[justify]
বইমেলায় এবার যেতে পেরেছি মাত্র একদিন। সেই অবসরেই যা পেরেছি, কিনেছি। তাড়াহুড়োয় আর প্রকাশনীর নাম মনে না থাকায় ইচ্ছে থাকলেও কিছু বই বাদ পড়ে গেছে কিনতে। হঠাৎ করেই সদ্য পড়া বইগুলোর রিভিউ করে ফেললাম। বই নিয়ে আলোচনা করতে ভালো লাগে।
হয়তো বইমেলা থেকে কেনা অন্যান্য বইগুলো নিয়েও আলোচনা করবো সামনে।
নেমেসিস – মোঃ নাজিম উদ্দিন
মোঃ নাজিম উদ্দিনের নামের সাথে মূলত পরিচয় অনুবাদের হাত ধরে। প্রথম পাঠে দ্যা দা ভিঞ্চি কোড বা ডিসেপশন পয়েন্ট ইংরেজীতে পড়িনি, পড়েছি বাংলা অনুবাদে। বাতিঘর প্রকাশনীর শক্ত মলাটের বইগুলো সুদৃশ্য, ভালো বাঁধাইয়ের বইগুলো পকেটের ওপর বেশ চাপ ফেলে। কিন্ডলের পড়ুয়া জীবন বেঁচে থাক, বাতিঘরের আলোকে এড়িয়েই চলি এখন।
ড্যান ব্রাউনের থ্রিলারের অনুবাদের চেয়ে ই-বুক খানিকটা বেশিই আরাধ্য।
ব্রাউনের অনুবাদ নাজিম সাহেবের হাত ধরে ভালোই লেগেছিলো। সেবা অনুবাদের ভক্ত আমি, অনুবাদক প্রায় মূলানুগ থাকায় একটু কেমন যেন ঠেকলেও ব্রাউনীয় থ্রিলারের স্বাদ মলিন হয়নি। বেশ কিছু জায়গায় শুনলাম অনুবাদক এবার লিখেছেন বেশ কিছু মৌলিক থ্রিলার, নেমেসিস তাদের মাঝে বিশেষ উল্লেখ্য। আগ্রহ নিয়েই তাই পড়লাম এই বইটা, প্রতিক্রিয়া- সংক্ষেপে- মিশ্র।
গল্পের শুরুতেইএকটি হত্যা দৃশ্য। ভোরের আলোয় জানা যাবে, গত হয়েছেন পক্ষাঘাতে আক্রান্ত দেশের জনপ্রিয়তম লেখক জায়েদ রেহমান। ঘটনাবহুল সেই রাতে অন্য প্রেমিকের সাথে অভিসারে মত্ত ছিলেন লেখকের স্ত্রী, মৃত্যুকালীন মুহুর্তে লেখক তার বিতর্কিত আত্মজীবনীর ফাইল মেইল করলেন প্রাক্তন প্রকাশককে, লেখকের অ্যাপার্টমেন্টের সামনে সে রাতে সন্দেহজনক ঘোরাঘুরি করতে দেখে যে মাদকাসক্ত যুবকটিকে টহল পুলিশ গ্রেপ্তার করেছিলো রাতে; ঘন্টা দুয়েকের মাঝেই তাকে ছাড়িয়ে নিলেন তার প্রভাবশালী পিতা। রাত পোহালে দৃশ্যপটে আবির্ভাব ঘটবে ঢাকা হোমিসাইডের তরুণ গোয়েন্দা জেফরি বেগের।
এফবিআইয়ের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত জেফরির সামনে অপেক্ষা করছিলো একটি দীর্ঘদিন।
আপাত সহজ একটি রহস্যকে জটিল করতে ঘটতে থাকবে বিচ্ছিন্ন সব ঘটনা।
এই হলো নাজিম উদ্দীনের নেমেসিসের প্লট। কাহিনীর গতি টানটান ছিলো বইয়ের প্রথম থেকেই, শেষের এক তৃতীয়াংশে সেটায় ছেদ পড়েছে। ভালো লেগেছে লেখকের শ্রম, ভালো থ্রিলার লেখকের যেটা অবশ্য কর্তব্য- সেই হোমওয়ার্ক লেখক ভালোভাবেই করেছেন। কাহিনীর ছেঁড়া সুতোগুলো দিয়ে জট পাকিয়েছেন যথেষ্ট শক্ত ভাবেই।
