মায়ের ভাষার জন্য ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি বাঙালির রক্তদান এবং ১৯৯৯ সাল থেকে সেই দিনটির ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হয়ে ওঠার দীর্ঘ পথপরিক্রমায় সবার ত্যাগ ও চেষ্টার কথা তিনি স্মরণ করেছেন বিনম্র শ্রদ্ধার সঙ্গে।
শুক্রবার সেগুনাবাগিচায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের চার দিনব্যাপী সেমিনারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কথা বলছিলেন প্রধানমন্ত্রী।
সর্বস্তরে বাংলার চর্চা বাড়ানের ওপর গুরুত্ব দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “মাতৃভাষার চর্চা ও একে রক্ষা করতে হবে। মাতৃভাষা ছাড়া কোনো কিছুই সম্ভব না। ”
বাংলাকে জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা করতে বিশ্ব জনমত গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “অমর একুশে এখন সকল মাতৃভাষাভাষীর কাছে পরিচিত একটি দিবস ও প্রেরণা।
আমরা বাংলা ভাষাকে বিশ্বময় ছড়িয়ে দিতে চাই। ”
১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের মিছিলে পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠীর নির্দেশে পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারান সালাম, রফিক, বরকত, শফিউরসহ নাম না জানা অনেকে।
এরপর বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি দেয় তৎকালীন পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী। ভাষা আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ১৯৭১ সালে সশস্ত্র সংগ্রামের মধ্য দিয়ে স্বাধীন হয় বাংলাদেশ।
এরপর কানাডাপ্রবাসী বাংলাদেশি রফিকুল ইসলামসহ কয়েকজনের চেষ্টা এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগে ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর ইউনেস্কো ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘোষণা করে।
তার পর থেকে বিশ্বের ১৯৩টি দেশে প্রতি বছর দিবসি পালিত হচ্ছে।
যারা ওই উদ্যোগের সঙ্গে ছিলেন তাদের সবাইকেই মাতৃভাষা দিবসের অনুষ্ঠানে স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, “একুশে ফেব্রুয়ারির শিক্ষা, চেতনা ও প্রেরণা এখন সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। সকল মাতৃভাষাভাষী এখন তাদের স্বকীয়তা রক্ষায় উজ্জীবিত। এ প্রচেষ্টা বিশ্ব থেকে জাতিগত কিংবা ভাষাগত প্রাধান্য বিস্তারকারী মানসিকতার অবসান ঘটাবে।
বিশ্বের বিপন্ন ভাষাগুলো এর ফলে আবার প্রাণ পাবে। ”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের সব মানুষকে মূল স্রোতে না আনা গেলে সুষমভাবে উন্নয়ন ও অগ্রগতি অর্জন করা যাবে না। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠির শিশুরা যাতে মাতৃভাষার মাধ্যমে প্রাথমিক শিক্ষা পেতে পারে, সরকার সেজন্য ইতোমধ্যে পরিকল্পনা নিয়েছে।
“সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় অমরা অবশ্যই বাংলার আন্তর্জাতিকায়ন করতে পারি। আমি আপনাদের শুধু এটুকু বলতে পারি, আমি আপনাদের সঙ্গে আছি।
”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোনো ভাষার প্রকৃত বিকাশ তখনই হতে পারে, যখন ভাষাটি জ্ঞান-বিজ্ঞানচর্চা ও প্রযুক্তিতে ব্যবহার করা হয়। বাংলাদেশে ইতোমধ্যে তা শুরু হয়েছে।
শিক্ষা মন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে মূল প্রবদ্ধ পাঠ অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম। স্বাগত বক্তব্য দেন শিক্ষা সচিব মোহাম্মদ সাদিক এবং ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইন্সটিটিউটের মহাপরিচালক জিনাত ইমতিয়াজ আলী।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।