আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ভিতর-বাহির



এ যেন ‘আনন্দ ধারা বহিছে ভুবনে’।

আব্বা-আম্মা ছয় মাস অস্ট্রেলিয়া থেকে দেশে ফিরছেন আগামীকাল।

আমার ছোট বোন অস্ট্রেলিয়া থাকে। হঠাৎ করে সে অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাকে দেখতে গিয়েছিলেন। ছয় মাসের ভিজিট ভিসার মেয়াদ শেষ করে অবশেষে তারা দেশে ফিরছেন।



সবাই আজ খুব আনন্দে আছে। আমার ছোট ছেলে ঘরময় দৌড়াদৌড়ি করছে আর সুর করে গাইছে, দাদু আসবে.. দিদা আসবে.. কতো মজা হবে...

বাবুর মা পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযানে ব্যস্ত। তারা এসে যেন বলতে না পারেন তাদের অবর্তমানে ঘর-দোরের খেয়াল রাখা হয় নি।

ভাবী ভাইয়াকে বাজারে পাঠিয়েছেন আব্বা-আম্মার প্রিয় খাবার-দাবার কিনে আনার জন্য।

ভাতিজা-ভাতিজি ফুলের মালা তৈরী করছে।

তাদের দাদু-দাদিকে নাকি ফুল দিয়ে বরণ করা হবে।

পাশের বাসা থেকে চাচা কিছুক্ষণ পরপর এসে খোঁজ-খবর নিচ্ছেন। তার একমাত্র ভাইটির ফ্লাইট কখন, কোন এয়ার লাইন্সে আসছেন, মালয়েশিয়ান এয়ার বাছাই করা ঠিক হয়নি, আজ সকালেই নাকি এই এয়ার লাইন্সের একটা বিমান বিধ্বস্ত হয়ে যাত্রীরা সবাই মারা গেছে- এমন নানা রকমের প্রসঙ্গে তার উত্তেজনা ও খুশি উভয়ই সুস্পষ্ট।

আর আমার কথা? আম্মার হাতের রান্না ছাড়া আর কোন কিছুই আমার মুখে রুচে না। সকালে অফিসে বের হবার সময় আম্মার হাতের নাস্তা, অফিস থেকে ফিরে আম্মার হাসিমুখ- সবকিছুই ভীষন মিস করেছি এ কদিন।

আর আব্বার উপস্থিতি ছাড়া নিজেকে কেমন যেন এতিম এতিম লাগছিল। আব্বার না থাকার কারনে পারিবারিক অনেক ঝামেলাই আমাকে একা পোহাতে হয়েছে। তাই তাদের ফিরে আসাতে আমার মনেও এক ধরনের ভাল লাগা ছড়িয়ে গেছে।

এসব যখন ভাবছি তখন স্কাইপ থেকে ছোট বোনের কল। সে এতোক্ষণে নিশ্চয়ই তাদের সি-অফ করে বাসায় পৌঁছেছে।

তাড়াতাড়ি কল রিসিভ করে তাকে জিজ্ঞেস করলাম তারা ঠিকঠাক মতো প্লেনে উঠেছেন কি না।

ও মা! দেখি বোনের চোখ থেকে যেন বৃষ্টি নেমেছে! সে চোখ মুছতে মুছতে জানালো সব ঠিক আছে। তারা প্লেনে উঠে গেছেন।

জিজ্ঞেস করতে গেলাম এমন খুশির দিনে কেন কাঁদছে সে। তখনই বুঝলাম, আনন্দ আর বেদনা আসলে যুগপৎ ঘটে থাকে।



অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।