তাহের ও জিয়াকে নিয়ে শাহাদুজ্জামানের নিবন্ধটি দুই কিস্তিতে প্রথম আলো ছেপেছে সম্প্রতি। লেখক স্বল্প পরিসরে তাহের ও জিয়ার মধ্যকার দ্বন্দ্ব এবং ওই সময়ের রাজনৈতিক পরিস্থিতির একটা বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করেছেন। আমাদের দেশের চার দশকের ইতিহাসে ৭ নভেম্বরের গুরুত্ব অনেক। এ ধরনের লেখা যত বেশি হবে, ততই আমরা অনেক কিছু জানতে পারব। এই প্রয়াসের জন্য লেখককে সাধুবাদ জানাই।
লেখককে আমি ব্যক্তিগতভাবে চিনি না। সত্তরের দশকের ওই সময়টাতে দেশ যখন টালমাটাল, সম্ভবত তিনি তা পর্যবেক্ষণ করে থাকতে পারেন। অথবা কারও কারও সঙ্গে আলাপ করে এবং ওই ধরনের আলাপচারিতা কিংবা সাক্ষাৎকারের ওপর নির্ভর করে কিংবা সূত্র ঘেঁটে হয়তো লেখাটি তৈরি করার চেষ্টা হয়েছে। ফলে সুলিখিত হওয়া সত্ত্বেও এটা ইতিহাস হয়ে উঠতে পারেনি। ওই সময়ের রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণকারী যাঁরা ছিলেন বা আছেন, তাঁরা অনেকেই অন্য রকমভাবে বলবেন, আমিও এ রকম কয়েকটি বিষয় নিয়ে পাঠকের মনোযোগ আকর্ষণ করতে চাইছি।
আমাদের দেশে রাজনীতির সামরিকীকরণ নানাভাবে হচ্ছে। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে সশস্ত্র বাহিনীর বাঙালি সদস্যদের বীরত্বপূর্ণ অংশগ্রহণ ও অবদানকে খাটো করে দেখার উপায় নেই। কিন্তু তাঁরাই প্রধান ভূমিকা রেখেছেন, এটা দাবি করলে ইতিহাসের অপলাপ হবে। একাত্তর ছিল এ দেশের মানুষের ২৪ বছরের গণসংগ্রামের ফসল। তাতে নানা স্রোতোধারা ছিল।
হঠাৎ একটি ভাষণ বা ঘোষণা থেকে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়নি। তেমনি ৭ নভেম্বর ছিল উনসত্তর-পরবর্তী রাজনৈতিক ধারার একটি পরিণতি। ওটাও হঠাৎ করে হয়নি।
আমরা যে নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে জানি, তিনি অক্ষয় মৈত্রের নাটকের সিরাজ। বাস্তবের সিরাজ অন্য রকম।
তাঁকে ইতিহাসের বাস্তবতায় নির্মোহভাবে উপস্থাপন করার একটা চেষ্টা করেছেন নীরদ সি চৌধুরী তাঁর গবেষণাধর্মী লেখা রবার্ট ক্লাইভ অব ইন্ডিয়া গ্রন্থে। ৭ নভেম্বর ও তার আগে ও পরের তাহেরকে আমরা প্রথম পাই লরেন্স লিফশুলজের লেখা বাংলাদেশ অ্যান আনফিনিশড রেভল্যুশন গ্রন্থে। এটাও ইতিহাস নয়। ইতিহাস লেখা খুব সহজ কাজ নয়। তার চেয়েও বেশি কঠিন ইতিহাস তৈরি করা।
যাঁরা ইতিহাস তৈরি করেছিলেন, যে প্রক্রিয়ায় করেছিলেন, সে সম্পর্কে খুব ভালোভাবে ধারণা না থাকলে, তার কুশীলবদের চিন্তা ও আবেগকে বুঝতে না পারলে ‘ইতিহাস’ হবে সূত্র ও সাক্ষাৎকারনির্ভর, ওটা সময়ের দলিল হবে না। সোভিয়েত ইউনিয়নে ১৯২০-এর দশকে যে যুগান্তকারী পরিবর্তন ঘটেছিল, তা স্ট্যালিন কিংবা ট্রটস্কির লেখা ইতিহাস পড়ে যতটা না জানা যায়, তার চেয়ে ঢের বেশি বোঝা যায় শলোকভের কালজয়ী উপন্যাস অ্যান্ড কোয়াইট ফ্লোজ দ্য ডন পড়ে।
