আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মন ভাল করার ওষুধ

মুক্ত করো ভয়, আপনা মাঝে শক্তি ধর নিজেরে কর জয় :) আমার যখন মন মেজাজ খারাপ থাকে তখন বসে বসে সুকুমার রায়ের শিশু সাহিত্য সমগ্র পড়ি মন ভাল হইতে বাধ্য সেইখান থেকে কয়টা গল্প - বাজে গল্প ১ দুই বন্ধু ছিল। একজন অন্ধ আর আরেকজন কালা । দুইজনে বেজায় ভাব । কালা বিজ্ঞাপনে পরিল, আর অন্ধ লোক মুখে শুনিল, কোথায় যেন যাত্রা হইবে, সেখানে সঙেরা নাচগান করিবে । কালা বলিল , "অন্ধ ভাই, চল, যাত্রা গিয়া দেখি ।

" অন্ধ হাত নাড়িয়া গলা খেলাইয়া কালাকে বুঝাইয়া দিল, "কালা ভা্‌ই, চল,যাত্রায় নাচগান শুনিয়া আসি। " দুইজনে যাত্রার আসরে গিয়া বসিল । রাত দুপুর পর্যন্ত নাচগান চলিল , তারপর অন্ধ বলিল ,"বন্ধু গান শুনিলে কেমন?" কালা বলিল, "আজকে তো নাচ দেখিলাম- গানটা বোধহয় কাল হইবে। " অন্ধ ঘন ঘন মাথা নাড়িয়া বলিল ," মূর্খ তুমি! আজ হইল গান - নৃত্যটাই বোধহয় কাল হইবে। " কালা চলিয়া গেল।

সে বলিল " চোখে দেখ না, তুমি নাচের মর্ম জানিবে কি???" অন্ধ তাহার কানে আঙ্গুল ঢুকাইয়া বলিল, "কানে শোন না , গানের তুমি কাঁচকলা বুঝিবে কি??" কালা চিৎকার করিয়া বলিল, " আজকে নাচ , কালকে গান ," অন্ধ গলা ঝাঁকরাইয়া আর ঠ্যাং নাচাইয়া বলিল, "আজকে গান কালকে নাচ । " সেই হইতে দুজনের ছাড়াছাড়ি। কালা বলে, "অন্ধটা এমন জুয়াচোর - সে দিনকে রাত করিতে পারে। " অন্ধ বলে," কালাটা যদি নিজের কথা শুনিতে পাইত, তবে বুঝিত সে কত বড় মিথ্যাবাদী । " বাজে গল্প ২ কলকেতার সাহেব বাড়ি থেকে গোষ্ঠ বাবুর ছবি এসেছে।

বাড়িতে তাই হুলুস্থুল । চাকর বামুন ধোপা নাপিত দারোগা পেয়াদা সবাই বলে ," দৌড়ে চল, দৌড়ে চল। " যে আসে সেই বলে, " কি চমৎকার ছবি। সাহেবের আঁকা। " বুড়ো যে সরকার মশাই তিনি বললেন ," সবচাইতে সুন্দর হয়েছে বাবুর মুখের হাসিটুকু - ঠিক তাঁরই মতন ঠাণ্ডা হাসি।

" শুনে অবাক হয়ে সবাই বলে, " যা হোক ! সাহেব হাসি টুকু ধরেছে খাসা । " বাবুর যে বিষ্টু খুড়ো তিনি বললেন ," চোখ দুটো যা এঁকেছে, ওরই দাম হাজার টাকা- চোখ দেখলে, গোষ্ঠর ঠাকুরদার কথা মনে পড়ে । " শুনে একুশজন এক বাক্কে হাঁহাঁ করে সাঁয় দিয়ে উঠল। রেঁধো ধোপা তার কাপড়ের পোঁটলা নামিয়ে বলল ," তোফা ছবি। কাপড়খানার ইস্ত্রি যেন রেঁধো ধোপার নিজের হাতে করা।

" নাপিত তার ক্ষুরের থলি দুলিয়ে বলল ,"আমি উনিশ বছর বাবুর চুল ছাঁটছি - আমি ঐ চুলের কেতা দেখেই বুঝতে পারি , একখান ছবির মতন ছবি। আমি যখনি চুল ছাঁটি, বাবু আয়না দেখে ঐ রকম খুশি হন । " বাবুর আহাল্লাদি চাকর কেনারাম বললে ," বলব কি ভাই এমন জলজ্যান্ত ছবি- আমি তো ঘরে ঢুকেই এক পেনাম ঠুকে চেয়ে দেখি , বাবু তো নয়- ছবি। " সবাই বললে ," তা ভুল হবারই কথা- আশ্চর্য ছবি যা হোক। " তারপর সবাই মিলে ছবির নাক মুখ গোঁফ দাড়ি সমস্ত জিনিষের খুব সুক্ষ সুক্ষ আলোচনা করে প্রমান করলেন যে সব বিষয়েই বাবুর সঙ্গে আশ্চর্য রকম মিলে যাচ্ছে - সাহেবের বাহাদুরি বটে! এমন সময় বাবু এসে ছবির পাশে দাঁড়ালেন ।

