আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রাজনৈতিক/দলীয় অন্ধতাঃ মুক্তচিন্তার অন্তরায়!

নিরপেক্ষ নই; সত্য, ন্যায় ও স্বাধীনতার পক্ষেই আছি

ধর্মান্ধতা এবং গোঁড়ামি বাঙালী জাতির প্রগতির পথের অন্তরায় কিনা তা নিয়ে যথেষ্ট বিতর্ক আছে, তবে রাজনৈতিক অন্ধতা বা দলীয় অন্ধতা যে আমাদের প্রগতির পথের বিরাট অন্তরায় সে ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই। ধর্মান্ধতা নিয়ে বিস্তর লেখালেখি হয়েছে, কিন্তু রাজনৈতিক/দলীয় অন্ধতা নিয়ে খুব বেশি লেখালেখি হয় নি। ধর্মীয় বিশ্বাস যেমন একজন মানুষের চিন্তা-চেতনাগুলোকে নিয়ন্ত্রন করে, তেমনি রাজনৈতিক বিশ্বাসও মানুষের স্বাধীনভাবে চিন্তা করার ক্ষমতাকে বাধাগ্রস্থ করে, তার মস্তিষ্কের পুরো অংশটা জিম্মি হয়ে পড়ে একটি রাজনৈতিক দলের মতাদর্শের কাছে।
একজন মুক্তিযোদ্ধা হয়েও জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে হাত মিলিয়েছিলেন চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের সাথে। যে হাতে তুলে ধরেছিলেন স্টেনগান, সেই পবিত্র হাত তিনি কলঙ্কিত করে ফেলেছিলেন গোলাম আযমের হাতটি স্পর্শ করে।

একজন বিএনপিপন্থি কখনো এই সত্যি কথাটি স্বীকার করবেন না। হয় তিনি পুরো ব্যাপারটি অস্বীকার করবেন, নতুবা ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করবেন। ৭১-এর হত্যাযজ্ঞ পরিচালনাকারী চির অভিশপ্ত জামায়াত-ই-ইসলামের সঙ্গে দীর্ঘ ১৪ বছরের অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক স্থাপন করে বিএনপি বিশ্বাসঘাতকতা করেছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গে। এই সহজ সমীকরণটি কোন বিএনপি নেতা-কর্মী-সমর্থকদের কেউ বুঝিয়ে দিতে পারবে না। তারা যুক্তি দেখাবে- "জামায়াতের সাথে জোট হল কৌশলগত।

" কারণ, তাদের বুদ্ধিমত্তা বিএনপি নেত্রীর কাছে বিক্রি হয়ে গেছে, গচ্ছিত হয়ে গেছে 'জাতীয়তাবাদী' চেতনার কাছে।

একজন পরীক্ষার্থী নিজেই নিজের পরীক্ষার খাতায় নম্বর বসিয়ে দিতে পারেন না; কোন ফুটবল ম্যাচে অংশগ্রহণকারী দল সেই ম্যাচে রেফারি হিসেবে নিজের দলের লোক বসিয়ে দেবার অধিকার রাখেন না, ক্রিকেট ম্যাচে কেউ নিজের দলের ১৪ নম্বর খেলোয়াড়কে আম্পায়ার হিসেবে প্রত্যাশা করতে পারেন না। ঠিক তেমনি কোন দল ক্ষমতায় থেকে নিজে নিজেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত করতে পারেন না, এবং জাতি তাদের কাছে প্রত্যাশা করতে পারে না নিরপেক্ষ নির্বাচন। এই সহজ সত্যটি সদ্য ক্রিকেট খেলতে শেখা একটি শিশুও বুঝতে পেরেছিলো, বুঝতে পারেন নি আওয়ামীলীগের কাছে মস্তিষ্ক বিকিয়ে দিয়ে আসা সমর্থককূল। বাংলাদেশের ইতিহাসে কলঙ্কিত নির্বাচন অনুষ্ঠিত হল, সেই নির্বাচনকে স্বাগত জানালেন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দলটির অন্ধ শিষ্যসকল।



'প্রথম আলো' পত্রিকায় একটি ছবিতে ভোটারদের লাইনে কিছুসংখ্যক হিন্দুনারীকে দেখা গেলো- তাতেই তড়াক করে লাফিয়ে উঠলেন আওয়ামীলীগ সমর্থকগণ। আমি হতভম্ব হয়ে আবিষ্কার করলাম, আমার ফেসবুক জুড়ে সুশীল, উচ্চশিক্ষিত, প্রগতিশীল, যুক্তিবাদী, বিতার্কিকগণও 'প্রথম আলো'র বিরুদ্ধে সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়লেন। তারা প্রমাণ করার চেষ্টা করলেন, 'প্রথম আলো' হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বিরুদ্ধে হামলাকে উস্কে দিয়েছে। জামায়াতি প্রোপাগান্ডায় বিশ্বাসীদের সাথে আওয়ামী প্রোপাগান্ডায় বিশ্বাসীদের খুব বেশি পার্থক্য নেই। পার্থক্য একটাই- জামায়াতি প্রোপাগান্ডা বিশ্বাসীরা স্বল্প শিক্ষিত কিংবা অশিক্ষিত হন; অন্যদিকে আওয়ামি প্রোপাগান্ডায় বিশ্বাসীরা হয়ে থাকেন সুশিক্ষিত, লজিকবাদী, বিতার্কিকশ্রেণি।



পৃথিবীর ইতিহাসে নোবেল বিজয়ীদের সম্মান ও শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করা হয়। ডঃ ইউনূসকে পুরো পৃথিবী সম্মানিত করলেও বাঙালী জাতির কিয়দংশের কাছে তিনি যে পরিমাণ বঞ্চনা সইছেন, তার উদাহরণ বিশ্বে বিরল। একজন বাংলাদেশী নোবেল পুরস্কার পেলেন, বিশ্বের সর্বাপেক্ষা প্রভাবশালী বাঙালীদের একজন হলেন- কট্টরপন্থি আওয়ামিসমর্থকগণ তা কোনভাবেই মেনে নেবে না! তারা লজিক দেখাবেন 'ইউনূস সুদখোর। ' শামীম ওসমানের মত সন্ত্রাসী-গডফাদারকে নিয়ে তাদের কোন সমস্যা নেই, ৫ বছরে বিপুল সম্পত্তির মালিক হয়ে ওঠা দূর্নীতিবাজ সংসদদের নিয়েও তাদের কোন চুলকানি নেই... চুলকানি আছে কেবল ডঃ মুহম্মদ ইউনূসকে নিয়ে... তাঁর নোবেল নিয়ে। এই জটিল ধাঁধার সমাধান বাঙালি জাতি কোনদিনও করতে পারবো বলে মনে হয় না।



শুধুমাত্র রাজনৈতিক অন্ধত্ব পুরো জাতিকে দ্বিধাবিভক্ত করে ফেলেছে, অসংখ্য মানুষের স্বাধীনভাবে চিন্তা করার ক্ষমতাটি নষ্ট করে ফেলেছে। প্রখর রোদে আমরা যেমন রোদচশমা বা সানগ্লাস লাগিয়ে সব কিছু দেখি, তেমনি বাঙালি জাতির বৃহত্তর একটি অংশ চোখের সামনে একটি রঙ্গিন চশমা লাগিয়ে সবকিছু পর্যবেক্ষন করেন। কারো কারো চশমার ফ্রেমে ব্র্যান্ড নেম লেখা থাকে- 'বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ' আর কারো কারো চশমায় লেখা থাকে- 'বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল। '

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।