শাহাদুজ্জামান মন্তব্য করেছেন, তাহেরের নেতৃত্বে ‘সামরিক মাত্রা’টি সফল হয়, কিন্তু ‘বেসামরিক মাত্রা’টি ব্যর্থ হয়, যার নেতৃত্বে ছিলেন সিরাজুল আলম খান। বাংলাদেশের রাজনীতিতে তাহেরকে লিজেন্ড আর সিরাজুল আলম খানকে খলনায়ক বানানোর চেষ্টা চলছে অনেক বছর ধরেই। এতে তাহেরকেও বড় করা যাবে না, ছোট হবেন না সিরাজুল আলম খানও।
জাসদ রাজনীতির মূল ব্যক্তি ছিলেন সিরাজুল আলম খান। তাহেরের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ ঘটে ১৯৭২ সালে, মেজর জলিলের মাধ্যমে। জলিলকে সিরাজুল আলম একাত্তর থেকেই জানতেন। জাসদকে হঠাৎ গজিয়ে ওঠা একটা ভুঁইফোড় সংগঠন হিসেবে ভাবলে ভুল হবে। সিরাজুল আলম খানকে কেন্দ্র করে একদল তরুণ ষাটের দশক থেকেই আওয়ামী লীগের ভেতরে একটা নতুন ধারার সূত্রপাত ঘটিয়েছিলেন, যা ১৯৭২-এর ৩১ অক্টোবর জাসদ নামে আত্মপ্রকাশ করে।
একসময় সিরাজুল আলম খান ছিলেন শেখ মুজিবের অত্যন্ত বিশ্বাসভাজন ব্যক্তি, ইংরেজিতে একটি শব্দেই তা প্রকাশ করা যায়, ‘প্রটিজি’। দুজনের বিচ্ছেদ কারও জন্যই মঙ্গল বয়ে আনেনি।
জাসদে ওই সময় সংশ্লিষ্ট হয়েছিলেন আরও অনেকেই। তাঁদের শ্রম, মেধা, ত্যাগ কোনোটাই হেলাফেলা করার মতো নয়। জলিল, তাহের, আখলাকুর রহমান, মবিনুল হায়দার চৌধুরী—এঁরা সবাই এই প্রক্রিয়ায় যোগ দিয়ে তাঁকে সমৃদ্ধ করেছিলেন।
অথবা বলা চলে, তাঁরা সবাই চেয়েছিলেন বাংলাদেশের সমাজে একটা র্যাডিক্যাল পরিবর্তন। সে জন্য বেছে নিয়েছিলেন ওই সময়ের সবচেয়ে সম্ভাবনাময় শক্তিটাকে। ঘটনাপরম্পরায় যখন পঁচাত্তরের নভেম্বরে যৌক্তিক গন্তব্যে পৌঁছাল না, তখন সব দোষ সিরাজুল আলম খানের ওপর চাপানোর চেষ্টা হলো। এটাই ইতিহাসের ট্র্যাজেডি।
জাসদ এ দেশে বুঝে হোক কিংবা না বুঝে, সোভিয়েত বিপ্লবের আদলে সাংগঠনিক কাঠামো দাঁড় করানোর চেষ্টা করেছিল।
পুরো প্রক্রিয়াটির তত্ত্বাবধানে ছিলেন সিরাজুল আলম খানের নেতৃত্বে একটি কেন্দ্রীয় পর্ষদ। জাসদের সামরিক শাখা ছিল বিপ্লবী গণবাহিনী। শাহাদুজ্জামানের লেখায় ভুলক্রমে এটাকে বেসামরিক শাখা বলা হয়েছে। এর প্রধান ছিলেন শ্রমিকনেতা মোহাম্মদ সাজাহান। তিনি ছিলেন ‘রাজনৈতিক কমিশনার’।
গণবাহিনীর অধিনায়ক ছিলেন লে. ক. আবু তাহের, আর সহকারী অধিনায়ক ছিলেন হাসানুল হক ইনু। পুরো বাহিনীটি ছিল রাজনৈতিক নেতৃত্বের অধীনে। ঢাকা নগর গণবাহিনীর ‘রাজনৈতিক কমিশনার’ ছিলেন আ ফ ম মাহবুবুল হক আর বাহিনীর অধিনায়ক ছিলেন আনোয়ার হোসেন (তাহেরের অনুজ ও বর্তমানে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য)।
গণবাহিনীর বাইরে সেনাছাউনিগুলোতে বিপ্লবী সৈনিক সংস্থা গড়ে উঠেছিল মূলত জুনিয়র কমিশনড এবং নন-কমিশনড অফিসার ও সদস্যদের নিয়ে। এর প্রধান ছিলেন মেজর জলিল।
