আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এক বছর ধরে একই ‘দর’ ডলারের

অবশ্য এজন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংককে সারা বছরই বাজারে হাত রাখতে হয়েছে। রপ্তানি আয় ও প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সের ইতিবাচক প্রভাব ধরে রাখতে বাজার থেকে কিনে নিতে হয়েছে রেকর্ড অংকের ডলার, যাকে এক ধরনের হস্তক্ষেপ বলেই মনে করছেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকাররা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের সাড়ে সাত মাসে (গত বছরের ১ জুলাই থেকে ২২ ফেব্রুয়ারি) বাজার থেকে মোট ৩২০ কোটি ডলার কিনেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গত অর্থবছরের ১২ মাসে কিনেছিল ৪৭৯ কোটি ডলার।

আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে সোমবার প্রতি ডলারের বিনিময় হার ছিল ৭৭ টাকা ৭৫ পয়সা।

গত বছরের মার্চ মাসের শেষ দিকে প্রতি ডলার কিনতে খরচ হতো ৭৭ টাকা ৯৩ পয়সা।

এরপর থেকেই ৭৭ টাকা ৭৫ পয়সায় বিক্রি হচ্ছে ডলার। ২০০৩ সালে দেশে ‘ভাসমান বিনিময় (ফ্লোটিং)’ ব্যবস্থা চালু হওয়ার পর এমনটি আর ঘটেনি।

বাজার থেকে ডলার কিনে টাকার মান ধরে রাখাকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম।

সোমবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “আমি মনে করি কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঠিক কাজটিই করছে।

যদিও ফ্লোটিং মার্কেটে বাংলাদেশ ব্যাংকের হস্তক্ষেপ করার কথা নয়। কিন্তু এছাড়া উপায় ছিল না। না কিনলে রপ্তানি আয় ও রেমিটেন্স প্রবাহে নেতিবাচক প্রভাব পড়ত। ”

দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা, রানা প্লাজা ও তাজরীন ফ্যাশনসে ভয়াবহ দুর্ঘটনার পরও বাংলাদেশ ব্যাংকের এ পদক্ষেপের ফলে রপ্তানি আয়ে ভালো প্রবৃদ্ধি হয়েছে বলে মনে করেন তিনি।

সাবেক এই অর্থ ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা বলেন, “চলতি অর্থবছরের শুরু থেকেই রেমিটেন্স প্রবাহে নেগেটিভ প্রবৃদ্ধি হচ্ছিল।

বাজারে হস্তক্ষেপ না করা হলে তা আরও খারাপ হতো। ”

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষণা পরিচালক জায়েদ বখতও আজিজুল ইসলামের সঙ্গে একমত।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “যদি আমদানি ব্যয় বাড়তো তাহলে সমস্যা হতো। বাণিজ্য ঘাটতি গতবারের চেয়ে অনেক কম। সব মিলিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঠিকই করছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ফরেক্স রিজার্ভ অ্যান্ড ট্রেজারি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের মহাব্যবস্থাপক কাজী ছাইদুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বাজার থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডলার কেনা-বেচা নিয়মিত ব্যাপার। রপ্তানি আয় বৃদ্ধি এবং আমদানির ধীর গতির কারণে বাজারে ডলারের সরবরাহ বেড়ে গেছে।

“বাজার স্থিতিশীল রাখতেই কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলার কিনছে। বর্তমানে বাজার স্থিতিশীল রয়েছে। ”

তিনি জানান, ২০১২ সালের প্রথম দিকে ডলারের দর বাড়তে বাড়তে এক পর্যায়ে ৮৫ টাকায় উঠেছিল।

এরপর থেকে তা কমতে কমতে ২০১৩ সালের জানুয়ারি মাসে ৭৯ টাকা ২০ পয়সায় নেমে আসে।

ব্যাংকগুলোতে এই বিনিময় হারে সামান্য হেরফের হলেও গত বছর এপ্রিল থেকে এই বিনিময় হার মোটামুটি ৭৭ টাকা ৭৫ পয়সাতেই থাকছে।

রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক সোমবার ৭৮ টাকা ৩৫ পয়সায় ডলার কিনেছে। বিক্রি করেছে ৭৭ টাকা ৩৮ পয়সায়।

সোমবার দিন শেষে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৯১০ কোটি ডলার, যা অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরে প্রথম সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে রপ্তানি আয় বেড়েছে ১৫ দশমিক ০৮ শতাংশ।

অবশ্য এই সময়ে রেমিটেন্স প্রবাহ কমেছে ৮ দশমিক ০৯ শতাংশ। চলতি ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম ২১ দিনে প্রবাসীরা ৯৩ কোটি ডলার দেশে পাঠিয়েছেন।

২০০৩ সালে বাংলাদেশে ভাসমান মুদ্রা বিনিময় ব্যবস্থা (ফ্লোটিং) চালু হয়। অর্থ্যাৎ বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় ব্যবস্থা বাজারের উপর ছেড়ে দেওয়া হয়।

তার আগ পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলার-টাকার বিনিময় হার ঠিক করে দিত। সে দরেই ডলার লেনদেন হতো।


সোর্স: http://bangla.bdnews24.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।