দমত শুনতে থাকুন। পাশাপাশি বোঝার চেষ্টা করতে থাকুন - গানগুলোর মধ্যে কোথায় যেন সুরের মিল আছে। রিপিট দিয়ে কয়েকবার শুনতে শুনতে, মিলগুলো খুঁজে পাওয়া যাবে। যেখানে মিল, সেখানেই আসলে রাগের কারসাজি।
এরকম ১/২ দিন শুনতে পারেন (তবে বোঝার জন্য সময় বেশি লাগলে দোষের কিছু নেই)।
মনে রাখবেন - যে কদিন একটি বিশেষ রাগকে মাথায় বসাবার চেষ্টা করছেন, ওই কদিন অন্য রাগের বা মিশ্র রাগের গান/বাজনা না শোনই ভাল। তাতে মনোযোগটা ভাল থাকে। রাগটাও মাথায় বসতে সুবিধা হয়।
এরপর রাগের রূপরেখা এবং আবহাওয়াটা বোঝার জন্য, যেকোনো বাদ্যযন্ত্র নিয়ে (হারমোনিয়াম হতে পারে), রাগের নোটের “স্বর ব্যবহার” সেকশনটা নিয়ে বসতে হবে।
মনোযোগ দিয়ে বারবার পড়তে হবে। পাশাপাশি বাজিয়ে/গেয়ে দেখার চেষ্টা করতে হবে। গাওয়া/বাজাবার সময়, আগে শোনা গানগুলোর সাথে মিল খুঁজে বের করার চেষ্টা করতে হবে। গানের পুরো সুরের সাথে মিল না খুঁজে, গানগুলোর মধ্যে কমন সুরের সাথে মিল খুঁজতে হবে। যদি মনে হয় - কিছুই হচ্ছে না, তার পরেও থামবেন না।
ফলটা বোঝার জন্য একটু সময় দিতে হবে।
“স্বর ব্যবহার” সেকশনটা নিয়ে খেলাধুলা করার পরে, স্বর-মল্লিকা ও লক্ষনগীত শুনে, স্বরগুলোর চলাফেরা বোঝার চেষ্টা করতে হবে। যতক্ষণ দু চারটি মিল আপনি খুঁজে না পাচ্ছেন, ততক্ষণ হালকা গানগুলো শুনতে থাকুন। পাশাপাশি “স্বর-ব্যবহার” সেকশনটি দিয়ে খেলুন, স্বর-মল্লিকা-লক্ষনগীত শুনুন, গাইতে/বাজাতে চেষ্টা করুন।
একটু আরাম আসলে - এরপরে শোনা শুরু করুন স্লো আলাপ শোনা।
সেখানে স্বরের ব্যাবহারগুলো ধরার চেষ্টা করুন। ধরতে না পারলেও অসুবিধা নাই, চেষ্টা করে গেলেই কাজটা হয়ে যাবে।
কাজের ফাঁকে ফাঁকে ওই রাগের যন্ত্র সঙ্গীতগুলো ছেড়ে রাখতে পারেন। রাতে শোবার সময় হালকা করে ছেড়ে রাখলে ভাল কাজে লাগে।
একই রাগে গাওয়া/বাজানো ২৫ টি বিভিন্ন ধরনের কম্পোজিশন নিয়মিত শুনুন।
অল্প কয়েকদিনেই আপনি এই রাগটি চিনে যাবেন। যে কেউ গাওয়া শুরু করলেই, নিজের অজান্তেই বলে উঠবেন – অমুক রাগ গাইছে। সেখানে দু একবার ভুল হলেও লজ্জার কিছু নাই, কারণ অনেক বড় সঙ্গীতজ্ঞদেরও অনেকদিন ধরে না শোনা রাগ ধরতে কষ্ট হতে পারে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।