জেনারেল জিয়া এর অস্তিত্ব সম্পর্কে অবহিত ছিলেন। এটা ছিল অনেকটা ট্রেড ইউনিয়ন ধরনের। তাহের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি আবু সাঈদ চৌধুরীর কাছে পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছিলেন। সামরিক বাহিনী থেকে অব্যাহতি নিলেও তিনি সরকারি চাকরি ছাড়েননি। ড্রেজার অধিদপ্তরের পরিচালক হিসেবে তিনি গ্রেপ্তারের আগে পর্যন্ত কর্মরত ছিলেন।
সরকারি চাকরিতে কর্মরত থেকেই তিনি ১৯৭২ সাল থেকেই জাসদের রাজনীতির সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে সম্পৃক্ত হয়ে পড়েন।
এটা আজ আর কারও অজানা নেই, ১৯৭১-এ যখন এ দেশের মানুষ জনযুদ্ধে লিপ্ত, তখন আমাদের সেক্টর কমান্ডারদের অনেকেই দৃষ্টিকটুভাবে ক্ষমতার লড়াইয়ে জড়িয়ে পড়েছিলেন। ’৭১ থেকে ’৮১—এই ১০টি বছর হলো আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডারদের ক্ষমতার দ্বন্দ্বের ইতিহাস, যার পরিণতিতে চারজনই নৃশংসভাবে নিহত হন। প্রথম বলি ছিলেন খালেদ মোশাররফ। এ দেশে তিনিই সম্ভবত একমাত্র ক্ষমতা দখলে নেওয়া জেনারেল, যিনি একটি মানুষও হত্যা করেননি।
পরবর্তী সময়ে তাহের শিকার হলেন বিচারিক হত্যাকাণ্ডের, যার দণ্ডাদেশে স্বাক্ষর দিয়েছিলেন সুপ্রিম কোর্টের সাবেক প্রধান বিচারপতি এবং ওই সময়ের প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ও রাষ্ট্রপতি এ এস এম সায়েম। জানি না তাঁর ছবি এখনো বঙ্গভবনে টাঙানো আছে কি না। জিয়া ও মঞ্জুর হত্যার মধ্য দিয়ে এই ক্ষমতার লড়াইয়ের নিষ্পত্তি হয়। উল্লেখ্য, এঁরা সবাই ছিলেন মেধাবী ও উচ্চাকাঙ্ক্ষী। তবে রাজনৈতিক নেতৃত্বের কাঠামোর মধ্যে থেকে দেশ ও মানুষের সেবা করার ইচ্ছা তাঁদের কারোরই ছিল না।
তাঁরা সবাই রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রক হতে চেয়েছিলেন সশস্ত্র বাহিনীকে ব্যবহার করে। তাঁদের দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যে আরেকটি মিল আছে। তাঁরা সবাই শেখ মুজিবকে প্রচণ্ড রকম অপছন্দ করতেন। তাহের সবচেয়ে বেশি।
২ নভেম্বর রাতে যখন খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে ক্যু হলো, তার প্রধান জোগানদার ছিলেন কর্নেল সাফায়েত জামিল।
বর্তমান বিএনপির নেতা মেজর হাফিজও তাঁদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন। ওই সময় গণবাহিনী ও সৈনিক সংস্থা থেকে ক্যান্টনমেন্টগুলোকে কয়েকটি প্রচারপত্র দিয়ে সৈনিকদের উত্তেজিত করার চেষ্টা হয়। প্রচারপত্রগুলোর ভাষা ছিল তীব্র, আক্রমণাত্মক। খালেদকে বানানো হয় ভারতের দালাল। তুরুপের এই এক তাসেই খালেদের ভিত নড়বড়ে হয়ে পড়ে।
আমাদের দেশের রাজনীতিতে ভারত ফ্যাক্টর যে কতটা নিয়ামক, তা তখন যেমন ছিল, এখনো সে রকমই আছে।
