আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জামায়াত-শিবিরের বাঁশের কেল্লায় কুরুচিপূর্ণ অপপ্রচারে বিভ্রান্ত তরুণ প্রজন্ম



পবিত্র ধর্মের অবমাননাকর কথা লেখা হয়েছে -ব্যক্তিবিশেষের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ তুলে ‘আমার ব্লগ’ নামের একটি সাইট বন্ধ করে দিয়েছিল সরকার। যুদ্ধাপরাধীর বিচারের দাবিতে জামায়াত-শিবিরবিরোধী এ জনপ্রিয় ব্লগ বন্ধের সঙ্গে আটক করা হয় ব্লগারদেরও। অথচ রহস্যজনকভাবে দেশজুড়ে নাশকতার কেন্দ্র বাঁশের কেল্লাসহ জামায়াত-শিবিরের সকল ব্লগ আর ব্লগাররা রয়েছে বহাল তবিয়তে। প্রতিমুহূর্তে পবিত্র ধর্ম ও মুক্তিযুদ্ধ, জামায়াত নিষিদ্ধের দাবিতে জেগে ওঠা তরুণ প্রজন্মের আন্দোলনের বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য ছড়ানো হচ্ছে কোনো বাধা ছাড়াই। সরকারের মন্ত্রী-এমপিদের বিরুদ্ধে বিকৃত তথ্য ও ছবি পোস্ট করা হচ্ছে নির্বিঘেœ।

এমনকি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বাঁশের কেল্লার বিকৃত আগ্রাসনের বাইরে নন। বাঁশের কেল্লার এ ধরণের কুরুচিপূর্ণ অপপ্রচারে বিভ্রান্ত হচ্ছে তরুণ প্রজন্ম।
মাস কয়েক আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর ভাই শেখ রাসেলের ছবি বিকৃত করে অশালীন অপপ্রচার চালায় জামায়াত-শিবির সমর্থকদের ফেসবুক পেজ বাঁশের কেল্লা। বঙ্গবন্ধুর দুই সন্তানের ছবি দিয়ে শেখ হাসিনার চরিত্র নিয়ে নানা নোংরা ও অশ্রাব্য কথা প্রচার করা হয় ফেসবুক পেজটিতে। তিতুমিরের বাঁশেরকেল্লা নামে পেজটি খুলে দেখা গেছে, প্রধানমন্ত্রী ও ১৫ আগস্টে নির্মম হত্যার শিকার শেখ রাসেলের ছোটবেলার ছবিটি পোস্ট করে তার নিচে জুড়ে দেওয়া হয়েছে আপত্তিকর বর্ণনা।

ছবিটি সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশের কুখ্যাত লেডি হিটলারের ১৯৬৫ সালের ছবি। হায়েনার কোলে সম্ভবত তার অবৈধ সম্পর্কের পরিণতি দেখা যাচ্ছে কারণ তার বৈধ সম্পর্কের প্রতিফলন চজিব ওয়াজেদ ঝয় এর জন্ম তারও অনেক পর ১৯৭১ সালে। ’
অথচ ১৯৬৫ সালে তোলা ওই ছবিটি শেখ হাসিনা ও তার ছোট ভাই শেখ রাসেলের। রাসেলকে কোলে নিয়ে তিনি তুলেছিলেন ছবিটি। জামায়াত-শিবির চক্রের পোস্ট দেওয়া ওই বানোয়াট ছবিটিতে মুহূর্তেই শেয়ার দিয়েছেন অনেকে।

এছাড়া লাইক করেছেন আরো অনেকে। এছাড়া নানা কুরুচিপূর্ণ কমেন্টও করা হয়েছে ছবিটির নিচে। তবে এসব মিথ্যাচারের প্রতিবাদও জানিয়েছেন বেশিরভাগ ফেসবুক ব্যবহারকারী।
মো. আসিফ উর রহমান নামে একজন ফেসবুক ব্যবহারকারী লিখেছেনÑএডমিন, ভাই বোনের একটা ছবি নিয়ে এরকম নোংরামি করতে একটুও বাঁধলো না? নাঈম ওরফে সাগর নামে একজন লিখেছেনÑএটা রাসেল। ছিঃ নোংরামির একটা সীমা আছে।

