আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

“Captain Phillips” এর মুভি রিভিও অথবা গল্প । (সোমালিয়ার পাইরেটদের একটি সত্য ঘটনা নিয়ে তৈরি মুভি)

পেশায় নাবিক নেশায় যাযাবর


জাহাজে থাকলে নানা ধরনের ছবি দেখা হয় । কোনটা দেখি ভাল জেনে । কেউ দেখে বলল ছবিটা ভাল। আবার অনেক ছবি দেখা হয় না জেনেই । জাস্ট টাইম পাস।

এবার হলিউডের বাইরের ছবি অনেক দেখা হচ্ছে । কারন আসার সময় আমার ছোট ভাই ২০১৩ সালে রিলিজ কৃত জার্মান, ডাচ, কোরিয়ান এবং ফ্রেঞ্চ মুভির এক বিশাল ভাণ্ডার হার্ড দিস্কে দিয়ে দিয়েছে। জাহাজে লোকজনের কাছে কিছু চাইনিজ মুভিও পেলাম যা দেখে ধারনা হল বলিউড চাইনিজ ছবিও নকল করে।
আমি এর আগেও কখন মুভি রিভিও লিখিনি । কোন দিন লিখব তাও ভাবিনি ।

কিন্তু Captain Phillips দেখার পর মনে হল এটা নিয়ে একটা লেখা লিখতে হবে। অন্তত মেরিনার হিসাবে লেখা উচিত। যদিও লেখাটা মুভি রিভিও নাও হয় তাতেও সমস্যা নেই।


Captain Phillips মূলত ২০০৯ সালের একটি সত্য ঘটনা অবলম্বনে তৈরি । MV Maersk Alabama নামে একটি আমেরিকান কন্টেইনার জাহাজ ছিনতাই সিনেমার মুল বিষয় বস্তু।

গত ২০০ বছরের মধ্যে প্রথম আমারেকিন জাহাজ ছিনতাই। জাহাজের Captain Richard Phillips এই নিয়ে একটা গল্প লেখেন "A Captain's Duty: Somali Pirates, Navy SEALS, and Dangerous Days at Sea" । সিনেমার চিত্র নাট্য এই বই থেকেই তৈরি করা হয়েছে।



Captain Phillips এ টম হ্যানকস ছাড়া অন্য সবাই প্রায় নবাগত। টম হ্যাঙ্কস সম্পর্কে নতুন করে বলার কিছু নেই।

যে কোন পেশাজীবীর চরিত্র ফুটিয়ে তুলতে তার কোন জুরি নেই। সেই জন্যই হয়ত পরিচালক পল গ্রিনগ্রাস (Paul Greengrass) টম হ্যাঙ্কস ছাড়া অন্য কাউকে চিন্তা করেননি । সাধারণত মুভিতে জাহাজের ক্যাপ্টেনকে অন্যভাবে দেখায় । এই মুভি দেখে কোন মেরিনারের মনেও সন্দেহ জাগবে না যে টম হ্যাঙ্কস জাহাজের ক্যাপ্টেন নয়। এখানে উল্লেখ করার মত আরেকটা চরিত্র আছে যার মুভিতে নাম “মুসি” এবং সে পাইরেট নেতা ।

মুভি দেখার সময় আমার কখন মনে হয় নি সে নবাগত। জীবনের প্রথমবার ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়েছেন। আর তার ভগ্ন ক্ষুধার্ত চেহারা, মারমুখী ভাবভঙ্গী , চিন্তা ভাবনা দেখে আমার মনে হচ্ছি পরিচালক পল গ্রিনগ্রাস (Paul Greengrass) অভিনয় করার জন্য সোমালিয়া থেকে একজন সত্যিকারের পাইরেট নিয়ে এসেছেন।



মুভির শুরুতে দেখান হয় ক্যাপ্টেন ফিলিপ্স জাহাজে জয়েন করার জন্য সব কিছু গুছিয়ে এয়ারপোর্ট যাচ্ছে। তার স্ত্রী তাঁকে এয়ারপোর্টে নামিয়ে দিতে আসে।

