ওরা আপাতত পিছিয়ে দিয়েছে। যে কোন বিদ্রোহ বা আন্দোলন ঠেকানোর প্রথম উপায় হলো কাল ক্ষেপণ। ”আপাতত করা হচ্ছে না” ব্যাপারটাকে আমার মনে হয় উত্তেজনা প্রশমনের জন্য কাল ক্ষেপনের অংশ।
পজিশন পেপারের প্রস্তাবটা শুনেই চট করে মনে যে অনুভূতিটা হয়েছিল তা হলো ”ওরা আমার মুখের ভাষা কাইরা নিবার চায়। ” বছর খানেক আগে আমাদের গার্মেন্টস মালিকরা একটা প্রস্তাব দিয়েছিল যে, বাংলাদেশ ব্যাংকের পর্ষদে তাদের প্রতিনিধি অন্তর্ভূক্ত করা হোক।
ব্যাপারটা নিয়ে স্বভাবতই হয়েছিল ব্যাপক সমালোচনা। এর সমালোচনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্ণর সালেহ উদ্দীনই সম্ভবত করেছিলেন উৎকৃষ্টতম সমালোচনা, বলেছিলেন ”এটা হলো নিকৃষ্টতম একটা প্রস্তাব। ” ভারতের উদ্যোগে এই পজিশন পেপারটিও ছিল নিকৃষ্টতম একটা প্রস্তাবনার প্রকৃষ্ট উদাহরণ।
কেউ আমাকে চায়না, কারো কাছে আমার পূর্ণ সম্মান নেই, ভালোবাসা নেই এটা জানার পর প্রথমেই অভিমানী মনটা বলে ওঠে আমিও তাঁকে চাইনা, আমিও ভালোবাসি না। আর খেলাধূলার ক্ষেত্রে মনটা বলে ওঠে ”আমি খেলব না।
” অতীতে অজস্রবার বলেছি।
কিন্তু এবারের ব্যাপারটা ঠিক অভিমানের না। অভিমানের হলে আমি নিজেই নিজেকে গুটিয়ে নিতাম। ব্যাপারটা অধিকারের। আর যেখানেই ব্যাপারটা অধিকারের সেখানেই ব্যাপারটা থাকে আদায় করে নেবার।
আমরা অনেক সময়ই জানিনা কিভাবে আদায় করে নিতে হয়, কিন্তু এটুকু জানি আমাদেরকেই আদায় করে নিতে হয়।
ফিউচার ট্যুর প্রোগ্রাম থাকবে না, সিরিজ হবে দ্বিপক্ষীয় মতামতের ভিত্তীতে--এতে আমার আপত্তি পূর্ণ জোরালো ছিলনা। ওই যে মাথার ভিতরে কাজ করে, যে আমারে চায় না আমিও তারে চাই না, আমিও তার সাথে খেলি না।
আইসিসির বার্ষিক উপার্জনে ভারতের অবদান বেশী, মুনাফা বন্টনে ভারত বেশী পাবে। এখানেও আমার তেমন কোন আপত্তি নেই।
মানবতা না থাকলেও এর অন্তত একটা সমীকরণ আছে, যুক্তি আছে। মানবতার ধার কেই বা ধারে? তাছাড়া নিজের ”ক্ষতি” করে মানবতার কথা চিন্তা না করলে তাঁকে হয়তো ঠিক দোষও দেয়া যায় না।
কিন্তু বাকি গুলো?
