পথের প্রান্তে আমার তীর্থ নয় ,,,,,পথের পাশেই আছে মোর দেবালয়
শালিক আমার বাসার সদস্য, অর্থাৎ আমার এসির পেছনে খালি জায়গায় বাসা বেধেছে আজ অনেকদিন হলো। তবে চিল আমার প্রতিবেশী । আমার বাসার আরেকদিকে তিনটা বাড়ী সুইমিং পুল লন ব্যাডমিন্টন কোর্ট, ছাড়াও অনেক গাছ পালায় ভরা। দেখে মনে হয় মালিকরা বেশ সৌখিন। এখনো ডেভলাপারদের থাবা পৌছেনি সেখানে।
সেই এক বাসার নারকেল গাছ আর আমগাছের জড়িয়ে থাকা কোন এক জায়গায় তাদের বসবাস।
আমি লুকিয়ে লুকিয়ে দেখি আমার বাসার বিনে পয়সার ভাড়াটে শালিক দুটোকে । ভারী চঞল আমি দেখছি টের পেলেই ফুরুৎ করে উড়ে যায়। পর্দাদুটো সামান্য ফাক করে আমি যে ওদের দেখি এটা ওরা জানেই না। সকাল হলেই একজন বাসা থেকে বেরিয়ে চলে যায় পাশের দুটো খালি প্লটে অনেক গাছ গাছড়া রয়েছে সেখানে।
মানে আমি যেতে দেখেছি।
কিছুক্ষন পর কিছু একটা মুখে নিয়ে আমাদের বিল্ডিং এর আড়াআড়ি পিলারটার উপর বসে ডাকতে থাকে। আমি উকি দিয়ে দেখি তার জোড়াটা ঘর থেকে বের হয়ে একটু উকি দিয়ে যায়। পিলারে বসা শালিকটা যেই উড়ে গিয়ে কার্নিশে তার বাসায় গিয়ে বসে তখন আরেকটি উড়ে যায় সেই বনের দিকে। মনে হয় খাবার খুজতে।
প্রথম পাখিটি জানি না ছেলে নাকি মেয়ে যদি তার আসতে একটু দেরী হয় তখন ঘরের পাখী বেরিয়ে এসে জঙ্গলের দিকে চেয়ে কঁ কঁ করে কি রাগত স্বরে ডাকতে থাকে। আমার স্বামীর মতে
"ওটা মেয়ে পাখী"।
আর একটু পরেই বনের পাখী এসে হাজির। সাথে সাথে ঘরের পাখি উড়াল দেয় সেই বনে। এমনি করে আমাদের বাসায় বিনে ভাড়ায় সুখে দিন কাটছে ওদের।
প্রতিদিন সকালে আমার প্রতিবেশী শংখ চিল দুটো রাজকীয় ভঙ্গীমায় আকাশে পাক দিয়ে যায় এক বার দুবার তিন কি চার বার। আমি পশ্চিমের জানালা দিয়ে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখি । আকাশে তাদের দুজনার কে সেই মহিমান্বিত বিচরন।
বেশ কয়েকবার পাক খেয়ে ঘুরে ঘুরে এক সময় ঝুপ করে নেমে এসে বসে পরে নারকেল গাছ বা আম গাছের ডালে। অথবা পাশের বাড়ীর ছাদের উপর একটি আড়াআড়ি এক লোহার খুটির উপর।
কখনো বা একটু দূরের আকাশে ভেসে বেড়ানো কারো পালিত কবুতরের ঝাকে গিয়ে হাজির হয়। কবুতর গুলো ভয়ে তাড়াতাড়ি নিরাপদে তাদের বাসার ছাদে নেমে যায়। আর ওরা ফিরে আসে নিজের কূলোয়। আমি ফাক পেলেই তাকিয়ে দেখি ওদের কার্যকলাপ।
সেদিন দুপুরে আমি বই পড়ছি, হঠাৎ কেমন করুন গলায় একটি শালিক ডেকে উঠলো।
আমি আস্তে উঠে পর্দা সরালাম। দেখি এক জন কোথা থেকে সারা শরীরে স্কচ টেপ পেঁচিয়ে এসেছে। দেখে আমার সারা শরীরে কাটা দিয়ে উঠলো। এটা খুলবে কি করে ! অনেক কষ্টে নীচে পরে যেতে যেতে কোনরকমে বাসায় গিয়ে ঢুকলো।
আমার স্বামীকে অফিসে ফোন করলাম কি হবে এখন? এসি খুলে ওটাকে ধরে কি স্কচ টেপ খোলা যাবে ?
সে বল্লো তা সম্ভব নয়।
মনটা ভীষন খারাপ হয়ে গেল। ঘুরে ফিরেই জানালায় যাই। দেখা যায় কি না? এসির কাছে গিয়ে কান পাতি ওদের খটর মটর শোনা যায় কি না। কেন জানি সামান্য দুটো শালিকের জন্য অস্থির হয়ে গেলাম। রাতে স্বামী এসে স্বান্তনা দিল।
বল্লো পাখিটা যদি মাটিতে পরে যায় তখন ধরে খুলে দিলেই হবে।
বাসার কেয়ার টেকারকে ডাকলাম। বললাম পাখির কথা। সেতো কিছুক্ষন হা করে আমার মুখের দিকে চেয়ে রইলো। সে অবশ্য আমার উদ্ভট সব আবদারের কথা জানে।
একবার তেল কুচা লতা খুজে আনার জন্য তাকে অস্থির করে ফেলেছিলাম।
শালিক পাখীটার জন্য মন অস্থির । ঘুরে ফিরে একই প্রশ্ন স্বামীকে কি করা যায় ? বেচারা সারাজীবন আমার এই সব প্রশ্নের উত্তর দিতে দিতে কাহিল । চুপ করে আছে।
পরদিন দেখলাম দুটোকে।
কারো গায়েই স্কচটেপ নেই। আমার স্বামী ক্ষেপানোর জন্য বল্লো 'ঐটা মরে গেছে, আর এটা নতুন আরেকটা'।
আমি বললাম "কি বলো ওরা কি মানুষের মত নাকি সঙ্গী মরার একদিনের মধ্যে আরেকটা জোগাড় করবে" !
বলতে চেয়েছিলাম তোমাদের মত পুরুষ মানুষ নাকি !
আজ তিন চার দিন হলো একটা চিল নাই। আবার তাকে প্রশ্ন কি হলো আরেকটা চিলের ? সারাক্ষন চোখ রাখি। একটাই চিল ।
উড়ে আবার গাছের উপর বসে আবার উড়তে থাকে। কিন্ত আরেকটা কই ?
কেউ কি মেরে ফেলেছে ? একটা কাকের সাথে মাঝে মাঝে লড়াই করতে দেখতাম। সেটা কি কিছু করলো? কাক কি চিলের চেয়ে বেশী শক্তিশালী ? এই সব নানা প্রশ্নবাণে আমার স্বামী যখন জর্জরিত তখন কাল হঠাৎ দেখি দুটো চিল পাশাপাশি উড়ছে। ওরা ডিম পেড়েছে, মেয়েটা বসে বসে তা দেয় ডিমে, তাই দেখিনা সর্বক্ষন।
ভালোই আছে আমার ভাড়াটিয়া আর প্রতিবেশী।
ব্লগে তো কত কিছুই লিখলাম । আজ ভাবলাম লিখি ওদের নিয়ে যারা আমার সর্বক্ষনের পর্যবেক্ষনের সঙ্গী।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।