আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ধকল কাটিয়ে উঠতে চায় বিএনপি

আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয়ের মাধ্যমে পেছনের ধকল কাটিয়ে উঠতে চায় বিএনপি। এ জন্য উপজেলা নির্বাচনকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছে দলটি। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বাপর গুম, খুন, হামলা-মামলায় বিপর্যস্ত নেতা-কর্মীদের সরকারবিরোধী আন্দোলনে চাঙ্গা করতে এ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৯-দলীয় জোট। জোটগতভাবে একক প্রার্থী নির্ধারণে কাজও করে যাচ্ছে তারা। যদিও এ ক্ষেত্রে তারা হিমশিম খাচ্ছে।

অবশ্য জোটের সিদ্ধান্তের বাইরে বিদ্রোহী প্রার্থী হলে বহিষ্কারের উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে। দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে প্রার্থী হওয়ায় গতকাল নেত্রকোনোর দুর্গাপুর উপজেলার বিদ্রোহী প্রার্থী ইমাম হাসান আবু চানকে দল থেকে বহিষ্কার করেছে কেন্দ্র। গতকাল এ-সংক্রান্ত একটি চিঠি সংশ্লিষ্ট জেলায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এদিকে উপজেলা নির্বাচনকে গুরুত্ব দিয়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের তৃণমূলে সাংগঠনিক সফর স্থগিত করেছে বিএনপি। দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নির্দেশে এ সফর স্থগিত করা হয়।

এ ছাড়া উপজেলা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গঠন করা কমিটিকে যথাযথভাবে দায়িত্ব পালনের নির্দেশনাও দেওয়া হয়। বিএনপির একাধিক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। এ প্রসঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, 'দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পাঁচ শতাংশ ভোট পড়ায় সরকার এখন জনবিচ্ছিন্ন। উপজেলায় সুষ্ঠু নির্বাচন হলে বিএনপি জোট সমর্থিত প্রার্থীরা বিপুল ভোটে নির্বাচিত হবেন। আমরা একক প্রার্থী দেওয়ার ব্যাপারে কাজ করে যাচ্ছি।

বিজয় আমাদের হবেই ইনশা আল্লাহ। ' নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, সারা দেশে ৪৮৭ উপজেলায় ছয় ধাপে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচন ১৯ ফেব্রুয়ারি। এ ছাড়া দ্বিতীয় ধাপে ২৭ ফেব্রুয়ারি, তৃতীয় ধাপে ১৫ মার্চ, চতুর্থ ধাপে ২৫ মার্চ, পঞ্চম ধাপে ৩১ মার্চ ও ষষ্ঠ ধাপে ৩ মে নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। প্রথম ধাপে ৯৮টি উপজেলায় নির্বাচন হচ্ছে।

সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় একক প্রার্থী দিতে হিমশিম খাচ্ছে বিএনপি। অধিকাংশ উপজেলায় বিএনপির একাধিক প্রার্থী। এ ছাড়া জামায়াতসহ জোটের অন্য শরিকদেরও অর্ধশত এলাকায় আলাদা প্রার্থী রয়েছে। এর পরও বিএনপির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা একক প্রার্থী দিতে কাজ করে যাচ্ছেন। দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে বিদ্রোহী প্রার্থীদের ব্যাপারে বহিষ্কারের নির্দেশনা রয়েছে কেন্দ্রের।

ইতিমধ্যে বিভিন্ন উপজেলা থেকে বিদ্রোহী প্রার্থীদের নিয়ে কেন্দ্রে নানা অভিযোগ জমা পড়েছে। উপজেলা নির্বাচনে দায়িত্বপ্রাপ্ত বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা সার্বিক দিক বিবেচনায় এনে বিদ্রোহী প্রার্থীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার উদ্যোগ নিচ্ছেন। দু-এক দিনের মধ্যে অনেক বিদ্রোহী প্রার্থীর বিরুদ্ধে বহিষ্কারের খড়গ চলে আসবে বলে জানা গেছে। উপজেলা নির্বাচনে দায়িত্বপ্রাপ্ত এক কেন্দ্রীয় নেতা জানান, বহিষ্কার করা হলেও বিদ্রোহ ঠেকানো খুব কঠিন হবে। এর পরও দলকে একটি নীতিগত অবস্থানে থাকতে হবে।