টেস্ট ক্রিকেট খেলেই ১০ টা দেশ, তাতে আবার থাকবে দুইটি স্তর, থাকবে উত্তরণ এবং অবনমন। এই শুনে আমার ছোটবেলার একটা ঘটনা মনে পড়লো, আমার এক চাচাত ভাইটা গ্রামের এক স্কুলে পড়তো। সব সময় দেখতাম ওর রোল তিন চারের ভিতর থাকে।
দিন রাত কোন পড়ালেখা নেই, সারাদিন বনে বাদাড়ে ঘুরে বেড়ানোর পরেও রোল তিন-চার? বার্ষিক পড়িক্ষার ছুটিতে যেয়ে আমরা যারা শহরে পড়তাম অবাক হয়ে যেতাম। বেশ কিছুদিন পর জানতে পেড়েছিলাম ওর ক্লাশে প্রতিবারই ছাত্র-ছাত্রী থাকতো ওই সাকুল্যে ৩ জন বা ৪ জন! বিগ থ্রির অবস্থাওতো শেষ পর্যন্ত তাই দাড়াবে। তার উপর বাকি সবাইকে দ্বিতীয় স্তরে অবনমিত করা যাবে শুধু ভারত, ইংল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়া ছাড়া। এখানেই আমার ঘোরতর আপত্তি। সরল অঙ্কে আমি বেশ ভালো ছিলাম।
সেই সূত্রমতে, অবনমন করা হলে তা সবার জন্যেই প্রযোজ্য হতে হবে। ওদের খেলার এমনিতেই যে অবস্থান হয়তো সহসাই অবনবিত হবে না, কিন্তু এত বড় বীর তাকে আবার রক্ষাকবচ দিয়ে নিরাপত্তা দিতে হবে কেন? আমরা নিয়মিতই একটা কথা শুনি, বিচার যাই হোক তালগাছ আমার। এই দাদাদের দাবিওতো তা-ই।
আইসিসির নির্বাহি কমিটিতেও থাকবে এই ”থ্রী স্টুজেস”। বাকি ৭ টি দেশ থেকে অবশিষ্ট ১ জন, এই ৪ জন নিয়ে হবে কমিটি।
সেই একলা আদমি কতটাই আর মতামত দিতে পারবে? দশটা দলের মধ্যে আবার ৩ জনকে নিয়ে ”নিরাপত্তা পরিশদ”। ১০ জন সদস্যের জাতিসংঘ। এর চেয়ে বরং ৩ সদস্যেরই হোক আইসিসি। বাকি ৭ দলও খেলুক ইন্টার কন্টিনেন্টাল কাপ।
অবশ্য এসব বলার জন্যেই বলা।
নজরুল যতই বড় বড় কথা বলুক ”হে দারিদ্র তুমি মোরে করেছ মহান”, আমাদের অর্থমন্ত্রী সাহেবের ভাষায় বলতে হয় সব বোগাস, সব রাবিশ কথাবার্তা। দারিদ্র সব সময়ই একটা অভিশাপ। এতদিন কথাটা ব্যাক্তিগত, সামাজিক এবং রাষ্ট্রীয় জীবনে দেখলেও এবার সাথে দেখে নিলাম এটা ক্রিড়া ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।
নিউজিল্যান্ড কেন সম্মতি দিয়েছে কে জানে কিন্তু জিম্বাবুয়ের নরম সুেরর পেছনে ওই টাকার গন্ধই কাজ করেছে। শ্রীলংকা, বাংলাদেশ বা ওয়েস্টইন্ডিজ কতক্ষণ নিজেদের এই প্রলোভন থেকে দূরে রাখতে পারবে সেটাই বিবেচ্য।
তবে কি অর্থই অনর্থের মূল? ভারতের কিছু টাকা আছে আর তাতেই বিবেক বিবেচনা লোপ পেল? নাকি তাঁদের সাম্প্রতিক ভালো পারফরম্যান্সেই কপাল পুড়লো গরীবের? টেস্ট, ওয়ানডে এবং টি২০ প্রতিটিতেই ভারত এখন ২ নম্বর দল। এর ফলেই আসলো ”মুই কী হনুরে কমপ্লেক্সিটি”, আর এতেই জন্ম নিল ক্রিকেট ইতিহাসেরই সবচেয়ে আলোচিত বৈষম্যবাদের। আশির দশকে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে নাকানি-চুবানি খায়নি এমন কথা বুক ফুলিয়ে বলুক দেখি কেউ। সেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বর্তমান র্যাংকিং ৭ নম্বর। যেকোন মুহুর্তে চলে যেতে পারে আট বা নয়ে।
এ্যামব্রোস, গার্নার, ল্যান্স গিবস, গর্ডন গ্রীনিজ, জর্জ হেডলি, মাইকেল হোল্ডিং, রোহান কানাই, ব্রায়ান লারা, ক্লাইভ লয়েড, ম্যালকম মার্শাল, ভিভ রিচার্ডস, এ্যান্ডি রবার্টস, গ্যারি সোবার্স, ওইকস, ওরেল, ওয়ালকোট, ওয়ালসরা কি আর জন্ম নেবেন না? নাকি কেবলই রয়ে যাবেন ইতিহাসে?
