আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আবদুল্লাহ

আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ। । সবচেয়ে বড় পরিচয় বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের সফল সংগঠক। 'আলকিত মানুষ চাই' স্লোগান নিয়ে এখনো তিনি তার মিছিল নিয়ে এগিয়ে চলেছেন। তবে আমি মনে করি সবকিছু ছাপিয়ে তিনি একজন সুবক্তা।

মন্ত্রমুগ্ধের মতো শোনায় তার কথাগুলো। কয়েক মিনিটের জন্য তার সাথে কথা বললে স্বপ্নহীন মানুষও স্বপ্ন দেখা শুরু করবে। মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়। খুব ছোটবেলায় তার এই কথাটা শুনে খুব বেশি প্রভাবিত হয়েছিলাম। আমার একবার সৌভাগ্য হয়েছিল সরাসরি তার বক্তব্য শোনার।

সেটা অবশ্য কয়েক বছর আগের কথা। সেখানে তিনি আমাদেরকে একটা গল্প শুনিয়েছিলেন। গল্পটা তিনি অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে এত মজা করে বলছিলেন যে গল্পটা শুধু পড়ে সেই মজাটা পাওয়া অসম্ভব। একেবারে প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছিল গল্পের চরিত্রগুলো। তবে কাহিনীটা মাথার মধ্যে ভিজুয়ালাইজ করতে পারলে গল্পের মজা অনেকখানি পাওয়া যাবে।


গল্পটা অনেকটা এরকমঃ
একদিন দুই বন্ধু তামিম আর আকিব সিনেমা হলে সিনেমা দেখতে গেল। তারা বসল হলের সবচেয়ে পিছনে সবচেয়ে উপরের দুইটা সিটে। যথারীতি সিনেমা শুরু হল। পর্দা উঠল সিনেমার। কিন্তু বাধ সাধল সামনের কাতারে বসা এক টেকো ভদ্রলোকের টাক মাথা।

ভদ্রলোক তেলা মাথায় আবার তেলও মেখে এসেছেন। পর্দার আলো তার মাথায় পড়ে টাকটা একেবারে চকচক-চকচক করছে । আর সেই তেলতেলা টাকটাই ওই দুই বন্ধুর চোখে বাধ সেধেছে। সিনেমার চাইতে ওই টাক মাথাটাই তাদের মনোযোগ কেড়ে নিচ্ছে বেশি। ফাজিল তামিমটা কিনা ওই টাক মাথা নিয়েই বাজি ধরে বসল আকিবের সাথে।

তামিম আকিবকে বলল - তুই যদি ওই টাক মাথায় একটা চাটি মারতে পারিস তাহলে নগদ ৫০০ টাকা দেব যদি না উল্টা মাইর না খাস! আকিব তো সাথে সাথেই রাজি হয়ে গেল!
তারপর আকিব সামনের কাতারের ওই ভদ্রলোকের পেছনে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে সত্যি সত্যি ওই টাক মাথায় চাত্তাস করে চাটি মেরে বসল! ভদ্রলোক বেচারা ঘটনার আকস্মিকতায় হতবিহবল! এদিকে চাটি মারার চাত্তাস শব্দে তো হলভর্তি দর্শক সিনেমা বাদ দিয়ে আকিবের দিকে দৃষ্টি দিয়েছে। কিন্তু তাদের দিকে বিন্দুমাত্র ভ্রুক্ষেপ না করে আকিব ওই ভদ্রলোককে বলল- আরে দোস্ত আবদুল্লাহ! কেমন আছিস তুই? কত্তদিন পর দ্যাখা তোর সাথে! ভাবী কেমন আছে? তোর কি তিন নম্বর বাচ্চাটা হইসিলো ? আকিবের কথা শেষ হতে না হতেই ওই ভদ্রলোক চিৎকার দিয়ে বললেন- আরে মিয়া কিসের তিন নম্বর বাচ্চা!! আমি তো এখনো বিয়াই করি নাই। আর কে এই আবদুল্লাহ! তখন আকিব বলল- কি বলেন! আপনি আবদুল্লাহ না! ওহ! সরি! আপনি দেখতে অবিকল আমার বন্ধু আবদুল্লাহর মতো। আমি খুবই দুঃখিত।
তারপর আর কি করা! তামিমকে অগত্যা ৫০০ টাকা দিতে হল।


