তোমার ভয় নেই মা, আমরা প্রতিবাদ করতে জানি
...................................................
ইকবাল হলের (বর্তমান সার্জেন্ট জহুরুল হক হল) ১১৬ নম্বর রুমে শুরু
হলো পতাকা বানানোর প্রক্রিয়া। আসম আব্দুর
রব ও মনিরুল ইসলাম মণি (মার্শাল মনি)
বললেন, পতাকার জমিনটা হবে ব্যাটল গ্রিন।
শাহজাহান সিরাজ বললেন রক্ত লাল
একটা কিছু যেন থাকে পতাকায়। কাজী আরেফ
আহমদ তখন গাড় সবুজ জমিনের
মাঝখানে গোলাকার লাল রঙের উদিত সূর্য এঁকে সবাইকে দেখান। সেই সময়
পাকিস্তানী সরকার জনগণকে বিভ্রান্ত
করতে "United state of Bangle" বা "যুক্তবাংলা" নামের এক কাল্পনিক রাষ্ট্রের প্রচারণা চালাচ্ছিল।
তাই কাজী আরেফ বললেন, পতাকার মাঝখানে রক্ত লাল প্রভাত সূর্যের মাঝে সোনালি রঙের (পাটের রং সোনালী এবং পাকা ধান ক্ষেতের রঙও সোনালী) পূর্ব বাংলা তথা বাংলাদেশের মানচিত্র আঁকা থাকবে। পতাকায় ভূখণ্ডের মানচিত্র
সুনির্দিষ্টভাবে থাকলে জনগণকে বিভ্রান্ত
করা সম্ভব হবে না পাকিস্তানী সরকারের
পক্ষে। সকলে একমত হলেন। ঠিক
হয়ে গেলো ব্যাটেলিয়ন ফ্ল্যাগের রঙ,
নকশা এবং থিম। তখন প্রয়োজন পড়লো একজন
অংকন শিল্পীর।
সমস্যার সমাধানও হয়ে যায় সাথে সাথেই। কারণ কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতা কুমিল্লার শিব নারায়ণ দাস ঐ দিনই
ঢাকায় এসেছেন এসএম হল ছাত্রলীগের সম্মেলন
উপলক্ষে ব্যানার ফেস্টুন লেখার জন্য এবং সেই
রাতে ইকবাল হলেই অবস্থান করছিলেন
ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ
সম্পাদক ও বিপ্লবী পরিষদের সদস্য হাসানুল
হক ইনুর সাথে। সবাই জানতেন শিব নারায়ণ
দাসের আঁকা আঁকির হাত খুব ভালো।
তাদেরকে ডাকা হলো ১১৬ নম্বর কক্ষে।
“কাপড় সংগ্রহ ও সেলাই এর দায়িত্ব
দেয়া হলো হাসানুল হক ইনু ও শিব নারায়ণ
দাসকে।
রাত সাড়ে এগারোটার দিকে নিউ
মার্কেট এলাকার
বলাকা বিল্ডিঙে ছাত্রলীগের অফিস সংলগ্ন
নিউ পাক ফ্যাশন টেইলার্সে গিয়ে কাপড়ের
পরিমাণ জেনে নিলেন ইনু ও শিবনারায়ণ দাস।
কিছুক্ষণের মধ্যেই নিউ মার্কেট
থেকে নিয়ে আসলেন লেডি হ্যামিলটন কাপড়।
বারোটার দিকে কলাপসেবল গেইট বন্ধ
করে দিয়ে অত্যন্ত গোপনীয়তার
সাথে পতাকা সেলাই করে দিলেন পাক
ফ্যাশনের আব্দুল খালেক ও নাসিরুল্লাহ।
কারণ, পাকিস্তানী আইনে এই কাজ ছিল
রাষ্ট্রদ্রোহিতার সামিল। রাত তিনটার
দিকে বানানো হয়ে গেলো দুইটি পতাকা।
পতাকা নিয়ে ইনু ও শিবনারায়ণ দাস
ফিরে আসলেন ইকবাল হলে। তখনও মানচিত্র
বসানো বাকী। সিদ্ধান্ত হলো পূর্ব
পাকিস্তানের মানচিত্র লাল বৃত্তের
মাঝে রঙ দিয়ে আঁকা হবে। এসব
করতে করতে রাত প্রায় শেষ।
বলাকা ভবনে ছাত্রলীগ অফিস হওয়ায় নিউ
মার্কেট কাঁচা বাজার সংলগ্ন এক আর্টিস্ট এর
দোকান থেকে তাঁকে ডেকে সংগ্রহ
করা হলো সোনালী রঙ এবং তুলি।
এদিকে ইনু
ছাত্রলীগের একজনকে সাথে নিয়ে গেলেন
প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন জিন্নাহ
হলের (বর্তমানে তিতুমীর হল) এনামুল হকের
(ইনু সাহেবের কাজিন) ৪০৮ নং কক্ষে। তার
কাছ থেকে অ্যাটলাস
নিয়ে ট্রেসিং পেপারে পূর্ব পাকিস্তানের
মানচিত্র একে আনলেন ইকবাল হলে। ১১৬
নাম্বার রুমের মেঝেতে বিছিয়ে শিবুদা তার
নিপুণ হাতে ট্রেসিং পেপার থেকে পূর্ব
পাকিস্তানের মানচিত্র আঁকলেন লাল বৃত্তের
মাঝে। তাতে দিলেন সোনালি রঙ।
তৈরি হয়ে গেল জয় বাংলা বাহিনীর
পতাকা এবং অনেকের অজান্তেই রচিত
হলো ইতিহাস।
এক গর্বিত ইতিহাস।
পতাকা তৈরীর পুরো প্রক্রিয়ায় জড়িত ছিলেন ছাত্রলীগের বিভিন্ন স্তরের নেতৃবৃন্দ;
কাজী আরেফ আহমেদ, আসম রব, হাসানুল হক
ইনু, মার্শাল মণি, শরীফ নূরুল আম্বিয়া, শিব
নারায়ণ দাস, শাহজাহান সিরাজ, গোলাম
ফারুকসহ আরো কয়েকজন। তাঁরা সত্যিই
ভাগ্যবান গর্বিত এই ইতিহাসের অংশ
হয়ে গেলেন।
তথ্যসূত্র: 'জয় বাংলা' গ্রন্থ এবং Google
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।