আমি এমন এক সাধারন মানুষ হতে চাই যে অসাধারন হবার পেছনে দৌঁড়ায়না এবং বিনা প্রশ্নে কিছু গ্রহন করেনা ।
একদিন সকালে দিনাজপুর শহরের রাস্তায় এক অভাবনীয় দৃশ্য দেখা গেলো ।
কি দৃশ্য ?
রাস্তায় হাজারে হাজারে আলু ছড়িয়ে - ছিটিয়ে আছে । হিসাব করলে ৫০ বস্তা আলু দিনাজপুরের রাস্তায় গড়াগড়ি খাচ্ছে । বিভিন্ন যানবাহনের চাকায় তার অনেকগুলোই পিষ্ট হয়েছে ।
কারা এই কান্ড করলো ?
আলু উৎপাদনকারী চাষীরা ।
কেন এই কান্ড করলো ?
আলু চাষের বিশাল ক্ষয়ক্ষতি হবার কারণে । উৎপাদিত আলু বিক্রি হয়না ।
মূল ঘটনা কি ?
আলুর ন্যায্য মূল্য আর ক্ষতিগ্রস্ত আলু চাষীদের ব্যাঙ্কের ঋণ মওকুফের দাবী জানিয়ে আলু চাষীদের শ্লোগান দিতে হয়েছে । কারণ তাদের প্রত্যেকেই সমিতি আর এনজিও থেকে ঋণ গ্রহণ করে এক একর জমিতে ৮ হাজার টাকার চুক্তিতে আলু চাষ করেছিলেন ।
সেই এক একর জমিতে সার , বীজ , কীটনাশক ও কৃষি শ্রমিকের মজুরীসহ খরচ হয়েছে ৫৫হাজার ২০০ টাকা । জমি চুক্তি ও কৃষি উপকরণ এবং শ্রমিকের মজুরীসহ সর্বমোট ব্যয় হয়েছে ৬৩ হাজার ২০০ টাকা । এক একর জমিতে আলু আবাদ হয়েছে ৮হাজার কেজি । ১টাকা ৮০ পয়সা কেজি দরে ৮ হাজার কেজি আলু বিক্রি হয়েছে ১৪ হাজার ৪০০ টাকায় । জমির মালিককে ৮ হাজার টাকা পরিশোধ করে অবশিষ্ট আছে মাত্র ৬ হাজার ৪০০ টাকা ।
দিনাজপুর জেলায় এই বছরে আলু চাষের পরিমাণ কেমন ?
এবারে রেকর্ড পরিমাণ আলু চাষ হয়েছে দিনাজপুরে ।
তাহলে এই করুণ দশা কেন ?
বাজারে ন্যায্য দাম না থাকায় আলু চাষীরা পড়েছে মহা বিপদে । উৎপাদিত ১৮ কেজি আলু বিক্রি করে মাত্র ১ কেজি মোটা চালের ভাত খাওয়া যাচ্ছে । এক কাপ চায়ের দামে বিক্রি হচ্ছে ৩ কেজি আলু ।
কি কারণে এই ভয়াবহ চিত্র ?
গত কয়েক মাস যাবত সারা দেশব্যাপী রাজনৈতিক ক্ষমতা দখলের লড়াইয়ের কারণে উৎপাদিত আলুর রপ্তানী হয়না ।
রপ্তানী হলেও সিন্ডিকেট গোত্র অবশ্যই সারা দেশে আলুর চাহিদার অভাব দেখিয়ে কম দামে চাষীদের উৎপাদিত আলু বিক্রি করাতে বাধ্য করছে বলে ধরেই নেওয়া যায় । তারপর সেই আলু নিয়ে মধ্যসত্ত্বভোগী ছড়িয়ে যায় । সে মোবাইল ফোনে আগে থেকেই জেনে যায় কতোতে চাষীর কাছ থেকে আলু কিনলে তার কাছে কতো থাকতে পারে । কারণ রাস্তায় আলু নিয়ে যেতে যেতে তাকে অনেকের কাছেই বখরার লস গুণতে হবে । পুলিশ থেকে শুরু করে মাস্তান এমনকি খোদ সরকারের একাংশের কাছেও সেই লাভের বখরা পৌঁছে যাবে ।
এই দৃশ্য অবধারিত কারণ এমনটা হয়ে আসছে বরাবর । এই পদ্ধতি ছাড়া এই দেশে কারো পক্ষেই বিত্তবৈভব মারানো সম্ভব নয় ।
আলু বিক্রি করতে না পেরে চাষীদের কি হাল ?