সিনেমা শেষে তারা যখন সিঁড়ি দিয়ে নামছিল তখন আবার সেই ভদ্রলোকের সাথে দেখা। ভদ্রলোক এবার ঠিক তাদের সামনেই আছেন। মানে ভদ্রলোকের টাকটা তাদের মুখ বরাবর সামনেই আছে। তামিম এবার আকিবকে চোখ টিপে দিয়ে বলল- এবার নগদ ১০০০ টাকা যদি উল্টা না মাইর খাস! আকিবের হাসি আর থামায় কে! সে তো ধরেই নিয়েছে যে টাকাটা সে আবারো পাচ্ছে। বাজির অফার দিতে না দিতেই আকিব ওই টাকওয়ালা ভদ্রলোকের মাথায় দ্বিতীয়বারের মতো ১০০০ টাকা মূল্যের চাটি বসিয়ে দিল! বেচারা ভদ্রলোক পিছনে তাকিয়ে দেখে ফাজিল আকিবটা কেলিয়ে কেলিয়ে হাসছে! কিছু বলার আগেই আকিব বলে উঠল- শালা তুই এখানে! আর আমি হলের ভেতরে কাকে না কাকে ভুল করে আবদুল্লাহ ভেবে বসেছিলাম।

এবার তোরে বলতেই হবে যে তোর তিন নম্বর বাচ্চাটা হইসে কিনা? বেচারা ভদ্রলোক উত্তেজিত হয়ে বলল- আরে ভাই আমিই তো সেই আবদুল্লাহ যাকে আপনি হলের ভিতরেও একবার আবদুল্লাহ ভেবে ভুল করেছিলেন! আকিব আবারো দুঃখ প্রকাশ করে তামিমের কাছ থেকে প্রতিশ্রুত ১০০০ টাকা নিয়ে নিল। কিন্তু ঘটনা জমে গেল যখন হলের বাইরে আবারো সেই টেকো ভদ্রলোক ফাজিল দুইটার সামনে পড়ল। এবার তামিম আত্মবিশ্বাসের সাথে আকিবকে ২০০০ টাকার বাজি ধরার চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিল তবে শর্ত ওই- উল্টা মাইর খাওয়া যাবে না। আকিবের এবারও কিছু বুঝে উঠার আগেই ওই ভদ্রলোকের মাথায় তৃতীয়বারের মতো চাটিটা বসিয়েই দিল। ভদ্রলোক বেচারা এবার কোন কিছু না বলে নিজের মাথা নাড়তে নাড়তে অসহায় দৃষ্টিতে আকিবের দিকে চেয়ে রইল।

আকিব বলল- আবদুল্লাহ!এবার পাইসি তোরে! তোর কি জমজ ভাই-তাই আছে নাকি? হলের ভিতরে হুবহু তোর মতো এক লোককে পরপর দুইবার চাটি মেরেছি। পরে জেনেছি বেচারা লোকটা তুই ছিলি না! এবার তো পাইসি তোরে! এখন বল তোর তিন নম্বর বাচ্চাটার খবর কি? বেচারা ভদ্রলোক তো তিন নম্বর চাটি খেয়ে একেবারে বিধ্বস্ত! এবার সে মুখে রা শব্দটা না করে মাথা নাড়তে নাড়তে আস্তে আস্তে চলে গেল।
তামিম পেল বিনোদন- আকিব পেল টাকা মাগার যার জন্য সবকিছু সে পেল চাটি আর চাটি।
আমাদের অবস্থা হচ্ছে সেই আবদুল্লাহদের মতো! দেশের কিছু কিছু রাজনীতিবিদ নিজেদের স্বার্থে নিজেরা নিজেরা বাজি লাগছেন আর আবদুল্লাহর মতো ভুক্তভুগী হচ্ছি আমরা। ।

সোর্স: http://prothom-aloblog.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।