অস্ট্রেলিয়ার গ্রেট ব্যারিয়ার রিফ বা বৃহৎ প্রবাল প্রাচীরের নাম অনেকেই শুনে থাকবেন। এ যেন নীলের কোণে সবুজ শ্যামল এক দ্বীপ। অসংখ্য পর্যটককে প্রেমের বন্ধনে বন্দী করা এ সবুজ মায়া এখন এক নয়া সংকটের মুখে। পরিবেশবিদদের দাবি- জলবায়ু পরিবর্তনে অস্তিত্ব হুমকির মুখে প্রবাল দ্বীপটির। জমছে না নতুন প্রবাল। তার উপরে মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা হিসেবে এসেছে গ্রেট ব্যারিয়ার রিফ মেরিন পার্কের কর্তাদের একটি সিদ্ধান্ত।

একটি বড় কয়লা বন্দর গড়ার সুবিধার্থে তিন মিলিয়ন ঘন মিটার বর্জ্য পদার্থ পার্কের মধ্যে ফেলার অনুমতি দিয়েছেন গ্রেট ব্যারিয়ার রিফ মেরিন পার্কের কর্তারা৷ এর ফলে অস্ট্রেলিয়ার কয়লা শিল্পে প্রায় ২৮ বিলিয়ন ডলারের লগ্নি আসবে- এই আশা থেকেই সিদ্ধান্ত৷ প্রকল্পটির সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে দু'টি ভারতীয় সংস্থা, আদানি ও জিভিকেও৷ পার্ক কর্তৃপক্ষের এ সিদ্ধান্তের কড়া সমালোচনা করেছেন পরিবেশবাদীরা। ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটগুলির অন্যতম গ্রেট ব্যারিয়ার রিফের ভবিষ্যৎ নিয়ে বহুদিন ধরেই সরব পরিবেশবিদরা৷ আশঙ্কা প্রকাশ করে তাঁরা বলেছেন, 'এর ফলে গ্রেট ব্যারিয়ার রিফের মৃত্যুঘন্টা দ্রুত বাজবে৷' আবহাওয়ার ঘনঘন পরিবর্তন, জমি দূষণ, সমুদ্রের জলের অম্লতা বৃদ্ধি এবং প্রবালভোজী ক্রাউন অফ থর্নস স্টারফিসের বংশবৃদ্ধির ফলে অস্ট্রেলিয়ার পূর্ব উপকূল জুড়ে ২৬০০ কিলোমিটার ব্যারিয়ার রিফ এমনিতেই বিপন্ন৷

গত মাসে সারা বিশ্ব থেকে ২৩৩ জন বিজ্ঞানী লিখিত বিবৃতির মাধ্যমে প্রকল্পটি বর্জনের আহ্বান জানিয়েছেন৷ গ্রিনপিসের তরফে লুইস ম্যাথিসন বলেন, 'সিদ্ধান্তটি কার্যকর হলে অস্ট্রেলিয়ার সামুদ্রিক জীবজন্তু, মৎস্য ও পর্যটন শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হবে৷'মেরিন পার্ক কর্তৃপক্ষ অবশ্য মনে করেন কয়লা বন্দর প্রকল্পটিতে অস্ট্রেলিয়া সরকারের পরিবেশ সংক্রান্ত কঠোর বিধিনিষেধ থাকায় ব্যারিয়ার রিফের কোনো ক্ষতি হবে না৷ গ্রেট ব্যারিয়ার রিফ মেরিন পার্ক অথরিটির চেয়ারম্যান রাসেল রাইকেল্ট এই সিদ্ধান্তের সাফাই গেয়ে বলেন, 'সমুদ্রতল থেকে প্রধানত বালি, কাদা ও পলিমাটিই তোলা হবে৷ প্রবাল বা সামুদ্রিক ঘাস তোলায় কড়া নিষেধাজ্ঞা জারি আছে৷'

ওই এলাকায় এমন ভাবে ড্রেজিং করার ফলে অ্যাবট পয়েন্ট বন্দরে কয়লাবাহী বড় বড় জাহাজের ঢোকা সহজ হবে৷ ডব্লু ডব্লু এফ অস্ট্রেলিয়া জানাচ্ছে সব বর্জ্য পদার্থ ভরতে প্রায় দেড় লক্ষ ট্রাক লাগবে৷ আর সেগুলি এক সারিতে দাঁড়ালে, প্রথমটি থাকবে মেলবোর্নে আর শেষটি ব্রিসবেনে, প্রায় এক হাজার কিলোমিটার দুরত্বে৷ - সংবাদ সংস্থা