জীবন বুনে স্বপ্ন বানাই মানবজমিনে অনেক চাষ চাই প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত আজকের একটি নিউজ --
১১ বছর ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে আজিজুলকে!
আজিজুল হক সরকারি প্রতিষ্ঠান হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশনের সহকারী মহাব্যবস্থাপক ছিলেন। ১৯৯৭ সালে তিনি রাজউকের সম্প্রসারিত উত্তরা তৃতীয় পর্বের আবাসিক এলাকায় সরকারি প্লটের জন্য আবেদন করেন। ২০০১ সালে লটারিতে তিনি একটি প্লট পান। কিন্তু ওই প্লট নিয়ে এখন তাঁর জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে।
২০০১ সালের ৫ মে রাজউক প্লট বরাদ্দ পাওয়াদের যে তালিকা প্রকাশ করে, সেখানে বাবার নাম, আবেদন নম্বর, ব্যাংক রসিদ, বরাদ্দ তালিকার ক্রমিক—সব ঠিক থাকলেও আজিজুল হকের নাম অহিদুল হক ছাপা হয়।
এই ভুলের বিষয়ে রাজউকে যোগাযোগ করলে কাগজপত্র দেখে সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে বলা হয়, ভুল সংশোধনের জন্য একটা আবেদন করলেই চলবে। তিনি আবেদন করেন। কিন্তু আনুষ্ঠানিক যাচাই-বাছাই করতে চলে গেল তিন বছর। ২০০৪ সালে রাজউকের পরিচালনা পর্ষদ তাঁকে প্লটটির বরাদ্দপত্র দেওয়ার প্রস্তাব অনুমোদন করে।
তারপর? কিন্তু আজিজুলকে সে বরাদ্দপত্র না দিয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে।
মন্ত্রণালয় বলেছে, রাজউকই এ সিদ্ধান্ত নিতে পারে। তারপর? তারপর আর আজিজুলের নথি নড়ে না। আজিজুল আবার আবেদন করেন। আবার নতুন করে নথি তৈরি হয়। নিচ থেকে সে নথি ওপরে ওঠে।
এভাবে কাটে আরও আট বছর। এই সময়ে আরও দুবার রাজউকের পরিচালনা পর্ষদ তাঁকে প্লট বুঝিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত দেয়। কিন্তু সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হয় না।
এ সরকারের সময়ে আজিজুল হক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী, রাজউকের চেয়ারম্যান, সদস্য— সবার দ্বারে দ্বারে ধরনা দিয়েছেন। প্রত্যেকেই বলেছেন, এটা তো হয়ে যাওয়ার কথা।
কিন্তু কিছুই হয় না। আাাজিজুল ঘুরতে থাকেন।
আজিজুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘এই সরকারের সময়ে আমি পূর্ত প্রতিমন্ত্রীর কাছে গিয়েছি। রাজউকের চেয়ারম্যান নূরুল হুদার সঙ্গে অন্তত ১০ বার দেখা করেছি। সদস্য (সম্পত্তি) আখতার হোসেন ভূঁইয়ার সঙ্গে গত দুই বছরে অন্তত ৩০ বার দেখা করেছি।
আমার সামনে তাঁর অধস্তন পরিচালক, সহকারী পরিচালককে ডাকেন তিনি। নির্দেশ দেন। কিন্তু কিছুই হয় না। ’
২০০৪ সালের ৯ মে রাজউক সাধারণ সভায় সব সদস্যের উপস্থিতিতে আজিজুল হকের নামে প্লটের চূড়ান্ত বরাদ্দপত্র জারি করার সিদ্ধান্ত অনুমোদন করা হয়। কিন্তু বরাদ্দপত্র আর জারি হয়নি।
কয়েক বছর পর তাঁর বরাদ্দপত্র উল্টো বাতিলও হয়ে যায়। আবার ছুটতে শুরু করেন আজিজুল। আবারও আবেদন এবং নানা দপ্তর পেরিয়ে পরিচালনা পর্ষদ। ২০০৮ সালের ২১ জানুয়ারি পর্ষদের সভায় সভাপতিত্ব করেন রাজউকের সেই সময়ের চেয়ারম্যান কে এ এম হারুন। সভার নথিতে বলা আছে, ‘মন্ত্রণালয় নথি না পাওয়ায় আজিজুল হকের বরাদ্দ বাতিল করা হয়েছে।
তাঁর সব কাগজপত্র ঠিক আছে। তিনি যথাসময়ে হলফনামা ও অঙ্গীকারনামা দিয়েছেন। মন্ত্রণালয়ের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে রাজউক থেকে প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে। অতএব, আজিজুল হকের প্লট বরাদ্দদানের বিষয়ে অনুমতির জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হলো। ’
