প্রত্যাশা ছিল ফাইনালে যাবে। কিন্তু প্রতিপক্ষকে এমনভাবে বিধ্বস্ত করবে কেউ ভাবেনি। হ্যাঁ, গতকাল যুব ভারতীয় সল্টলেক স্টেডিয়ামে ১১৮তম আইএফএ শিল্ড ফুটবল সেমিফাইনালে ঢাকার শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব মুখোমুখি হয়েছিল ভারত চ্যাম্পিয়ন ইস্টবেঙ্গলের বিপক্ষে। আগের ম্যাচে ভারতীয় ফুটবলে আরেক বিখ্যাত দল মোহনবাগানকে হারানোয় জামালের স্পিরিট ছিল তুঙ্গে। দেশের ফুটবলপ্রেমীরা আশা করেছিল শেখ জামাল জিতবে।
মাঠে নামার আগে দলের অধিনায়ক মামুনুল দৃঢ়কণ্ঠে বলেছিলেন, ইস্টবেঙ্গল অবশ্যই শক্তিশালী প্রতিপক্ষ। কিন্তু আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ যে জয় ছাড়া মাঠ ছাড়ব না। শেষ পর্যন্ত তা-ই হয়েছে। সেমিফাইনালে তারা ৩-০ গোলে ইস্টবেঙ্গলকে হারিয়ে ফাইনালে উঠল। সত্যি বলতে কী, দেশের ফুটবলের এ সংকটময় মুহূর্তে শেখ জামাল এমনভাবে ভারতসেরা ইস্টবেঙ্গলকে বিধ্বস্ত করবে তা ছিল পুরোপুরি ধারণার বাইরে।
তা ছাড়া ইস্টবেঙ্গলের সঙ্গে বাংলাদেশের কোনো দলের রেকর্ড সুখকর নয়। ১৯৯২ সালে ঢাকায় বিটিসি কাপ সেমিফাইনালে আবাহনী তাদের পরাজিত করে। এরপর কোনো পরিসংখ্যানে ইস্টবেঙ্গলকে হারানোর রেকর্ড খুঁজে পাওয়া যায়নি। একসময় তো ইস্টবেঙ্গল বাংলাদেশের প্রধান দুই দল মোহামেডান ও আবাহনীকে নিয়ে ছেলেখেলা খেলত।
মোহনবাগানের বিপক্ষে জয়ের পর ইস্টবেঙ্গলকে উড়িয়ে দেওয়া_ শেখ জামালের এ দুটো সাফল্যে দেশের নিস্তেজ ফুটবলে প্রাণ ফিরে আসবে বলে আশা করা যায়।
সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে ভারতের বিপক্ষে ড্র করাটাই যেখানে কঠিন হয়ে পড়েছে সেখানে ছয়জন জাতীয় দলের খেলোয়াড় নিয়ে গড়া ইস্টবেঙ্গলকে বিধ্বস্ত করাটা বিশাল প্রাপ্তিই বলা যায়। আইএফএ শিল্ডের ইতিহাসে এর আগে বাংলাদেশের প্রথম দল হিসেবে ফাইনাল খেলেছিল ঢাকা মোহামেডান। কিন্তু সাদা-কালোরা এমন দাপট দেখাতে পারেনি। গতকাল ম্যাচের শুরু থেকেই শেখ জামাল প্রতিপক্ষের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। কলকাতা দলের পরিকল্পনা ছিল সনি নর্দেকে বিশেষভাবে নজরে রাখা।
ভেবেছিল অন্যরা কেউ সুবিধা করতে পারবেন না। অথচ জয় পেতে পুরো শেখ জামাল ছিল মরিয়া। কী রক্ষণভাগ, কী মিডফিল্ড বা আক্রমণভাগ_ সব পজিশনেই কাল মামুনুলরা নজরকাড়া নৈপুণ্য প্রদর্শন করেছেন। আগের ম্যাচে মোহনবাগানের বিপক্ষে জয় পেলেও রক্ষণভাগের ত্রুটি ধরা পড়েছিল। বারবার তাই মোহনবাগান গোল পরিশোধের চেষ্টা চালায়।
