নির্ভীক, দৃঢ় আর স্বাধীন চেতনায় বিশ্বের যে কোন প্রান্তে পর্ব-১ : অতঃপর বারবণিতা
বিগত বছরের এই সময়টাতেই একটা ভয়াবহ ধারাবাহিক লেখার শুরু করেছিলাম। ধারাবাহিকটাতে দেশের প্রযুক্তি জগতের বর্তমান অবস্থা আর আগামীর ভয়াবহতাকে জ্ঞানের দৃষ্টিতে দৃশ্যায়ন করবার একটা ক্ষুদ্র প্রয়াস ছিলো। হয়তোবা আমার লেখার হাত তেমনটা নয় বিধায় আমার বক্তব্যগুলো অনেকেই বুঝে উঠতে পারেননি আবার যাঁরা বুঝেছেন তাঁদের অনেকেই হয়তোবা নিজের মানসিকতার কারনে কিংবা অন্য যে কোন কারনেই হোক এড়িয়ে যেতে চেয়েছেন। কিছু কিছু মানুষ ছিলেন যাঁরা সচেতনভাবেই আমার লেখাটার গূঢ়ার্থ বোঝবার প্রয়াসে আরো বেশী পড়াশুনা করেছেন এবং নিজেরা নিজেদের প্রযুক্তিগত স্বাধীনতাকে সঠিকভাবে নিশ্চিত করতে/বজায় রাখতে সচেষ্ট হয়েছেন।
পূর্বের ধারাবাহিক লেখাটায় আমি বারংবার মাইক্রোসফট সহ অন্যান্য সফটওয়্যার জায়ান্টদের অনৈতিক আচরনের কথাগুলো তুলে ধরেছিলাম আর এবারকার এই লেখায় সেই আচরনের শিকার বা লক্ষ্যবস্তু হবার নিদারুন কাহিনীগুলো কার্যকারন সহই প্রকাশ করতে চেষ্টা করবো।
দেশের প্রযুক্তি ব্যবহারকারীদের জগৎটায় বিশাল এক সুনামী বয়ে গেলো এইতো মাত্র কিছুদিন আগেই। কিন্তু আসন্ন আগামীতে এই সুনামী থেকে নিজেদেরকে বাঁচাবার জন্যেই "ইচ্ছামাফিক শ্রম বিক্রয়" করবার ফাঁকে ফাঁকে লেখাটা লিখতে হাতের আঙ্গুলগুলো নিষপিষ করছিলো। কিন্তু সময়ই জোটাতে পারছিলাম না। একটা লেখা লিখে ফেলা সহজ কিন্তু তার সাথে উপস্থাপনা, তথ্যের যাচাই-বাছাই, উপযুক্ততা সব মিলিয়ে যে বিশাল হ্যাপা তা সামলে ওঠার মতো সময় কি যে কষ্টকর বিষয় তা আমাদের মতো "চিরায়ত বেকার"রা ভালোই উপলব্ধি করবেন।
যে বিষয়টা নিয়ে লিখবো সেটা শুধুই যে ব্যক্তিগত আবেগ আর প্রযুক্তির নিরাপত্তা নিয়েই এমনটা নয়।
এঁর সাথে এই দেশ তথা বিশ্বের বাংলা ভাষাভাষী প্রায় সকল প্রযুক্তি পন্য/সেবা ব্যবহারকারীর ব্যক্তিতথ্য নিরাপত্তা জড়িয়ে আছে। আমার সামান্য ভুল বক্তব্য তাঁদের কে বিপথে চালিত করলে সে দায়টুকু নেবার মতো ক্ষমতা/সামর্থ্য আমার মতো অধমের নেই। আর সে কারনেই গত তিন রাতে দশটা থেকে তিনটা অবদি একনিষ্ঠতা আর একাগ্রতার সাথে কিছু পড়াশুনা করে জ্ঞানের চোখ দুটোর দৃষ্টিশক্তিকে একটু বেশিই শক্তিশালী করতে হলো।