এটা প্রতিটি মেরিনারের জন্য একটা কমন সিনারিও। তার পর ক্যামেরা চলে যায় সোমালিয়ার হতদরিদ্র, ধুলাবালি, আবর্জনা ময় এক গ্রামে। যেখানে নেতারা বসে থাকা মৎস্যজীবীদের জাহাজ ছিনতাই এর জন্য চাপ প্রয়োগ করে। তারপর বাজারে বসে শক্ত সমর্থ দেখে বাছাই করা হয় কারা যাবে জাহাজ ছিনতাই করতে। ট্র্যাডিশনাল হলিউড মুভির মত মুসলিমদের জঙ্গি হিসাবে উপস্থাপন না করে কঠিন বাস্তবতার কারনে কোন পরিস্থিতিতে এরা ছিনতাই করে তা তুলে ধরার জন্য পরিচালক অবশ্যই ধন্যবাদ পাবেন।






গভীর সাগরে পাইরেটদের আক্রমণে আমরা যে কত অসহায় যারা এই মুভিটি দেখবেন অনুধাবন করতে পারবেন। একমাত্র পানি ছাড়া আর কোন অস্ত্র নেই আমাদের। মুভির এক দৃশ্যে দেখা যায় ক্যাপ্টেন ফিলিপ্স বাসায় মেইল করে “সে ভাল আছে এবং ব্যস্ত। পরের পোর্টে যেয়ে ফোন করবে” । অথচ সে তখন পাইরেটদের শতভাগ হুমকির ভিতর ।

আমরা অনেকে যখন কোন সমস্যাতে থাকি বাসায় এমন মেইল করি। আর সোমালিয়া অতিক্রম করার সময় আমি কখন আমার বাসায় জানতে দেই না।

পাইরেটরা জাহাজে উঠার পর গল্পটা হয়ে দাড়ায় দুই ক্যাপ্টেনের মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধে। এই সময় পাইরেট ক্যাপ্টেন মুসি ক্যাপ্টেন ফিলিপ্সকে বলে "Look me in the eye – I'm the captain now!" অনেক রোমাঞ্চকর ঘটনার পর পাইরেটরা জাহাজের লাইফ বোট নিয়ে পালায়। নিজেদের নিরাপত্তার জন্য জিম্মি হিসাবে নিয়ে যায় ক্যাপ্টেন ফিলিপ্সকে ।

মুভির বাকি অংশ চিত্রায়িত হয় ঐ ছোট্ট লাইফ বোটের ভিতর। সিনেমার শেষ অংশে ইউএস নেভির যুদ্ধ জাহাজ, হেলিকপ্টার,ইউএস নেভির সিল এসে মুভিতে আধুনিক একশনের স্বাদ নিয়ে আসে।


সিনেমার শেষ দৃশ্যটি যে কোন দর্শককে দারুন নাড়া দিবে। অনেক কাহিনীর পর ক্যাপ্টেন ফিলিপ্সকে উদ্ধার করে মেডিকাল ট্রিটমেন্টের জন্য নিয়ে আশা হয় তখন তার চেহারায় ছিল না কোন উচ্ছ্বাস। টম হ্যাঙ্কস তার চেহার ফুটিয়ে তোলেন বিষাদময় করুণ দৃশ্য।

এই করুণ দৃশ্য আমি অনেকবার দেখেছি অনেক মেরিনারদের চোখে । যখন তারা সোমালিয়ানদের সামনা সামনি মোকাবেলা করে।





এই সিনেমা করার সময় টম হ্যাঙ্কস জাহাজ সম্পর্কে অনেক ধারনা পান। তার সেই ধারনার কিছু অংশ তুলে দিচ্ছি। অনুবাদ অনেক সময় সঠিক ভাবকে হালকা করে ফেলে তাই ইংরেজিতেই দিলাম।



Tom Hanks on the Merchant Marine:
"I was actually quite dazzled.You see these ships all over the world and you don't think much of them, you don't realize how many people are on board or how difficult they are to run. It doesn't look like a glamorous job, and it's not, but it's an important one, and there are stresses that you can't even begin to believe or fathom. I think the standard myth about it is it's a rag-tag group of men and some women who get together and paint the same bulkhead over and over again. But in fact they have a lot of pressure on them...it's a very dangerous job, as well as an important one and you have to actually be accomplished in order to get it done. I was very impressed with how hard it is, how much is involved in doing so much as loading a bunch of containers on a 585 foot ship and getting them halfway around the world."

আসল “Captain Phillips”

 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।