কোচ জোসেফ আফুসি বলেছিলেন, সেমিফাইনালে তা আর হবে না। রক্ষণভাগকে চীনের প্রাচীর বানিয়ে দেব। বাস্তবেও কিন্তু মাঠে তা-ই দেখা গেছে, ৯০ মিনিটের লড়াইয়ে ইস্টবেঙ্গল কাল গোল করার সুযোগই সৃষ্টি করতে পারেনি। আক্রমণভাগকে যেন মামুনুলরা বোতলবন্দী করে রাখেন। আসলে শুরু থেকেই শেখ জামাল যে ঝটিকা আক্রমণ চালায় তাতে আরও আগেই এগিয়ে যাওয়া উচিত ছিল।
ইস্টবেঙ্গলের রক্ষণভাগ কোণঠাসা হওয়ার পর সুযোগগুলো কাজে লাগাতে পারছিলেন না সনি নর্দেরা। অবশেষে কাঙ্ক্ষিত সেই গোলটি আসে ২৩ মিনিটে। ডার্লিংটন দর্শনীয় হেডের মাধ্যমে ইস্টবেঙ্গলের গোলরক্ষককে পরাস্ত করে। এগিয়ে যাওয়ার পরই আক্রমণ ধারাল হয়। সল্টলেকে রীতিমতো সুনামি বইয়ে দেন নর্দেরা।
পুরো ইস্টবেঙ্গল তখন দিশাহারা। শেখ জামালের নৈপুণ্যের প্রশংসা করে টিভির ধারাভাষ্যকাররা বলছিলেন, এটা কি বাংলাদেশের শেখ জামাল না লালিগার মেসির বার্সেলোনার খেলা দেখছি। ডার্লিংটনকে তো ধারাভাষ্যকাররা ইতালির বালোতেলি্লর সঙ্গে তুলনা করছিলেন। ৩৮ মিনিটে ডার্লিংটনের নিখুঁত পাস থেকে সনি নর্দে কোনাকুনি শটে গোল করলে প্রথমার্ধেই শেখ জামাল ২-০ গোলে এগিয়ে যায়।
দ্বিতীয়ার্ধে অবশ্য খেলায় ফিরতে ইস্টবেঙ্গল শুরুতে কিছু আক্রমণ চালাতে সমর্থ হয়েছিল।
কিন্তু শেখ জামালের রক্ষণভাগের দৃঢ়তায় গোল করা সম্ভব হয়নি। বরং সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মামুনুলরা আরও গতিময় হয়ে ওঠেন। ২২ মিনিটে ওয়েডসন অসাধারণভাবে ইস্টবেঙ্গলের তিনজন খেলোয়াড়কে কাটিয়ে দলের তৃতীয় গোলটি করেন। অর্থাৎ গতকাল শেখ জামালের জয়ের নায়ক ছিলেন তিন বিদেশিই। তিন গোল দিয়েও সন্তুষ্ট থাকতে চাচ্ছিলেন না বাংলাদেশের ফেডারেশন কাপ বিজয়ীরা।
সমানে আক্রমণ চালিয়েছেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য গোলের সংখ্যা আর বাড়ানো যায়নি। অথচ সুযোগগুলো কাজে লাগাতে পারলে কম করে হলেও অর্ধ ডজন গোল দিয়ে বিজয়ের উৎসব করতে পারত শেখ জামাল। ভারতের মাটিতে বাংলাদেশের প্রথম দল হিসেবে বিখ্যাত দুই দলকে হারানোটা এমনিতেই ছিল কৃতিত্বের। তবে সল্টলেক স্টেডিয়ামে ভারত চ্যাম্পিয়নকে উড়িয়ে দিয়ে দেশের ফুটবলের নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করল শেখ জামাল।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।