বুধবার সকাল ৮টা থেকে চতুর্থ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম দফায় ৪০ জেলার ৯৭ উপজেলায় ভোট শুরু হয়েছে। চলবে বিকাল ৪টা পর্যন্ত।
ভোটের কারণে সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকায় ঘোষণা করা হয়েছে সাধারণ ছুটি।
নির্বাচন কমিশন বলছে, ভোটারদের জন্য নির্বিঘ্ন পরিবেশ তৈরিতে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
উৎসবমুখরভাবে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন আয়োজনে সব ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ।
তিনি বলেন, “সংখ্যালঘু সম্প্রদায়সহ ভোটারদের নির্বিঘ্ন পরিবেশ তৈরিতে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কোনো ধরনের আইন লঙ্ঘন বরদাশত করা হবে না। ”
প্রথম ধাপের ভোটতথ্য
প্রথম ধাপে তিন পদে (চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান) ৯৮ উপজেলায় মোট ১ হাজার ২৭৪ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
এর মধ্যে চেয়ারম্যান প্রার্থী ৪৩২, ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী ৫১৩ ও নারী ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী ২৯ জন।
মোট ভোটার ১ কোটি ৬৪ লাখ ৭৮ হাজার ১৭২ জন।
এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৮১ লাখ ৯১ হাজার ৫৩৭ জন, মহিলা ভোটার ৮২ লাখ ৮৬ হাজার ৬৩৫ জন।
ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা ৬ হাজার ৯৯৫টি, ভোটকক্ষ ৪৩ হাজার ২৯০টি।
প্রতি ভোটকেন্দ্রে একজন করে ৬ হাজার ৯৯৫ জন প্রিজাইডিং কর্মকর্তা থাকছেন। সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তা প্রতি ভোটকক্ষের জন্য এক জন করে মোট ৪৩ হাজার ২৯০ জন। পোলিং কর্মকর্তা থাকছেন ৮৬ হাজার ৫৮০ জন।
নির্বাচন কমিশন প্রথম দফায় ১০২টি উপজেলার তফসিল ঘোষণা করলেও সীমানা নির্ধারণ নিয়ে জটিলতার কারণে রংপুরের চারটি (সদর, পীরগাছা, গঙ্গাচড়া ও কাউনিয়া) উপজেলায় ভোট স্থগিত করা হয়।
উপনির্বাচনের কারণে পীরগঞ্জ উপজেলার ভোট পিছিয়ে ২৪ ফেব্রুয়ারি করা হয়। এ উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে ৩, ভাইস চেয়ারম্যানে ৮ ও নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৪ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। দুই লাখ ৬২ হাজার ৭৩৫ ভোটারের জন্য কেন্দ্র রয়েছে ১০৬টি।
নির্বাচনে আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে সোমবার থেকে ৫ দিনের জন্য মাঠে থাকছে সেনাবাহিনী।
সঙ্গে থাকছে র্যাব, বিজিবি, পুলিশ ও আনসার বাহিনীর সদস্য।
‘নির্দলীয় নির্বাচনে রাজনৈতিক হাওয়া’
স্থানীয় সরকারের নির্দলীয় নির্বাচনে দলীয় প্রভাব রয়েছে সবখানেই। আওয়ামী লীগ-বিএনপি-জাতীয় পার্টিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল তাদের পছন্দমতো প্রার্থীকে সমর্থন দিয়েছে। কয়েকটি উপজেলায় একক প্রার্থী করতে ‘বিদ্রোহী প্রার্থীদের’ দল থেকে বহিষ্কারও করা হয়েছে।
বিএনপি জাতীয় নির্বাচনে অংশ না নিলেও স্থানীয় সরকারের এ নির্বাচনে প্রার্থীদের সমর্থন দিচ্ছে।
ভোটের আগের দিন মঙ্গলবার লিখিত অভিযোগও জানিয়েছে বিএনপি।
তবে নির্বাচন কমিশন বলেছে, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ এলে তা খতিয়ে দেখবে ইসি।
নির্বাচন কমিশনার শাহনেওয়াজ বলেন, “দলীয় নির্বাচন না হলেও সমর্থন দিচ্ছে দলগুলো। কোনো অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তাকে জানাতে হবে। সেক্ষেত্রে ঢালাও কোনো অভিযোগ করলে অসুবিধা হয়, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ করতে হবে।
”
স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ভোটের ৩২ ঘণ্টা আগে প্রার্থীদের সব ধরনের প্রচার বন্ধের বিধান রয়েছে।
ইসি সচিবালয়ের সহকারি সচিব আশফাকুর রহমান জানান, এই নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে নির্বাচনের পর ৬৪ ঘণ্টা পর্যন্ত।
কেউ আইন ভঙ্গ করলে কারাদণ্ড ও আর্থিক জরিমানা করা হবে। সর্বোচ্চ ক্ষমতা ইসির রয়েছে- প্রার্থিতা বাতিল। আচরণবিধি লঙ্ঘন করলে সর্বোচ্চ ১ বছর কারাদণ্ড ও লাখ টাকা জরিমানর বিধান রয়েছে।
নিরাপত্তা ব্যবস্থা
সেনাবাহিনী নির্বাচনের আগে ও পরে মিলিয়ে মোট পাঁচদিন নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে মাঠে থাকবে তারা। প্রতি উপজেলায় ১ প্লাটুন করে সেনা সদস্য টহল দেবে।
পাশাপাশি প্রতি উপজেলায় সেনাবাহিনীর দুই থেকে তিনটি গাড়ি থাকবে। সঙ্গে সেনাবাহিনীর কমান্ডিং অফিসার ও একজন করে ম্যাজিস্ট্রেট থাকবেন।
এছাড়া মোবাইল ফোর্স হিসেবে পর্যাপ্ত র্যাব, বিজিবি, পুলিশ ও আনসার বাহিনীর সদস্য মোতায়েন থাকছে।
