আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বড় শোকে পাথর ছোট অাঁচড়া গ্রাম

বেনাপোল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সবচেয়ে মেধাবী শিক্ষার্থী সুরাইয়া আফরিন। পঞ্চম শ্রেণীতে তার রোল নম্বর ১। ছোট বোন মাসুরা আক্তার জেবা একই স্কুলের তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্রী। দুরারোগ্য ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে তাদের মা মনোয়ারা খাতুন দুই বছর আগে মৃত্যুবরণ করেন। এ শোক সামলাতে না পেরে তাদের পিতা সৈয়দ আলী পাগলের মতো হয়ে যান।

সেই থেকে বেনাপোলের ছোটঅাঁচড়া গ্রামে নানা মোমরেজ হাজী সরদারের কাছে থেকেই পড়াশোনা করত দুই বোন।

স্কুল থেকে বন্ধুরা সবাই পিকনিকে যাচ্ছে। যেতে চেয়েছিল দুই বোনও। মা-মরা মেয়ে দুটির বায়না হয়তো ফেলতে পারেনি নানাবাড়ির স্বজনেরা। আসলে মায়ের কাছে যাওয়ার জন্যই যে দুই বোন বায়না ধরেছিল, কেউ বোঝেনি তখনো।

শনিবার রাত ৮টার দিকে চৌগাছা মহেশপুর সড়কের ঝাউতলায় পিকনিকের গাড়ি খালে পড়ে মর্মান্তিক মৃত্যু হয় তাদের। একই দুর্ঘটনায় মারা যায় সুরাইয়ার সহপাঠী মিথিলা খাতুন, অাঁখি খাতুন, আশরাফুজ্জামান শান্ত, চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্র সাবি্বর হোসেন ও রুনা আক্তার। আহত হয় অন্তত ৪০ জন। নিহতদের মধ্যে সুরাইয়া, জেবা, মিথিলা, শান্ত ও রুনার বাড়ি বেনাপোলের ছোটঅাঁচড়া গ্রামে। আর সাবি্বরের বাড়ি গাজীপুর ও অাঁখি খাতুনের বাড়ি নমাজ গ্রামে।

গতকাল সকালে ছোটঅাঁচড়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায় হাজার হাজার মানুষের ঢল। একই পাড়ায় ৪টি বাড়িতে ৫টি শিশুর মৃত্যু। পুরো এলাকায় মাতম। সুরাইয়া-জেবাদের বাড়ির সামনে মুদি দোকানি আলী হোসেন (৭৫) চোখের সামনে মেয়ে দুটিকে বেড়ে উঠতে দেখেছেন। মা-মরা মেয়ে দুটির এমন পরিণতির কথা বলতে গিয়ে চোখ ভিজে ওঠে তার।

একই স্কুলের তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্র নিজের নাতিকে জড়িয়ে ধরে বলেন, পিকনিকে যাওয়ার জন্য সেও বায়না ধরেছিল। যেতে দেয়নি। ৭০ বছরের বৃদ্ধ মন্টু মোড়ল বলেন, দুর্ঘটনায় তার নাতি তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্র ইয়ানুর আহত হয়। মাগরিবের নামাজের পর খবর পান। সঙ্গে সঙ্গে চৌগাছা হাসপতাল, যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ঘুরে যশোর সিএমএইচে খুঁজে পান তাকে।

সারারাত ছোটাছুটিতে বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছেন মন্টু মোড়ল। তারপরও নিহতদের স্বজনদের খোঁজখবর নিতে সকালেই বেরিয়ে পড়েছেন তিনি। একই পাড়ার মধ্যে সবাই সবার সঙ্গে কোনো না কোনো আত্দীয়তার সূত্রে গাথা। সেই সূত্রেই কাঁদছে পুরো ছোটঅাঁচড়া গ্রাম। খবর পেয়ে বেনাপোলের বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষক শিক্ষার্থীরা সকাল থেকেই দলে দলে ছুটতে থাকে ছোটঅাঁচড়া গ্রামের দিকে, নিহতদের স্বজনদের প্রতি সহমর্মিতা জানাতে।

বেলা ১১টার দিকে বেনাপোল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায় কবরস্থানের নীরবতা। সুরাইয়া, জেবা, মিথিলা, শান্ত, অাঁখি, সাবি্বর, রুনাদের ক্লাসগুলো তালাবদ্ধ। জাতীয় পতাকার নিচে শোকের জানান দিচ্ছে কালো পতাকা। স্কুলের অফিস কক্ষে কথা হয় সহকারী শিক্ষক নার্গিস আক্তারের সঙ্গে। তিনি পিকনিকে যাননি।

অধিক শোকে পাথরের মতো বসে আছেন। কি করবেন, কি করা উচিত, কিছুই বুঝতে পারছেন না। দিনের পর দিন ছেলেমেয়েদের পড়িয়েছেন, চোখের সামনে বেড়ে উঠতে দেখেছেন। এখনো চোখের সামনে ভাসছে সোনামুখগুলো। ওরা তো তারই সন্তান।

 

 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।