খারাপ যেটা লেগেছে, সেটা হলো অনুবাদের ভূত। ব্রাউনের মতোই মৃতদেহের আবির্ভাব দিয়ে শুরু করা কাহিনীতে বার বার ফিরে এসেছে অনুবাদের ছায়া। অনেকগুলো অধ্যায়ের শেষে জেফরি বেগের স্বগোতক্তি বারবার মনে করিয়েছে রবার্ট ল্যাংডনের মাস্টারি, কিছু শব্দচয়ন আরোপিত মনে হয়েছে।
সবকিছু মিলিয়েই, লেখককে সাধুবাদ জানাই। আশা রাখি তার অন্য থ্রিলারগুলোও পড়া হবে।
ঢাকার বুকে ট্রাফিক জ্যামে আটকে পড়ার ঝুঁকি তুচ্ছ করেও যিনি ছুটিয়ে নিচ্ছেন হোমিসাইড ডিপার্টমেন্টের মোবাইল ভ্যান, তার চেষ্টার প্রশংসা না করে পারা যায় না।
গোয়েন্দা ঝাকানাকা ও এক ডজন রহস্য- মাহবুব আজাদ
বাংলা আন্তর্জালে নিয়মিত ঘোরাঘুরি করা পাঠকদের কাছে গোয়েন্দা ঝাকানাকার নাম খুব অপরিচিত হবার কথা নয়। সচলাতনের পাতায় পাতায় ছড়িয়ে থাকা এই উদ্ভট গোয়েন্দার এক ডজন অভিযানকে লেখক মাহবুব আজাদ বন্দী করেছেন দুই মলাটে। তবে হার্ড কভার নয়, পেপারব্যাক মলাটে।
ঝাকানাকা উপমহাদেশের সবচাইতে মারকুটে গোয়েন্দা।
এবং তার প্রতিপক্ষ নচ্ছাড় দস্যু বদরু খাঁ। প্রায় প্রতিটি গল্পেই ঝাকানাকার সাহায্য চাইতে হাজির থাকেন পুলিশ ইন্সপেক্টর কিংকর্তব্যবিমুঢ় চৌধুরী। মূলত এই তিনকে নিয়েই ঝাকানাকার তাবৎ অভিযান। বর্ণনা পড়ে যেমনটা বোধহয়, ঠিক তেমনি খুন-জখম-সাসপেন্স-সাইলেন্সারওয়ালা প্রকৃত গোয়েন্দা গল্প নয় ঝাকানাকার গপ্পোগুলো। বরং এ যেন অনেকটা ঠিক শীর্ষেন্দুর গোয়েন্দা বরদাচরণের মতো।
উদ্ভট সব কাহিনীবিন্যাসে হাসি পায় পদে পদে।
তবে গোয়েন্দা বরদাচরণের চাইতে কিন্তু বিষয় নির্বাচনে একদমই স্বতন্ত্র গোয়েন্দা ঝাকানা। পিসুনচ্ছাড় রহস্য, বিউটি পার্লার রহস্য, জাঙ্গিয়া রহস্য- এমন ধারা নামকরণ ইঙ্গিত করে তার কেসগুলোর বৈচিত্র্যের দিকেই। সত্যি বলতে, গল্পের চরিত্রগুলোর নামকরণই এই বইটাতে সবচাইতে ভালো লেগেছে। নৌ-মন্ত্রীর নাম ভাস্কর দা গামা, মঙ্গল পার্টির চেয়ারম্যান কমোডোর ইবলিশিম- এই সব নাম পড়ে হাসি আটকানো যায় না।
বইয়ের বারোটি গল্পের মাঝে ‘হারাধনের দশটি ছেলে’, ‘জাঙ্গিয়া রহস্য’ আর ‘মিস্টার অ্যান্ড মিসেস হাফমজুর হত্যা রহস্য’ গল্প তিনটি একটু যেন বেশিই মজাদার।
উদ্ভুট্টি এই বইটার প্রসঙ্গ শেষ করবো দুইটি বিশেষ ব্যাপার নির্দেশ করেই। এর মাঝে একটি হলো, বইয়ের শুরুতেই ঝাকানাকা প্রসঙ্গে রবি ঠাকুর, আর্থার কোনান ডয়েল আর সক্রেটিসের ভূতের মন্তব্য। বইয়ের ভাবগতিক বোঝাতে এর চাইতে কার্যকরী আর কিছু হতে পারতো না। দ্বিতীয় বিষয়টি হলো বইয়ের উৎসর্গ পাতা।
সামিউল ওয়াসেক সিমন ভাই জীবনের লড়াইয়ে চল্লিশ সিটের বাসকে পরাজিত করতে সক্ষম- এ তো আমরা অনেকেই জানি। এখন দেখা যাচ্ছে, উপমহাদেশের মারকুটেতম গোয়েন্দাটিও নমস্য মানছে এই সুপারম্যানকে !
আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের ডায়েরি- সম্পাদনায় শাহাদুজ্জামান
ডায়েরি লেখার চল বেশ জোরেশোরেই ছিলো কয়েক দশক আগে, এখনো লোকে সেটা ধরে রেখেছে বলে জানি না। ব্লগে-ফেসবুকে-স্মার্টফোনে, চটজলদি লিখে ফেলা যায় দিনপঞ্জি- স্মরণীয় কোনো উপলক্ষ্য বা পছন্দের উদ্ধৃতি। চব্বিশ ঘন্টার লেখক ইলিয়াস এই কাজটি করে গেছেন বহুবিধ ব্যাংক আর কোম্পানির রেক্সিনে মোড়া ডায়েরিতে।
১৯৬৮ থেকে ১৯৯৫, এই সময়কালে বিক্ষিপ্তভাবে লেখা ইলিয়াসের ডায়েরির বিভিন্ন চুম্বক অংশ উঠে এসেছে শাহাদুজ্জামানের সম্পাদনায়।
সংকলনে জায়গা পেয়েছে নানা দৈনন্দিন ঘটনা, লেখালেখি নিয়ে ইলিয়াসের ভাবনা, নানা কবি-লেখক-গ্রন্থ আর আল কুরআন থেকে প্রাপ্ত উদ্ধৃতি। আছে ইলিয়াসের কিছু লেখার খসড়া, এমন কী আছে সিনেমা-গান নিয়ে ইলিয়াসের আগ্রহের স্মারকস্বরুপ কিছু অ্যানেকডোটস’ও।
ডায়েরির ৬৯’ সালের অংশটুকু খানিক আলাদা আলোচনার দাবি রাখে বোধহয়। চিলেকোঠার সেপাই উপন্যাসে রাজপথ-মানুষ আর তাদের অন্তর্দহনের যে অবিস্মরণীয় ক্যানভাসটি ইলিয়াস এঁকেছিলেন, ডায়েরির এই অংশটুকুতে ধরা যায় সেই ক্যানভাসের হোমওয়ার্কটা। রাজনীতির ছায়ায় ঢেকে গেছে সমসাময়িক জীবনযাত্রা, ইলিয়াস তা দেখছেন নিস্পৃহ থেকে- ডায়েরি লিখছেন পত্রিকার পাতা কপি করে।
নানা উৎস থেকে সংগ্রহ করা উদ্ধৃতিগুলোও খুব চমৎকার। রাইনার মারিয়া রিলকে, অথর্ব বেদ, সুকুমার রায়- একটি মানুষ জীবন থেকে কত বিচিত্র পথে স্বাদ নিচ্ছেন; এই বিষয়টী খুব স্পষ্ট হয় এইসব বাণী থেকে। ‘১০-১২টা মাঝারি ধরনের গল্প লিখে’ প্রতিষ্ঠা পাওয়া লেখকদের কাতারে দাঁড়াতে চাননি তিনি, এই সত্য ধরা পড়ে ইলিয়াসের দিনপঞ্জিতে। ‘১৯৪৩-১৯৮১’ প্রতিটি জন্মদিনেই এমন বিশেষায়িত এক একটি জার্নাল ফুটিয়ে তোলে এই অদ্ভূত মানুষটির জীবনতৃষ্ণা।
সাহিত্যের ক্ষেত্রে শুধু রসটা নিয়েই ক্ষান্ত হন নি ইলিয়াস, ডায়েরির পাতায় পাতায় প্রায়ই রাসায়নিক যৌগের মতো তিনি বিশ্লেষণ করেছেন এক একটি লেখাকে।
ম্যাকিয়াভেলি, রবি ঠাকুরের রচনার তীব্র তীক্ষ্ণ থিসিস তো আছেই, ইলিয়াসের জবানীতে জ্যাক নিকলসনের কালজয়ী সিনেমা ‘ওয়ান ফ্লিউ ওভার দ্যা কাক্কুস নেস্ট’এর চমৎকার একটি রিভিউও পাঠককে আলোড়িত না করে পারে না।
