পারস্পারিক স্বার্থ ও শ্রদ্ধার দিকটিকে গুরুত্ব দিলে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যেকার সম্পর্ক আরো জোরদার হবার যথেষ্ট সুযোগ আছে । অনেক অমীমাংসিত বিষয়ে কথা বলছেন খালেদা রাষ্ট্রীয় সফরে ভারত গিয়ে । জিয়া ছয় বছর পর ২৮ অক্টোবর, ২০১২ খালেদা জিয়ার ভারত সফর নিয়ে ব্যাপক আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছিল । সেই সফরে ভারতের প্রেসিডেন্ট প্রণব মুখার্জী এবং প্রধানমন্ত্রী মনমোহন , বিরোধীদলীয় নেত্রী বিজেপির সুষমা স্বরাজ সহ ভারতের নেতৃস্থানীয় রাজনীতিকদের সাথে বৈঠক করেন । খালেদা জিয়ার ভারত সফরের আলোচ্য বিষয়ের মধ্যে রয়েছে দ্বিদেশীয় সম্পর্ক, সীমান্তে বিএসএফ কর্তৃক বাংলাদেশি নাগরিক হত্যা, তিস্তা পানি চুক্তি এবং বৃহত্তর অঞ্চলের ভূরাজনীতি ও নিরাপত্তা।
খালেদা জিয়া বলেছেন, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সম্পর্কটা হতে হবে সমানে সমানে, সমান মর্যাদা ও স্বচ্ছতার ভিত্তিতে।
ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও খালেদা জিয়ার সফর ইতিবাচক ধারার সৃষ্টি করেছে বলে মন্তব্য করেছিল এবং ভারতের ক্ষমতাসীন কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী সদ্য সমাপ্ত বাংলাদেশের বিরোধীদলীয় নেতা ও বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার সফর মূল্যায়ন করে প্রতিবেদন তৈরির জন্য একটি কমিটি গঠন করেছিল কংগ্রেসের পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান ড. করণ সিংকে এ কমিটির প্রধান করে । এখানে বিশেষ উল্লেখ্য যে খালেদা জিয়ার সঙ্গে প্রণব মুখার্জির ৫৫ মিনিটের বৈঠকটি ছিল গুরুত্বপূর্ণ এবং ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জিকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান । ঢাকায় ফেরার পথে তিনি দিল্লি বিমানবন্দরে খালেদা জিয়া সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন৷ তিনি সাংবাদিকদের কাছে তার ভারত সফরকে সফল বলে উল্লেখ করেন৷ তিনি দ্বিপাক্ষিক সমস্যা আলোচনার মাধ্যমে সমাধানে একমত হয়েছেন৷ মুলত ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক পুনর্বিন্যাসে খালেদা জিয়ার ভারত সফর ।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে “ইন্ডিয়া ফ্যাক্টর” গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।
তাই ছোট-বড় রাজনৈতিক দল, নেতা নেত্রী, সামরিক-বেসামরিক আমলা, নীতি নির্ধারক, প্রচার মাধ্যম সর্বত্র ভারত বিশেষ গুরুত্ব পেয়ে থাকে। বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান এবং রণকৌশলগত গুরুত্ব অপরিসীম। ভারত বৃহৎ রাষ্ট্র হলেও বাংলাদেশ উপক্ষেনীয় নয় কিন্তু তা দিবালোকের মত সত্য বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থে ভারতের সঙ্গে আমাদের সুসম্পর্ক প্রয়োজন। অর্থনৈতিক উন্নয়ন, শান্তি, নিরাপত্তা-সকল রাষ্ট্রের কাম্য।
ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি ৩ মার্চ, ২০১৩ বাংলাদেশ সফরে আসেন ।
রাষ্ট্রপতি হিসেবে এটিই তার প্রথম বিদেশ সফর। বিএনপি চেয়ারপারসনের তরফ থেকে ভারতের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে যোগাযাগ করেই তার ঢাকা সফরকালে বিএনপি চেয়ারপারসনের সঙ্গে বৈঠকের সিডিউল দেওয়া হয়। ওই সিডিউল অনুযায়ী তিনি প্রনব মুখার্জির সঙ্গে সোনারগাঁও হোটেলে বৈঠকে বসার কথা ছিল সোমবার ৪ মার্চ ২০১৩। কিন্তু ওই দিন জমায়েতের রাজনৈতিক কর্মসূচি ছিল , ছিল হরতাল । নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে নির্ধারিত সাক্ষাৎ কর্মসূচি বাতিল করেছেন বিরোধীদলীয় নেতা ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
