আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সু চির সঙ্গে হাসিনার বৈঠক, আজ বসছেন মনমোহনের সঙ্গে

দক্ষিণ ও পূর্ব এশিয়ার বন্ধুভাবাপন্ন দেশগুলোর সমন্বয়ে গঠিত জোট 'বিমসটেক'-এর তৃতীয় শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল সকালে মিয়ানমারের রাজধানী নেপিডো পৌঁছেছেন। ব্যস্ত সময়ে তিনি মিয়ানমারের প্রেসিডেন্ট থেইন সেইন ও গণতন্ত্রকামী নেত্রী অং সান সু চির সঙ্গে বৈঠক করেছেন। প্রতিবেশী দেশের নেত্রী শেখ হাসিনা ও সু চির মধ্যে এটাই প্রথম বৈঠক। আজ বিমসটেক সম্মেলনের মূল কর্মসূচির বাইরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহনের সঙ্গে বৈঠক করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, মিয়ানমার, নেপাল, শ্রীলঙ্কা ও থাইল্যান্ডের জোট বে অব বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টিসেক্টরাল টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকনোমিক কো-অপারেশন বা বিমসটেক সম্মেলনে যোগ দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল সকালে বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইটে ঢাকা ত্যাগ করেন।

ঢাকায় সিনিয়র মন্ত্রী ও কর্মকর্তারা তাকে বিদায় জানান। মিয়ানমারে পৌঁছালে তাকে লাল গালিচা সংবর্ধনা দেওয়া হয়। মিয়ানমারের শ্রম, কর্মসংস্থান ও সামাজিক নিরাপত্তা মন্ত্রী আয়ে মিন ও মিয়ানমারে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত অনুপকুমার চাকমা বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান। গার্ড অব অনার ও মোটর শোভাযাত্রাসহ শেখ হাসিনাকে নেওয়া হয় রয়্যাল নেপিডো হোটেলে। দুপুরে বিশ্রাম শেষে প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে মিয়ানমারের প্রেসিডেন্ট থেইন সেইনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন প্রধানমন্ত্রী।

এ সময় তারা দ্বিপক্ষীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেন। প্রেসিডেন্ট প্রাসাদ থেকে বেরিয়ে মিয়ানমারের পার্লামেন্টের রুল অব ল কমিটির কার্যালয়ে যান। সেখানে মিয়ানমারের গণতন্ত্রকামী নেত্রী অং সান সু চির সঙ্গে প্রায় ৩০ মিনিট বৈঠক করেন। সামরিক শাসকের হাতে প্রায় ১৫ বছর গৃহবন্দী থাকার পর বছরতিনেক আগে মুক্তি পাওয়া শান্তিতে নোবেল বিজয়ী সু চি বিরোধী দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান। প্রতিবেশী দুই নেত্রীর মধ্যে এটাই প্রথমবারের মতো সাক্ষাৎ।

নিজ কার্যালয়ের সামনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভ্যর্থনার জন্য দাঁড়িয়ে থাকা সু চি শেখ হাসিনাকে পেয়ে আলিঙ্গন করেন। কুশল বিনিময়ের সময় দুই নেত্রীকেই দারুণ হাস্যোজ্জ্বল দেখা যায়। শেখ হাসিনা তার বোনের ছেলে রেদওয়ান সিদ্দিকী ববি ও তার স্ত্রী পেপ্পি সিদ্দিকীকে মিয়ানমারের নেত্রীর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। পার্লামেন্টের ওই কার্যালয়ে আধা ঘণ্টারও বেশি সময় বৈঠকের পর হাতে হাত ধরে বেরিয়ে আসতে দেখা যায় দুই নেত্রীকে। শেখ হাসিনাকে গাড়ি পর্যন্ত পেঁৗছে দেন সু চি।

পরে মিয়ানমারের পার্লামেন্টের স্পিকার শুয়ে মানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন শেখ হাসিনা। তিনটি বৈঠকেই পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, অ্যাম্বাসেডর অ্যাট লার্জ এম জিয়াউদ্দিন, পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী মাহবুবুল হক শাকিল এ সময় উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী রাতে তার সফরসঙ্গীদের নিয়ে নেপিডোর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে প্রেসিডেন্ট থেইন সেইনের দেওয়া নৈশভোজে যোগ দেন। সফরসূচি অনুসারে আজ সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিমসটেকের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠকে অংশ নেবেন। দুপুরে সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী সরকারপ্রধানদের যৌথ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত থাকবেন।

শীর্ষ সম্মেলন শেষে ইশতেহার অনুমোদন এবং তিনটি বিষয়ে চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এগুলো হলো ঢাকায় বিমসটেকের স্থায়ী সচিবালয় প্রতিষ্ঠাসংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক, ভারতে আবহাওয়া ও জলবায়ু বিমসটেক সেন্টার প্রতিষ্ঠাসংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক এবং ভুটানে বিমসটেক কালচারাল ইন্ডাস্ট্রিজ কমিশন ও বিমসটেক কালচারাল ইন্ডাস্ট্রিজ অবজারভেটরি প্রতিষ্ঠাসংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক (এমওইউ)। সম্মেলনের সাইডলাইনে ভারত, নেপাল ও ভুটানের সরকারপ্রধানদের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন শেখ হাসিনা। নতুন সরকার গঠনের পর এটাই প্রথম ভারতের প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিংয়ের সঙ্গে বৈঠক হবে শেখ হাসিনার। এ সময় দুই দেশের অমীসাংসিত ইস্যুগুলোই আলোচনায় আসবে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুসারে, ২০১১ সালে বাংলাদেশ সফরকালে মনমোহন সিংয়ের দেওয়া প্রতিশ্রুতিগুলোর হালনাগাদ তথ্য নিয়ে আলোচনা হবে। এর মধ্যে তিস্তা নদীর পানিবণ্টন, স্থলসীমান্ত চুক্তি, সীমান্ত হত্যা বন্ধ, লাইন অব ক্রেডিটের আওতায় ৮০ কোটি ডলার ঋণ, অশুল্ক বাধা দূর করে বাণিজ্যে ভারসাম্য তৈরির মতো ইস্যুগুলো আসবে। অন্যদিকে রাজনৈতিক বিষয়গুলো দুই নেতার আলোচনায় বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গেই থাকবে বলে ঢাকা-দিলি্লর রাজনৈতিক মহলের ধারণা। দুই দিনের সফর শেষে আজ রাত ১১টার কিছু পরে প্রধানমন্ত্রী দেশে ফিরবেন। অন্যদিকে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম জানিয়েছেন, আগামী মে মাসে বিমসটেকের স্থায়ী সচিবালয় কাজ শুরু করবে।

গতকাল তিনি মন্ত্রী পর্যায়ের বিমসটেকের সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিয়েছেন।

 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।