শেষ করবো ৮৬’সালের ডায়েরির একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার ইঙ্গিত দিয়ে। আমাদের ইতিহাসের সবচাইতে মূল্যবান অনুষঙ্গ যে মুক্তিযুদ্ধ- সেটি নিয়ে একটি উপন্যাস লেখায় হাত দিয়েছিলেন ইলিয়াস। স্থির করেছিলেন তার পটভূমি হবে মহাস্থানগড়ের একটি প্রাচীন পীর পরিবার। এই বছরের ডায়েরিতে আছে সেই পরিবারের একটি ফ্যামিলি-ট্রি।
কত অভাবনীয় খুঁটিনাটি ইলিয়াস তার আতসী কাঁচের চোখে তুলে এনেছিলেন, ডায়েরির নানা খসড়ায় সেটি দেখে কেবলই সেই অসম্পূর্ণ উপন্যাসটির জন্যে শ্বাস ফেলতে হয়। মহাশ্বতা দেবী যে বলেছিলেন, ‘ইলিয়াসের নখের তুল্য ঔপন্যাসিক দুই বাংলায় নেই’, সে কথা স্মরণ করে আমাদের শ্বাস আরো প্রলম্বিত হয় কেবল।
এবং অ্যালান কোয়াটারমেইন
বইমেলায় যাবো অথচ সেবা প্রকাশনীর সামনের ভিড়ে হুড়োহুড়ি করে ক্যাটালগ দেখে দেখে বই কিনবো না, এমনটা সম্ভবই নয়। কোনো মূল্যবান উপদেশ নয়- নিছক আনন্দের উৎস হিসেবে তিন গোয়েন্দা, এরফান জেসাপ, ক্লাসিকের সেইসব অতিপরিচিত ঝর্ণা এখন মুমূর্ষু। মৃতপ্রায় স্রোতের মতো গতিশীল মাসুদ রানা।
টিকে আছে কেবল অনুবাদের ধারা। রাফায়েল সাবাতিনির সাথে সেবার গত কয়েক বছরের সবচেয়ে বেশি অনুবাদকৃত বইয়ের লেখক খুব সম্ভব- হেনরি রাইডার হ্যাগার্ড।
ট্রেজার আইল্যান্ডের চেয়ে ভালো বই লেখার ক্ষমতা আছে তার- ভাইয়ের সাথে বাজি ধরে হ্যাগার্ড লিখে ফেলেছিলেন ‘শী’ আর ‘রিটার্ন অফ শী’। সত্যি বলতে, শী এর পাশে দাঁড়ানোর মতোই মনে হয়নি আমার রত্নদ্বীপের অভিযানটিকে। সেই হ্যাগার্ডের সাথে পরিচয় আরো গাঢ় হয়েছিলো সলোমনের গুপ্তধনের অভিযানে আর অবশ্যই- অ্যালান কোয়াটারমেইনের হাত ধরে।
কোনো নির্দিষ্ট বই নিয়ে নয়, গতকাল বাংলাদেশের হার দেখতে দেখতে যখন পড়ছিলাম সেবার আরেকটি অনুবাদ- মনে হলো, এই অ্যালানকে নিয়েই তো জমে আছে কত কথা আমার।
হালকা দাঁড়ি মুখের ছোটোখাটো শরীরের এক মানুষ। আফ্রিকার এপ্রান্ত থেকে ঐ মাথা চষে বেড়ায় সে নানা অভিযানে। আর কেমন রোমাঞ্চ জুড়ে থাকে সেইসব বিচিত্র অভিযানের সবটা জুড়ে। কখনো অ্যালান খুঁজতে যাচ্ছে অদ্ভূত কোনো ফুলের উৎস, কখনো কিংবদন্তীর কোনো হ্রদের দিকে যাত্রা তার, কখনো জড়িয়ে পড়ছে দুই চিরশত্রু জাতির যুদ্ধে।
