আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমরা কেন পাকিস্তানকে সমর্থন করব ?

রমিজ রাজা। নামটা নিশ্চই শুনেছেন। পাকিস্তানের এক সময়কার ক্রিকেটার এবং বর্তমানের ধারাভাষ্যকার। বাংলাদেশের ক্রিকেটের সাথে তার এত কেন মনঃস্তাত্ত্বিক বৈরীতা, তা বোঝার উপায় নেই। আগে খেয়াল না করে থাকলে এর পর খেয়াল করবেন, লোকটি কোন সময়, কোন মুহূর্তেই বাংলাদেশের কোন একজন খেলোয়াড়ের, কোন একটি বলের, কোন একটি ফিল্ডং এর কখনওই কোন প্রশংসা করে না।

কথাটা মিথ্যে নয়। একেবারেই সত্য। পাকিস্তানের ক্রিকেটিয় শত্রু ভারত। কিন্তু সেই রমিজ রাজা কিন্তু বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ভারতীয় ক্রিকেটারদেরকে প্রশংসা বণ্যায় ভাসিয়ে দেয়। বাংলাদেশ তো পাকিস্তানের ক্রিকেটিয় শত্রু না।

তাহলে কি কারণ থাকতে পারে এ আচরণের?

একবার পাকিস্তান ক্রিকেটদল বাংলাদেশে খেলতে এসেছে। সেদিন ছিল আমাদের বিজয় দিবস। তো এক সাংবাদিক পাকিস্তানের অধিনায়ককে বলেছিলেন, আজ তো বাংলাদেশের বিজয় দিবস। আপনি কি বাংলাদেশকে অভিনন্দন জানাবেন? তার উত্তর কি ছিল বলুন তো? তার উত্তর ছিল, ‘উই আর হেয়ার টু প্লে ক্রিকেট’।

খেলা আর রাজনীতি তো দুটো একেবারেই পৃথক ব্যাপার।

তাহলে কি কারণ থাকতে পারে এমন আচরণের?


বাংলাদেশের জনসংখ্যার একটি বড় অংশ পাকিস্তানের প্রাণপণ সমর্থক। এদের মধ্যে কেউ কেউ শুধু ক্রিকেট নয়, বরং পাকিস্তানের সবকিছুরই সমর্থক। আমি অনেক পাকিস্তান সমর্থকের সাথে কথা বলেছি তাদের পাকিস্তান সমর্থনের কারন নিয়ে। খেলা ভালো লাগে বা খেলার সাথে রাজনীতি মেশাবেন না- এই জাতের হাস্যকর উত্তর ছাড়া তারা আমাকে আর কিছু্ই বলতে পারেনি।

আগে না হয় আমরা খুব ভালো ক্রিকেট খেলতাম না।

এখন তো আমরা বেশ ভালো খেলি। পৃথিবীর অনেক দেশেই বাংলাদেশ ক্রিকেটের সমর্থক আছে। বাংলাদেশের খেলা আছে শুনে তারা কাজ ফেলে খেলা বসতে দেখে। কিন্তু একবারও কি আমরা জানার চেষ্টা করি, পাকিস্তানের ক’জন লোক বাংলাদেশ ক্রিকেটের ভক্ত? পাকিস্তানের ক’জন লোক তাদের দেশে বাংলাদেশের পতাকা ওড়ায়?

না। পাকিস্তানে বাংলাদেশের ক্রিকেটের সমর্থক নেই।

কেন নেই? এর উত্তর দিতে গেলেই রাজনীতি চলে আসবে। পাকিস্তানিরা কখনওই বাংলাদেশকে ভালো চোখে দেখে না, কারণ, তারা ছোট থেকেই জেনে আসে যে বাংলাদেশ একটি বেঈমান রাষ্ট্র। তারা ছোট থেকেই জেনে আসে যে, বাংলাদেশ তাদের সাথে বেঈমানি করে আলাদা হয়ে গেছে ইত্যাদি ইত্যাদি। পাকিস্তানের তরুণ প্রজন্মের সিংহভাগই জানে না কি করে বাংলাদেশে তৈরী হল। আমরা যাঁদেরকে বীরশ্রেষ্ঠ বলে জানি, পাকিস্তানিরা তাঁদেরকে বিশ্বাসঘাতক বলে জানে।

তারা বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমানের কবরে থুতু ছেটাত রাষ্ট্রদ্রোহী বলে। তারা জানে না, তাদের পূর্বপুরুষরা কিভাবে লাখ লাখ মানুষের রক্ত চুষে পান করেছিল।