মৃত্যুর আগে দুইটা জিনিস দেখে যাবার বড় ইচ্ছে ছিল। এক হলো বিশ্বজুড়ে আমেরিকার একচ্ছত্র আধিপত্য শেষ হওয়া। এবং দুই, ক্রিকেট বিশ্বে অস্ট্রেলিয়ার একচ্ছত্র আধিপত্য শেষ হওয়া। একচ্ছত্র আধিপত্যে আমার ভীষণ আপত্তি। সৌভাগ্যক্রমে দ্বিতীয়টি আমার ইতিমধ্যেই সৌভাগ্য হয়ছে দেখে রাখার।
তবে এই ডামাডোলে আমার আরেকটি শখ হয়েছে, ক্রিকেট র্যাঙ্কিং-এ ভারতকে ৯ নম্বরে দেখা।
তবে এতকিছুর পরও যদি শুভ বোধ পরাজিত হয় তাহলে আমি শপথ করে বলছি, আমি ক্রিকেটকে থেকে চিরতরে দূরে সরে যাবো। যদিও আমার মতো হাজারো পাগল মরলেও কিচ্ছু যায় আসে না কারো তবুও আমি অভিমান পুষে যেকোন ধরনের ক্রিকেট থেকে আজীবন নিষিদ্ধ করবো নিজেকে। ভুলে যাবো ক্রিকেট নামে এই গ্রহে কোনদিন কিছু ছিল।
এদেশের ক্রিকেট প্রশাসকের কাছে আকুল আবেদন, অভাব-অনটনের এই দেশের অন্যতম আনন্দ এবং গৌরবের একটা উপলক্ষকে চিরদিনের জন্য বিনষ্ট করবেন না।
কারো কথায় প্ররোচিত হয়ে সাময়িক বা সামান্য লাভের আশায় এদেশের ক্রিকেট সূর্য চিরতরে অস্তমিত করে দিয়ে এদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে মীর জাফর হয়ে থাকবেন না।
ভারতের কথা না শুনলে কী হবে? আইসিসিতে ভালো পদ পাবেন না? কী হবে ব্যক্তিগত দু’একটা পদ দিয়ে? ভারতের সাথে কোন খেলা পাবেন না? কয়টা পান বর্তমানে? টি২০ বিশ্বকাপ বা এশিয়া কাপ আয়োজন করতে পারবেন না? আমরা এক বেলা পোলাও-কোর্মা খেয়ে দুইদিন না খেয়ে থাকতে রাজি নই।
মাথা নত করবেন না। আমাদের ছোট করবেন না। আমার ভবিষ্যৎ হয়তো ওরা অন্ধকার করতে চায়, কিন্তু আমার গৌরবোজ্জল ইতিহাস আছে, আমাদের অর্থ নেই, আমাদের আত্মসম্মান আছে।
আমাদের শক্তি নেই, আমাদের সাহস আছে। আমরা ভয় পাইনি, আমরা মাথা নত করিনি, আমরা আপোস করিনি।
একথা যেন পরবর্তী প্রজন্মের বুকে হাত দিয়ে বলে যেতে পারি ”আপস করিনি কখনই আমি, এই হলো ইতিহাস। ”
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।