হয় আমায় দেশদ্রোহী বল, না হয় এক পেয়ালা হেমলক দে !
দৃশ্যপট ১ : ২৯ নভেম্বর, ২০১২ । প্রতিশ্রুতিশীল চিকিত্সক সাজিয়া আফরিন ইভা জীবন দিয়ে নিজের সম্মান রক্ষা করেছেন। ধর্ষণে ব্যর্থ হয়ে ঘাতকরা তাকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। এ হৃদয়বিদারক ঘটনাটি ঘটে ঢাকার দক্ষিণখান থানার আমতলা ব্র্যাক ক্লিনিকে। সাধারণ কোন ডাক্তার নন তিনি, দুইটা প্রফেশনাল পরীক্ষায় মেধা তালিকায় স্থান পেয়েছিলেন।
আর কিছুদিনের মধ্যে fcps ফাইনাল কমপ্লিট করতেন। কিন্তু রাজধানী ঢাকার মধ্যে একটা ক্লিনিকে ডিউটি রত অবস্থায় খুন হলেন তিনি।
দৃশ্যপট ২ : ১৬ ডিসেম্বর, ২০১২ । ভারতের দিল্লীতে ২৩ বছর বয়সী মেডিকেল ছাত্রী দামিনি বাসের মধ্যে কিছু নরপশু কর্তৃক গণধর্ষিত হয়। যৌনাঙ্গের ভিতর দিয়ে লোহার রড ঢুকিয়ে দেয়ায় ক্ষুদ্রান্ত্র বৃহদান্ত্র ছিন্ন বিচ্ছিন্ন করে গিয়েছিল তার।
প্রায় ১০ দিন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে সিঙ্গাপুরে মৃত্যুবরণ করে।
কোন মৃত্যুই আমাদের কাছে আকাঙ্খিত নয়। কিন্তু ২ টি দৃশ্যপটেরই পরিণতি মৃত্যূ । এখানে আমরা কাকে বেশি করে চিনি একজন ইভা কে না দামিনিকে ? উত্তর তো এমনিতেই দেয়া যায়, হ্যা! আমরা দামিনিকেই বেশি করে চিনি। অনেক বেশি অতিথিপরায়ন বলে হয়তো বাড়ির ছোট্ট বোনটির প্রতি আমাদের দায়িত্ববোধটা অনেক ছোট ছিল।
ছোট করছি না আমি দামিনিকে, সেও তো আমার বোন। কিন্তু হঠাৎ করে বুকে হাত রেখে আমি অনুভব করলাম ইভা আপুর সঙ্গে অনেক বড় অবিচার করা হয়ে গেছে আমাদের।
ভারত, অনেক বড় এবং ঘনবসতিপূর্ণ দেশ। দেশটি তো বাংলাদেশের চেয়েও নারী নির্যাতনে শতগুণ খারাপ। এই ভারত কিভাবে সভ্য বলে দাবী করে নিজেদের ? ৬৫ বছরের ভুয়া বুর্জোয়া গণতন্ত্র মৃত্যু উপহার দিয়ে শুধু অসভ্যতাকে ফুটিয়ে তোলে।
দিল্লি একটা নষ্ট শহর। দিল্লিতে আন্দোলন নয় চিনের মত সমাজতন্ত্র দরকার, না হলে কোনদিনই তারা সভ্য হবেন না। বাংলাদেশের কথা বলি এবার,ভারতের পাশে থাকি বলে গণ্ধ তো একটু আসবেই আমাদের গায়ে তাই না ?? তবে হ্যা, আমরা অসভ্য নই। নিজেদের খুব বড় গলায় হয়তো সভ্য বলতে ভয় লাগে কিন্তু আমরা কোন অসভ্যতা করি না। নিচে একটা পরিসংখ্যান দিচ্ছি ঢাকা আর দিল্লীর –
ইণ্ডিয়াটুডের ২০ ডিসেম্বরের খবরে বলা হয়েছে কেবলমাত্র দিল্লী শহরে ২০১২ সালে ৬৩৫টি ধর্ষনের মামলা হয়েছে, ৭৫৪ জন ধর্ষক প্রেফতার হয়েছে,৪০৪ জন আসামির চালান হয়েছে।
