আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দুই ইহুদি কুশীলব

বাংলাদেশে ইহুদি নাগরিকের সংখ্যা এ মুহূর্তে শূন্য। প্রাপ্ত তথ্য মতে, মুক্তিযুদ্ধের সময় রাজশাহীতে একটি মাত্র ইহুদি পরিবারের অস্তিত্ব ছিল। তবে সে পরিবারের কেউ মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়নি। তারপরও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে-বিপক্ষে ইহুদি ধর্মাবলম্বী দুই কুশীলবের সম্পর্ক ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে কোনো ইহুদির অংশগ্রহণের তথ্য জানা না থাকলেও ভারতীয় মিত্র বাহিনীর সিনিয়র সেনানায়কদের একজন ছিলেন ইহুদি ধর্মাবলম্বী।

মুক্তিযুদ্ধের ভাগ্য নির্ধারণে তার ভূমিকা ছিল অনন্য। একাত্তরে ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের চিফ অব স্টাফ পদে অধিষ্ঠিত এই সেনাপতির নাম লে. জেনারেল জে এফ আর জ্যাকব। তার জন্ম কলকাতায়। পূর্ব পুরুষরা ছিলেন ইরাকের অধিবাসী। ভারতীয় সেনাবাহিনীতে হিন্দু, মুসলিম, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ ও শিখ জৈন প্রায় সব ধর্মের অনুসারীরা থাকলেও ইহুদি ধর্মাবলম্বী অন্য কোনো সৈন্য বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে মিত্রবাহিনীর হয়ে লড়ছেন কিনা সে বিষয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই।

১৯৭১ সালের ডিসেম্বরে ভারতীয় মিত্রবাহিনী ও মুক্তিবাহিনীর যৌথ কমান্ড গঠিত হয়। এ কমান্ডের নেতৃত্বে বাংলাদেশ থেকে পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর উৎখাতে শুরু হয় অভিযান। এ অভিযানে ঢাকার দ্বারপ্রান্তে এসে পেঁৗছায় যৌথবাহিনী। কোণঠাসা হয়ে পড়ে পাকিস্তানিরা। যৌথবাহিনী তাদের আত্দসমর্পণের আলটিমেটাম দেয়।

এ প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে দখলদারিত্বের ভূমিকায় অবতীর্ণ পাকিস্তানি বাহিনীর প্রধান লে. জেনারেল নিয়াজি জাতিসংঘের আওতায় অস্ত্রবিরতিতে রাজি হন। যৌথবাহিনী অস্ত্রবিরতির প্রস্তাব নিয়ে পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে আলোচনায় বসে। ভারতীয় বাহিনীর পক্ষ থেকে জেনারেল নিয়াজির সঙ্গে বৈঠকে নেতৃত্ব দেন জেনারেল জেএফআর জ্যাকব। বৈঠকে জ্যাকব নিয়াজিকে বলেন, তারা পাকিস্তানি বাহিনীকে ঘিরে ফেলেছেন। আত্দসমর্পণে রাজি না হলে তাদের পরিণতি হবে অনিবার্য মৃত্যু।

অন্যদিকে আত্দসমর্পণ করলে তারা জেনেভা কনভেনশন অনুযায়ী সব ধরনের নিরাপত্তা পাবে। ঘেরাও অবস্থায় যুদ্ধ করলে মুক্তিবাহিনীর রোষানলে পড়তে হবে তাদের এমন ভয়ও দেখানো হয়। জেনারেল নিয়াজি প্রথমে আত্দসমর্পণের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। দম্ভ দেখান এক বিন্দু রক্ত থাকতে আত্দসমর্পণ নয়। জেনারেল জ্যাকব নিয়াজিকে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য কিছুটা সময় দেন।

বলেন, এ সময়ের মধ্যে আত্দসমর্পণের সিদ্ধান্ত না নিলে যুদ্ধের মাধ্যমেই সব কিছুর সমাধান হবে। শেষ পর্যন্ত স্নায়ুযুদ্ধে হেরে যান নিয়াজি। তিনি আত্দসমর্পণে রাজি হন। শুধু আত্দসমর্পণে রাজি করা নয় তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে প্রকাশ্যে আত্দসমর্পণেও সম্মতি দেন। নিয়াজি তার লেখা আত্দসমর্পণের দলিলে বলেছেন, জ্যাকবই তাকে ব্লাকমেইল করে আত্দসমর্পণ করতে বাধ্য করেন।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে জ্যাকবের এই অবদান অবশ্য ইহুদি হিসেবে নয়, ভারতীয় বাহিনীর একজন সেনানায়ক হিসেবে। মুক্তিযুদ্ধের আগে জ্যাকব মোটেও কোনো প্রসিদ্ধ ব্যক্তি ছিলেন না। ১৯৭১ সালে বিশ্বের ইহুদিদের মধ্যে যাকে সবচেয়ে ক্ষমতাধর ও পরিচিত ব্যক্তিত্ব বলে ভাবা হতো তিনি হলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র সচিব হেনরি কিসিঞ্জার। প্রেসিডেন্ট নিঙ্নের এই পররাষ্ট্র সচিব মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানকে রক্ষায় যথাসাধ্য চেষ্টা করেন। তার পরামর্শেই প্রেসিডেন্ট নিঙ্ন মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় মিত্রবাহিনীর অগ্রাভিযান প্রতিহত করতে বঙ্গোপসাগরে সপ্তম নৌবহর পাঠান।

কিন্তু সোভিয়েত ইউনিয়ন সপ্তম নৌবহরের বিরুদ্ধে তাদের নৌবহর পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিলে যুক্তরাষ্ট্র পিছু হটে। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় ইসরাইল সরকার প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারকে স্বীকৃতি দেয়। কিন্তু বাংলাদেশ এ স্বীকৃতি গ্রহণ করেনি। মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী আওয়ামী লীগ এবং অংশগ্রহণকারী সব দল ইসরাইলকে অবৈধ রাষ্ট্র বলেই মনে করেছেন। যে কারণে ফিলিস্তিনি নেতা ইয়াসির আরাফাত বাংলাদেশের প্রতি বরাবরই ছিলেন কৃতজ্ঞ।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে তিনি বড় ভাই ও বন্ধু বলে শ্রদ্ধা করতেন। মুক্তিযুদ্ধের পর গত চার দশকে বেশ কিছু আরব দেশ ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দিলেও বাংলাদেশ এখনো তাদের ভূমিকায় অনড়।

 

 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।