আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ওজন নিয়ন্ত্রণ

বিয়ের আগের দিনগুলোতে মিষ্টি বা মিষ্টি-জাতীয় খাবার খাওয়ার পরিমাণ কতটুকুই বা ছিল? ভেবে দেখুন, বিয়ের কথা পাকা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়িতে মিষ্টির আনাগোনা বেড়ে গেল কি না? আত্মীয়, বন্ধুবান্ধব আর স্বজন ঘরে ঢুকেই হয়তো আপনার ‘মুখমিষ্টি’ করাতে ব্যতিব্যস্ত। তারপর তো শুরু হলো বিয়ের তোড়জোড়। হলুদ, আইবুড়ো ভাত কিংবা মেহেদি অনুষ্ঠানে কী পরিমাণ মিষ্টান্ন খেতে হয়েছে আপনাকে!

হলুদ ছুঁয়ে এক চামচ মিষ্টি মুখে নিয়ে আশীর্বাদসমৃদ্ধ হয়েছেন আপনি। ভেবে দেখেছেন কি, আশীর্বাদ গ্রহণের পাশাপাশি বেশ কিছুটা অতিরিক্ত ক্যালরিও গ্রহণ করে ফেলেছিলেন সে সময়।

চলে এল বিয়ের দিন।

বিরিয়ানি, রোস্ট-পোলাও আর বউবরণের ঝকমারি শেষে বউভাত। তারপর মধুচন্দ্রিমা। উদ্দাম-উত্তাল দিনগুলোতে ক্যালরি মেপে খাওয়া আর নিয়মিত ‘ওয়ার্কআউট’— এসব তো পাগলের প্রলাপ।

শুরু হল নতুন জীবন। এবারের পালা, নিয়ম করে নিমন্ত্রণ রক্ষা আর পোলাও-মাংসে উদরপূর্তি।

দাওয়াতবিহীন দিনগুলোতে রাতের খাবার একসঙ্গে খেতে গিয়েও আবার অনিয়ম। অফিসফেরত সঙ্গীকে সঙ্গ দিতে রাতের খাবার খেতে খেতে ১০টা পার। নতুন শ্বশুরবাড়িতে কিংবা একার সংসারে নিজের জন্য হালকা সুপ বা রুটি তৈরির অনুরোধ কখনও সংকোচের, কখনও বা ঝক্কির।

নতুন জীবনে দু’জন মিলে ঘুরে বেড়ানো, বন্ধুদের নিয়ে আড্ডা, নিত্যনতুন কফিশপ আর আইসক্রিম পার্লারে কাটানো বিকেল। নাগরিক জীবনে ছুটির দিন বা কর্মহীন বিকেল মানেই ‘হাই ক্যালরি’কে আমন্ত্রণ।

আর এভাবেই একটু একটু করে ওজন-মেশিনের কাঁটা ডান দিকে হেলে পড়া।

তাহলে উপায়? বিয়ের সঙ্গে জড়িত সব প্রথা বা অনুষঙ্গকে দূরে ঠেলে দিয়ে সুপ বা সালাদ দিয়েই নতুন জীবন শুরু করা! নাকি আত্মীয়-বন্ধুর দাওয়াত উপেক্ষা করে ঘরে বসে থাকা! ‘এটা খাব না’, ‘ওটা খেলে ওয়েট বাড়বে’— এসব কথা আওড়াতে আওড়াতে নতুন স্বজনদের বিব্রত ও ব্যতিব্যস্ত করে তোলা?

আরে ভাই থামুন! ওজন বেড়ে যাওয়ার ভয়ে নতুন জীবন এত কঠিন ও শুষ্কভাবে শুরু করার কোনো মানেই হয় না। আবার সামাজিকতা রক্ষা করতে গিয়ে বাড়তি ওজনের ঝক্কি নেওয়াটাও বোকামি। সে ক্ষেত্রে পুষ্টিবিজ্ঞানীদের দেওয়া ছোটখাটো কয়েকটি টিপস অনুসরণ করে দেখা যেতে পারে। নিয়মগুলো খুব জটিল নয়, আবার কার্যকরীও বটে।

পুষ্টিবিজ্ঞানীদের মতে, এই ছোটখাটো টিপসগুলো বিয়ের পরে ওজনকে বাগে রাখতে বেশ সাহায্য করে।

* হলুদের অনুষ্ঠান কিংবা মেহেদির আসর, যেখানেই কনেকে হরেক পদের মিষ্টির স্বাদ নিতে হয়, সেখানে মিষ্টান্নে ‘চিনি’র বিকল্প বা হিসেবে যা পাওয়া যায় তা দিয়ে তৈরি করতে বলুন সেমাই, পায়েস বা হালুয়া।

* কনে বা বরের সামনে সাজানো খাবারের বেশিরভাগই রাখুন ফল বা ফলের তৈরি ডেজার্ট। এতে করে বিয়ের আনুষ্ঠানিক রেওয়াজও বজায় থাকল, আবার বর-কনেকে অতিরিক্ত ক্যালরিও গ্রহণ করতে হল না অযথা।

* বিয়ে থেকে বউভাত-এ সময়কালে ভারী খাওয়া থেকে দূরে থাকা কোনোভাবেই সম্ভব হয় না।

তাই খাবারের প্লেটে পোলাও-মাংসের সঙ্গে সালাদটাও তুলে নিন। সম্ভব হলে একটু বেশি করেই নিন সালাদ।

