আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ফের লড়াইয়ে দুই দল

আগামীকাল দ্বিতীয় ধাপে ১১৬ উপজেলায় নির্বাচন। স্থানীয় সরকারের এ নির্বাচন নির্দলীয় হওয়ার কথা থাকলেও রীতিমতো দুই দলের মর্যাদার লড়াইয়ে রূপ নিয়েছে। উৎসবের আমেজের পাশাপাশি শঙ্কাও রয়েছে। এরই মধ্যে কয়েক দফা সংবাদ সম্মেলনে হামলা-মামলা, গ্রেফতার-নির্যাতনসহ নানা আশঙ্কার কথা জানিয়েছে বিএনপি। প্রথম ধাপে পরাজয়ের গ্লানি নিয়ে সর্বাত্দক প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে নেমেছেন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীরা।

দলের সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পাশাপাশি কেন্দ্র গঠিত নির্বাচন পরিচলনা কমিটি সার্বিক পরিস্থিতি মনিটর করছেন। সংখ্যাগরিষ্ঠ উপজেলায় বিজয়ের জন্য সব চেষ্টাই চালিয়ে যাচ্ছে দলটি। অন্যদিকে, প্রথম দফায় সংখ্যাগরিষ্ঠ উপজেলায় বিজয়ে উজ্জীবিত বিএনপি এখন ধারাবাহিকতা বজায় রাখার শেষ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া নিজেই সার্বিক বিষয় তদারকি করছেন। তার নির্দেশে গঠিত কমিটি দল সমর্থিত প্রার্থীদের বিজয়ী করতে কাজ করে যাচ্ছে।

বিদ্রোহী প্রার্থীদের বহিষ্কারাদেশ কমিয়ে বুঝিয়ে তাদের প্রার্থিতা প্রত্যাহারেও অনেক দূর এগিয়েছে। তবে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, নামে নির্দলীয় হলেও দ্বিতীয় ধাপে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীদের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে। সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, নির্দলীয় কাঠামোয় হলেও উপজেলায় সবাই দলীয়ভাবে প্রার্থী সমর্থন দিচ্ছে। যদি তা-ই করতে হয়, তাহলে এ নিয়ে জাতীয় বিতর্ক তৈরি করে একটি আইনি কাঠামোর মধ্যে করা উচিত। অন্যথায় দলগুলোর এ ধরনের আচরণ বর্তমান আইনের পরিপন্থী।

সদ্যসমাপ্ত উপজেলায় কিছু ভুলত্রুটি ও অনিয়ম ছিল। কিন্তু নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করতে ব্যর্থ হয়েছে। সামনে একই অবস্থা হলে সরকার ও নির্বাচন কমিশন সবাই প্রশ্নবিদ্ধ হবে। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহাম্মদ নাসিম বলেন, প্রথম দফা নির্বাচনের ফলাফল থেকে শিক্ষা নিয়ে আমরা তৃণমূল সংগঠনকে দল সমর্থিত প্রার্থীদের বিজয়ী করতে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছি। আশা করি এবার আমাদের দল সমর্থিত বেশিসংখ্যক প্রার্থী জয়লাভ করবে।

সরকারের মূল দায়িত্ব একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন জাতিকে উপহার দেওয়া। সে পরিবেশ সরকার সৃষ্টি করেছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। অন্যদিকে, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সরকারের কারচুপিসহ নানা বাধা সত্ত্বেও প্রথম ধাপে উপজেলার ট্রেনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৯-দলীয় জোটের প্রার্থীরা সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে। এখন দ্বিতীয় ধাপেও ক্ষমতাসীন দলের সন্ত্রাসীরা বিভিন্ন স্থানে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের ওপর হামলাসহ নানাভাবে হয়রানি করছে। সব বাধা পেরিয়ে রংপুরের পীরগঞ্জেও প্রধানমন্ত্রীর সংসদীয় এলাকায় বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী জয়লাভ করেছেন।

আশা করি সামনের সব নির্বাচনেও বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা বিজয়ী হবেন। কারণ, জনগণ আমাদের সঙ্গে রয়েছে। দ্বিতীয় দফার নির্বাচনে ১১৬ উপজেলায় ৭৬৬ জন চেয়ারম্যান প্রার্থী। এর মধ্যে অধিকাংশ স্থানেই আওয়ামী লীগ-বিএনপির একাধিক প্রার্থী। এ ছাড়া জাতীয় পার্টি, জামায়াতসহ অন্যান্য দলও পৃথকভাবে এ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে।

দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনে গতকাল সুজন ৫২১ জন চেয়ারম্যান প্রার্থীর হলফনামার তথ্য প্রকাশ করে। তথ্যমতে, ৫২১ জনের মধ্যে ২৮৯ জন ব্যবসায়ী, কৃষির সঙ্গে জড়িত ১০৬ জন, চাকরি করেন ৪৬ জন, আইনজীবী ৩৬ জন, গৃহিণী একজন এবং অন্যান্য ২০ জন। ২৩ প্রার্থী হলফনামায় তাদের পেশা উল্লেখ করেননি।

আওয়ামী লীগ : প্রথম দফা উপজেলা নির্বাচনের লজ্জা আড়াল করতে চায় আওয়ামী লীগ। পরাজয় থেকে শিক্ষা নিয়েই আগামী পর্বের নির্বাচনে জয়ী হতে প্রাণপণ চেষ্টা দলীয় নেতা-কর্মীদের।

জয় নিশ্চিত করতে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক প্রস্তুতি সব ধরনের। প্রথম দফা নির্বাচনে পরাজয়ের কারণ বিশ্লেষণ করে আগামীতে এমন যেন না হয় সে ব্যাপারে সব ধরনের পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দিয়েছেন দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা। এ দফায় দল সমর্থিত বেশিসংখ্যক প্রার্থী জয়লাভ করবেন বলেও আশা প্রকাশ করেছেন দলের শীর্ষ নেতারা।

দলের শীর্ষ ও বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা সব ধরনের সাংগঠনিক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছেন এরই মধ্যে। ১১৬ উপজেলার মধ্যে অধিকাংশতে এবার একক প্রার্থী ও সাংগঠনিকভাবে বেশ শক্তিশালী।

প্রথম দফা নির্বাচনের দিন রাতেই আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচন নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করলেও দলীয় প্রার্থীর পরাজয়ের কারণ খুঁজতে কেন্দ্রীয় কয়েকজন নেতাকে নির্দেশনা দেন। এর পর ২০ ফেব্রুয়ারির পর থেকে সাত বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা সারা দেশের জেলা ও সংশ্লিষ্ট উপজেলার সভাপতি-সম্পাদক বা দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। যেসব উপজেলায় বিদ্রোহী প্রার্থী ও অভ্যন্তরীণ কোন্দল ছিল সেগুলো অনেকাংশেই মিটিয়ে ফেলা হয়েছে। দলীয় সূত্র জানায়, জাতীয় নির্বাচনের পর উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি ও জামায়াতের কাছে শোচনীয় পরাজয়ে অস্বস্তিতে দল ও সরকার। দলীয় সভানেত্রীর কাঠগড়ায় মন্ত্রী ও প্রভাবশালী নেতারা।

তাই এখন আগে থেকেই বেশ সতর্ক হয়েছেন দলের মন্ত্রী, এমপি ও কেন্দ্রীয় নেতারা। যে কোনো মূল্যে দল সমর্থিত প্রার্থীকে জয়লাভ করাতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ বলেন, ভোটারদের উপস্থিতি ও উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে অবাধ, সুষ্ঠু ও সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন সম্পন্ন করাই সরকারের মূল কাজ। সে কাজটা অতীতেও হয়েছে, এবারও হবে। দল সমর্থিত প্রার্থীর জয়লাভ প্রসঙ্গে বলেন, প্রথম দফা নির্বাচনে যে দুর্বল সাংগঠনিক অবস্থা ও দলীয় নেতা-কর্মীদের অনৈক্য ছিল তা কমে এসেছে।

তাই দল সমর্থিত প্রার্থী জয়লাভ করবেন এটাই স্বাভাবিক। দলীয় সূত্রমতে, সরকারের সফলতা এবং বিএনপি ও জামায়াতের ধ্বংসাত্দক কর্মকাণ্ড সাধারণ ভোটারদের মাঝে তুলে ধরা হয়েছে নির্বাচনী প্রচারণায়। বিদ্রোহী প্রার্র্থীদের নির্বাচন থেকেও সরে দাঁড়াতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল দলীয় হাইকমান্ড থেকে। নির্বাচনী ফল দলের পক্ষে আনতে দলীয় নেতা-কর্মীদের আটঘাট বেঁধে মাঠে নামানো হয়েছিল। উপজেলাভিত্তিক তালিকা ধরে প্রয়োজনীয় নিদের্শনা দেওয়া ছিল।

দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, প্রথম দফা নির্বাচনের চেয়ে এবার আমাদের দল সমর্থিত বেশিসংখ্যক প্রার্থী জয়লাভ করবেন। কারণ প্রথম দফা নির্বাচনে দলের একাধিক প্রার্থী ও কিছু কিছু এলাকায় সাংগঠনিক দুর্বলতা থাকলেও দ্বিতীয় দফায় তা অনেকাংশে কম।

বিএনপি : দ্বিতীয় দফা উপজেলা নির্বাচনে বিজয়ের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে বিএনপি। দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে গঠিত কমিটি এ ব্যাপারে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। দ্বিতীয় দফা নির্বাচনের আগমুহূর্তে নানা অনিয়ম নিয়ে বিএনপির দফতর সম্পাদক রুহুল কবীর রিজভী এরই মধ্যে একাধিকবার সংবাদ সম্মেলন করেছেন।

চাঁদপুর, চট্টগ্রাম, খুলনাসহ বিভিন্ন স্থানে এরই মধ্যে বিএনপি নেতা-কর্মী-সমর্থকদের ওপর নানাভাবে হয়রানি শুরু হয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি। এদিকে উপজেলা নির্বাচনকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের পাশাপাশি রাতে গুলশান কার্যালয়েও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া প্রার্থীদের ডেকে সরাসরি কথা বলছেন। বড় ধরনের কোনো সমস্যা থাকলে বেগম জিয়া নিজেই সংশ্লিষ্টদের ডেকে সমাধান করে দিচ্ছেন। দলের নেতাদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেছেন, যে কোনো মূল্যে উপজেলায় বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৯-দলীয় জোটের প্রার্থীদের বিজয়ী করে আনতে হবে। বড় ধরনের কোনো সমস্যা সৃষ্টি না হলে কথায় কথায় বহিষ্কার করা যাবে না।

বেগম জিয়ার এ মনোভাবের পর বিদ্রোহী প্রার্থীদের বহিষ্কারাদেশ কমে গেছে। প্রথম দফায় অন্তত ৬৫ জন বহিষ্কার হলেও দ্বিতীয় দফায় অল্প কয়েকজনকে বহিষ্কার করা হয়েছে। জানা গেছে, বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়াসহ নানা কারণে গত দুই দিনে ১১ নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এরা হলেন ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল হাসেম, পৌর বিএনপির সভাপতি আলহাজ গিয়াসউদ্দিন আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক হাদিসুর রহমান খান, জেলা ছাত্রদলের সাবেক নেতা ইফতেখার আলম শামীম, ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলা বিএনপি নেতা খন্দকার নাসিরুল ইসলাম, এ কে এম জামালউদ্দিন নান্নু মিয়া, মো. শহীদুল হক মন্টু, রফিকুল ইসলাম লিটন, মাদারীপুরের শিবচর উপজেলা বিএনপির সদস্য নাজমুল হুদা মিঠু চৌধুরী, রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলা বিএনপি নেতা হজরত আলী চেয়ারম্যান ও মাগুরার শালিখা উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আনিসুর রহমান মিলটন। অবশ্য তাদের বিরুদ্ধে শৃঙ্খলা ভঙ্গ এবং দলের স্বার্থবিরোধী তৎপরতায় লিপ্ত থাকার অভিযোগ আনা হয়েছে।

সূত্রে জানা গেছে, উপজেলা নির্বাচনকে সামনে সরকারবিরোধী আন্দোলনের হাতিয়ার বানাতে চায় বিএনপি জোট। দলটি মনে করে, ছয় ধাপের উপজেলা নির্বাচনে বিজয় হলেও ইতিবাচক, আবার হেরে গেলেও কারচুপিসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ আন্দোলনে কাজে লাগানো হবে। তৃণমূল পর্যায় থেকে নতুন উদ্যমে আন্দোলন শুরু হবে বলে মনে করে দলটি। দলের যুগ্ম মহাসচিব বরকত উল্লা বুলু বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, স্থানীয় নেতারা উপজেলা নির্বাচন নিয়ে কাজ করছেন। কেন্দ্র থেকে আমরা শুধু মনিটর করছি।

দু-একটি বাদে প্রায় সব উপজেলায় একক প্রার্থী দিতে সক্ষম হয়েছি। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে ৮০ ভাগ উপজেলায় বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা বিজয়ী হবেন। তবে এরই মধ্যে চাঁদপুরের মতলব, মনোহরগঞ্জ, চট্টগ্রাম ও খুলনার বেশ কয়েকটি উপজেলায় সরকারের সন্ত্রাসীরা বিরোধী প্রার্থীদের বাড়িতে বাড়িতে হামলা চালিয়েছে। তাই সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে আমরা শঙ্কিত।

 



অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।