আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গান খেকো - শ্রোতা চোথা ৩ (নাদ, শ্রুতি, স্বর, সপ্তক)

জোর হোক শুধু গলার আওয়াজ, গায়ের জোরটা তোলাই থাকুক

6. সঙ্গীতের ব্যাকরন বা শাস্ত্র
হিন্দুস্থানি শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের ব্যাকরণের প্রধান দুটি ভিত্তি - সুর এবং তাল। দুটিই সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ হলেও, সুরের বিষয়টি অনেক বেশি বিস্তৃত। সুরকে চেনার জন্যই সবচেয়ে বেশি সময় ব্যয় করতে হবে। আমরা এই সেকশনে সুরের বিস্তার আলোচনা করবো। পাশাপাশি সচরাচর ব্যবহৃত কয়েকটি তাল, ব্যাকরণ সহ পরিচয় করিয়ে দেব।

এর সাথে থাকবে সঙ্গীতের ভাবরস (Rasa/ Aesthetics) সম্পর্কে সামান্য আলোচনা।

সর্বপ্রথমে আমরা একটি লাইন মনে রাখবো - নাদ থেকে শ্রুতি, শ্রুতি থেকে স্বর, স্বর থেকে সপ্তক, সপ্তক থেকে রাগের সৃষ্টি। আর রাগগুলোর গ্রুপ কারা হয়েছে ঠাট দিয়ে

6.1. নাদ ( বা Musical sound):
নাদ মানে - শব্দ বা ধ্বনি।

শাস্ত্রমতে নাদ শব্দের আর একটু ব্যখ্যা আছে।

দুটি অক্ষর ‘ন’ এবং ‘দ’ আলাদা দুটো অর্থ বহন করে। ন-কার অর্থ প্রাণ বায়ু (Breath) এবং দ- কার অর্থ অগ্নি (Energy), এই দুটির সংযোগে নাদের সৃষ্টি। তবে এই ব্যাখ্যার সাথে সঙ্গীতের আপাতত কোন সম্পর্ক খোঁজার দরকার নেই।

পৃথিবীতে অসংখ্য নাদ হচ্ছে। কিছু নাদ আমরা শুনতে পারি ।

মানে সেই নানগুলো আমাদের শোনার ফ্রিকোয়েন্সির মধ্যে (20 Hz থেকে 20,000 Hz), বাকিগুলো আমাদের শোনার ক্ষমতার বাইরে।

আমরা যেই শব্দগুলো স্পষ্ট শুনতে পাই, সেগুলোই মূলত সঙ্গীত-যোগ্য নাদ।

6.2. শ্রুতি(Microtones):
মানুষ অসংখ্য নাদ শুনতেও পায়। কিন্তু খালি কানে, ঠিকমতো পার্থক্য করতে পারে মাত্র ২২ টির। সেই ২২টিই শ্রুতি।

তবে পাশাপাশি শ্রুতিদের মধ্যে পার্থক্যটা বেশ সূক্ষ্ম। তাই মনোযোগ দিয়ে না শুনলে পার্থক্য খুব ভাল বোঝা যাবে না।

শ্রুতি সংগীতের ভিত্তি। তবে হিন্দুস্থানি শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের প্রাথমিক পর্যায়ে শ্রুতি নিয়ে বিস্তারিত জানার প্রয়োজন পড়বে না। কিন্তু শ্রুতির নামগুলো যেহেতু অসম্ভব সুন্দর, তাই আপনাদের জানানোর লোভ সামলাতে পারছি না।

শুধুমাত্র জেনে রাখার জন্য শ্রুতির তালিকাটি দিলাম।

১) তীব্রা ২) কুমুদ্বতী ৩) মন্দা ৪) ছন্দবতী ৫) দয়াবতী ৬) রঞ্জনী ৭) রক্তিকা ৮) রৌদ্রী ৯) ক্রোধী ১০) বজ্রিকা ১১) প্রসারিণী ১২) প্রীতি ১৩) মার্জ্জনী ১৪) ক্ষীতি ১৫) রক্তা ১৬) সন্দিপনী ১৭) আলাপনী ১৮) মদন্তী ১৯) রোহিনী ২০) রম্যা ২১) উগ্রা ২২) ক্ষোত্তিনী।

