হারতে হারতে টাইগারদের আত্দবিশ্বাস এখন তলানিতে। সামনে এশিয়া কাপ। এরপরই টি-২০ বিশ্বকাপ। দুই দুটি ক্রিকেট মহাযজ্ঞে নামার আগে ক্রিকেটারদের মিইয়ে যাওয়া আত্দবিশ্বাস কীভাবে আবারও ফিরবে পুরনো জায়গায়_ এ নিয়ে ক্রিকেটার, টিম ম্যানেজমেন্টের ললাটে যখন গভীর চিন্তার দাগ, তখন সেসব নিয়ে ভাবার সুযোগই পেলেন না তারা। আসলে ভাবনার জায়গা থেকে তাদের টেনে জমিনে নামিয়ে এনেছেন সাকিব আল হাসান।
এই বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার দ্বিতীয় ওয়ানডে চলাকালীন ড্রেসিং রুমে এমন এক অসভ্য, অভব্য, অশালীন কাজ করেছেন, যা দেখে সমালোচনার ঝড় উঠেছে পুরো দেশে। বিব্রত বিসিবি এমন পরিস্থিতি সামাল দিতে ঘটনার জন্য শাস্তি দিয়েছে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারকে। নিষিদ্ধ করেছে পরবর্তী তিন ওয়ানডেতে এবং আর্থিক জরিমানা করেছে তিন লাখ টাকা। এ নিষেধাজ্ঞায় আজকের ম্যাচসহ এশিয়া কাপের প্রথম দুই ম্যাচ মিস করবেন সাকিব।
হোয়াইটওয়াশ এড়ানোর ম্যাচ আজ।
আবার এশিয়া কাপের আগে নিজেদের ফিরে পাওয়ারও ম্যাচ। আত্দবিশ্বাসের তলানিতে নেমে যাওয়া মুশফিকবাহিনী কি পারবেন ঘুরে দাঁড়াতে? পারবেন কি আবারও ২০১২ সালের মতো আনন্দের উদ্বাহু নৃত্যে পুরো দেশকে মাতাতে? অপেক্ষায় থাকতে হবে। তবে তার আগে সাকিব 'কর্মকাণ্ড' ঝড়ে লণ্ডভণ্ড দেশের ক্রিকেটের মানসম্মান বাঁচাতেই সব ব্যস্ততা ক্রিকেট বোর্ডের।
এবারই প্রথম কোনো বিতর্কের জন্ম দেননি সাকিব। ২০১১ সালের বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৫৮ রানে অলআউটের লজ্জায় যখন কুঁকড়ে পুরো জাতি, তখন তিনি ক্রিকেটপ্রেমীদের মধ্যমা দেখিয়ে শুধু অবাক করেননি, অপমানিতও করেছিলেন।
আর লজ্জিত করেছিলেন পুরো দেশকে। প্রায় তিন বছরের ব্যবধানে আবারও লজ্জায় সিক্ত করলেন ক্রিকেটপ্রেমী জাতিকে। কী এমন করেছিলেন সাবেক অধিনায়ক?
৪৯ রানে ব্যাট করছিলেন অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম। তখনই টাইগারদের সাজঘরের অবস্থা জানাতে ধরা হয় টেলিভিশন ক্যামেরা। কিন্তু এ কি করলেন সাকিব! তার শরীরের বিশেষ একটি জায়গাকে এমনভাবে উপস্থাপন করলেন, যাতে বিস্ময়ে চোখ ছানাবড়া হয়ে পড়ল সবার।
প্রায় আধ মিনিট স্থায়ী ওই ভিডিও ক্লিপটি এখন তোলপাড় তুলেছে ফেসবুকসহ সামাজিক গণমাধ্যমে।
এমন বাজে আচরণের পর তাকে কাল ডেকে পাঠানো হয়েছিল বিসিবি কার্যালয়ে। সেখানে এমন আচরণের জন্য তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে আরেক ক্রিকেটার শফিউল ইসলাম সুহাসও ছিলেন। ঘটনার সময় তার পাশেই বসা ছিলেন সুহাস।
জেরা শেষে বিসিবির ভারপ্রাপ্ত সিইও নিজামুদ্দিন চৌধুরী বলেন, 'এমন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় হতবাক ক্রিকেট বোর্ড। এসব ঘটনায় যে কোনো ক্রিকেটারের বিপক্ষে বিসিবির অবস্থান জিরো টলারেন্স। সাকিব বিষয়টি স্বীকার করেছেন। অনুতপ্ত হয়েছেন। ' তার শাস্তির বিষয়ে বলেন, 'বিসিবি কোড অব কন্ডাক্ট অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
সে আমাদের চুক্তিভুক্ত ক্রিকেটার। যত বড় ক্রিকেটারই হোক না কেন, বাজে আচরণের জন্য তাকে শাস্তি পেতেই হবে। '
বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে সাকিবই প্রথম ক্রিকেটার, যিনি অফিসিয়ালি নিষিদ্ধ হয়েছেন। জরিমানাও গুনছেন। শৃঙ্খলাজনিত আচরণের জন্য এর আগে কোনো ক্রিকেটারের শাস্তি হয়নি।
এমনকি নিষিদ্ধ হননি কোনো ক্রিকেটার। দলের ডিসিপ্লিন ভঙ্গের জন্য টিম ম্যানেজমেন্ট অগোচরে শাস্তি দিয়েছেন ক্রিকেটারকে মাঠের বাইরে বসিয়ে রেখে। কিন্তু এবার প্রকাশ্যে শক্ত অবস্থান নিয়েছে বিসিবি। অবস্থান নেওয়ার পাশাপাশি শাস্তিও দিয়েছে। অবশ্য এর আগে বিপিএলের দ্বিতীয় আসরে ম্যাচ ও স্পট ফিঙ্ংিয়ে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করায় সাময়িকভাবে সব ধরনের ক্রিকেট থেকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে মোহাম্মদ আশরাফুলকে।
এর আগে বিতর্কিত, নিন্দিত আইসিএলে খেলার জন্য হাবিবুল বাশার, শাহরিয়ার নাফিস, ফরহাদ রেজাদের শুরুতে ১০ বছর নিষিদ্ধ করেছিল বিসিবি। পরবর্তীতে সেটা কমিয়ে ২ বছর করা হয় এবং সাজা মওকুফ করে দেয়। মওকুফ করে দেওয়ায় সেই ঢাকা ওয়ারিয়র্সের বেশ কয়েকজন ক্রিকেটার এখন খেলছেন জাতীয় দলে। এদের একজন আবার রয়েছেন বর্তমান দলেও। এ ছাড়া ওয়ারিয়র্সের অধিনায়ক এখন জাতীয় নির্বাচক প্যানেলের সদস্যও।
বিসিবি সাকিবের বিষয়ে যে দৃঢ় অবস্থান নিয়েছে, সেটা পরবর্তীতে ধরে রাখতে পারবে তো? না, আইসিএলের সিদ্ধান্তের মতোই হারিয়ে যাবে?
আজ এমন এক দিনে দ্বীপরাষ্ট্রের মুখোমুখি হচ্ছে টাইগাররা, আট বছর আগে এই দিনে বগুড়া শহীদ চান্দু স্টেডিয়ামে প্রথম জয়ের স্বাদ নিয়েছিল শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। দ্বীপরাষ্ট্রের ২১২ রান টপকে গিয়েছিল ৪ উইকেট হাতে রেখে। আজ হোয়াইটওয়াশ এড়ানোর ম্যাচে পারবেন কি ঘুরে দাঁড়াতে মুশফিকরা?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।