আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

চীফ হুইপদের গল্প: আমাদের, তাদের এবং বিরোধীদলের একজন চীফ হুইপ

বিচ্যুত যৌবনে জোছনা আমায় করেছে উম্মাদ

আমাদের চিফ হুইপ

দৈনিক মানব জমিনে দেখলাম আমাদের বর্তমান সংসদের মাননীয় চীফ হুইপ আ স ম ফিরোজ সাহেবকে তার দলীয় নেতা কর্মীরা যখন তোষামোদে ব্যাতিব্যাস্ত হয়ে ক্রেস্ট সহ বিভিন্ন উপহার উপঢৌকন দিচ্ছিলেন তখন চীফ হুইপ সাহেব খুব নাখোশ হয়ে ঘোষনা দিলেন "ক্রেস্ট নয় ক্যাশ চাই, ক্যাশ" বাংলাদেশের রাজনীতিতে এসব অসভ্য ইতর শ্রেনীর নেতা কর্মীদের এমন আচরন নতুন কিছু নয় তাই আমি অবাক হইনি। ভবিষ্যতে যদি কোন মন্ত্রী, এমপি সভা মঞ্চে দাঁড়িয়ে ঘোষনা দেন যে, "ক্যাশের পাশাপাশি জায়গা-জমি ও ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানের শেয়ার চাই" তাতেও আমরা সাধারন খেটে খাওয়া মানুষ অবাক হবোনা। বাংলাদেশের রাজনীতিবিদদের চরিত্র আমাদের খুব ভালো করেই জানা রয়েছে। দূর্নীতিবাজ, লোভী, শঠ, পরশ্রীকাতর, ঠকবাজ, ভুমিখেকো, দখলবাজ, চাঁদাবাজ, টেন্ডারবাজ, সন্ত্রাসী ও ঘোষখোর সাবেক আমলাদের মাঝে হারিয়ে গেছে প্রকৃত রাজনীতিকের চেহারা।

তাদের চীফ হুইপ

সেদিন ছিলো ২০১২ সালের ১৯শে সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা।

৯ নং ডাউনিং স্ট্রিটের অফিস থেকে সবে মাত্র বের হয়েছেন চিফ হুইপ আ্যান্ড্রু মিশেল। সাইকেলে করে ডাউনিং স্ট্রিটের শেষ প্রান্তে মেইন গেটের কাছাকাছি আসতেই কর্তব্যরত একজন পুলিশ অফিসার তাকে মেইনগেটের পরিবর্তে পথচারীদের জন্য ব্যবহৃত ছোট গেট দিয়ে বের হতে বলেছিলেন। তারপর চিফ হুইপ আ্যান্ড্রু মিশেলের উত্তরটা ছিলো এরকম "Best you learn your fucking place. You don't run this fucking government ... You're fucking plebs.

এর পরের ইতিহাস আমরা সবাই খুব ভালো করেই জানি। আ্যান্ড্রু মিশেল ক্ষমা চেয়েছেন। ক্ষমা চাওয়ার মধ্যেই বিষয়টা সীমাবদ্ধ থাকেনি মি. মিশেলকে পদত্যাগ করতে হয়েছিলো।

পুলিশের সংগে দূর্ব্যবহার জনিত কারনে এমন পদত্যাগের ঘটনা পৃথিবীতে অনেক থাকলেও বাংলাদেশে একটাও নেই। কারন বাংলাদেশের পুলিশ হচ্ছে দলীয় পা চাটা কুকুরের মতো। তাই পুলিশও বিরোধীদলের চিফ হুইপের উপর হাত তুলতে কুন্ঠাবোধ করেনা। আর পদত্যাগ করেইবা কি হবে? নতুন যিনি স্থলাভিষিক্ত হবেন তিনি হয়তো আরো বেশী খারাপ। আসলে আমাদের পুরো সিস্টামটাই এমন, দলীয়করন আর দূর্নীতির বেড়াজালে আবদ্ধ।



আরো একজন চিফ হুইপ

ইনি বাংলাদেশে বিরোধী দলীয় চীফ হুইপ ছিলেন। সেদিন ছিলো ৬ জুলাই ২০১১ সাল। বিরোধী দলীয় চীফ হুইপ সেদিন তার দলীয় অন্যান্য সাংসদদের নিয়ে সংসদ ভবনের সামনে মিছিল বের করার চেস্টা করলেন। সেই চেস্টায় পুলিশ বাধা প্রদান করলো। পুলিশের সাথে সেখানে তর্ক বিতর্ক শুরু হয়ে গেলো।

বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ পুলিশকে জানালেন গনতান্ত্রিক দেশে মিছিল, প্রতিবাদ করার অধিকার সবারই আছে। তাছাড়া সরকার মিছিল নিষিদ্ধ করে কোন আইনও জাড়ি করেনি তাই তারা মিছিল করবেন। শেষে পরিস্থিতি খুব নোংরা পর্যায়ে চলে গেলো। তর্ক যুদ্ধে জড়িয়ে পরলেন এসি বিপ্লব ও হারুন নামের বাংলাদেশ পুলিশের দুই কৃতি! পুলিশ সদস্য। কিছু পরে বিপ্লব ও হারুন সরাসরি ঝাঁপিয়ে পড়লেন চীফ হুইপ জয়নুল আবেদিন ফারুকের উপর।

অকথ্য ভাষায় গালি দিলেন একজন রাজনৈতিক নেতাকে। ফারুক কে উদ্দেশ্য করে তাদের ভাষাটা ছিলো এরকম, "শুওরের বাচ্চা তোর বাপের নাম ভুলিয়ে দেব" - শুওরের বাচ্চা, কুত্তার বাচ্চা থেকে শুরু করে খানকির পোলা সহ কিছু বাদ রাখেননি পুলিশ সদস্য হারুন ও বিপ্লব। জয়নুল আবেদিন ফারুককে লাত্থি ও উষ্ঠা দিয়ে রাস্তায় ফেলে যেদিন পেটানো হয়েছিলো সেদিনই বুঝে ছিলাম বাংলাদেশের বাংলাদেশের রাজনীতি আসলেই দুবৃত্ত ও ইতরদের জন্য। তারপর অনেক জল গড়িয়ে গেলো অভিযুক্ত পুলিশের কিছুই হলোনা। বছর শেষে এসি হারুন ও বিপ্লব কে রাস্ট্রীয় পদকে ভুষিত করা হলো।

স্বরাস্ট্রমন্ত্রী বললেন চীফ হুইপ পেটানোর ঘটনাটি তারা বিবেচনায় নিয়ে এই পদকে ভুষিত করছেন হারুনকে।

হীরক রাজার দেশ: আপনাদের মর্জিতেই চলি আমরা

গনতান্ত্রিক দেশগুলোতে রাজনীতিকেরা যখন বেকায়দায় পড়েছেন তখন চেস্টা করেছেন ভালো কিছু করে নিদেনপক্ষে দোষ স্বীকার করে একটা ভালো উদাহরন তৈরি করতে। কিন্তু বাংলাদেশ এমনই এক হিরক রাজার দেশ যেখানে প্রতিযোগীতা চলে কে কত বেশী খারাপ উদাহরন তৈরি করতে পারে। আমাদের চিফ হুইপ ক্যাশ চেয়ে বক্তৃতা করার পরও যেমন তার কোন লজ্জা শরম হয়নি। পদত্যাগতো দুরের কথা।

তিনি তো আর আ্যান্ড্রু মিশেলের মতো লাজ শরম নিয়ে পৃথিবীতে আসেন নি। বরং আওয়ামীলীগের এক সাবেক এমপি বলেছিলেন আওয়ামীলীগের এমনই ইজ্জত যে হাজার বছর জুতা দিয়ে পিটালেও সে ইজ্জতের এতটুকু ক্ষতি হবেনা। তাই এই বিরাট ইজ্জত ও সম্মাণের দাবীদার দলটির তার চেয়েও বেশী ইজ্জত সম্মানওয়ালা চিফ হুইপ পৃথিবীর সকল লাজ শরম ত্যাগ করে তার বক্তব্য বিকৃতভাবে ছাপানোর অভিযোগ করে আজ সাংবাদিকদের উল্টো তার কাছে ক্ষমা চাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। মাননীয় চিফ হুইপ সংবাদপত্র আপনার ক্যাশ চাওয়ার বক্তব্য শুধু ছাপায়ইনি বরং তারা আপনার বক্তব্যের ভিডিও প্রকাশ করেছে সাথে সাথে। তবুও আমি মনে করি আসলে সাংবাদিকদের ক্ষমা চাওয়া উচিত।

শুধু সাংবাদিক নয় পাশাপাশি জনগনেরও ক্ষমা চাওয়া উচিত। কারন হীরক রাজার দেশে আপনার মতো একজন বিরল সম্মানের অধিকারী চিফ হুইপ সামান্য ক্যাশ চেয়েছেন এ আর এমন কি? যেখানে অর্থমন্ত্রী বলেন চার হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ কোন বড় দূর্নীতি নয়।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।