চাকরিপ্রার্থীরা কতটা পারদর্শী তার ওপর ভিত্তি করে যোগ্যতা যাচাই হয় না। বরং কতটা ভালো করে কাজ করবেন, ইন্টারভিউয়ে প্রশ্নকর্তাদের সামনে বসে তার সন্তোষজনক বর্ণনার ওপরই প্রার্থীদের যাচাই করা হয়। এ কথা বললেন অন্যতম জনপ্রিয় পেশাবিষয়ক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম লিঙ্কএডিন এর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ল্যু অ্যাডলার। এ প্রতিষ্ঠানের ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে নিয়োগের জন্য তিনি সম্প্রতি কমপক্ষে ২০ জন প্রার্থীর ইন্টারভিউ নিয়েছেন তিনি। বহুদিনের এসব অভিজ্ঞতা থেকেই তিনি আপনাদের পরামর্শ দিয়েছেন, ইন্টারভিউয়ে প্রশ্নকর্তাদের টেক্কা দেওয়ার ৫টি কৌশল।
অ্যাডলারের মতে, ইন্টারভিউয়ের সময় একজন প্রার্থী কতটা ভালো করে কাজ করবেন তার বিবরণই কর্তৃপক্ষকে সন্তুষ্ট করে। সাধারণত মনে করা হয়, প্রার্থীদের শিক্ষাগত যোগ্যতা বা আগের কাজের ফিরিস্তি ইত্যাদি বোধহয় যোগ্যতা যাচাইয়ের একমাত্র উপায়। আসলে এগুলো ন্যূনতম চাহিদা মেটায়। আসল ঘটনা ঘটে ইন্টারভিউয়ে বসে। সেখানে প্রার্থী যতটা সাবলিলভাবে নিজের যোগ্যতার বর্ণনা দেবে, প্রশ্নকর্তারা ততটাই খুশি থাকবেন।
কর্তৃপক্ষের মন জয় করতে ৫টি কৌশল শেখাচ্ছেন অ্যাডলার।
প্রত্যেক ইন্টারভিউয়েই নিচের বিষয়গুলো অবশ্যই যাচাই করা হয়।
আপনার যোগ্যতা কতটুকু এবং এসব আপনি কীভাবে চাকরিতে প্রয়োগ করবেন।
প্রতিষ্ঠানের চাহিদা পূরণের সঙ্গে আপনার সফলতার তুলনা করা হলে কী হবে।
আপনি কীভাবে আপনার দলের সঙ্গে মিলে-মিশে কাজ করবেন, কীভাবে অল্প সময়ের জন্য আনা কোনো ম্যানেজারের সঙ্গে কাজ করবেন এবং কীভাবেই বা প্রতিষ্ঠানের সংস্কৃতির সঙ্গে মিশে যাবেন।
কাজ পরিচালনা, পদক্ষেপ গ্রহণ এবং প্রেরণার ক্ষেত্রে আপনার সামর্থ্যের মাত্রা।
আপনার ধারণক্ষমতা।
এ সকল বিষয় যদি আপনার যোগ্যতা যাচাইয়ের নমুনা হয়, তবে বুঝে দেখুন তাদের এই যাচাই প্রক্রিয়াটা আসলে বৈজ্ঞানিক নয়। আর এ ক্ষেত্রে আপনার ভিতরের কুশলী বুদ্ধিমত্তার প্রকাশই কর্তৃপক্ষকে সন্তুষ্ট করার অন্যতম কৌশল। অবশ্য ইন্টারভিউয়ে আপনার স্বাগতিক আচরণ, উপস্থিতি এবং ব্যবহার প্রভাব ফেললেও তাতে কৌশল খাটানোর কিছু নেই।
ছোট বাক্যে নয়, অনুচ্ছেদে কথা বলুন
যেকোনো প্রশ্নের উত্তরে ২-৩ মিনিট কথা বলুন। ছোট আকারের আপ্তবাক্যে কথা শেষ করবেন না। আবার বেশি সময় ধরে কথা বলাও ঠিক নয়। এতে করে আপনাকে ক্লান্তিকর, আত্মকেন্দ্রীক এবং অসংবেদনশীল বলে মনে করা হবে।