আজ ১৬ই ডিসেম্বর, ২০১২ইং, মহান বিজয় দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে আমাদের সবার প্রাণপ্রিয় এই বাংলাদেশের স্বাধীনতার সূর্য্যটা সবার জন্য নিশ্চিত হয়েছিলো।
স্বাধীনতার সবটুকু স্বাদ আজ চারটে দশক পেরিয়েও আমরা নিজেরাই নিজেদের জন্য নিশ্চিত করতে পারিনি। অনেকেই অনেকভাবে অনেক যুক্তিতে অনড় থাকলেও আমি আমার নিজেকেই দোষারোপ করতে চাইবো। কারন আমার স্বাধীনতা আমার কাছে। কেউ সেটা এনেও দেবে না আর আমি স্বাধীনতাটুকু অর্জন করে নেবার পর সেটা অন্য আর কেউ রক্ষাও করে দেবে না। সেটা নিশ্চিত করার সম্পূর্ন দ্বায়িত্ব আমার, আমার হাতে/বুদ্ধিতে/শিক্ষায়/মননে/চেতনায়।
বর্তমান বিশ্বে আন্তর্জালিক (ইন্টারনেট) যোগাযোগ দৈনন্দিন জীবনে প্রবলভাবে বিস্তার লাভ করেছে আর ক্রমাগত সেটার প্রভাব বেড়েই চলেছে আমাদের মতো বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলোতেও। মুঠোফোনের জগৎটায় বেশ কিছু উন্নত প্রযুক্তি ছোঁয়া লেগে তা এখন বাংলাদেশে এতটাই মহামারীর পর্যায়ে পৌঁছেছে যে হয়তোবা কিছু দিন বাদে ফুটপাতের ভিক্ষুক ভিক্ষা করতেও ইয়াহু আইডি খুলবে আর ফেসবুকের ফ্যানপেজ খুলে নিয়ে প্রচারণা চালাবে। আমার আজকের এই লেখার সাথে "বারবণিতা" কিভাবে যায়/যাচ্ছে সেটা নিয়ে হয়তোবা এরই মধ্যে পাঠকের মগজের নিউরনগুলো ক্রমাগত বিভিন্ন হিসেব কষছে। আর যাঁদের এই দশা এখনো শুরু হয়নি তাঁরা সেই দিকেই যাবার জন্য মানসিক প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
ছোট বেলায় বাবা-মা আমাদের হাত থেকে অনেক সময়ই অনেক খেলনা কেড়ে রেখে দিতেন।
সেটা কি আমাদেরকে খেলনা থেকে বিরত রাখতে, নাকি খেলনার অপব্যবহারে আমাদেরকে শারীরিক দূর্ঘটনার কবল থেকে রক্ষা করতে? যদি কোন ছোট বাচ্চা কোন কারনে কোন খেলনা নিয়ে খেলতে গিয়ে আহত হয় আর পরে দেখা যায় যে খেলনাটা আসলেই বাচ্চাটার জন্য বিপদজনক ছিলো তবে তাঁর দায় কার ঘাড়ে গিয়ে পড়ে/চাপে? নিশ্চয়ই ঐ সময়ে উপস্থিত ঐ বাচ্চার মুরুব্বীদের উপরেই এই দায় বর্তায়। আবার ঐ বাচ্চাটাই যদি সঠিকভাবে নিজের কাজগুলো করতে শেখে, জীবন চলার পথে যোগ্যতা অর্জন করে তখন ঐ বাচ্চার সাথে সাথে বাচ্চার বাবা-মা/মুরব্বীজনরা সকলের প্রশংসা পেয়ে থাকেন। জীবনের দৈনন্দিন বিষয়গুলোর সবকিছুই যদি এই এক বাচ্চা কেন্দ্রিকতার মতোন করে ধরে নিই তবে আরো সহজে ব্যাখ্যা করা যাবে কি? এই প্রশ্নগুলো ভেবে দেখবার প্রয়াস পেলেই বোঝা যাবে আজকের এই লেখাটা আমি যে লিখলাম সেটার পেছনে আমার মনের দৃষ্টিটা কি ছিলো আর এঁর ভেতরের প্রকাশটুকু।
