সৃষ্টিশীল মানুষ, পাখি ও বৃক্ষের ব্যক্তিগত বলে কিছু নেই, এটা আমার ব্যক্তিগত মত, একমত না হলেও চালিয়ে নেয়া যাবে। তাই আমার ডায়রি আজ থেকে ভার্চুয়াল পথচলা শুরু করছে, অনেক কিছু চাইলেও পরিষ্কার করে বোঝাতে পারবোনা, বুঝে নিতে হবে, খুঁজে নিতে হবে।
ক্রিকেট নিয়ে আমার আবেগ প্রেম শৈশবেই, ডাংগুলি দিয়ে শুরু ক্রিকেট দিয়ে শেষ। এক সময় খেলতামও বেশ, সারাবেলাতো মাঠেই কেটে যেতো, লেগ স্পিন বল করতাম আর ওয়ন ডাউনে ব্যাট, বলে রাখা প্রয়োজন তখন খুব কম লোকেই ক্রিকেট দেখত বা বুঝতো। ১৯৯৬ বিশ্বকাপের সময় লীগে একটি ম্যাচে প্রথম বলেই আমাদের দলের ওপেনার বোল্ড, আমি সবে প্যাডআপ শুরু করেছি, তারাহুড়া করে হেলম্যাট ছাড়াই নেমে পড়লাম, ছষ্ঠ ওভারে একটা বাউন্সার হুক করতে গিয়ে বল সোজা লাগে মুখের বা পাশে ঠোটের ঠিক নিচে, পাঁচটি দাঁত মাঠেই পড়ে যায়, রক্তাক্ত অবস্থায় ঠাই হয় হাসপাতালে, আজও আমার একটা দাঁত নেই, এজন্য কিছু কিছু শব্দ উচ্চারণে সমস্যা হয়, ঠিকমতো ব্রাশ করতে পারিনা, তাই দাঁতের স্পট দেখে অনেকেই ভাবে আমি বোধহয় নায়িকা টায়িকা (হেরোইন, ইয়াবা...) খেয়ে বেড়াই, ঠোটের নিচে সেলাই এর দাগ এখনো আমাকে তাড়িয়ে বেড়ায় রোজ...
২০১০ সাল।
বাংলাদেশে সাজ সাজ রব, পরের বছর বাংলাদেশে প্রথম বসছে বিশ্বকাপের মতো এতো বড় আসর। ভাবলাম একটা কিছু করা দরকার, লিখে ফেললাম, লাল সূর্যটা প্রতিদিন ডোবে, প্রতিদিন উঠে ভোরে, আমার রবি শবুজের মাঝে, পতপত করে ওড়ে, স্বপ্নটাকে এইবার তুমি, সত্যি বলতে পারো, সোনার বাংলায় বিশ্বকাপ দুহাজার এগার...তখন আমার অর্থনৈতিক চরম সংকট, গানটি এরফানকে দিয়ে বললাম আপনি গানটা নিয়ে রবি’র কাছে যান, ওরা নতুন বাজারে আর যেহেতু গানের কথায় আমার রবি, জ্বলে ওঠো ইত্যাদি শব্দ আছে (আমি যখন জ্বলে ওঠো গানটি লিখি তখন রবি বাজারে ছিলো না) ভালো একটা স্পন্সর পেয়ে যাবেন, আমাকে মনে রাইখেন। এরফান মনে রাখে নি, পাঁচ লাখ বা তারও বেশী টাকায় তার অ্যালবাম জ্বলে ওঠো স্পন্সর করেছিলো, এরফান আমাকে দিয়েছিলো এক হাজার টাকা চার কিস্তিতে, বোনাস হিসেবে অ্যালবাম প্রকাশের দিন আমাকে একটা ফোন পর্যন্ত করেনি...
আবার বিশ্বকাপ, মাথায় সেই পুরোনো নরক যণ্ত্রনা, ২০১৩, ১৭ অক্টোবরে লিখে ফেললাম আজ বাংলাদেশের দিন গানটি, আগেই সিদ্ধান্ত এবার কাওকে দিবনা, নিজেই গাব। বিধি বাম, রেকর্ডিং শুরুর দিন তারকা শিল্পী, বন্ধু হাসান (আর্কের হাসান নয়) বলল, ওই ব্যাটা এই সব থিম সং বাদ দে, তুই কি আসিফ ভাইয়ের বেশ বেশ বা আরেফিন রুমির লাল শবুজে কি টেক্কা দিতে পারবি, এইসব বালছাল বাদ দে, বাসে বসা গীতিকার হোসেন বললেন আহ আগে শুনেই দেখেন না, ভব কি বানাইছে। সম্পর্ক স্টুডিওতে তখন হাসানের একটি এ্যালবামের কাজ চলছিল, বিরক্ত চোখে বলল, গা তো শুনি গা, আমি গাইলাম, মাঝপথেই হাসান আমাকে থামিয়ে দাড়িয়ে গেলো, এই গান তুই গাবি, এটা আমারে দে, এ-ও-এরা-তারা বাজার যারা দাপাইয়া বেড়ায় ওদের দিয়া গাওয়াই,সাথে তুইও থাকলি, আর গীতিকার-সুরকার হিসেবে তুইও হিট, সব খরচ আমার, সাথে তুই টাকাও পাবি।
আমি মুখের ওপর না করে দিলাম, এর পর অনেক নেতিবাচক কথা শুনলাম ওর মুখে, যার হেডলাইন তুই গাইলে এই গান কুত্তাও শুনবে না। ...
আমার কাছে টাকা নাই, শিফট নিতে পারি না, হাসান-হোসেন রা রেকর্ডিং করে, অ্যালবামও বেরিয়ে যায়, আমি থাকি টাকা যোগারের ধান্দায়। সুমন দাকে খুচরা ক’টাকা দেই ওই সময়ে আর পারি না,মার্চের ১, ২০১৪ বইমেলা থেকে কয়েকটা টাকা পকেটে এসছে, টাকা ক’টা নিয়ে আমি বাংলামোটর থেকে মগবাজার মোড় পর্যন্ত অন্তত দশ বার হাটছি আর ভাবছি, সামান্য টাকা ক’টা কি স্টুডিওতে দিব না ৫ তারিখে বাসাভাড়া দিব, শেষ পর্যন্ত গানেরই জয় হলো। দাদা এখনো আমার কাছে রেকর্ডিং এর প্রায় পুরা টাকাই পান তবু তিনি অক্লান্ত পরিশ্রম করে গানটি দাঁড় করালেন, সুমন দা, তোমার এর ঋণ আমি কিভাবে শুধি?
গান নিয়ে যখন বেরোই তখন আমার পকেটে ত্রিশ টাকা, ঘড়ির কাটা বারটা ছুঁই ছুঁই। বাসায়তো নেট নেই, সাইবার ক্যাফে খুলবে সকালে, আমারতো তর সইছে না, যে করেই হোক রাতেই নেটে আপলোড দিতে হবে, শেষ ভরসা ছোটভাই রাসেল এর ঝিকাতলার বাসয় গিয়ে ওই রাতেই আপলোড করি আজ বাংলাদেশের দিন...
শতাব্দী ভব
০৪-০৩-২০১৪ ইং
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।