রাজউকের সর্বোচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের এ সিদ্ধান্ত আবারও আটকে গেল।
গেল আরও নয় মাস। রাজউকের চেয়ারম্যান পাল্টে গেছে। আসছেন গোলাম কিবরিয়া। ২০০৮ সালের ২১ অক্টোবর পরিচালনা পর্ষদের সভায় আজিজুলের নথি এবং আবারও তাঁর নামে প্লট বরাদ্দের সিদ্ধান্ত হলো। কিন্তু ওই পর্যন্তই।
বারবার একই ঘটনা ঘটায় ২০১০ সালের ১১ জানুয়ারি আজিজুল হক দেখা করেন গৃহায়ণ প্রতিমন্ত্রী আবদুল মান্নান খানের সঙ্গে। ১৭ জানুয়ারি তিনি বিষয়টি সমাধান করার জন্য নির্দেশনা দেন রাজউকের চেয়ারম্যানকে। আজিজুল দেখলেন রাজউকের তৃতীয় চেয়ারম্যান। কিন্তু বরাদ্দপত্র দেখলেন না। বর্তমান চেয়ারম্যান নূরুল হুদাও বারবার আশ্বাস দেন, হয়ে যাবে।
কিন্তু বাস্তবতা একই।
সর্বশেষ তিন বছর ধরে আজিজুলের নথিটি পড়ে আছে রাজউকের সম্পত্তি শাখার সহকারী পরিচালক হাফিজুর রহমানের দপ্তরে।
আজিজুল হক বলেন, ‘১১ বছর ঘুরে আমি যেটা এখন বুঝতে পারছি, তা হলো কিছু কর্মকর্তা আমার কাছে ঘুষ চায়। এদের কয়েকজন আবার চায়, বরাদ্দের পর আমি যেন প্লটটি কিছু টাকাপয়সার বিনিময়ে তাদের দিয়ে দেই। কিন্তু আমি সারাজীবন নীতি মেনে চাকরি করেছি।
আমি কখনো অন্যায় করিনি, করবও না। দুঃখ হলো, আমাকেই আল্লাহ এনে ফেলেছে দুর্নীতিবাজদের খপ্পরে। তার পরও ছেলেমেয়েদের কথা চিন্তা করে আমি তাদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছি। আর ভালো লাগে না! এই দেশে কি মন্ত্রী, রাজউক চেয়ারম্যানের চেয়ে কর্মচারীরা শক্তিশালী?’
রাজউক সূত্রে জানা গেছে, সম্পত্তি শাখার পরিচালক খিজির আহমেদ ও সহকারী পরিচালক হাফিজুর রহমানকে রাজউকের চেয়ারম্যান ও সদস্যরা অনেকবার বলেছেন আজিজুল হকের কাগজপত্র বুঝিয়ে দিতে। কিন্তু তাঁরা নানা সময়ে মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন লাগবে, সচিবের সিদ্ধান্ত লাগবে—এসব বলে তাঁকে ঘুরিয়েছেন।
হাফিজুর রহমান সম্প্রতি অন্য এক ঘটনায় ওএসডি (বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) হয়েছেন। রাজউকে গিয়ে তাঁকে পাওয়া যায়নি। মুঠোফোন বন্ধ থাকায় তাঁর সঙ্গে কথাও বলা যায়নি।
আর খিজির আহমেদের কাছে আজিজুল হকের দুর্ভোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘নথিপত্র না দেখে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করা যাবে না। ’
যাঁর কাছে নথি, সেই খিজির আহমেদ নথি না দেখে আজিজুলের ব্যাপারে কিছু বলতে না পারলেও রাজউকের সদস্য (সম্পত্তি) আখতার হোসেন ভূঁইয়া বলতে পারলেন।
তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘কিছু কারণে আসলে তাঁর কাজটি আটকে আছে। আর একবার কোনো কারণে ফাইল পিছিয়ে গেলে সেটি আর কেউ সামনে আনতে চায় না। তবে আজিজুল হক আমার সঙ্গে কয়েকবার দেখা করেছেন। আমি আমার কর্মকর্তাদের এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছি। কিন্তু কেন হলো না, আমি বলতে পারছি না।
আমি আবারও আমার কর্মকর্তাদের দ্রুত এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে বলব। আর একজন মানুষের এ ভোগান্তির জন্য আমরাও লজ্জিত। ’
আর রাজউকের চেয়ারম্যান নূরুল হুদা গতকাল শনিবার প্রথম আলোকে বললেন, ‘বোর্ড এবং আমার নির্দেশের পরেও কোনো কর্মকর্তার অবহেলায় যদি ওই ফাইলটি আটকে থাকে এবং আজিজুল হক যদি আমার কাছে এসে সেটি বলেন, তাহলে অবশ্যই দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ’
৬৬ বছর বয়সী আজিজুল হককে আবার রাজউক চেয়ারম্যানের কাছে যেতে হবে!
রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ নামে এই প্রতিষ্ঠান তার ওয়েব সাইটে অনেক ভালো ভালো কথা লিখে রেখেছে। তার কিছু নমুনা -
১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্তির পর ঢাকা পূর্ব পাকিস্তানের প্রাদেশিক আসনে পরিণত হয়।
১৯৫১ সাল থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত জনসংখ্যা ০.২৮ মিলিয়ন থেকে বেড়ে ১.২ মিলিয়ন হয়। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের পরে ঢাকা বাংলাদেশের রাজধানী হিসেবে আত্বপ্রকাশ করে। দ্রুত বর্ধনশীল শহরগুলোর মধ্যে ঢাকা অন্যতম। বর্তমানে জনসংখ্যা ১০ মিলিয়ন ছাড়িয়ে গেছে। যদিও অতীত পরিকল্পনায় জেলা শহর থেকে বিশ্বের বড় শহরগুলোর একটিতে পরিনত করার চেষ্টা করা হয়, অধিকাংশ-ই ব্যর্থ হয়।
ফলে খুব দ্রুত জীবনযাত্রার মানের অবনতি ঘটে । সামাজিক এবং বাহ্যিক অবকাঠামো ভেঙ্গে পরে । এ শহরের পরবর্তী সকল উন্নয়নে শৃংখলা বজায় রাখতে তড়িৎ পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন।
তড়িৎ পদক্ষেপের নমুনা তো আমরা দেখতেই পেলাম। ১১ বছর ধরে তড়িৎ পদক্ষেপ নিচ্ছেন উনারা !
বাস্তবতা হল এরা সব কাজ আটকে রাখে।
সব ফাইল আটকে রাখে। এরা রাজধানী উন্নয়নের সবচেয়ে বড় বাধা। এদের কারণেই রাজধানীবাসীর এত দুর্ভোগ। এদের কারণেই রাজধানীতে কোন নাগরিক সুযোগ সুবিধা নাই।
এরা কেন এই রকম করে ? ঘুষ খাওয়ার জন্য।
শুয়োর গু খায়, সরকারী কর্মকর্তারা ঘুষ খায়। এই দেশে মানুষ আগে দুর্নীতিবাজ হয়, তার পর সারা জীবন ঘুষ খাওয়ার জন্য ঘুষের চাকুরি খুঁজতে থাকে। তার জীবনের একমাত্র উদ্দেশ্য - ঘুষখোর সরকারী চাকুরে হওয়া। তারপর ঘুষ দিয়ে চাকুরি পাওয়ার পর সারা জীবন ধরে ঘুষ খেতেই থাকে। ঘুষ পেলে কাজ করে।
আর ঘুষ না পেলে ফাইল আটকায়। এমনভাবে ফাইল আটকায় সাধারণ মানুষের জীবন ভাজা ভাজা হয়ে যায়। তার কাজই হল ঘুষ খাওয়ার জন্য নাগরিকদের ফাঁদে ফেলা। এমন ফাঁদে ফেলা যাতে করে নাগরিকরা তাকে ঘুষ দিতে বাধ্য হয়।
বেতনের চেয়ে তার ঘুষ ১০০ গুণ বেশি।
তার শরীরে রক্ত মাংস সবই ঘুষের টাকায় তৈরি। কেবল তার শরীর নয়, তার বৌ পোলাপানের সবার শরীরের রক্ত মাংস ঘুষের টাকায় তৈরি। তার বাড়ি গাড়ি সবই ঘুষের টাকায় তৈরি। সোজা কথায় তার জীবন ঘুষময়।
আমার জানা মতে, সহীহ হাদীসে আছে, যদি কারো শরীরে এক ফোটা রক্ত হারাম উপার্জনের দ্বারা সৃষ্ট হয়, তবে সেই রক্ত দোযখের আগুনে না জ্বালানো পর্যন্ত সে কখনও বেহেশতে যাবে না এবং তার কোন এবাদত বা দোয়া কবুল হবে না ।
অথচ মসজিদে গিয়ে দেখবেন সবার প্রথম সারিতে এই ব্যক্তি নামাজ পড়ছেন। মসজিদ কমিটির নেতা হয়ে বসে আছেন। মহল্লার পঞ্চায়েত কমিটিতে ঢুকে বসে আছেন। হজ্ব করে নিজের নামের আগে হাজী বা আলহাজ্ব লাগিয়েছেন। কপালে নামাজ পড়ার দাগ নিয়ে মিষ্টি হাদীস কোরান শোনাচ্ছেন।
উনি সাচ্চা মুসলমান।
কিন্তু উনার অফিসে কোন কাজে গেলে বুঝবেন, ঘুষ ছাড়া কোন কাজ হয় না। হারাম না খেলে উনার রক্ত গরম হয় না। এই প্রকৃতির লোকদের শুয়োরের বাচ্চা বা কুত্তার বাচ্চা বা আরও খারাপ ভাষায় গালিগালাজ করলেও লাভ নাই। এদের লজ্জা শরম নাই।
লজ্জা শরম লাগার জন্য মানুষের শরীরে যে সেন্সর লাগনো থাকে, সেই জিনিসটাই এদের নাই। এদের কোন লজ্জাস্থান নাই।
এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ারও কেউ নাই। যারা ব্যবস্থা নিতে পারত, তারাও তো তাদের মতো লজ্জাস্থান ছাড়া মানুষ। এরা যতই সার্টিফিকেটধারী শিক্ষিত হোক না কেন, এই শুয়োরের বাচ্চারা ঘুষের জন্য তার মাকে বেশ্যাগিরিতে নামাতে দ্বিধা করবে না।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।