আমার আজকের লেখায় প্রযুক্তি জগতে আমার "স্বাধীনতা" কতটুকু, আসুন তা বুঝে নিতে চেষ্টা করি। প্রযুক্তি মানব জীবনকে একদিকে করে তুলছে সহজতর আবার একই সাথে ঐ প্রযুক্তির অনিরাপদ/অনৈিতক/অযাচিত ব্যবহার আমাদের জীবনকে করে তুলছে অসহায়, পাংশুবর্ণ।
আমি যদি প্রযুক্তির ব্যবহার জেনে-শুনে-বুঝে না করি তবে যে কোন মূহুর্ত থেকেই আমি হয়ে যেতে পারি প্রযুক্তির খেলার পুতুল। কোন একটা প্রযুক্তির সুবিধা-অসুবিধাগুলো পরিষ্কারভাবে জেনে-বুঝে যথাযথভাবে ব্যবহার না করলে সেটা হয়ে উঠবে আমারই গড়া আমার নিজের ধ্বংসের মূল অস্ত্র। কিভাবে? আসুন একটা ছোট্ট, বাস্তব উদাহরন দিয়েই মিলিয়ে নিই। আমরা কি বিগত সপ্তাহেই অত্যন্ত আশ্চর্য্যের সাথে খেয়াল করিনি যে কিভাবে বাংলাদেশের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন একজন ব্যক্তির ব্যক্তিগত আলাপচারিতা প্রযুক্তি জগতটায় কিভাবে নোরাংভাবে ব্যবহৃত হলো আর তাঁর পরিনতি কি হলো?
অনেকের কাছেই এই বিষয়টা শুধুই বিব্রতকর। আবার অনেকেই হয়তোবা বলে বসবেন এটা "হ্যাকিং"।
অনেকে বলবেন এটা একান্তই ব্যক্তি স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ।
আসুন এবারে একটু কঠিন কঠিন শব্দের প্রয়োগ চাক্ষুস করি। প্রযুক্তি জগতের একেবারে শুরু থেকে নিয়ে বর্তমান অবদি তিনটি ধারার প্রযুক্তি বিদ্যমান। প্রথম সারিতে রয়েছে মুক্তপ্রযুক্তি, দ্বিতীয় আংশিক মুক্তপ্রযুক্তি আর তৃতীয়ত বদ্ধ বা কুক্ষিগত করে রাখা প্রযুক্তি। তৃতীয় ধারার প্রযুক্তিটিই মানুষ/সাধারন প্রযুক্তি ব্যবহারকারীদেরকে বেশী আকর্ষন করে আর এখানেই চলে আসছে সেই "বারবণিতা" প্রসংঙ্গ।
একজন দেহ ব্যবসায়ী কখন তাঁর দেহটাকে ব্যবসায় কাজে লাগান সেই বিষয়ে বিতর্কে না গিয়ে অতি সাধারনত তিনটি কার্যকারন উল্লেখ করা যেতে পারে -- ১। একান্তই কোন সঠিক আয়ের রাস্তা না পেয়ে, ২। ধোঁকায় পড়ে, ৩। নিজের ইচ্ছেয়। তিনটা কার্যকারনের যেটাই ঘটুক না কেন উক্ত বারবণিতার শারিরীক ও মানসিক কষ্ট কিন্তু একই থাকে।
