অতিমাত্রায় সাধারণ
পাকিস্তানকে সাপোর্টের প্রশ্নে বেশিরভাগ বাঙালীরই যে যুক্তি দেয় তা হলো, "মুসলমান মুসলমান ভাই ভাই। " আমি আমার পাকিস্তানের সমর্থক প্রত্যেক পরিচিতজনকে দেখেছি তারা পাকি দলের সাপোর্ট দেয় শুধুমাত্র ধর্মীয় নিক্তিতে মেপে। বলা বাহুল্য, এর পেছনে জামাত-শিবির চক্রের প্রত্যক্ষ ভূমিকা দেখা যায়।
আসলে কোনো একটা দেশকে খেলায় সাপোর্ট করলে সেটা শুধু খেলার মাঝে সীমাবদ্ধ থাকে না। সেটা ব্যক্তির মননে এমনভাবে ঢুকে যায় যে নিজের জাতীয়তাবোধকে চ্যালেঞ্জ জানাতে পিছপা হয় না।
ফলশ্রুতিতেই আমরা বাংলার গ্যালারীতে "ম্যারি মি আফ্রিদি" লেখা প্ল্যাকার্ড কিংবা পাকিস্তানের পতাকা দুলতে দেখা যায়। মাত্র ৪২ বছর আগে যে দেশের হায়েনারা আমাদের স্বজনদের খুনে নিজেদের হাত রাঙিয়েছে সেই তাদের পতাকা এমনভাবে ধরা হয় যেনো সেটা নিজেরই পতাকা!
কিন্তু আমরা কি একবারো ভেবে দেখেছি যাদের নিকট থেকে পৃথক হওয়ার জন্য আমাদের পূর্বপুরুষেরা শরীরের রক্ত দিতেও কার্পণ্য করেননি সেই তাদের সাথেই জাতির একটা অংশ একাত্নতা প্রকাশ করে কীভাবে??
প্রশ্নটি কিন্তু নতুন নয়। আর এহেন গর্হিত কাজকে "জায়েয করা" জবাবটা জামাত-শিবির কর্তৃক সুকৌশলে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে। জবাব- খেলার সাথে রাজনীতির কোনো সম্পর্ক নেই দিয়ে শুরু হয় এবং শেষ হয় সেই কবে না কবে কি নিয়া "গণ্ডগোল" হয়েছিলো সেসবের জন্য একটা দলকে সাপোর্ট করা যাবে না?? জবাবটাকে আরো শক্ত করতে সাথে ঢোকানো হয় সাম্প্রদায়িকতার বিষ। মাঝখানে ঢোকানো হয় "মালাউন ইন্ডিয়া" এর বিরোধিতা করার আবশ্যিকতাকে।
আর ইন্ডিয়ার বিরোধিতা করতে হলে পাকিস্তানকে সমর্থন দিতে হবে- এটা তো ঐতিহাসিকভাবে সিদ্ধ। এক্ষেত্রে বলা হয় "মালাউনের সাপোর্ট করলে মালাউন হয়ে যাওয়ার" মতো মারাত্নক ফতোয়া।
আর এভাবেই স্বাধীনতাবিরোধীরা একটি বিরাট জনগোষ্ঠীকে বিভ্রান্ত করার প্রয়াস পেয়েছে। বিভ্রান্তি ছড়াতে প্রত্যক্ষভাবে ভূমিকা রেখেছে একাত্তরে যারা "মৌন রাজাকার" ছিলো।
মননে পাকিস্তানকে ধারণ করা ব্যক্তিদের মধ্য থেকে পাকিপ্রীতি না রিমুভ করে "পাকিস্তানের সাথে সম্পর্কচ্ছেদ" করে কোনো লাভ হবে না।
এখন প্রশ্ন হলো, আমরা কীভাবে ঐসব বিভ্রান্ত জনগোষ্ঠীকে লাইনে আনতে পারবো??
প্রথমত , নিজের জাতীয়তাবোধকে ধারণ করানো হবে প্রথম ধাপ। কারণ, একই ব্যক্তিত্বে দুটি জাতীয়তা ধারণ সচরাচর সম্ভব হয় না। আমরা যে মন ও মননে বাঙালী সে বোধ সবার মধ্যে জাগাতে হবে। বাঙালীর ঐতিহ্যগত যেসব উৎসব আছে সেগুলোর ব্যাপক প্রচলন শুরু করতে হবে।
দ্বিতীয়ত , একেবারে রুট লেভেলে মুক্তিযুদ্ধের পটভূমি ছড়িয়ে দিতে হবে।
সেক্ষেত্রে আগামী শিক্ষাবর্ষেই "মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস" নামে শ্রেণিভিত্তিক একটি পরিপূর্ণ পুস্তক প্রাথমিক ও মাধ্যমিক লেভেলে নতুন করে সংযোজন করতে হবে। শুধু বাংলা বইয়ের মাধ্যমে জায়গার অপ্রতুলতার কারণে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস ও ব্যাপকতা একজন ছাত্র পুরো শিক্ষাজীবনেও পায় না। আংশিক ইতিহাস নিয়ে পরবর্তীতে সে বিভ্রান্ত হয়।
তৃতীয়ত , পাকিস্তানে সংঘটিত নাশকতার ব্যাপকতা আমাদের সমস্ত মিডিয়ার আরো ব্যাপক হারে আসতে হবে।
চতুর্থত , বিম্পিকে স্বাধীনতার প্রশ্নে নিজেদের অবস্থান জনতার নিকট ক্লিয়ার করার জন্য চাপ প্রয়োগ করতে হবে।
বিম্পির অবস্থান যদি তথৈবচ হয় তাহলে বাংলাদেশে বিম্পির রাজনৈতিক অধিকার বলবৎ থাকবে কীনা সে ব্যাপারে গণভোটের আয়োজন করা যেতে পারে।
পঞ্চমত , সুশীল সমাজকে জাতীয়তার প্রশ্নে আপোষ করলে চলবে না। পছন্দের রাজনৈতিক দলের পক্ষাবলম্বন করতে গিয়ে যেনো জাতীয়তাবিরোধী কোনো কথা বলা চলবে না। সুশীল সমাজের কেহ এসবের ব্যত্যয় ঘটালে তাকে রাষ্ট্রদ্রোহীতার অভিযোগে গ্রেপ্তার করতে হবে।
ষষ্ঠত , মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অবদান স্মরণপূর্বক পাকিস্তানের সাথে ভারতের তুলনা যে হতে পারে না সেটা পাঠ্যপুস্তকসহ বিভিন্ন গণমাধ্যম, প্রিন্ট ও ইলেকট্রিক মিডিয়ায় প্রচার করতে হবে।
সপ্তমত , ধর্মকে রাষ্ট্রযন্ত্র হতে পৃথক করতে হবে। ৭২ এর সংবিধানে ফিরে যেতে হবে।
আর কোনো প্রস্তাব আছে???
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।