স্কুলে সবশেষ বেঞ্চের নিয়মিত ছাত্র বলা যায় রাহিনকে, মাঝের মধ্যে ক্লাশের মধ্যস্থান পর্যন্ত আশা যাওয়া করেছে সেটা পড়া না শিখার আর স্যারের বেতের ভয়ে নিজেকে আড়াল করার জন্য, পাশ ফেল এর ভয় শংকা নিয়ে স্কুল এর পাঠ টা যখন কোন রকম চুকানো গেছে তখন সে হাফ ছেড়ে বাঁচল, তার জানা ছিল কলেজে বড়জোড় বকাবকি চলে তবে মারধর এর সম্ভবনা শূন্য ভাগ।
যে লাউ সেই কধু, এতো কলেজ থাকতে রাহিনকে ধরে এনে ভর্তি করিয়ে দেয়া হল বিএন নামক কলেজে, রাহিনের মনে হল তার চাইতে আগের স্কুলটাই ঢের ভাল ছিল, তার বন্ধুরা যেখানে কলেজের নামে মার্কেট পার্কে বান্ধবী নিয়ে স্বদলে ঘুরে বেড়াচ্ছে আর প্রেমিক জুটিয়ে ভালবাসার কবিতা লিখার প্রতিযোগীতা চলছে, সেখানে সে পিটি সু পড়ে সাত সকালে হাজিরা দিচ্ছে এসেমব্লিতে, "আমি শপথ করিতেছি যে..." আর "আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি।" যদিও সে সোনার বাংলা এর জায়গায় সোনিয়া বা মুনিয়া এই টাইপ এর কোন একটা চিত্রকল্প একে নেয় মনে মনে।
না কলেজে মারধর হচ্ছেনা, তবে রাহিন এর মনে হল এতো আরো বিব্রতকর পরিস্থিতি, স্কুলে বেতের বাড়ি খেয়ে হাত জ্বালা পোড়া হতো সেটা মিনিট পাঁচেক তারপর মিলিয়ে যেত, আর এখন দাঁড় করিয়ে রাখছে প্রতিদিন, লজ্বাটা ভীষণ বেড়েছে ইদানিং, তার উপর একশত ছয় জন ছাত্র ছাত্রীর মধ্যে ছাত্রের সংখ্যা মাত্র বার, না বুঝে ছোট বেলায় যে কথাটা বলেছিল এখন দেখছি সেটাই ফলেছে তার জীবনে, স্কুল বন্ধুরা যখন তার কলেজকে গার্লস কলেজ বলে ঠাট্টা করে তখন সে কলার নেড়ে অনুপাত এর অঙ্ক করে।
ছোট বেলায় রাহিনকে তার বড় বোন স্কুলে নিয়ে গিয়েছিল সাথে করে একদিন, সেদিন অবশ্য কোন ক্লাশ ছিলনা, কোন একটা দিবস উদযাপন এর ব্যাপার ছিল, সবাই তার নাদুস
নুদুস গালটা টেনে মজা নিচ্ছিল, খুব লজ্বা পেয়েছিল সেদিন রাহিন, আর বাসায় এসে বলেছিল, আপু তোমাদের গার্লস স্কুলে আমি কখনো পড়বনা, আমি অন্য কোন স্কুলে পড়ব, সেখানে সব মেয়ে, কোন ছেলে নেই, সেই কথাগুলো মনে করে দিয়ে রিমি এখনো খেপায় রাহিনকে।
মনির এর প্রতিদিন কলেজ লেইট, এসেম্বলি শেষে সবাই ক্লাশ মুখি। মনির চুপিচুপি আসছিল ক্লাশ করার জন্য, টিচার্স রুম থেকে জাকির স্যার ও বের হল, দুজনে মুখোমুখি, " এই দাঁড়াও", বলতেই ভোঁ দৌড় মনির, ক্লাশে ঢুকে রাহিনকে বলল, দোস্ত তোমার সু খোল আমার কেড্স পড় আজকে, রাহিন অতসব বুঝেনি, চেন্জ করে নিল, বিপত্তিটা ঘটল জাকির স্যার যখন ক্লাশে ঢুকেই মনির কে দাঁড় করাল, কেউ জানলনা কেন দাঁড় করিয়ে রেখেছে, পুরো ক্লাশ সে দাঁড়িয়েছিল, মেয়েরা টিপিটিপি হাসছিল তাতে অবশ্য মনির এর কিছু যায় আসেনা, সে এমন ভাবে দাঁড়িয়ে ছিল যে, এটা যে শাস্তি তা বুঝার উপায় নেই তার বডি লেঙ্গুয়েজ এ।
ক্লাশ শেষে ডাকল মনিরকে জাকির স্যার, এদিকে এসো, তারপর প্রশ্ন করলেন এই সু গুলো তো তোমার না, কার সাথে চেন্জ করেছ বলতেই দেখিয় দিল রাহিনকে, তাকেও ডাকা হল, দুজনকে সংগে করে জাকির স্যার চলে গেলেন টিচার্স রুমে, তারা ফেরত আসল খালি পায়ে, কেড্স পড়ার অপরাধে আর চেন্জ করার অপরাধে তাদের দু'জনের জুতোই চিজ করা হল। খালি পায়ে বাকী ক্লাশগুলো করল তারা, অন্য রকম একটা মজা আছে খালি পায়ে ক্লাশ করার, অন্য টিচাররা যখন অবাক চোখে তাকিয়ে প্রশ্ন করছেন "কি ব্যাপার তোমাদের এই অবস্থা কেন?" উত্তর দেবার প্রয়োজন হয়না, মেয়েরাই কোরাজ তুলে জাকির স্যার শাস্থি দিয়েছেন, কেড্স পড়ে আসার শাস্থি।
চলবে....
(বি.দ্র.চরিত্র ঘটনা কাল্পনিক)
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।