মুক্তপ্রযুক্তি ভিত্তিক বা "ফ্রী" বা "মুক্ত" সফটওয়্যার গুলোর ভেতরকার কোড একেবারে নিম্নমানের সফটওয়্যার প্রস্তুতকারক থেকে শুরু করে একেবারে উপরের সারির মানোন্নয়কারীর কড়া নজরদারীতে থাকে বিধায় এগুলো একেবারেই নিরাপদ একটি প্রযুক্তির সফটওয়্যার এবং সম্পূর্নরূপে সাধারন ব্যবহারকারীদের স্বার্থ সংরক্ষন করে থাকে। কোন পুঁজিবাদী প্রতিষ্ঠান যদি এই প্রকল্পকে কোনভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতে উদ্যতও হয় তো সেই প্রতিষ্ঠানই বিপদে পড়ে যেতে বাধ্য থাকে কারন এই প্রকল্পগুলোর পেছনের মানুষগুলো আজীবনের জন্যেই উন্মাদ/উন্মাতাল মুক্তিকামী। এঁরা সংগে সংগে বিদ্রোহ ঘোষণা করে এ পুঁজিবাদের কবল থেকে বেরিয়ে আসে এবং নিজের স্বাধীনতাকে রক্ষা করে চলে।
আংশিক মুক্তপ্রযুক্তি ভিত্তিক সফটওয়্যারগুলো বিশ্বস্ত সুত্রের হয়ে থাকলে সেটা নিরাপদ হতে বাধ্য। কেননা সেটুকু নিশ্চিয়তা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ যে কোন মানোন্নয়নকারী/প্রতিষ্ঠান এই জগতটা থেকে ছিটকে যাবে।
তাঁর তৈরী করা যে কোন প্রযুক্তিই পরবর্তী সময়ে আর গ্রহনযোগ্যতাই পাবে না। বিশ্বস্ত সুত্র ব্যতীত এই জগতের অন্যান্য যে সকল সফটওয়্যার বদ্ধ বা কুক্ষিগত প্রযুক্তির কাছাকাছি ব্যবসায়িক মনোবৃত্তি এবং প্রলোভনে সাধারন ব্যবহারকারীদেরকে কাছে টানে।
একেবারে বদ্ধ/কুক্ষিগত প্রযুক্তিগুলোকে আমার ভাষায় আমি "বারবণিতা"। অনেকেই এহেন কথায় মনে চরম আঘাত প্রাপ্ত হতে পারেন কিন্তু মূল ঘটনা আসলেই এক "বারবণিতা"র প্রলোভনে সর্বস্ব খোয়ানো এক সরল মানুষের কাহিনী। "বারবণিতা" যেমন খুব সহজেই সরল মানুষকে আকর্ষন করে, নিজের রূপে মুগ্ধ করে এবং পরবর্তীতে "খদ্দের" এ পরিনত করে এবং আরো পরে নিজ স্বার্থ হাসিল করতে ব্ল্যাকমেইল/খুন/গুম করে ঠিক একই কাজ করার ক্ষমতা রাখে কুক্ষিগত বা বদ্ধ প্রযুক্তির সফটওয়্যারগুলো।
এঁদের মধ্যে শীর্ষ পর্যায়ের অনৈতিক আচরন করে থাকে মাইক্রোসফট এবং এঁর প্রযুক্তি ব্যবহারেই সফটওয়্যােরর মানোন্নয়নকারী সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো।