প্রতি কেন্দ্রে একজন পুলিশ (অস্ত্রসহ), অঙ্গীভূত আনসার একজন (অস্ত্রসহ), অঙ্গীভূত আনসার ১০ জন (নারী ৪, পুরুষ ৬ জন) এবং আনসার একজন (লাঠিসহ) ও গ্রামপুলিশ একজন করে আইনশৃঙ্খলার দায়িত্বে থাকবে।
পার্বত্য এলাকা, দ্বীপাঞ্চল ও হাওর এলাকায় এ সংখ্যা শুধু পুলিশের ক্ষেত্রে দু’জন হবে।
১৯ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার্থে ৩৮৮ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও ৯৭ জন বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করা হয়েছে।
উপজেলা নির্বাচনকে সামনে রেখে সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকায় নেয়া হচ্ছে বিশেষ ব্যবস্থা।
রাষ্ট্রীয় একটি গোয়েন্দাসংস্থা নির্বাচনে সম্ভাব্য গোলযোগ ঠেকাতে চারটি সুপারিশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশনে।
ভোটের ৪৮ ঘণ্টা আগ থেকে পরের দুই দিন গোপন নজরদারি, সম্ভাব্য হামলাকারীদের মধ্যে যাদের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে তাদের গ্রেপ্তারের পাশাপাশি অন্যদের নজরদারিতে রাখা, সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকায় সার্বক্ষণিক ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে ভোটের আগে-পরে এলাকায় পাহারার ব্যবস্থা করার কথা বলেছে সংস্থাটি।
গোয়েন্দা প্রতিবেদন পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে ইসির উপসচিব পর্যায়ের এক কর্র্মকর্র্তা জানান, জেলা-উপজেলাওয়ারি সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকাগুলোর নাম, সম্ভাব্য গোলযোগপূর্ণ ভোটকেন্দ্র, গোলযোগের সম্ভাব্য কারণ, সম্ভাব্য গোলযোগকারীদের নাম ও রাজনৈতিক পরিচয়ের তালিকাও দিয়েছে সংস্থাটি।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ ইতোমধ্যে সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকায় সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিতে তাগিদ দিয়েছেন।
তবে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকায় কোনো ধরনের সহিংসতা ও গোলযোগের শঙ্কা করছে না নির্বাচন আয়োজনকারী সংস্থাটি।
সোমবার নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ বলেন, “গোয়েন্দাসংস্থা ও মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের যে প্রতিবেদন আমরা পেয়েছি তাতে সহিংসতার শঙ্কা নেই। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতি বিশেষ নজর দিতে বলেছি। ”
“অত্যন্ত স্পর্শকাতর এলাকাগুলোয় আইন শৃঙ্খলাবাহিনী সজাগ থাকবে। ছোটখাটো কিছু হলেও তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়া হবে। ”
দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রিজাইডিং অফিসারদের মধ্যে ১৯ জেলার ৩২ উপজেলায় ৫৯০ জন কর্মকর্তাকে নেতিবাচক হিসেবে চিহ্নিত করেও তালিকা দিয়েছে গোয়েন্দা সংস্থাটি।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তা ও ইসি কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে কেন্দ্রীয় মনিটরিং সেল কাজ শুরু করেছে। সোমবার এ মনিটরিং সেল গঠন করা হয়। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত টানা তিন দিন এ সেল কাজ করবে।
দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষক
সাংবাদিক, দেশীয় এনজিও এবং বিদেশীরা উপজেলা নির্বাচন পর্যবেক্ষনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। চারটি সংস্থার ৭১ জন বিদেশী পর্যবেক্ষক করছেন।
এগুলোর মধ্যে এশিয়া ফাউন্ডেশনের ২, যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের ৫৪, জাপানের ৯ এবং এনডিআইয়ের ৬ জন।
এছাড়া ২৬ দেশীয় এনজিওর ৬ হাজার ৫৮৯ জন পর্যবেক্ষক থাকছেন।
বেড়েছে ব্যয়
ছয় ধাপে উপজেলা নির্বাচন করায় নির্বাচন পরিচালনা ও আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর ব্যয় বাড়ছে।
ইসির জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব (বাজেট) এনামুল হক জানান, প্রথম দুই ধাপের জন্য ইতোমধ্যে ৬৪ কোটি টাকা অর্র্থ ছাড় করা হয়েছে। ।
তবে আইন শৃঙ্খলা ব্যয় পরে নির্ধারণ করে ছাড় দেয়া হবে।
উপসচিব শাহজাহান খান বলেন, “দুইশ’ কোটি টাকার মতো এ নির্বাচনে ব্যয় হতে পারে। তবে সব কিছু নির্ভর করে পরিস্থিতির ওপর। একই জেলায় কয়েক দফায় ভোট হওয়ায় খরচও বাড়ছে। ”
নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, দ্বিতীয় দফায় ১১৭ উপজেলায় ২৭ ফেব্রুয়ারি, তৃতীয় দফায় ৮৩ উপজেলায় ১৫ মার্চ, চতুর্থ দফায় ৯২ উপজেলায় ভোট ২৩ মার্চ ও পঞ্চম দফায় ৭৭ টি উপজেলায় ৩১ মার্চ ভোট হবে।
সর্বশেষ দেড় যুগ পর ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে একদিনে উপজেলায় তৃতীয় উপজেলা পরিষদ নির্বাচন হয়। এর আগে ১৯৮৫ সালে প্রথম ও ১৯৯০ সালে দ্বিতীয় উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।