শ্রুতিগুলোর ফ্রিকোয়েন্স বা কোন স্বর কোন শ্রুতিতে পড়বে সেটার বিস্তারিত উইকিপিডিয়ার Shruti (music) আর্টিকেলে দেয়া আছে। শ্রুতিগুলো আলাদা করে শুনতে চাইলে অনলাইনে http://www.22shruti.com সাইটটিতে যেতে পারেন।

একটা কারিগরি বিষয় মনে রাখা দরকার।

শব্দ জোরে বা আস্তে হলেই শ্রুতি ভিন্ন হবে না। একই ফ্রিকোয়েন্সিতে কিন্তু বেশি ডেসিবেল এ উৎপাদন করা শব্দ একই শ্রুতির মধ্যে পড়বে।



6.3. স্বর (Note):
স্বর দিয়েই সঙ্গিত তৈরি হয়। স্বরকে সঙ্গীতের প্রধান বর্ণও বলা যেতে পারে।

খুব সহজভাবে বলা যায় - ২২টি শ্রুতির মধ্যে, বিশিষ্ট ১২ টি বিশিষ্ট শ্রুতিই হলো “স্বর”।

এই শ্রুতিগুলোর মাধ্যমেই প্রায় সকল শ্রুতির প্রতিনিধিত্ব করা যায়।

১২ টি স্বরের মধ্যে ৭ টি স্বরকে বলে “শুদ্ধ-স্বর”, এরা সর্ববিশিষ্ঠ স্বর।
অন্য ৫ টিকে বলে বিকৃত স্বর। ৫ টি বিকৃত স্বরের মধ্যে - ৪ টি স্বর কোমল-স্বর, ১ টি কড়ির-স্বর। বিকৃত স্বরগুলো পাশের শুদ্ধ স্বরের কাছাকাছি।



১) “সড়জ” বা সংক্ষেপে “সা”। এটাকে কেউ কেউ “খাড়াজ” বা “খারাজ” বলেন।
২) “খষভ” বা সংক্ষেপে “রে”। এটাকে কেউ কেউ “রিখাব” বা “রেখাব” বলেন।
৩) “কোমল খষভ” যাকে সংক্ষেপে প্রকাশ করা হয় “ঋ” দিয়ে।


৪) “গান্ধার” বা সংক্ষেপে “গা”।
৫) “কোমল গান্ধার” বা সংক্ষেপে “ঞ্জা”।
৬) “মধ্যম” বা সংক্ষেপে “মা”।
৭) “তীব্র মা” বা “কড়ির মা”। যেটাকে সংক্ষেপে প্রকাশ করা হয় “ক্ষা” দিয়ে।


৮) “পঞ্চম” সংক্ষেপে “পা”।
৯) “ধৈবত” বা সংক্ষেপে “ধা”।
১০) “কোমল ধৈবত” বা সংক্ষেপে “দা”।
১১) “নিষাদ” বা “নিখাদ” । সংক্ষেপে প্রকাশ করা হয় “নি” বা “না” দিয়ে।


১২) “কোমল নিষাদ” বা সংক্ষেপে “ণি”।

গাইবার সময় সবাই সংক্ষিপ্ত রুপ গান। তবে বলা বা লেখার সময় সচরাচর পুরো নাম ব্যাবহার করা হয়। তাই নামগুলো মনে রাখার দরকার আছে।


6.4. সপ্তক:
সপ্তক মানে ৭।

মূলত সর্ববিশিষ্ট ৭ টি স্বরের সমষ্টিকেই সপ্তক বলে।
তবে এই ৭ স্বরের আশেপাশে পাঁচটি (মুল সুরের কাছাকাছি) কড়ি-কোমল স্বর থাকে। তাই ১২ টি স্বরকে মিলিয়েই এক সপ্তক হিসেব করা হয়।

সাধারণ প্রচলিত হারমোনিয়ামে ৩ টি সপ্তক থাকে। মন্দ্র, মধ্য এবং তার।

মন্দ্র সপ্তক সবচেয়ে ভারি বা গম্ভীর। তার সপ্তক চড়া এবং চঞ্চল। আরও বিস্তৃতি যন্ত্রগুলোতে, অতি-মন্দ্র এবং অতি-তার নামের, আরও দুটো সপ্তক থাকে। তবে প্রচলিত সঙ্গীতে এ দুটো সপ্তকের তেমন একটা প্রয়োগ নেই।

Click This Link


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।