* মধুচন্দ্রিমার দিনগুলো যেহেতু একান্তই নিজেদের, তাই এই সময় থেকেই শুরু করুন পরিকল্পনা করে খাওয়া। একে অন্যকে ভালো করে বুঝে নেওয়ার এই সুযোগে সঙ্গীকে আপনার খাদ্যাভ্যাস সম্পর্কে ওয়াকিবহাল করে তুলুন। সবজি, সালাদ, মাছ বা গ্রিল করা মাংস অর্ডার করুন অবকাশযাপনের দিনগুলোতে।

কার্বোহাইড্রেট-জাতীয় খাবার খান, তবে পরিমাণে কম। ডেজার্টে টক দই বা ফল রাখুন।

* বিয়ের পর হঠাৎ লক্ষ করলেন, সঙ্গীর পছন্দ ‘হাই ক্যালরি’র খাবার। ফলে ওজন নিয়ে আপনার খুঁতখুঁতে স্বভাবের কারণে হয়তো বিবাহিত জীবনের নতুন দিনগুলো ভোজনপ্রিয় সঙ্গী হয়ে পড়লেন একটু দিশেহারা। তাই শুরুতেই নিজের খাদ্যরুচির পুরোটা তার ওপর না চাপিয়ে আস্তে ধীরে তার অভ্যাসে পরিবর্তন আনতে চেষ্টা করুন।

* আপনার হাতে তৈরি পায়েস বা পুডিং কিংবা খাসির রেজালা খুব পছন্দ আপনার সঙ্গীর? রান্না করুন তার জন্য। তবে মিষ্টান্নে চিনির বিকল্প হিসেব যা পাওয়া যায় তা ব্যবহার করুন। আর তেলে ভাজা বা রোস্ট-রেজালায় ব্যবহার করুন জলপাইতেল। পাশাপাশি সবজি, সালাদ বা গ্রিল করা সুস্বাদু রেসিপিও রাখুন টেবিলে।

* আগে হয়তো রাতের খাবার একটু আগেই সেরে ফেলতে পারতেন।

তবে এখন একসঙ্গে খাওয়ার জন্য বিয়ের পর আপনাকে খেতে হচ্ছে রাত ১০টায়। খাওয়ার এ সময় এগিয়ে আনতে পারলে ভালো। নতুবা সুপ বা হালকা খাবারই রাতের মেন্যুতে স্থান দিন।

* অফিসফেরত সঙ্গী বিকেলে চায়ের সঙ্গে তেলেভাজা খাবার খেতে ভালোবাসেন। তিনি চান আপনিও তাঁকে সঙ্গ দিন চা-পানে।

সঙ্গ অবশ্যই দেবেন, তবে তেলেভাজাতে নয়, চা-পানে। আর তেলেভাজাতে চেষ্টা করুন কম তেল দিতে। চায়ের চিনিও কমিয়ে আনুন ধীরে ধীরে।

* নববিবাহিতদের জীবনে অন্য কিছুর কমতি পড়লেও দাওয়াতের কোনো কমতি নেই। বিয়েরপর বারো মাসে তেরো পার্বণের মতো সপ্তাহের সাত দিনে আট-দশটা দাওয়াত গ্রহণ খুব স্বাভাবিক একটা ঘটনা।

এসব ক্ষেত্রে দাওয়াতে যাওয়ার আগে এক বাটি সুপ অথাব ভরপেট সালাদ খেয়ে রওনা দিন।

* নিমন্ত্রণের বাড়িতে গিয়ে খাওয়া বেশি হয়ে গিয়েছে? পরের কয়েকটি দিন দুপুরের খাবারে সুপ, সালাদ খান আর যখনই পারেন টক দই। টক দই ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে বেশ।

* দাওয়াত খেতে যাচ্ছেন? স্বজনদের জন্য মিষ্টিতো নিতেই হবে। আর সেই মিষ্টির কিছুটা, খাওয়ার পর আপনাকেও গ্রহণ করতে হবে।

তাই মিষ্টির পাশাপাশি চিনিছাড়া দইও নিন। আর সেটা সম্ভব না হলে কাঁচাছানার সন্দেশ বা হালকা মিষ্টির লাড্ডু নিন।

* ছুটির দিনে কফিশপ নাকি নতুন কোনো রেস্তোরাঁ— চলে যান নির্দ্বিধায়। অর্ডার দিন ব্ল্যাক কফি অথবা চিনিছাড়া চা। স্ন্যাকসে গ্রিলড-স্যান্ডউইচ বা ব্রাউন পাস্তা।

কিংবা হতে পারে চিকেন সালাদ অথবা ফ্রুট ইয়োগার্ড। পিৎজা হলে ভেজিটেবিল পিৎজা।

* দু’জনে মিলে সকাল বা বিকেল কিংবা সান্ধ্যভ্রমণে বেরুতে পারলে খুব ভালো হয়। নতুন জীবনে সঙ্গীকে এক জোড়া কেডস বা ট্র্যাকস্যুট উপহার দিন। আর জানিয়ে দিন আপনার মনের ইচ্ছে, দুজনে একসঙ্গে হাঁটতে হাঁটতে গল্প করা।

সাইক্লিংয়ের অভ্যাস থাকলে, দুজনে পাশাপাশি সাইকেল চালিয়েও কাটাতে পারেন সন্ধ্যাটা। সুইমিংয়ের সুযোগ থাকলে সেটা অবশ্যই হাতছাড়া করবেন না। দারুণভাবে সময় কাটানোর পাশাপাশি ওজন বৃদ্ধি আটকাতে এর জুড়ি নেই।

 

মডেল : চৈতি রুমানা ও তুষার।

ছবি : ইস্টুডিও



সোর্স: http://bangla.bdnews24.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।