আমার আজকের মূল আলোচনা যে সাম্প্রতিক সময়ে আমাদের দেশের "যুদ্ধাপরাধের বিচার ট্রাইবুনালের বিচারপতির স্কাইপি ব্যবহারে কথোপকথন ফাঁস" হবার বিষয়ে সেটুকু আশা করি ইতোমধ্যেই পাঠক বুঝে নিতে পেরেছেন। কিছু সংবাদপত্রে এই বিষয়ে পরবর্তী দিনগুলোতে আলোচনা/সমালোচনা/প্রযুক্তিগত বিশ্লেষণ (লাল, নীল, হলুদ, বাদামী বিভিন্ন টুপি পড়া .. .. ..) পড়লাম, গনমাধ্যমে কিছু সংবাদ প্রতিবেদন আর আমাদের বিশিষ্ট কিছু রাজনীতিবিদের সর্বজান্তা ধরনের মন্তব্যও শুনলাম/দেখলাম আবার কিছু "টকশো" (ঝাল শো দিলেই ভালো হতো) আয়োজনেও বিভিন্ন পর্যায়ের মানুষের জ্ঞানগর্ভ বক্তৃতাও দেখলাম ও শুনলাম। সব মিলিয়ে সবাই "হ্যাকিং" করার বিষয়টাকেই তুমুল পরিমানে পাদপ্রদীপের আলোয় টানতে চাইলেন।
বিগত দিনেও একটা জাতীয় আয়োজনে আমাদের তথ্য সচিব জনাব এন আই খান মহোদয় বক্তব্য দেবার সময় বলছিলেন -- "আশা করি আমাদের মাঝে আজকে এখানে যাঁরা আছেন তাঁরা সবাই ভালো হ্যাকার" (স্যানিটেশন হ্যাকাথন ২০১২ -- বাংলাদেশ)।
আবার এই বক্তব্যটার সমর্থনে দুইদিন ব্যাপী আয়োজনের পুরোটা সময় আয়োজনের সঞ্চালকদ্বয় নিজেদেরকে বেশ স্মার্ট হিসেবে উপস্থাপন করলেও ঐ আয়োজনে উপস্থিত সব "হ্যাকার"কে আদর করে "কোডার" হিসেবে ডেকেছেন। এই দুই পর্যায়ের মানুষ ছাড়াও যাঁদের মনে আমার এই বাড়তি কথাগুলো বিরক্তিকর মনে হচ্ছে তাঁদের জন্য আরো একটু বিরক্তি অপেক্ষা করছে। "হ্যাকার" == অত্যন্ত দক্ষ ও চিন্তাশীল ব্যক্তি/বর্গ এবং যাঁর নৈতিকতা ও বিবেচনাবোধ তাঁদেরকে সার্বজনীন মঙ্গলমূলক কোন কাজ ছাড়া আর কিছু করতে বাধা দেয়। এর ঠিক বিপরীতার্থক শব্দ হলো "ক্র্যাকার" == হ্যাকােরর ন্যায়ই দক্ষ ও চিন্তাশীল ব্যক্তি তবে ইনার নৈতিকতাবোধ ও বিবেচনাবোধটুকু শুধুই ক্ষতিকর কাজের ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ, মঙ্গলময় কিছু এঁদের দ্বারা হয় না, শুধুমাত্রই নিজের স্বার্থের জন্য এঁরা নিজের দক্ষতা আর জ্ঞানকে অপব্যবহার করতে থাকেন।
"হ্যাকিং" বিষয়টাকে আমাদের দেশীয় প্রযুক্তিতে যদি ব্যাখ্যা করা হয় তবে উদাহরনটা হবে মোটামুটি এইরকম -- আমি ভাত রান্না করতে জানি কিন্তু আপনি গ্যাস নেই, চুলা নেই, ম্যাচ নেই ইত্যাদি ছুতায় আমার বাড়িতে বসে, আমাকেই আমার আহারের জন্য ভাতটুকু রান্না করতে দিতে অনিচ্ছুক/বাধা দিচ্ছেন।