শাস্তি হয়েছে মাত্র ১ জনের,মামলার তদন্ত ঝুলন্ত আছে ৩৪৮টি। ঈভ টিজিং-এ ১৯৩টি মামলা হয়েছে। গ্রেফতার ২০০,কেউ শাস্তি পায়নি। ২০১২ সালে যৌতুকের বলি ১২৮টি; আর এতে গ্রেপ্তার ২৫৩ জন। আর বিবেচনা করুন দিল্লির বর্তমান লোকসংখ্যা ১.৮৭ কোটি।
এখন বলুন, ভরতের মত দেশ ছাড়া কোন দেশে এরকম নারী নির্যাতন হয়। ঢাকাতে ১ বছরে ৩৫টি মামলা হয়েছে ধর্ষনকে কেন্দ্র করে। ২৮টি নারী যৌতুকের বলি হয়েছে। তবে চাঁদাবাজির ঘটনা দিল্লীর থেকে ঢাকায় বেশি। কিন্তু চাঁদাবাজি তো আর নারী নির্যাতনের পরিপূরক নয় না অসভ্যতার মাপকাঠি।
বিচার আপনারাই করুন !
ভারত নিয়ে অনেক বললাম তাই দামিনিকে নিয়ে আর কিছু লিখছি না। আমার সেই অভাগা আপুটিকে নিয়ে একটু লিখি। প্রথমে বলছি আমাদের মানবাধিকার কর্মীদের যারা একজন কালা জাহাঙ্গীর ক্রস ফায়ারে নিহত হলে নিজেদের মুখ ফাটান একই সঙ্গে বুক ফাটান। পরে ফাটা মুখ আর বুক নিয়ে সেই ছোট্ট আপুটার কাছে আসেন পথ্য লিখে নেয়ার জন্য। কিন্তু এরপর নিজের সম্ভ্রম রক্ষা করতে যখন সেই আপুটা নিজের প্রাণ বিসর্জন দেন তখন তারা চুপ থাকেন, কেন ? কই যায় তাদের মানববন্ধন, শোকর্যারলী ? বলতে কষ্ট লাগে, তাদের কাছে ধর্ষনের সংজ্ঞা ভিন্ন ।
কারণ তারাই তো যুগে যুগে বলে এসেছেন-ধর্ষনকে এড়াতে না পারলে উপভোগ করাই শ্রেয়৷ ধিক ধিক শতধিক তাদের।
এবার বলছি হলুদ চশমা পরিহিত সেই সব সাংবাদিকদের। যারা তাদের ছোট্ট বোনটির বীরচিত কর্মকাণ্ডকে পাঠক সমাজের কাছে তুলে ধরেন ভিন্ন ভাবে। অনেকেই আবার পাঠক সমাজে সমাদৃত হতে চটি সাহিত্য তৈরি করে ফেলেন। তারা বলেন-"কোন ডাক্তার মরলে নিউজ এজেন্সির কিছু যায় আসেনা, এটা কোন খবর না তবে ডাক্তারের হাতে কেউ মারা গেলে সেটা ইম্পরট্যান্ট।
" কিসের এত নোংরামি, ডাক্তাররা কি করছে সাংবাদিকদের ?
ইভা আপুর জন্য আমার আর বেশি কিছু করার নেই। নিজেকে অনেক অসহায় লাগছে। পরদেশী দামিনিকে আমরা অনেক বড় মযার্দা দিতে পারি কিন্তু ইভা আপুকে তার যোগ্য সম্মান প্রদর্শন করি না। আমি চাই না আমার ইভা আপু মালালা-র মত বিরোচিত সম্মাননা পান। শুধু চাই একজন বাংলাদেশের মেয়ে হিসেবে বাকী সব বাংলাদেশীদের কাছ থেকে তার প্রাপ্য সম্মান।
যেখানেই থাক অনেক ভাল থাক ইভা আপু ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।