একেকটি অভিযানে অ্যালানের সঙ্গী আরো সব বিচিত্র মানুষ। নাম ভুলে যাওয়া সে মাসাই সর্দার, তীক্ষ্ণ বুদ্ধির হটেনটট হ্যান্স, ইনকোসিয়াস কুঠারের মালিক সেই জুলু, কখনো ইংরেজ লর্ড হেনরী কার্টিস। পথে দেখা হচ্ছে চাইল্ড অফ স্টর্ম মামীনার সাথে, যাদুকর আর দার্শনিক যিকালি আসছে কখনো, কখনো আসছে সোরাস আর নাইলেপথা। প্রতিটি অভিযানেই কোনো না কোনো নারী জড়িয়ে পড়ছে অ্যালানের ভাগ্যে, অ্যালান অবশ্য বাঁধা পড়ছে না পিছুটানে। জেমস বন্ড চরিত্র সৃষ্টির সময় তাকে নাকি রমনীমোহন করার আইডিয়াটা ইয়ান ফ্লেমিং নিয়েছিলেন অ্যালান কোয়াটারমেইন থেকেই।
সেই অ্যালানের আরেকটি অভিযানের গল্প পড়লাম কাল। পড়ি আর অবাক হই। সেই একই নাম না জানা এক অদ্ভূত জাতি, তাদের নিজস্ব কোনো কিংবদন্তী- বারবার এই এক চেনা পথে হেঁটেও অ্যালান কোয়াটারমেইনকে কখনো পুরনো মনে হয় না। কোথায় এর জাদু ভেবে পাইনা প্রথমে। পরে মনে পড়ে অ্যালানের ক্যানভাসটাকে।
আফ্রিকা। যত অবিশ্বাস্য, যত অসম্ভব, যত অদ্ভুতুড়েই হোক- আফ্রিকা তার সুবিশাল ছায়ায় ঢেকে দেয় সেইসব মানুষী দূর্বলতা। এখানেই অ্যালান কোয়াটারমেইনের যাদু।
কপিরাইট নিয়ে খুব আলোচনা চলতে দেখছি গত কয়েকদিন। দেখছি, আর খুঁজছি সম্ভাব্য উত্তর।
‘বিদেশী কাহিনীর ছায়া অবলম্বনে’ লেখা আর আন্তর্জাল থেকে মেরে দিয়ে ‘সূত্র- ইন্টারনেট’ ছাপ্পড় মেরে দেয়ায় পার্থক্য আসলেই পাওয়া যায় না তলিয়ে দেখলে। হয়তো, সেবা প্রকাশনীর অপরাধের মাত্রাটা আসলেই খুব উঁচু। আবার পরক্ষণেই মনে হয়, এই যে চারটা দশক ধরে নানা বিচিত্রমুখী পাঠ্যভ্যাস গড়ে তোলা- অগণিত মানুষকে প্যারিসের রাজপথ, জার্মান হপ্টব্যাহানহফ আর আফ্রিকার সাফারিতে ঘুরিয়ে আনা; এইসব অর্জনকে কী কপিরাইটের বেড়াজালে আনা যায় না সেটা সম্ভব ? কোনো রকম স্বীকৃতি দিয়ে কি আদৌ বোঝানো যাবে সেবা কী বিপ্লবটা করে গেছে পেপারব্যাকের অন্তরালে ?
এ অনেকটা সেই দ্বিমুখী সমস্যার মতন। পাথুরে স্লুইস গেট ভেঙ্গে দিয়ে অ্যালান কোয়াটারমেইন রক্ষা করতে পারে তার নিজের আর ওয়ালু জাতির প্রাণ, কিন্তু সেই সাথে সে দায়ী হয়ে যাবে দানব হিউহিউ’র পূজারী পশমে দেহ মোড়া হিউহুয়া নামের বিপন্ন আরেক মানবগোষ্ঠীর সকলকে হত্যার দায়ে। কোন সমাধান গ্রহণযোগ্য ?
হ্যাগার্ডের অ্যালান কোয়াটারমেইন, আফ্রিকার এমাথা থেকে ওমাথা যাকে চেনে ‘রাতের অতন্দ্র প্রহরী’ বলে, হটেনটট হ্যান্সের আদরের ‘বাস’ আর জুলুদের পরম শ্রদ্ধার ‘মাকুমাজান’- তার সিদ্ধান্ত নিতে ভুল হয় না কখনো।
আমি অ্যালান কোয়াটারমেইন নই, বরং সাধারণ একজন। আমি তাই কেবলই সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগি।
[justify]
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।