টান টান উত্তেজনায় ফের ভোটের লড়াইয়ে প্রধান দুই রাজনৈতিক দল। দ্বিতীয় ধাপে ৫২ জেলার ১১৫ উপজেলা পরিষদে নির্বাচন হচ্ছে আজ। বিভিন্ন পদে মোট এক হাজার ৩৩৪ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও মূলত ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীদের মধ্যেই লড়াই হবে। তবে অনেক জায়গায়ই রয়েছেন বিদ্রোহী প্রার্থী।
সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ চলবে।
প্রথম ধাপের নির্বাচনে ব্যালট পেপার ছিনতাই, জাল ভোটসহ কিছু অঘটন ঘটায় দ্বিতীয় ধাপে সর্তক নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় র্যাব, বিজিবি, পুলিশ ছাড়াও রয়েছেন সেনাবাহিনীর সদস্যরা।
আইন অনুযায়ী স্থানীয় সরকার নির্বাচন নির্দলীয় হলেও চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীদের মধ্যেই লড়াই হয়ে থাকে। নির্বাচনী মাঠে আরও রয়েছেন জাতীয় পার্টি, জামায়াতে ইসলামীসহ অন্যান্য দল সমর্থিত বিপুল সংখ্যক প্রার্থী। ইসি দ্বিতীয় ধাপে ১১৭ উপজেলায় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করলেও আজ দুটি উপজেলায় ভোট হচ্ছে না।
কঙ্বাজারের মহেশখালী উপজেলায় নির্বাচন হবে ১ মার্চ। আর চাঁদপুরের হাইমচরে আদালতের নির্দেশে ভোটগ্রহণ স্থগিত রয়েছে।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন উপজেলা পরিষদের এ নির্বাচন দলীয় ব্যানারে না হলেও দলীয় প্রভাব রয়েছে সবখানেই। আওয়ামী লীগ-বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল পছন্দমতো প্রার্থী দিয়েছে। নির্বাচন নিয়ে ভোটারদের মধ্যে রয়েছে ব্যাপক উৎসাহ।
প্রথম ধাপে ভালো ফল করায় বিএনপি এবার আরও সতর্ক। অন্যদিকে, পিছিয়ে থাকায় আওয়ামী লীগের কর্মী সমর্থকরা মরিয়া। নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ আবু হাফিজ বলেছেন, দ্বিতীয় পর্যায়ের নির্বাচন আরও সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে সর্বাত্দক নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রথম পর্যায়ে পুলিশ প্রশাসনসহ সবাই আমাদের সহযোগিতা করেছে। দ্বিতীয় পর্যায়েও অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও প্রিসাইডিং অফিসারদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
প্রার্থী, ভোটকেন্দ্র, ভোটার : ১১৫ উপজেলায় মোট এক হাজার ৩৩৪ জন প্রার্থী। চেয়ারম্যান ৫০০, ভাইস-চেয়ারম্যান ৫০৬ ও ভাইস-চেয়ারম্যান (মহিলা) প্রার্থী ৩২৮ জন। মোট ভোটার এক কোটি ৯৫ লাখ ৯২ হাজার ৮৬৮ জন। পুরুষ ৯৮ লাখ পাঁচ হাজার ১৫০ ও মহিলা ৯৭ লাখ ৮৭ হাজার ৭১৮ জন। ভোটকেন্দ্র আট হাজার ৩২টি।
ভোটকক্ষ ৫১ হাজার ১২৯টি। প্রিসাইডিং অফিসার প্রতি কেন্দ্রে একজন করে। সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার প্রতি ভোটকক্ষে একজন করে মোট ৫১ হাজার ১২৯ জন। পোলিং অফিসার এক লাখ ১০ হাজার ৮৭৪ জন।
সেনা, র্যাব, বিজিবি : সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করতে উপজেলাগুলোতে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে টহল দিচ্ছে সেনাবাহিনী।
নির্বাচনের আগে ও পরে মিলিয়ে মোট পাঁচ দিন তারা দায়িত্ব পালন করবে। সাধারণভাবে প্রতি উপজেলায় এক প্লাটুন করে মোতায়েন রয়েছে। তবে বড় উপজেলায় বেশি। সঙ্গে কমান্ডিং অফিসার ও একজন করে ম্যাজিস্ট্রেট রয়েছেন। মোবাইল ফোর্স হিসেবে র্যাব, বিজিবি, পুলিশ ও আনসার মোতায়েন থাকবে।
নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ৪৬৪ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও ১১৬ জন বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট মাঠে রয়েছেন। পার্বত্য এলাকা রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানের চার উপজেলার ৩১টি ভোটকেন্দ্রে হেলিকপ্টার ব্যবহার করবে ইসি। এ সংক্রান্ত চিঠি সশস্ত্র বাহিনী বিভাগে পাঠানো হয়েছে।
কেন্দ্রীয় মনিটরিং : আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও ইসি কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে কেন্দ্রীয় মনিটরিং সেলের কার্যক্রম গতকাল থেকেই শুরু হয়েছে। আগামীকাল পর্যন্ত টানা তিন দিন এ সেল কাজ করবে।
নির্বাচন পূর্ব, নির্বাচনের দিন ও পরবর্তী অনিয়ম নিয়ে কাজ করবে এ সেল। এ ছাড়া এলাকার শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর যোগাযোগ নেটওয়ার্কের মাধ্যমে সার্বক্ষণিক মনিটরিং করা হবে।
নির্বাচনে ছোটখাটো সংঘর্ষ হতেই পারে- শাহ নেওয়াজ : নির্বাচনে ছোটখাটো সংঘর্ষ হতেই পারে মন্তব্য করে নির্বাচন কমিশনার মো. শাহ নেওয়াজ বলেছেন, সহিংস ঘটনার যেন পুনরাবৃত্তি না হয়, সেজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ইসি সচিবালয়ে গতকাল সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন। শাহ নেওয়াজ বলেন, 'প্রথম ধাপের নির্বাচনে খুব বেশি সমস্যা হয়নি।
তবে সহিংসতা এড়াতে কোনো ছাড় না দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বলা হয়েছে। প্রথম ধাপে ব্যাপক হারে ভোট নষ্ট হওয়ার সঠিক কারণ আমরা এখনো চিহ্নিত করতে পারিনি। রিটার্নিং কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রথম ধাপে প্রায় সাড়ে চার লাখ ভোট বাতিল করা হয়েছিল। ' তিনি আরও বলেন, 'কোনো প্রার্থীই বিশেষ সুবিধা পাচ্ছেন না।
সবার অভিযোগ আমলে নিয়েই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দেওয়া আছে যাতে কাউকে কোনো বিশেষ সুবিধা দেওয়া না হয়। ' দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনের বিষয়ে কমিশনার বলেন, 'আজ ১১৭টি উপজেলায় নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও সীমানা জটিলতায় ১১৫টিতে করতে হচ্ছে। ' মোট ৪৮৭ উপজেলার মধ্যে প্রথম ধাপে ৯৭টিতে ভোটগ্রহণ হয়। এর মধ্যে চেয়ারম্যান পদে বিএনপি সমর্থিত ৪৪ ও আওয়ামী লীগের ৩৪ জন বিজয়ী হন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।