বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু ডব্লিউ এ এস ওডারল্যান্ড। এদেশের স্বাধীনতা যতদিন টিকে থাকবে ওডারল্যান্ড নামটিও রবে ইতিহাসের পাতায়। কারণ বিদেশি হয়েও তিনি এদেশের মুক্তিকামী মানুষের জন্য অস্ত্র হাতে নিয়েছেন। ঘায়েল করেছেন পাকিস্তানি হানাদারদের। আজ ১৮ মে।
২০০১ সালের এইদিনে পৃথিবী থেকে চিরবিদায় নেন ওডারল্যান্ড। ওডারল্যান্ড হলেন একমাত্র খেতাবপ্রাপ্ত বিদেশি যোদ্ধা। যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধ করেন। মুক্তিবাহিনীর ২নং সেক্টরের গেরিলাযোদ্ধা ছিলেন তিনি। ১৯৭০ সালে নেদারল্যান্ডের ওডারল্যান্ড বাটা জুতা কোম্পানির প্রোডাকশান ম্যানেজারের চাকরি নিয়ে বাংলাদেশে আসেন।
অল্প কয়েকদিন পর জেনারেল ম্যানেজারের দায়িত্ব পান। কিন্তু ৭১’র গনহত্যা, পাকিস্তানীদের ধ্বংশযজ্ঞ জাগিয়ে তোলে ওডারল্যান্ডের সৈনিক মনকে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের গেরিলা যুদ্ধের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে ব্যাবস্থা করেন মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণের। মুক্তিযোদ্ধাদের টঙ্গীর বাসায় আশ্রয় দিতে নিজের পরিবারকে দেশে পাঠিয়ে দেন। বাটা কোম্পানির টঙ্গী ফ্যাক্টরির ভেতরেই মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণের ব্যাবস্থা করেন।
বিদেশি হিসেবে বহুজাতিক কোম্পানীর শীর্ষ কর্মকর্তা হিসেবে তার গতিবিধি ছিল অনেকটাই অবাধ। জেনারেল টিক্কা খান, জেনারেল নিয়াজির সঙ্গে ব্যক্তিগত বন্ধুত্ব গড়ে তোলেন। তার প্রবেশাধিকার ছিল সেনানিবাসেও। এ সুযোগে তিনি পাকিস্তানীদের গনহত্যা, লুটপাট, জ্বালানো-পোড়ানোর ছবি পৌঁছে দিয়েছেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। আর পাকিস্তানীদের গতিবিধির খবর পৌঁছে দিতেন মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে।
মুক্তিযোদ্ধাদের নগদ আর্থিক সহায়তা থেকে শুরু করে সব ধরনের সাহায্য করে গেছেন যুদ্ধের শেষ দিন পর্যন্ত।
মহান মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অংশগ্রহণ ও অসামান্য নৈপুণ্যতার কারণে পরবর্তীকালে বাংলাদেশ সরকার তাকে বীরপ্রতীক সম্মাননায় ভূষিত করেন। মৃত্যুর আগমুহূর্ত পর্যন্ত নামের সঙ্গে বীরপ্রতীক খেতাবটি লিখেছিলেন তিনি। ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশেই ছিলেন ওডারল্যান্ড। চাকরি থেকে অবসর নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার পার্থ নগরীতে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন।
সেখনেই তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ১৮ই মে ২০০১ সালে মৃত্যবরন করেন ওডার ল্যান্ড। তিনি তার একমাত্র মেয়েকে বলতেন ‘বাংলাদেশ আমার ভালোবাসা। ’ ওডারল্যান্ড ১৯১৭ সালের ৬ ডিসেম্বর নেদারল্যান্ডের আমস্টারডামে জন্মগ্রহণ করেন।
( বাংলানিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকম) ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।