এমতাবস্থায় যদি আমি রাইসকুকােরর ব্যবহারে যদি ভাত রান্না করে নিই তবে সেটাই হলো "হ্যাকিং"। আর যদি এই ভাত রান্না করতে গিয়েই যদি আপনার সাথে মারামারি/কাটাকাটি তে জড়িয়ে পড়ি তো সেটা হবে "ক্র্যাকিং"। দুই ক্ষেত্রেই ভাত রান্না করা যাচ্ছে কিন্তু একটাতে পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা বুদ্ধিবৃত্তিক আচরনের জন্য খুশি হচ্ছে আর পরেরটাতে পরিবারের হয়তো কিছু মানুষ পেশী শক্তির প্রয়োগে খুশি হবে কিন্তু অধিকাংশ মানুষই বিরক্ত হবে এবং একই সাথে নিজের জ্ঞান ও শারীরিক সক্ষমতার অপব্যবহার হলো। আশা করি সবাই বুঝতে পারছেন যে, "হ্যাকিং" করাটা সবসময়েই মঙ্গলার্থে ছিলো, আছে এবং আগামীতেও থাকবে। পক্ষান্তরে "ক্র্যাকিং" ক্ষতিকর, ক্ষতি করে গেছে এবং করছে।
আর তাই "হ্যাকার"দেরকে "ক্র্যাকার" বলে সম্বোধন করাটা চরম অপমানজনক। আর ওই যে দুই ব্যক্তি হ্যাকাথনে হ্যাকারদেরকে কোডার কোডার বলে ডেকে গলার রগ
ফুলাচ্ছিলেন তাঁদের কেউ একনজনও যদি আমার এই লেখাটা পড়ে থাকেন তো একান্ত অনুরোধ করবো আগামীতে কোন আয়োজনে এভাবে নিজেকে নগ্নভাবে সবার সামনে উপস্থাপন না করতে। কারন "কোডার"রা প্রাথমিক পর্যায়ের কম্পিউটার প্রোগ্রামার। "হ্যাকাথন" এ আপনারা "হ্যাকার"দেরকে ডেকেছেন, "কোডার"দেরকে নয়। আর যদি আপনাদের মনে বদ্ধমূল ধারনা থেকেই থাকে যে ঐ "স্যানিটেশন হ্যাকাথন ২০১২" এ কোন "হ্যাকার" উপস্থিত ছিলেন না তবে অনুগ্রহ করে আয়োজনটা বন্ধ করে দিয়ে আমাদেরকে বললেই হতো, আমরা বেরিয়ে আসতাম আর নিজেদের জ্ঞানটাকে আরো শানদার করতে সচেষ্ট হবার প্রয়াস পেতাম।
সচিব মহোদয়ের বক্তব্যের প্রতিবাদ ঐ আয়োনের ঐ মূহুর্তেই আমি করেছিলাম যে কারনে ঐ আয়োজনে প্রথম রাত্রেই সঞ্চালকদের একজন হালকা পঁচানি দেবার প্রয়াসও নিয়েছিলেন। এই রকম আচরন বিগত চৌদ্দ বছর যাবৎই সয়ে আসছি আরো সইবো, তবু সঠিক কথা বলতে পিছুপা হবো না। আজকের এই লেখার পরে যাঁরা আরেকটু "বিলা" হলেন আমার উপরে তাঁদের জন্যে শুভবুদ্ধির উদয়ের শুভকামনাটুকু করা ছাড়া আমার করার আর কিছুই নাই।
আমাদের দেশের গনমাধ্যমের সকল সাংবাদিক ও সম্পাদকগণ এই "অতি ক্ষুদ্র" বিষয়টাতে একটু সচেতন হলে আশা করি আগামীর বাংলাদেশ ডিজিটাল যুগে প্রবেশের সময় তাঁর সঠিক ও সুহৃদ বন্ধুদেরকেই পাশে পাবে।
"হ্যাকার" আর "হ্যাকিং" বিষয়ক জ্ঞান বিতরন শেষে আমি মূল আলোচনা প্রারম্ভেই কিছু হালকা তথ্য উপস্থাপন করে দিচ্ছি।
দেখুন তো মস্তিষ্কের নিউরনে কিঞ্চিৎ অনুরনন ঘটে কি না?