আলু বিক্রি করে চাষীদের উৎপাদন খরচও উঠেনা । তাদের উৎপাদিত আলু ক্ষেতেই বিনষ্ট হচ্ছে । ঋণের দায়ে পাওনাদারদের থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছে তাদের অনেকেই ।
যারা মনে করে চাষীর হাতে মোবাইল ফোন উঠলেই সে লাভ - লোকসানের হিসাব অনায়াসে জেনে নিয়ে ন্যায্য দামে তার পণ্য বিক্রি করবে তারা নির্ঘাত ধান্দাবাজ নয়তো বেয়াক্কেল । চাষী কেন চাষীর বউয়ের হাতেও মোবাইল ফোন তুলে দেওয়া হয়েছে ন্যায্য মূলে সে দাম পাবে সেই বদান্যতা থেকে নয় । মোবাইল ফোন চারিদিকে ছড়িয়ে দেওয়ার ' গণতন্ত্র ' মেনে চলা হলে মোবাইল কোম্পানীগুলোর রমরমা ব্যবসা সুনিশ্চিত করা হবে । সেই নিয়ে বিজ্ঞাপণ করা হবে , পত্রপত্রিকাগুলো সেই উন্নয়নের গল্প ছড়িয়ে দিলে মোটা টাকার ডোনেশন লাভ করবে । গুটিকয় আরবান পিপলের ' কর্মসংস্থানের ' ব্যবস্থা করেই তাদের অনেককে লোভের ফাঁদে ফেলে মগজশূন্য করা যাবে ।
কারণ কে না জানে আরবান পিপল খুশী তো ব্যবসা করে যাওয়া সুনিশ্চিত ।
এদিকে এই খবর শুনে দেশবাসীর মনের কি অবস্থা ?
তাদের অনেকেই খবরটা শুনে বেসম্ভব ' কষ্ট ' পায় । কষ্টের বহিঃপ্রকাশ হিসাবে তারা প্রতিজ্ঞা করে সামনের শুক্রবারে জুম্মার নামাজে আলুচাষীদের জন্য মসজিদে দোয়া করবে । কতোদিন যাবত গ্রামের সুশীতল বাতাস খায়না এই বিষয়টিও অনেকের মনে পড়ে যায় । কেউ কেউ জীবনানন্দ দাস আওড়ানো শুরু করে ।
অনেকেই নগরের যান্ত্রিক জীবনে অতিষ্ঠ হয়ে " দাও ফিরিয়ে সেই অরণ্য লও এই নগর " ঠিকঠিক বলতে পেরে বেশ আনন্দিত হয় । যাক এতো যান্ত্রিকতার মাঝেও এই কবিতা তো ভুলে যায়নি , দুঃখিনী দেশকে তো মনে করে মগজের শোকেসে তুলে রেখে দিয়েছে !!!!!!!!!
আচ্ছা এরপর কি হতে পারে ?
সর্বোচ্চো সম্ভাবনা হলো প্রায় সবাই ভুলে যাবে । ইনশাল্লাহ , মাশাল্লাহ , জিন্দাবাদ , সুভান্নাল্লাহতে আকাশ - বাতাস প্রকম্পিত হবে । অ আ ই ঈ শেখানোর মতো করে সর্বত্র টাকার বিনিময়ে দেশপ্রেম , মানবপ্রেম ইত্যাদি শেখানো হবে । আর যদি কোনভাবে খবরটা বিশেষ গুরুত্ববহ হয়ে উঠে তবে কিছু এনজিও অঢেল ফান্ড আর রঙিন ব্যানার নিয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে যেতে পারে ।
কিছুদিন চিল্লাপাল্লা করার মতো একটা ইস্যু পেলে তাদের জন্য অবশ্যই তা মন্দ হয়না । আজকাল আর কেবল বণ্যপ্রাণী দিয়ে হচ্ছেনা , এবারে একটু মাটি ও মানুষের কাছে ফেরা যেতেই পারে !!!!!!!!!!!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।