আর ওরা যখন দেখে, আমাদের ছেলে-মেয়েরা ওদের অকুন্ঠ সমর্থন দিচ্ছে, তখন ওরা নিজেদেরকে মহান বলে ভাবে। আর আমাদেরকে ভাবে শেকড়হীন পরগাছা আর বিশ্বাসঘাতক!
আমি দুঃখিত। আমি খেলার মধ্যে একেবারেই রাজনীতিকে আনতে চাইনি।

শুধু পাকিস্তানিরা কেন বাংলাদেশের ক্রিকেটকে সমর্থন করে না- তার উত্তর খুঁজতে গিয়েই রাজনীতিটা চলে আসল।


মাঝখানে বেশ ক’বছর ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে ক্রিকেট খেলা বন্ধ ছিল। কেন? রাজনৈতিক কারনে। ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের এত কেন উত্তেজনা। রাজনৈতিক কারণে।



যখন বাংলাদেশ জেতে, তখন আমাদের খেলোয়াড়রা লাল-সবুজের পতাকা নিয়ে উল্লাস করে, আমরাও করি। যেন খেলোয়াড়রা জেতে নি। দেশটাই জিতে গেছে। লাল-সবুজরে পতাকা তো আমাদের দেশের, আমাদের রাষ্ট্রের, আমাদের রাজনীতির, আমাদের জনগণ, আমাদের নদী-পুকুর, আকাশ, পাখি- সবকিছুর। তাহলে ক্রিকেটদল জিতলে আমরা কেন আমাদের দেশের পতাকা ওড়াই? ক্রিকেট দলের জন্য আলাদা একটা পতাকা করে সেটাকে ওড়ানো উচিত ছিল না?

অর্থাৎ, আমি যেদেশকে ভালোবাসি, যে দেশের সবকিছুকে ভালোবাসি, শুধু সেদেশের্ই পতাকা আমি উল্লসিত হয়ে, আনন্দিত হয়ে বাতাসে ওড়াবো।

আমরা কি পাকিস্তানকে ভালোবাসি?


সত্যি কথা বলতে, পাকিস্তানের নিন্দা করেলেই ভারতের সমর্থক, আর ভারতের নিন্দা করলে পাকিস্তানের সমর্থক- এই ধরণের হাস্যকর চিন্তা আমরা এখনও কেন বাদ দিতে পারিনি, তা আমার পক্ষে বুঝে ওঠা সম্ভব হয় নি। এ বিতর্ক থেকে আমাদের আরও আগেই উঠে আসার কথা ছিল। অজ্ঞতা ও অসচেতনার জন্য আমরা এখনও এসব নিয়ে তর্ক করি।

বাংলাদেশের ক্রিকেট এখন যে পর্যায়ে এসেছে, এখনও কি আমাদের এমনভাবে বাগ্-বিতন্ডা করা মানায়?

হ্যা, ফুটবল খেলার সময় আমরা ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা সমর্থন করি। আমাদের মধ্যে অধিকাংশই জানিনা এই দেশ দুটো সম্পর্কে।

অথচ সমর্থন করি। কেন? সম্ভাব্য উত্তর, তাঁদের খেলা ভালো লাগে সেজন্য। তাহলে পাকিস্তানকে কেন সমর্থন করি। খেলা ভালো লাগে তাই। পাকিস্তান কতাটা ভালো খেলে সে বিতর্কে জড়াবো না, শুধু এটুকু বলব, ব্রাজিল- আর্জেন্টিনা সমর্থন আর পাকিস্তানকে সমর্থন ব্যাপারটা এক নয়, অন্তত আমাদের জন্য, অন্তত বাংলাদেশীদের জন্য।




মাঝে মাঝে হঠাৎ বিকট চিৎকারে চমকে উঠি। কি হয়েছে? পাকিস্তান জিতে গেছে, তাই উল্লাস! নিজেকে খুব ছোট ছোট লাগে। অসহায় লাগে।

হুমায়ুন আজাদ স্যারের একটি কথা মনে পড়ে, পাকিস্তানিরা ফুল হাতে নিয়ে এলেও আমি তাদের বিশ্বাস করব না।

কিন্তু আজ পাকিস্তানিরা আমাদের কিছু না দিলেও তাদের ক্রিকেটকে আমরা কত সমর্থন দিই।

বাংলাদেশ-পাকিস্তান খেলা হলেও কিছু বাংলাদেশী যুবক-যুবতী যখন গালে পাকিস্তানের পতাকা এঁকে মাঠে খেলা দেখতে যায়, তখন একেবারেই নির্বাক হয়ে যাই। মনে হয় কিছু লিখি। কিন্তু লিখেই বা কি হবে। তাই আর লিখিও না।

আজ লিখলাম।

জানি, লিখে হয়ত কিছুই হবে না। কিন্তু, নিজেকে একটু সান্তনা দিতে পারব। এ লেখায় আমার এটুকুই পাওয়া। । ।

সোর্স: http://prothom-aloblog.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।