বাবু বললেন ," একটা বড় ভুল হয়ে গেছে । কলকেতা থেকে ওরা লিখছে যে ভুলে আমার ছবি পাঠাতে কার যেন ছবি পাঠিয়ে দিয়েছে। ওটা ফেরত দিতে হবে । " শুনে সরকার মশায় বললেন," দেখেছ ! ওরা ভেবেছে আমায় ঠকাবে ! আমি দেখেই ভাবছি অমন ভিরকুটি দেওয়া পেখনা হাসি - এ আবার কার ছবি??" খুড়ো বললেন," দেখ না! চোখ দুটো যেন উলটে আসছে- যেন গঙ্গা যাত্রার জ্যান্ত মরা!" রেঁধো ধোপা সেও বলল ,"একটা কাপড় পরেছে যেন চাষার মত। ওর সাতজন্মে কেউ যেন পোশাক পরতে শেখেনি।

" নাপিত ভায়া মুচকি হেসে মুখ বাকিয়ে বলল," চুল কেটেছে দেখ না- যেন মাথার উপর কাস্তে চালিয়েছে । " কেনারাম ভীষণ ক্ষেপে চেঁচিয়ে বলল," আমি সকাল বেলায় ঘরে ঢুকেই চোর ভেবে চমকে উঠেছি । আরেকটু হলেই মেরেছিলাম আর কি! আবার এরা বলছিল ওটা নাকি বাবুর ছবি। আমার সামনে ও কথা বললে মুখ থুড়ে দিতুম না। " তখন সবাই মিলে এক বাক্যে বললে যে ," সবাই টের পেয়েছিল , ওটা বাবুর ছবি নয়।

বাবুর নাক কি অমন চ্যাতাল ? বাবুর কি হাঁসের পায়ের মত কান? ও কি বসেছে, না ভালুক নাচ্ছে?? বাজে গল্প ৩ কত গুলো ছেলে ছাদের উপর হুড়োহুড়ি করে খেলা করছে- এমন সময় একটা মারামারির শব্দ শোনা গেল। তারপরেই হঠাৎ গোলমাল থেমে গিয়ে সবাই মিলে " হারু পড়ে গেছে" বলে কাঁদতে কাঁদতে নীচে চলল । খানিক বাদেই শুনি একতলা থেকে কান্নাকাটির শব্দ উঠছে । বাইরের ঘরে যদুর বাবা গনেশ বাবু ছিলেন - তিনি ব্যস্ত হয়ে জিজ্ঞেস করলেন ," কি হয়েছে? শুনতে পেলেন ছেলেরা কাঁদছে "হারু পড়ে গিয়েছে" । বাবু তখন দৌড়ে গেলেন ডাক্তার ডাকতে ।

পাঁচ মিনিটে ডাক্তার এসে হাজির- কিন্তু হারু কোথায় ? বাবু বললেন ," এদিকে তো পড়েনি, ভেতর বাড়িতে পরেছে বোধহয় । " কিন্তু ভেতর বাড়িতে মেয়েরা বললেন, " এখানে তো পড়েনি- আমরা তো ভাবছি বার- বাড়িতে পরেছে বুঝি। " বাইরেও নেই,ভেতরেও নেই, তবে কি ছেলে উড়ে গেল? তখন ছেলেদের জিজ্ঞেস করা হল, " কোথায় রে ? কোথায় হারু?? তারা বললে," ছাদের উপর। " সেখানে গিয়ে তারা দেখে হারুবাবু অভিমান করে বসে বসে কাঁদছেন ! হারু বড় আদরের ছেলে, মারামারিতে সে পড়ে গেছে দেখেই আর সকলে মার খাবার ভয়ে সেখান থেকে চম্পট দিয়েছে। "হারু পড়ে গেছে" বলে এত যে কান্না তার অর্থ , সকলকে জানান হচ্ছে যে, " হারুকে আমরা ফেলে দেইনি- সে পড়ে গেছে বলে আমাদের ভয়ানক কষ্ট হচ্ছে।

" হারু তখন সবার নামে বাবার কাছে নালিশ করবার জন্য মনে মনে অভিমান জমিয়ে তুলছিল- হঠাৎ তার বাবাকে লোকজন আর ডাক্তার শুদ্ধু এগিয়ে আসতে দেখে ভয়ে আর নালিশ করা হল না। যা হোক হারু কে আস্ত দেখে সবাই এমন খুশি হল যে , শাসন- টাসনের কথা কারও মনেই এল না। সবচেয়ে জোরে কেঁদেছিলেন হারুর ঠাকুরমা। তিনি আবার কানে শোনেন কিছু কম। তাকে সবাই জিজ্ঞেস করল," আপনি এত কাঁদছিলেন কেন?" তিনি বললেন ," আমি কি অত জানি? দেখলুম ঝিয়েরা কাঁদছে, বৌমা কাঁদছেন, তাই আমিও কাঁদতে লাগলুম- ভাবলুম একটা কিছু হয়ে থাকবে ।

" ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।