জাসদের রাজনৈতিক কৌশল ছিল অন্য রকম। জাসদ নেতৃত্বের সিদ্ধান্ত ছিল ১০ নভেম্বর হরতাল হবে, ১০ লাখ ছাত্র-শ্রমিকের সমাবেশ ঘটিয়ে একটা গণ-অভ্যুত্থান সৃষ্টি করা হবে। কিন্তু পরিস্থিতি দ্রুত বদলে যাচ্ছিল। তাহের ৬ নভেম্বর দুপুরেই ক্যান্টনমেন্টে তাঁর অনুগত লোকদের নির্দেশনা দিয়ে দিলেন রাতে অভ্যুত্থান ঘটানোর জন্য।
ওই রাতে এলিফ্যান্ট রোডে একটি বাড়িতে জাসদের ইমার্জেন্সি স্ট্যান্ডিং কমিটির সভা চলছিল। সেই সভায় উপস্থিত একজন সদস্যের দাবি, তাহের অভ্যুত্থানের সিদ্ধান্তের কথা জানালেন। জাসদ নেতৃত্ব এর জন্য প্রস্তুত ছিলেন না। তাহের মোটামুটি জোর করেই এই সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেন। আখলাকুর রহমান তাঁকে প্রশ্ন করেছিলেন, কিসের জোরে অভ্যুত্থান হবে, কার জন্য? তাহেরের তখন একটাই চিন্তা, জিয়াকে বাঁচাতে হবে, তাঁকে সামনে রেখেই বিপ্লব হবে।
আখলাকুর রহমান জানতে চেয়েছিলেন, জিয়াকে তাঁরা চেনেন না, তাঁকে কি বিশ্বাস করা যায়? তাহের উত্তর দিয়েছিলেন, আপনারা আমাকে বিশ্বাস করলে তাঁর ওপর নির্ভর করতে পারেন। ‘হি উইল বি আন্ডার মাই ফিট’ (সে আমার পায়ের নিচে থাকবে)। তাহেরকে সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করতে অনুরোধ করা হলে তিনি বললেন, এটা ওয়ান-ওয়ে কমিউনিকেশন। আমার লোকেরা যোগাযোগ না করলে আমি আর তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারব না। জাসদের নেতারা তবু রাজি হচ্ছিলেন না।
তাহের তখন লেনিনীয় ভঙ্গিতে বলেছিলেন, ‘সিক্সথ উইল বি ট্যু আর্লি, এইটথ উইল বি ট্যু লেট। টু নাইট অর নেভার। ’ সভা চলাকালে ইনুকে নিয়ে বেরিয়ে যান তাহের।
তাহেরের পরিকল্পনার অংশ হিসেবে মধ্যরাতে (একটার সময়) একজন সুবেদার ফাঁকা গুলি ছুড়ে সিগন্যাল দেবেন। তখনই অভ্যুত্থান শুরু হবে।
মাত্রাতিরিক্ত মনস্তাত্ত্বিক চাপের কারণে ওই সুবেদার এই ঘণ্টা আগেই গুলি করে বসেন। শুরু হয়ে যায় ‘বিপ্লব’। এখন এটা অনেকের কাছেই পরিষ্কার, এই বিপ্লবের পরিসমাপ্তি ঘটে ৭ নভেম্বর সকালেই। তাহের ও ইনু যখন মুক্ত জিয়ার সঙ্গে দেখা করেন, জিয়া প্রথমেই জানতে চান, সিরাজুল আলম খান কোথায়? তাঁকে নিয়ে আসুন। জিয়া সরাসরি রাজনৈতিক নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা করতে চেয়েছিলেন।
সকাল নয়টার মধ্যেই বিপ্লব শেষ। কিন্তু তাহের তো বসে থাকার মতো লোক নন। রংপুর, বগুড়া ও যশোরে ক্যান্টনমেন্টে অভ্যুত্থান-প্রচেষ্টা চালানো হয়। সলিমুল্লাহ হলে জেসিও-এনসিও পরিবেষ্টিত হয়ে সভা করার সময় তাহের ২২ নভেম্বর গ্রেপ্তার হন। শাজাহান সিরাজের এলিফ্যান্ট রোডের শ্বশুরবাড়ি থেকে গ্রেপ্তার হন জলিল ও রব।
বাকিদের অনেককে গ্রেপ্তার করা হয় ২৩-২৪ তারিখে।