এদের আত্মা পঁচে গেছে। মুক্ত বাংলা নামের একটি আইডি থেকে বলা হয়েছে ভাই-বোনের ছবি নিয়ে নোংরা পোস্ট দেয়। আবার যারে তারে নাস্তিক-কাফের-মুনাফেক ট্যাগও দেয়। এরই নাম জামায়াত-শিবির। ’৭১-এ এদের কেন পরাজিত করা হয়েছিলো তা যাদের মনে নেই তারা এইসব পোস্ট দেখে মনে করুন।


বানোয়াট ছবি তৈরি করে বাঁশের কেল্লার মাধ্যমে জামায়াত-শিবির এর আগেও অনেক মিথ্যাচার চালিয়েছে। গত বছরের ৫ মে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানের বানোয়াট ছবি ফেসবুক ও ব্লগে ছড়িয়ে তারা বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে। অথচ সহিংসতার ওই ছবিগুলোর একটিও দেশের কোনো ঘটনার নয়। এগুলো ছিল হাইতির ভূমিকম্প ও মিয়ানমারের দাঙ্গার ছবি। এমনি জামায়াত-শিবির ও হেফাজত চক্র এসব বানোয়াট ছবি সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও ব্যবহার করে মানুষকে বিভ্রান্ত করেছে।


এছাড়া সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ছবি বিকৃত করে অনৈতিক কথাবার্তা জুড়ে দেওয়া, জাতির নতুন চাচী শিরোনামে এরশাদের নতুন প্রেমিকা সাথীর ছবি, বর্তমান সমাজকল্যাণ মন্ত্রীর সাথে এক নারীর ছবি দিয়ে ‘কমলা সুন্দরীর প্রেমে পড়লেন আলোচিত সমাজকল্যাণমন্ত্রী’ নামের পোস্ট, সীমান্ত হত্যাসহ নানা বিষয়ে ছবি বিকৃত করে অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে জামায়াত-শিবির চক্র।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য নূহ-উল আলম লেনিন বলেন, জামায়াত-শিবির চক্রের অপপ্রচার নতুন কিছু নয়। তারা এর আগেও বিভিন্ন সময় ছবি বিকৃত করে প্রচার করেছে। এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নিজেও সংসদে কথা বলেছেন, কোনটি আসল ছবি কোনটি নকল সেগুলো দেখিয়েছেন। তিনি আরো বলেন, অনলাইনে যারা এসব মিথ্যাচার করছেন তাদের বিরুদ্ধে তথ্য ও প্রযুক্তি আইনে ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ আছে।

সরকারের সংশ্লিষ্টরা এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেবেন বলে আশা করছি।
এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের সাইবার ক্রাইম প্রতিরোধ দলের সহকারী কমিশনার আসাদুজ্জামান বলেন, যারা এসব নোংরামি করছে, তাদের ধরার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি আমরা। তবে কিছু আইনি সমস্যার কারণে সব সময় সবার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়নি। বাঁশের কেল্লা নামে বেশ কয়েকটি পেজ খুঁজে পাওয়া গেছে যার এডমিন দেশের বাইরে। এদের ব্যাপারে ইন্টারপোলের কাছ থেকে তথ্য চেয়েও পাওয়া যায়নি।