ইন্টারভিউয়ে কথা বলার জন্য 'SAFW(Say a few words)' নামে একটি স্ট্রাকচার রয়েছে।
এই এসএএফডব্লিউ সম্পর্কে কিছু ধারণা দেওয়া যাক।
১. SAFW : প্রশ্নের জবাবের শুরুতে অনুচ্ছেদ আকারের বাক্য বলুন। এর পর কয়েকটি শব্দে এর কয়েকটি উদাহরণ দ্রুত দিয়ে ফেলুন। জবাব শেষ করুন আপনার পুরো উত্তরের সারাংশের আকারে এবং এমনভাবে যেনো প্রশ্নকর্তা পরের প্রশ্নটি যৌক্তিকভাবে করেন।
২. দারুণ কোনো উদাহরণ দিন : ধরা যাক, নির্দিষ্ট কোনো কাজ নিয়ে এমন প্রশ্ন করা হলো যার উত্তরে ক্রিয়া শব্দগুলো আপনার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করবে।
এমন ক্ষেত্রে প্রথমে ওই কাজের জন্য সময় বেঁধে দিন, কীভাবে কাজটি সম্পন্ন হবে বর্ণনা করুন, আপনি এবং আপনার দল কীভাবে যুক্ত হবেন তার ফিরিস্তি তুলে ধরুন, কাজের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করুন এবং পুরো ক্ষেত্রে আপনার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার দায়িত্ব কী হবে তা জানান।
৩. পরের প্রাসঙ্গিক প্রশ্নের শূন্যস্থান তৈরি করুন : ধরুন, আপনার দক্ষতা, যোগ্যতা বা পারদর্শিতা ব্যবহারের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলো। এর উত্তর দেওয়ার সময় কাজটি কী হতে পারে বা ওই কাজে কী ধরনের দক্ষতা দরকার বা সব শেষে ফলাফল কী হতে পারে, তা ওই প্রশ্নের পরই চলে আসতে পারে। কাজেই প্রথম প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার সময় পরের প্রাসঙ্গিক বিষয়গুলো মাথায় রাখুন।
৪. কিছু তথ্য জমিয়ে রাখুন : প্রশ্নের উত্তরে সব উগড়ে দিবেন না।
কিছু তথ্য নিজের মধ্যে জমিয়ে রাখবেন। সাধারণত প্রতিটি প্রশ্নের উত্তরে আপনার হাতে ২-৩ মিনিট রয়েছে। আপনার জবাব দেওয়ার মাঝেও কিছু প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন জুড়ে দিতে পারেন প্রশ্নকারীরা। এ ক্ষেত্রে ব্যবহার করবেন জমিয়ে রাখা অস্ত্র।
৫. শেষ অস্ত্র উদারহণের ঝুলি : ওপরের সব কৌশল যদি কাজে না লাগে বা ভুলে যান, তবুও সমস্যা নেই।
প্রতি প্রশ্নে প্রচুর উদাহরণ দেখান। প্রতি ক্ষেত্রে আপনার যোগ্যতা তুলে ধরতে এবং দুর্বলতা ঢাকতে উদাহরণই ভরসা।
মূলত আপনি কতটুকু যোগ্য তা বুঝতে কর্তৃপক্ষকে কাঠখড় পোড়াতে হয়, তাহলেই সমস্যা। আপনাকে সহজেই বুঝিয়ে দিতে হবে যে, আপনি যোগ্য। প্রশ্নকর্তাদের সহজে বুঝিয়ে দিতে পারলেই তারা বুঝবেন যে, আপনি কাজে পারদর্শী।
সূত্র : বিজনেস ইনসাইডার
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।