@ আগষ্ট ২০০৩ -- পি২পি নেটওয়ার্ক ব্যবস্থাপনায় উপযোগী স্কাইপি এর প্রথম বেটা সংস্করন উন্মুক্ত করা হয়।
@ সেপ্টেম্বর, ২০০৫ -- ই-বে ২.৬ বিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে কিনে নেয় স্কাইপি কে
@ জুলাই ২০০৮ -- অস্ট্রিয়ান সরকারের আন্তরাষ্ট্রীয় মন্ত্রনালয়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে এই আলোচনা সবার সামনে উঠে আসে যে কোন সমস্যার সৃষ্টি করা ব্যতিরেকেই (আলাপচারীতায়রতদের মনে কোনরূপ সন্দেহের উদ্রেক না করেই) স্কাইপি থেকে স্কাইপির আলাপচারিতা স্পষ্টতই শোনা (আড়িপাতা) সম্ভব।
@ ফেব্রুয়ারী ২০০৯ -- ইউরোপে বিভিন্ন দেশ স্কাইপির আভ্যন্তরীন নিরাপত্তা ত্রুটি নিয়ে সরব হয়ে ওঠে। আর এটাকে স্কাইপি কর্তৃপক্ষ এই বলে ঢেকে দিতে চায় যে সরকারী দপ্তরগুলো তাঁদের সাথে চুক্তির মাধ্যমে নিজ নিজ দেশের ব্যবহারকারীদের তথ্যে আড়িপাততেই পারেন।
@ সেপ্টেম্বর ২০০৯ -- ই-বে ঘোষনা দেয় স্কাইপি এর ৬৫ শতাংশ শেয়ার বিক্রি করে দেবার।
@ মে ২০১১ -- মাইক্রোসফট কিনে নেয় স্কাইপিকে
@ অক্টোবর ২০১১ -- মাইক্রোসফট স্কাইপি ডিভিশন পুরোপুরি স্বত্বঃবুঝে পায় স্কাইপি এর
@ মে ২০১২ -- ফ্রান্সের একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনের একটি পলিটেকনিকের যৌথ পরিচালনায় অক্টোবর ২০১১ তে পরিচালিত এক গবেষণায় ১০০০০ স্কাইপি ব্যবহারকারীর ২ সপ্তাহ যাবৎ তথ্য পর্যবেক্ষনে দেখা যায় যে স্কাইপির নিরাপত্তা ত্রুটিব্যবহার করে সংগৃহীত তথ্যে ব্যবহারকারীদের ভৌগলিক অবস্থান এবং আইপি ঠিকানা পর্যবেক্ষন করা সম্ভব এবং অতি সুক্ষভাবেও যাচাই করে মোটামুটি সঠিক অবস্থানেই ব্যবহারকারীকে পর্যবেক্ষন করা সম্ভব হচ্ছে। তথ্যটি এই সময়ে এসে তাঁরা পরিপূর্ন যাচাই বাছাই শেষে প্রকাশ করেন।
@ জুলাই ২০১২ -- স্কাইপি ব্যবহারকারীদের পাসওয়ার্ড এনক্রিপশন বিনাই সংরক্ষন ও আন্তর্জালের (ইন্টারনেট) জগতে ব্যবহার করা হচ্ছে এই মর্মে অভিযোগ ওঠে আর এই ত্রুটির কারনে বেশ কিছু ব্যবহারকারী তাঁদের নিজেদের হিসাবটি(অ্যাকাউন্ট)র অধিকার হারিয়ে ফেলেন।
@ সেপ্টেবর ২০১২ -- পুরো স্কাইপি নেটওয়ার্কে মাইক্রোসফটের করা নতুন নিরাপত্তা ব্যবস্থায় ত্রুটি পরিলক্ষিত হয়। মাত্র ছয়টি ধাপে একটি নমুনা স্বরূপ হিসাব (অ্যাকাউন্ট) সঞ্চালনার মাধ্যমে একটি কাংখিত ইমেইল আইডিতে বর্তমানে চলমান/সক্রিয় হিসাব বেদখল করে নেয়া সম্ভব।
এই ত্রুটিটি ১৪ই নভেম্বর ২০১২ইং অবদি বজায় ছিলো।
এত কিছুর পরেও উপুর্যপুরি স্কাইপির ব্যবহারকারী খুব একটা কমেনি বরংচ বেড়েইছে। কারন এই তথ্যগুলো প্রযুক্তির সাগরে সার্ফিং করে বেড়ানো মানুষগুলো ছাড়া অন্যদের কাছে বিস্বাদময় আর তারউপর ছিলো এই পুরোটা সময় জুড়ে (২০০৯-২০১২) বিভিন্ন রকমের কলরেট অফার আর বিনামূল্যে কল করার সুবিধার ব্যবস্থা। ঐ যে শিরোনামে লিখে রেখেছি -- "বারবণিতা", সেই ক্যারিশমাটা উপভোগ করেছে সবাই এই সময়টাতেই আর এই প্ররোচনা আর প্রতারণাকে সাথী করেই।
উপরোক্ত তথ্যগুলোর উপরে বিশ্লেষণ সহ আরো কিছু বিষয়ে আলোচনা করবো আগামী পর্বে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।