কারণ এ বিষয়ে সংস্থাটির সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের কোনো চুক্তি নেই।
বাঁশের কেল্লায় প্রতিনিয়ত মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে ক্ষেপিয়ে তোলা হচ্ছে সাধারণ মুসল্লিদেরও। যুদ্ধাপরাধের বিচারের দাবিতে আন্দোলনরত বিভিন্ন ধর্ম, মত ও শ্রেণি-পেশার লাখো কর্মী-সমর্থককে নাস্তিক প্রমাণ করতে বাঁশের কেল্লায় ব্যবহার করা হচ্ছে মিথ্যা তথ্য ও ছবি। কেবল তাই নয়, পবিত্র কাবা শরিফের ইমামদের ছবি জালিয়াতির মতো অপরাধ করেও জামায়াতিরা কেন মুক্ত সেই প্রশ্ন দেশের বিশিষ্ট আলেম ওলামাদেরও।
আল্লার ঘর পবিত্র কাবা শরিফ নিয়ে স্বাধীনতাবিরোধী গণমাধ্যমসহ এই চক্রের ইসলাম বিকৃতির শাস্তি দাবি করে দেশের বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগার ইমাম ও খতীব আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসউদ বলেন, পবিত্র কাবা শরিফের ইমামদের ছবি জালিয়াতির মতো অপরাধ করে জামায়াতিরা বাঁশের কেল্লার মাধ্যমে যে অপরাধ করেছে তার মতো ইসলামবিরোধী কাজ আর হতে পারে না।

এটা আমাদের পবিত্র ইসলামকে অবমাননা করেছে যার সর্বোচ্চ শাস্তি হতে হবে। আর ব্লগার যে কেউ হতে পারে। আমাদের আলেম সমাজের মধ্যেই ব্লগার আছে, থাকতে পরে। ব্লগার হওয়া কোনো অপরাধ নয়। আর যে গুটি কয়েক ব্যক্তি ব্লগে নিজেরা মতামত লিখেছে সেটা তার ব্যক্তিগত বিষয়।

যদি ইসলামসহ কোনো ধর্মের অবমাননা করে থাকে তবে তা যাচাই বাছাই করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। কারণ মওদুদীবাদী জামায়াতিরা যুদ্ধাপরাধীর বিচার বানচালে তরুণ প্রজন্মের শক্তিকে ভয় পায়। অন্যের নামে জামায়াতিরা ভুয়া অ্যাকাউন্ট খুলে নানা অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে দিনের পর দিন। অপপ্রচার এদের চরিত্রের সঙ্গে লেপ্টে আছে। এরা পবিত্র ইসলামের দুশমন।


প্রগতিশীল ইসলামী জোট ও বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভা-ারি বলেন, সম্প্রতি মহানবী (স.) ও পবিত্র ধর্ম ইসলামকে নিয়ে কতিপয় ব্লগ, ফেসবুকে কটূক্তির মাধ্যমে অপতৎপরতা চালাচ্ছে একটি অপশক্তি। কিন্তু ইসলাম ও মহানবীকে তারা যত অপমান করেছে জামায়াত প্রতিদিন ইসলামকে তার চেয়ে বেশি বিকৃত করছে, ইসলামের বিরুদ্ধে কাজ করছে। এই জামায়াত ইসলামের শত্র“, সন্ত্রাসী সংগঠন। এটা ইসলামী কোনো দল নয়। জামায়াতে ইসলামী মহানবী (স.) ও আওলিয়ায়ে কেরাম বিদ্বেষী ভ্রান্ত মওদুদীবাদের দর্শনে এদেশে সন্ত্রাসী কায়দায় রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করতে চায়।