এক ভয়ঙ্কর ইমেলে ভারতীয় হাইকমিশনে সংশ্লিষ্টদের জানিয়ে দেন যে, বিএপি চেয়ারপারসন ভারতের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠক বসতে পারছেন না।
কথিত আছে এই কঠিন রাজনীতিক সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে কয়েকজন অরাজনৈতিক ব্যক্তিদের চাপে । বিএনপি চেয়ারপারসনের তরফ থেকে সিডিউল নিয়ে তা আবার বাতিল করার বিষয়টি ভালোভাবে নেননি। ভারতের প্রেসিডেন্ট এটাকে রাজনৈতিক ধৃষ্টতা হিসাবেই দেখেছেন। ভারত সরকারও ভালোভাবে নেয়নি।
বেগম খালেদা জিয়া যখন ভারত সফর করেছিলেন প্রণব মুখার্জির তরফ থেকে তাকে যথাযথ সম্মান জানানো ছাড়াও ভারত সরকারের তরফ থেকে বিরল সম্মান দেখানো হয়। ভারতের ভিন্ন আশাও ছিল। কিন্তু প্রণব মুখার্জির সঙ্গে দেখা না করা শিষ্টাচার বহির্ভূত অবিশ্যই । যদিও বা অনেকে বোল উড়িয়েছে বেগম খালেদা জিয়াও প্রণব মুখার্জির সঙ্গে সাক্ষাৎ না করে কোনো ‘অশোভন’ কিছু করেননি। তিনি বরং প্রকৃত দেশপ্রেমিক জাতীয় নেত্রীর অবস্থানই বজায় রেখেছেন।
তাহলে প্রশ্ন কেন ভারত সফরে গেলেন নেত্রী ??
খালেদা জিয়ার ঐতিহাসিক ভারত সফরের মধ্য দিয়ে একধরনের বার্তা বহন করেছিল ক্ষমতাসীন দলের জন্য দিল্লীর এক তরফা সমর্থন আর রইলো না। কিন্তু প্রণব মুখার্জির সঙ্গে সাক্ষাৎ না করা চরম অস্ত্র তুলে দেয় ভারত এবং আওয়ামীলীগের হাতে । ভারতীয় নীতিনির্ধারকরা এটাকে অপমান বলেই দেখেছেন এবং তা শুধু প্রণব বাবুকে নয়- গোটা ভারতবাসীকে অপমান করেছেন বলেই বর্তা দেন ।
ভারতের নীতিনির্ধারকদের একটি অংশ বরাবরই বিএনপির ঘোর বিরোধী। তারা সুযোগ খুঁজছিলেন এবং নিজ হাতে সেই সুযোগ তৈরি করেছে বিএনপি ।
তাঁর সাথে ডোল পিটিয়েছে আওয়ামীলীগ । আরেকটা মজার তথ্য প্রণব মুখার্জি সোনারগাঁও হোটেলে অবস্তান করছে । বাংলাদেশ এবং ভারতের নিরাপত্তাকর্মী দ্বারা পুরো এলাকা এক নিরাপত্তা ক্যাডার ডাকা । অপার রহস্যময় ঘটনা এই নিরাপত্তা বলয় ভেদ করে প্রণব মুখার্জির অবস্তান করা সোনারগাঁও হোটেলের সামনে ককটেল বিস্ফোরণ দুপুর ২টায় এবং যে খবর ভারতীয় মিডিয়া দ্রুত প্রচার করেছিল। সাক্ষাৎ বাতিলের ইমেইল এবং ককটেল বিস্ফোরণের একটা অন্তর্নিহিত যোগ সূত্র আছে হয়তো
অনেকে অবশ্য বলেন, খালেদা সাক্ষাৎ করলেও ক্ষমতা পেতেন না।
তারপরও সাধারণ ভদ্রতা বলে কথা থাকা যার অতিথিয়তা আমাকে বিমুগ্ধ করেছে তাকে অসৈজন্যতা দেখানোর মত নেত্রী অবিশ্যই খালেদা জিয়া নয় ।
তাই আমি নিশ্চিত, খালেদা জিয়াকে যাঁরা পরিচালনা করছেন তাঁরা তাঁকে বিভ্রান্ত করছেন, ভুল পথে পরিচালিত করছেন। তাই এ মুহূর্তে করণীয় কী তা ঠিক করার দায়িত্ব গুলশান কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের না দিয়ে বর্ষীয়ান রাজনৈতিক সহ নতুন প্রজন্মের রাজনৈতিক ব্যাক্তিদের সহ সবার কথা শোনেন এরপর নিজে সিদ্ধান্ত নিন । আপনার আসে পাশে অরাজনৈতিক ব্যাক্তিদের রাজনৈতিক ফায়দা লোটার পরমার্শকেন্দ্র বন্ধ করে সকলের কথা শুনার ধার উন্মুক্ত করুন । আপনার মনে রাখতে হবে এই দেশ এবং জনগণ আপনার পানে ছেয়ে আছে ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।