আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

৩৪ বছরেও গড়ে ওঠেনি ফিল্ম সিটি

৩৪ বছর ধরে নামসর্বস্ব ভূমি নিয়ে পড়ে আছে বাংলাদেশ ফিল্ম সিটি। ১৯৭৯ সালে ফিল্ম সিটি নির্মাণের জন্য গাজীপুরের কালিয়াকৈরে ১৫০.১১৭ একর জায়গা বরাদ্দ দেয় তৎকালীন সরকার। চলচ্চিত্রের বহির্দৃশ্য ধারণের সুবিধার্থে চলচ্চিত্রকারদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার এ উদ্যোগ নিয়েছিল। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, বরাদ্দের ৩৪ বছরেও এখানে গড়ে ওঠেনি ফিল্ম সিটি। পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে জায়গাটি।

গাজীপুরের কালিয়াকৈর থানার আন্দারমানিক গ্রামে বাংলাদেশ ফিল্ম সিটির ভূমির অবস্থান। শুরুতে এর নাম ছিল 'জিয়া ফিল্ম সিটি'। পরে নাম পরিবর্তন করা হয়। গাজীপুরের সফিপুর বাজার আনসার একাডেমি থেকে আধা কিলোমিটার ভেতরে আন্দারমানিক গ্রামের কবিরপুর। এখানে বেতার ভবন অবস্থিত।

এ বেতার ভবনের জায়গা থেকেই ফিল্ম সিটির জন্য জমি বরাদ্দ দেওয়া হয়। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন সংস্থায় [এফডিসি] বহির্দৃশ্য চিত্রায়ণের যথেষ্ট সুযোগ-সুবিধা না থাকায় চলচ্চিত্রকাররা তখন এ বিষয়ে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে সরকার ফিল্ম সিটি গড়ার উদ্যোগ নেয় এবং এ ব্যাপারে তথ্য মন্ত্রণালয়কে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেয়। তথ্য মন্ত্রণালয় জায়গাটি এফডিসির অন্তর্ভুক্ত করে এবং এখানে শুটিংয়ের জন্য স্থাপনা নির্মাণের পরিকল্পনা নেয়। সেই হিসেবে রেস্ট হাউস, রানওয়ে, রেললাইন, নদী, গ্রাম, পাহাড়সহ পুরোপুরি বহির্দৃশ্য চিত্রায়ণের লোকেশন সুবিধাসমৃদ্ধ একটি প্ল্যান তথ্য মন্ত্রণালয়ে জমা দেয় এফডিসি। সেই প্ল্যান অনুযায়ী সরকার ফিল্ম সিটি গড়ার পরিকল্পনা গ্রহণ করলেও তা দীর্ঘদিনেও বাস্তবায়ন হয়নি।

চলচ্চিত্রকারদের বার বার আবেদন সত্ত্বেও কোনো সরকার এতে সাড়া দেয়নি। প্ল্যান জমা দেওয়ার ২৩ বছর পর ২০০২ সালে এফডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওয়াসিমুল বারী রাজীব বিষয়টি আবার তথ্য মন্ত্রণালয়ের নজরে আনেন। রাজীবের উদ্যোগে মন্ত্রণালয় তখন সফিপুর আনসার একাডেমি থেকে আন্দারমানিক গ্রামের ফিল্ম সিটি পর্যন্ত রাস্তাটি পাকা করে দেয় এবং সেখানে সেমিপাকা ১৫ কক্ষের একটি ঘর নির্মাণ করে। এর মধ্যে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত করে দুটি কক্ষকে ভিআইপি করা হয়। পাশাপাশি একটি লেক তৈরি করে দেয় এবং জায়গাটি কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে ঘিরে দেওয়া হয়।

ব্যস ওই পর্যন্তই। আবারও থেমে যায় ফিল্ম সিটি নির্মাণে সরকারি উদ্যোগ। এফডিসির আবেদনে ২০১০ সালে সরকার নতুন করে আবার কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করে। তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় এফডিসির তত্ত্বাবধানে ফিল্ম সিটি গড়ার নতুন উদ্যোগ নেয়। এতে ব্যয় ধরা হয় ৬০ কোটি টাকা।

কথা ছিল দেড় বছরের মধ্যে নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হবে। কিন্তু নানা জটিলতায় এ উদ্যোগও ব্যর্থ হয়। এফডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, নতুনভাবে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। তথ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠক হয়েছে। শীঘ্রই ফিল্ম সিটির নির্মাণ কাজ শুরু হবে।

বর্তমানে স্থাপনা মেরামতের কাজ চলছে। চলচ্চিত্রকাররা জানান, প্রয়োজনীয় স্থাপনা ও নিরাপত্তার অভাবে ৩৪ বছরে এখানে কোনো দিন চলচ্চিত্রের শুটিং হয়নি। তবে চলচ্চিত্র সংগঠনগুলো সেখানে পিকনিক করে। বাইরে থেকেও পিকনিক পার্টি আসে। এ ক্ষেত্রে এফডিসিতে বুকিং দিয়ে নির্দিষ্ট অঙ্কের ভাড়া জমা দিতে হয়।

লেকে মাছের চাষ হয়। মাছ বিক্রি করে সেই অর্থ এফডিসিতেই জমা দেওয়া হয়। বিদ্যুৎ বিল, প্রহরীদের বেতন-ভাতা এফডিসিই নির্বাহ করছে। এদিকে বাংলাদেশ প্রতিদিনের গাজীপুর প্রতিনিধি খায়রুল ইসলাম সরেজমিন দেখতে পান ব্যবহার অনুপযোগী অবস্থায় পড়ে আছে ফিল্ম সিটির ভূমি। সেখানে নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছেন একজন ইনচার্জ, তিনজন গার্ড ও একজন মালি।

তারা এই প্রতিনিধিকে তাদের চরম নিরাপত্তাহীনতার কথা জানান। এ ছাড়া বিদ্যুৎ ব্যবহার না করেও মাসে ২০ হাজার টাকার বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করতে হচ্ছে বলেও অভিযোগ করা হয়। বর্তমানে সেখানে স্থাপনা মেরামতের কাজ করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মৃধা এন্টারপ্রাইজ। সেমিপাকা ঘরের মেরামত, নষ্ট দরজা-জানালা ও সিলিংয়ের টিন পরিবর্তনের কাজে ব্যয় হচ্ছে ৪ লাখ ১৮ হাজার টাকা। চলচ্চিত্রকারদের অভিযোগ, মেরামতের নামে সব সময় অর্থ লুটপাট হয় কিন্তু ফিল্ম সিটি আর আলোর মুখ দেখে না।

শীঘ্রই যদি বাংলাদেশ ফিল্ম সিটি পূর্ণতা না পায়, তাহলে প্রয়োজনে আন্দোলনে যাবে চলচ্চিত্র পরিবার।

 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।