এদের কারণে শান্তি ও মানবতার ধর্ম পবিত্র ইসলাম আজ প্রশ্নবিদ্ধ।
জানা গেছে, পবিত্র ধর্ম ও মুক্তিযুদ্ধ, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, জামায়াত নিষেদ্ধের দাবিতে জেগে ওঠা তরুণ প্রজন্মসহ প্রগতিশীল আন্দোলন নিয়ে বিকৃত আর মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে বিশ্বব্যাপী। বাঁশের কেল্লার মাধ্যমে ধর্মের বিকৃত ব্যাখ্যা দিয়ে যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে সাফাই গেয়ে শান্তিপ্রিয় সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করার অপকৌশল নিয়েছে জামায়াত-শিবির ও তার সহায়তাপুষ্ট দেশি-বিদেশি চক্র। স্বাধীনতাবিরোধী গণমাধ্যম, ফেসবুক, ব্লগ, টুইটারসহ বিভিন্ন ওয়েবসাইটে মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে ক্ষেপিয়ে তোলা হচ্ছে সাধারণ মুসল্লিদের। যুদ্ধাপরাধের বিচারের দাবিতে আন্দোলনরত বিভিন্ন ধর্ম, মত ও শ্রেণি-পেশার লাখো কর্মী-সমর্থককে নাস্তিক প্রমাণ করতে ব্যবহার করা হচ্ছে মিথ্যা তথ্য ও ছবি।

ঘাতক সাঈদীকে চাঁদে দেখার অপপ্রচার চালিয়ে শুধু নৃশংসতাই শেষ নয়, করা হচ্ছে পবিত্র কাবা শরিফের ইমামদের ছবি জালিয়াতির মতো অপরাধ। ফেসবুকে জামায়াত-শিবিরের পক্ষে সক্রিয় পেজ বাঁশের কেল্লাতে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। পবিত্র কাবা শরিফে সাঈদী সাহেবের জন্য হাজীদের দোয়া হিসেবে ভিডিওটিকে তারা উপস্থাপন করে।
তবে ভিডিওটি ডাউনলোড করে দেখা যায়, কাবা শরিফে মুসল্লিদের মোনাজাতের দৃশ্যের সঙ্গে বাংলায় মোনাজাতের অডিও পরে যুক্ত করা হয়েছে, এমনকি ডাবিং করা মোনাজাতের কোনো অংশেই একবারের জন্যও সাঈদীর নাম উচ্চারিত হতে শোনা যায়নি। এ ছাড়া ভিডিওর এক অংশে দেখা যায়, স্পষ্টতই বিদেশি হাজীদের মুখে বাংলা ভাষা বসিয়ে দেওয়া হয়েছে।

এভাবেই ফেসবুক, টুইটার ও ব্লগের মাধ্যমে শিবির কর্মীরা মানুষকে বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মকে বিভ্রান্ত করে চলেছে। অসংখ্য ওয়েবসাইট, ফেসবুক ও বাঁশের কেল্লা ব্লগে জামায়াত-শিবির তাদের প্রচারণামূলক স্ট্যাটাস লেখা ও সেই সঙ্গে বিপরীত মতানুসারীদের হুমকি দিচ্ছে। লক্ষ্য করলে দেখা যাবে জামায়াত-শিবির কর্তৃক পরিচালিত হওয়ার কারণেই এ ফ্যানপেজে কেবলমাত্র ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির শীর্ষ নেতাদের চরিত্র হননের চেষ্টা করা হচ্ছে। তারা কাট পেস্ট করে বিভ্রান্তিকর ছবি ও তথ্য সংযুক্ত করে এ ধরণের মিথ্যা ও বানোয়াট অপপ্রচার চালাচ্ছে। মূলত যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরু হওয়ার পর থেকে তাদের বাঁচাতেই জামায়াত-শিবির পরিকল্পিত নাশকতার পাশাপাশি এ ধরণের অপপ্রচার করছে।


প্রজন্মযোদ্ধারা বলছেন, মূলত যুদ্ধাপরাধের বিচারের দাবিতে আন্দোলনরত বিভিন্ন ধর্ম, মত ও শ্রেণি-পেশার লাখো মানুষকে ঢালাওভাবে নাস্তিক প্রমাণ করতে উঠেপড়ে লেগেছে জামায়াত-শিবির। এই লক্ষ্যে প্রযুক্তির দুনিয়ায় জামায়াত-শিবিরের কার্যক্রম নির্মূল করতে সাইবার ক্রাইম প্রতিরোধ ও শাস্তির জোরালো দাবি জানান প্রজন্মযোদ্ধারা।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।