২৬ নভেম্বর ঢাকা নগর গণবাহিনীর প্রধান আনোয়ার হোসেনের পরিকল্পনা অনুযায়ী ভারতীয় হাইকমিশনার সমর সেনকে জিম্মি করে দাবি আদায়ের একটা মিশন চালানো হয় গণবাহিনীর ছয়জন তরুণকে দিয়ে। তাঁদের সবার বয়স ১৮ থেকে ২২। চারজন ঘটনাস্থলেই নিহত হন, দুজন আহত অবস্থায় ধরা পড়েন। এরপর যে বিচারের নাটকটি মঞ্চস্থ হয় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে, সেখানে তাহেরকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার ব্যাপারে সবাই ছিলেন এক পায়ে খাড়া।
তখন অন্য রাজনৈতিক নেতারা কী করছিলেন? ২৬ নভেম্বর রাতে কয়েকজন রাজনীতিক একটা বিবৃতি দেন, যা ছিল এ রকম:
‘আমরা একদল লোকের এহেন কাপুরুষোচিত ও জঘন্য অপচেষ্টার তীব্র নিন্দা করিতেছি। ঘটনাটি দৃশ্যতই রাজনৈতিক দুরভিসন্ধিমূলক এবং বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কে ফাটল সৃষ্টির উদ্দেশ্যেই ইহা করা হইয়াছে। ভারতীয় হাইকমিশনারের ওপর পরিচালিত আক্রমণ প্রতিহত করিবার ক্ষেত্রে কর্তব্যরত বাংলাদেশ পুলিশ ও রক্ষীদের উপযুক্ত এবং কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের আমরা প্রশংসা করি। ’
বিবৃতিতে স্বাক্ষর দিয়েছিলেন আতাউর রহমান খান, তোফাজ্জল আলী, আলীম আল রাজী, মশিয়ুর রহমান, শাহ আজিজুর রহমান, অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ, আসাদুজ্জামান খান, কাজী জাফর আহমদ, অলি আহাদ ও রাশেদ খান মেনন।
ওই সময় জাসদের মূল স্লোগান ছিল, ‘রুখো বাকশাল হঠাও জিয়া—টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া’।
এই ডামাডোলের মধ্যেই তাহেরের ফাঁসির আদেশ হয়। জাসদের কর্মীরা রাজনীতিবিদদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছিলেন, যাতে তাঁরা রাষ্ট্রপতির কাছে তাহেরের ফাঁসির আদেশ রদ করার জন্য অনুরোধ করেন। কেউ কথা শোনেননি। এমনকি মওলানা ভাসানীও এ রকম একটি বিবৃতি দিতে অস্বীকার করেন। তাহেরের ফাঁসির আদেশ রদ
করার অনুরোধ জানিয়ে একমাত্র বিবৃতিটি এসেছিল অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের কাছ থেকে।
৭ নভেম্বরের প্রধান বলি হলো জাসদ। এই দলটি তখন সশস্ত্র বাহিনীর কোপানলে পড়ে। মোটামুটি সবকটি রাজনৈতিক দলই ছিল জাসদের বিরুদ্ধে। সময় ছিল বৈরী। তার পরের ইতিহাস হলো, জাসদের ছিন্নভিন্ন হয়ে যাওয়ার পরিক্রমা।
যুদ্ধ-পরবর্তী একটা তারুণ্যনির্ভর প্রবণতা ক্রমেই বিলীন হয়ে যাওয়া। এখন শুধু এর খোলসটা পড়ে আছে। ৭ নভেম্বরের অভ্যুত্থানের জন্য তাহের ও অন্যদের ‘বিচার’ হয়নি। ‘বিচার’ হয়েছিল ৭ নভেম্বর-পরবর্তী কার্যকলাপের জন্য। এর দায় সিরাজুল আলম খানকে একাকী বয়ে বেড়াতে হচ্ছে, এখনো।
মহিউদ্দিন আহমদ: লেখক ও গবেষক।
mohi2005@gmail.com।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।