তারা একক প্রার্থী নির্ধারণে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে বিএনপি জোট সংখ্যাগরিষ্ঠ উপজেলায় জয়ী হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব মোহাম্মদ শাহজাহান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, উপজেলা নির্বাচনকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছে স্থানীয় বিএনপি। কেন্দ্রীয় কমিটি এটি মনিটরিং করছে। ৫ জানুয়ারির ভোটারবিহীন নির্বাচনের পর এটি ক্ষমতাসীনদের জন্য এসিড টেস্ট।

এ নির্বাচনেও সরকার কারচুপি করলে তৃণমূল থেকে আবারও দুর্বার আন্দোলন গড়ে উঠবে। বিএনপি নেতারা জানান, উপজেলায় নির্বাচিত প্রতিনিধি হলে তৃণমূলের হতাশা, সাংগঠনিক দুর্বলতাসহ নানা বিপর্যয় কাটানো অনেকাংশে সম্ভব। এ ছাড়া সামনের ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনেও এর একটি ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। হতাশা কাটিয়ে নেতা-কর্মীদের মধ্যে চলে আসবে চাঙ্গা ভাব। আন্তর্জাতিকভাবে বিএনপির জনপ্রিয়তা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করবে।

নেতারা এও মনে করেন, উপজেলায় সুষ্ঠু নির্বাচন না হলে লাভবান হওয়ারও সুযোগ রয়েছে। এর মধ্যে নির্বাচন ঘিরে তৃণমূলে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী হওয়া যাবে। সংগঠিত জনমত নিয়ে কারচুপির বিরুদ্ধে আন্দোলনকে জাতীয় আন্দোলনে রূপ দেওয়া যাবে। এতে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে না যাওয়ার যথার্থতা আন্তর্জাতিকভাবে আবারও প্রমাণিত হবে।

সূত্রমতে, উপজেলা নির্বাচনের জয়-পরাজয়ের ওপর নির্ভর করছে বিএনপির আগামী দিনের আন্দোলন কর্মসূচি।

উপজেলায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলে আন্দোলনের ধরন এক হবে। অন্যদিকে ভরাডুবি হলে রাজপথের আন্দোলনের চিত্রও পাল্টে যাবে। এ ছাড়া সর্বশেষ দলের জনপ্রিয়তার মাপকাঠিও নির্ধারণ করা সহজ হবে এতে। বিএনপি নেতাদের অভিযোগ, উপজেলা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ আরও হিংস হয়ে উঠেছে। তারা নানাভাবে বাধা দিচ্ছে বিএনপি জোটের প্রার্থীদের সভা, সমাবেশ ও প্রচারণায়।

গতকালও ঝিনাইদহের শৈলকুপায় আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী রাকিবুল হাসান খান দিপুর সমাবেশে পুলিশের সহায়তায় ব্যাপক তাণ্ডব চালায় আওয়ামী লীগ। এতে বিএনপি নেতা রফিকুল চেয়ারম্যান, শ্রমিক দল নেতা আমজাদ হোসেন, যুবদল নেতা মাসুদ, মনিরুল ও ছাত্রদল নেতা কফিসহ সাতজনকে গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এদিকে এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অবিলম্বে এ হামলার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন। বাংলাদেশ উপজেলা পরিষদ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হারুন অর রশীদ হাওলাদার মনে করেন, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরপরই উপজেলা নির্বাচন দেওয়ায় বিএনপি বেশি লাভবান হবে। সংখ্যাগরিষ্ঠ উপজেলায় জিতলেও তারা লাভবান হবে আবার হারলেও তাদের বিজয় হবে।

জিতলে তৃণমূলে চাঙ্গা ভাব পরবর্তী নির্বাচনের ক্ষেত্রে কাজে লাগবে। আর হারলে তৃণমূল থেকে আন্দোলনের গতি বাড়বে। মূল কথা, সদ্য সমাপ্ত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর উপজেলায় বিএনপির রাজনৈতিক বিপর্যয় কেটে যাবে। আর আওয়ামী লীগ লাভবান হতো, যদি তারা উপজেলা আইন সংশোধন করে কার্যকর উপজেলা পরিষদ গঠন করে একটি নির্বাচন দিত। কিছুটা সময় নিয়ে এটি করলে বিএনপির মধ্যে হতাশা আরও বাড়ত।

অন্যদিকে যুগোপযোগী আইন করার ফলে ইতিহাসেও বাড়ত তাদের অবদান।

 

 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।