অনার্সে যখন পড়ি সে সময় প্রতি বছর প্রায় রুটিন করে একটা রাত আসত যে রাতে আমি ঘুমাতে পারতাম না। সারারাত ছটফট করি। মাথায় পানি দিই। টিভি ছেড়ে বসি, এফ এম রেডিও ছাড়ি। কিছুতেই কিছু হয় না।
এমন এক রাতে ঘুমাতে পারছিলাম। মাঝরাতে উঠে গোসল করেছি, তাতেও কাজ হয়নি। অস্থির হয়ে আমার বন্ধু সিনহাকে ফোন দিলাম। তখন রাত সারে তিনটার মত বাজে। আমি তাকে ফোন করে বললাম -
- শোন, সারা রাত বসে রইছি।
কিছুতেই ঘুমাতে পারতেছি না। পাগলের মত লাগতেছে।
- ক্যান কি হইছে?
- কিছুই হয় নাই। বছরে এমন একটা রাত আমার আসে যখন ঘুমাতে পারি না। এরকম আর কিছ্ণু থাকতে মনে ব্রেন স্ট্রোক হয়ে যাবে আমার।
- তোর তো এক রাত। আর আমার সারা বছরই এই অবস্থা। দেখছ না ফোন দেওয়ার সাথে সাথেই রিসিভ করলাম।
- এখন কী করব সেইটা বল?
- বের হবি?
- কোথায়?
- চাষাড়ায় আয়।
- ঠিক আছে।
তখন আমাদের দুই বন্ধুর মধ্যেই চলছে শৃংখল ভাঙার উম্মাদনা। শৈশব, কৈশোরের চাপা পড়ে থাকা ইচ্ছাগুলো পূরণ করছি যখন যা ইচ্ছা হচ্ছে। ইচ্ছা হল তো পাঁচ মিনিটের সিদ্ধান্তে ঘুরতে চলে যা্িচছ গাজীপুর, কখনো মুন্সিগঞ্জ। তখন দুইজনেরই ইচ্ছা হল চুল বড় করার। দুইজনই দীর্ঘ সাধনা করে ঘার পর্যন্ত লম্বা চুল রাখলাম।
দুইজনেরই চুল কার্লি। ইচ্ছা হল, সেই চুল স্রেইট করলাম।
ঘুম না আসা সেই রাতে চাষাড়া গিয়ে ঠিক করলাম সোনারগাঁ যাব। রওনা হয়ে গেলাম। এই ভোর রাতে রিক্সা কোথায় পাব, নবীগঞ্জ দিয়ে নদী পার হতে নৌকা কোথায় পাব - এসব কোন সমস্যাই না।
ইচ্ছা করলাম আর ব্যবস্থা করা হয়ে গেল। আমরা যখন সোনারগাঁয় গিয়ে উপস্থিত হলাম তখন ভোর সকাল। চারদিকে ফেব্র“য়ারীর শীত শেষে মিষ্টি বাতাস। সোনারগাঁ যাদুঘরের মেইন গেটে বিরাট তালা ঝুলছে। পিছন দিকে তখন গ্রামের ভিতর দিয়ে একটা চোরা রাস্তা দিয়ে যাদুঘরের ভিতরের ঢোকা যেত, সেই রাস্তা খুঁজে বের করে ভিতরে ঢুকলাম।
যেসব জায়গায় অন্য সময় মানুষের ভিড়ে ঠিক মত দাঁড়ানো যেত না সেখানে প্রায় শুয়ে বসে মনের খুশি মত নতুন কেনা মাল্টিমিডিয়া মোবাইল ফোন দিয়ে ছবি তুললাম। পুকুর পাড়ে ঘোড়ার সামনে, গরু টানা গাড়ির সামনে, সব জায়গায়। পুরো সোনারগাঁ তখন ঘুমে নিমজ্জিত, শুধু জেগে আছে প্রাচীন রাজধানীর সেই দালানকোঠা, শত বছর আগের সেই ব্রীজ, রহস্যময় পানাম নগরী। মনে হচ্ছিল আমরা টাইম ট্রাভেল করে সেই সময়টাতে চলে এসেছি। বড় অদ্ভুদ লাগছিল।
হঠাৎ করেই চঞ্জলতা থেমে গিয়েছিল। দুই বন্ধু কোন ভাবনায় যেন বিমর্ষ হয়ে পড়েছিলাম।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।